প্রভুর বার্ত্তাবাহিকা হিসাবে মিসেস্ হোয়াইটের অস্বাভাবিক অভিজ্ঞতার বিষয় শুনিয়া কেহ কেহ জিজ্ঞাসা করিয়া থাকেন, তিনি কি প্রকার ব্যক্তি ছিলেন? আমাদের যে সকল সমস্যা আছে, তাঁহার কি সেই সকল সমস্যা ছিল? তিনি কি ধনী ছিলেন, কিংবা তিনি দরিদ্র ছিলেন? তিনি কি কখনও হাসিতেন? CCh 36.1
মিসেস্ হোয়াইট্ চিন্তাশীলা মাতা ও সতর্ক গৃহকর্ত্রী ছিলেন। তিনি একজন হৃষ্ট অতিথি সেবিকা ছিলেন এবং আমাদের লোকদিগকে তিনি তাঁহার গৃহে প্রায়ই আতিথ্য করিতেন। তিনি সাহায্যকারী — প্রতিবাসিনী ছিলেন। তিনি দৃঢ় বিশ্বাসিনী ছিলেন, তাঁহার মেজাজ ছিল শান্ত, আচার ব্যবহার ও কন্ঠস্বর ছিল মৃদু। তাঁহাকে জীবনে কখনও হাসি শুন্য ও নিরানন্দ অবস্থায় মুখভার করিয়া থাকিতে দেখা যায় নাই। সকলেই তাঁহার সম্মুখে নিঃসঙ্কোচে উপস্থিত হইতে পারিত। ১৮৫৯ খৃষ্টাব্দে তিনি যখন তাঁহার দৈনন্দিন কার্য্যের প্রথম ডাইরী বা হিসাব রাখিতে আরম্ভ করেন, তখন তাঁহার সহিত আলাপ করিবার হয়তো সর্ব্বাপেক্ষা উত্তম উপায় ছিল, তাঁহার গৃহে গিয়া তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করা। CCh 36.2
ব্যাটল-ক্রিকের প্রান্তসীমায় প্রশস্ত এক খণ্ড জমিতে, ক্ষুদ্র একখানি গৃহে হোয়াইট্ পরিবার বসবাস করিতেন; ঐ জমিতে এক শাকসব্জীর বাগানের, কতিপয় ফলবৃক্ষের, একটী গাভীর ও কতকগুলি মুর্গীর জন্য যথেষ্ট স্থান ছিল; বালকদিগের কার্য্য করিবার ও খেলিবার জন্যও একটী উপযুক্ত স্থান ছিল। মিসেস্ হোয়াইটের বয়স ছিল এই সময় ৩১ বৎসর এবং এল্ডার হোয়াইটের বয়স ছিল ৩৬ বৎসর। তৎকালে তাঁহাদের গৃহে তিনটী বালক ছিল; প্রথম পুত্রের বয়স ছিল ৪ বৎসর, দ্বিতীয় পুত্রের ৯ বৎসর ও তৃতীয় পুত্রের ১২ বৎসর। CCh 36.3
গৃহকর্ম্মের সাহায্যার্থে সেই গৃহে একটী সৎস্বভাবা খ্রীষ্টীয়ান বালিকাও ছিল; কারণ মিসেস্ হোয়াইট্ প্রায়ই ঘরে থাকিতে পারিতেন না এবং লোকদের সহিত আলাপে ও লেখা পড়ার কার্য্যে প্রায়শঃই তাঁহার ব্যস্ত থাকিতে হইত। তথাপি গৃহ-দায়িত্বে, রন্ধনাদিতে, ধোয়া-কাঁচায় ও সেলাই ইত্যাদিতে কখনও তাঁহার অবহেলা দেখা যায় নাই। কখনও কখনও তিনি ছাপাখানার নিভৃত কক্ষে লেখনী কার্য্যে ব্যস্ত থাকিতেন। আবার কখনও কখনও তিনি বাগানে যাইয়া ফুলের গাছ লাগাইতেন ও শাকসবজী রোপন করিতেন। কখনও কখনও তাঁহাকে প্রতিবাসিগণের সহিত ফুলের চারা আদান প্রদান করিতেও দেখা গিয়াছে। ছেলেরা যেন গৃহখানিকে সর্ব্বাপেক্ষা প্রীতিজনক স্থান বলিয়া মনে করিতে পারে, তজ্জন্য সেটীকে সুখকর করিবার নিমিত্ত তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করিতেন। CCh 37.1
মিসেস্ হোয়াইট্ একজন সতর্ক ক্রেতা ছিলেন; তিনি জিনিসের দাম জানিতেন বলিয়া এ্যাডভেন্টিষ্ট প্রতিবাসিগন জিনিস ক্রয়ার্থে তাঁহার সহিত দোকানে যাইতে আনান্দ উপভোগ করিত। তাঁহার মাতা খুব কাজের লোক ছিলেন এবং তিনি তাঁহার কন্যাদিগকে মুল্যবান শিক্ষাদি দান করিতেন। অভিজ্ঞতা দ্বারা তিনি জানিতে পারিয়াছিলেন যে, ভাল জিনিসের মুল্য অপেক্ষা সস্তা জিনিসের মুল্য পরিণামে গিয়া অধিক দাঁড়ায়। CCh 37.2
সন্তানাদির জন্য বিশ্রামদিনটীকে সপ্তাহের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা আমোদ- দায়ক দিন করিয়া তোলা হইত। পরিবারস্থ সকলেই উপাসনায় যোগদান করিতেন এবং এল্ডার ও মিসেস্ হোয়াইটের উপাসনায় কথা বলিতে না হইলে, উপাসনার সময়ে পরিবারস্থ সকলে একত্রে উপবেশন করিতেন। বিশ্রামবার মধ্যাহ্ন- আহারের সময় তাঁহারা এমন পছন্দ — সই খাদ্য ভোজন করিতেন, যাহা তাঁহারা অন্য দিন ভোজন করিতেন না, এবং দিনটী ভাল হইলে মিসেস হোয়াইট্ সন্তানদিগকে লইয়া বনের মধ্যে কিংবা নদীর তীরে যাইয়া প্রকৃতির সৌন্দর্য্য অবলোকন এবং ঈশ্বরের সৃষ্টিকার্য্য অধ্যয়ন করিতেন। দিনটী বৃষ্টির কিংবা ঠাণ্ডার দিন হইলে, তিনি সন্তানদিগকে গৃহে আগুনের কাছে একত্র করিয়া পুস্তক পাঠ করিয়া শুনাইতেন এবং যাত্রা- পথে এখান ওখান হইতে যে সকল উত্তম উত্তম তথ্য সংগ্রহ করিতেন, সেগুলি তাঁহাদিগকে পাঠ করিয়া শুনাইতেন। অন্যান্য মাতাপিতারা যেন তাঁহাদের সন্তানদিগকে পাঠ করিয়া শুনাইতে পারেন, তজ্জন্য এই সকল গল্পের কোন কোন গল্প, পরে পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়। CCh 37.3
এই সময়ে মিসেস্ হোয়াইটের স্বাস্থ্য তত ভাল ছিলনা। দিবাভাগে তিনি প্রায়ই মুর্চ্ছা যাইতেন; কিন্তু ইহাতে তাঁহার ঘরকন্নার কার্য্যে কিংবা প্রভুর কার্য্যে কোন ব্যাঘাত ঘটে নাই। ইহার কয়েক বৎসর পরে — ১৮৬৩ খৃষ্টাব্দে তিনি স্বাস্থ্য ও রোগীর সেবা সম্পর্কে একটী দর্শন প্রাপ্ত হন। দর্শনে তিনি দেখিতে পান যে, সুস্থ ও সবল দেহ লাভার্থে যেমন উপযুক্ত পোষাক পরিচ্ছদ পরিধান করিতে, পুষ্টিকর খাদ্য ভোজন করিতে, উপযুক্ত ব্যায়াম ও বিশ্রাম করিতে হইবে, তেমনি ঈশ্বরে নির্ভর রাখিতে হইবে। CCh 38.1
তাঁহার নিজের ব্যক্তিগত ধারনা ছিল যে, স্বাস্থ্যের ও বল লাভের নিমিত্ত মাংসাহার আবশ্যক। কিন্তু খাদ্য সম্পর্কে ও মাংসাহারের কুফলতা সম্বন্ধে ঈশ্বর হইতে দীপ্তি প্রাপ্ত হইয়া তাঁহার সেই ভ্রম ঘুচিয়া গিয়ায়াছে। দর্শনে তিনি যে জ্যোতি প্রাপ্ত হইয়াছেন, সেই জ্যোতি অনুযায়ী চলিবার নিমিত্ত তিনি পাচিকাকে বলিয়া দিলেন যে, তাঁহার খাদ্যের মেজের উপরে যেন কেবল উপাদেয় খাদ্য, শস্য হইতে উৎপন্ন সাদাসিধে খাদ্য, শাক্সব্জী, বাদাম, দুগ্ধ, সর, ও ডিম থাকে। তাঁহার খাদ্যের সঙ্গে তিনি প্রচুর ফলও আহার করিতেন। CCh 38.2
পরিবারস্থ সকলে যখন খাদ্যের নিমিত্ত উপবেশন করিলেন, তখন তাঁহাদের ভোজনের টেবিলের উপরে উত্তম, স্বাস্থ্যকর খাদ্য ভিন্ন, কোন মাংসজাতীয় খাদ্য দেখা গেল না। মিসেস্ হোয়াইট্ অন্য খাদ্যের জন্য নহে, কিন্তু মাংসের জন্য বড়ই লালায়িতা হইয়া পড়িয়াছিলেন। তজ্জন্য যে পর্যন্ত না তাঁহার সাদাসিধে খাদ্যের প্রতি লিপ্সা আইসে, তাবৎ তিনি ভোজনের টেবিলের নিকটে যাইবেন না বলিয়া স্থির করিলেন। পরবর্ত্তী আহারের সময়েও তাঁহার ঠিক ঐ একই অবস্থা হইল; ঐ সাদাসিধে খাদ্য তাঁহার খাইতে ইচ্ছা হইল না । পরে পুনরায় তাঁহারা টেবিলের নিকটে আসিলেন। ঐ টেবিলের উপরে সাদাসিধে খাদ্য ছিল, কারণ দর্শনে তাঁহাকে দেখান হইয়াছিল যে ঐরূপ খাদ্যই স্বাস্থ্যের, বলের, ও বৃদ্ধির পক্ষে সর্ব্বোত্তম। মাংস ভক্ষন তাঁহার অভ্যাস ছিল বলিয়া মাংসের প্রতি তাঁহার প্রবল লালসা ছিল। যাহা হউক, তিনি এক্ষণে জানিতে পারিলেন যে, মাংস সর্ব্বোত্তম খাদ্য নহে। তিনি আমাদিগকে বলেন যে, পাকস্থলীর উপরে তাঁহার হস্তদ্বয় রাখিয়া তিনি উহাকে বলিতেন, “হে পাকস্থলী, যে পর্য্যন্ত” না রুটী খাইতে পার, তাবৎ তুমি অপেক্ষা করিতে পার।” CCh 39.1
অল্প দিনের মধ্যেই সাদাসিধে খাদ্য এলেন হোয়াইটের বেশ ভাল লাগিতে লাগিল এবং খাদ্যের পরিবর্ত্তনের সঙ্গে সঙ্গেই তাঁহার স্বাস্থ্যের উন্নতি হইতে থাকিল; আর তাঁহার সুদীর্ঘ জীবনের অবশিষ্ট বৎসরগুলি তিনি অপেক্ষাকৃত সু-স্বাস্থ্যেই যাপন করিয়াছিলেন। এইরূপে আমরা দেখিতে পাই যে, আমাদের যেমন, মিসেস্ হোয়াইটেরও ঠিক্ তেমনি ঐ একই সমস্যার মধ্য দিয়া যাইতে হইয়াছিল। আমাদের সকলেরই যেমন লালসার উপরে জয়লাভ করিতে হইবে, তেমনি তাহারও লালসার উপরে জয়লাভ করিতে হইয়াছিল। জগতের সহস্র সহস্র এ্যাডভেন্টিষ্ট পরিবার যেমন, হোয়াইট্ পরিবারও তেমনি স্বাস্থ্য সংস্কারের ফলে মহা আশীর্ব্বাদ উপভোগ করিয়াছেন। CCh 39.2
স্বাস্থ্য সংস্কার সম্বন্ধে দর্শন প্রাপ্তির পর এবং হোয়াইট পরিবারে রোগী চিকিৎসার সাধারণ পদ্ধতি অবলম্বলের পর অসুস্থতার সময়ে চিকিৎসা দানের জন্য প্রতিবাসীগণ এল্ডার ও মিসেস হোয়াইট্কে ডাকিয়া লইয়া যাইতেন, আর প্রভুও তাঁহাদের চেষ্টায় বিশেষ আশীর্ব্বাদ করিতেন। অন্যান্য সময়ে রোগীদিগকে তাঁহাদের গৃহে আনা হইত, আর যে পর্য্যন্ত না তাঁহারা সম্পূর্ণ সুস্থ হইত, তাবৎ তাঁহারা সযত্নে রোগীদিগের তত্ত্বাবধান করিতেন। CCh 40.1
শ্রান্তি- বিনোদনের ও বিশ্রাম ভোগের নিমিত্ত মিসেস হোয়াইট্ কখনও পর্ব্বতে, হ্রদের তীরে কিংবা উন্মুক্ত জলাশয়ে গমন করিতেন। মধ্য বয়সে তিনি যখন আমেরিকার পশ্চিমাংশে আমাদের পাব্লিশিং হউস- প্যাসেফিক্ প্রেসের নিকট বসবাস করিতেছিলেন, তখন প্রস্তাব করা হইয়াছিল যে, শ্রান্তি- বিনোদনের ও বিশ্রাম লাভের জন্য একটী দিন যাপন করিতে হইবে। মিসেস হোয়াইট্ তাঁহার পরিবারের ও আফিসের লোকদের সহিত একত্রে পাব্লিশিং হাউসের লোকদের সহিত মিলিত হইতে অনুরোধ করিলে তিনি তৎক্ষনাৎ সেই নিমন্ত্রন গ্রহন করিয়াছিলেন। তাঁহার স্বামী এই সময়ে মিশনের কার্য্যোপলক্ষে পুর্ব্ব দিকে গিয়াছিলেন টাই তিনি স্বামীকে এই বিবরণের বিষয় পত্র দ্বারা জানাইয়াছিলেন। CCh 40.2
সমুদ্রতীরে তৃপ্তিকর খাদ্য গ্রহনের পর, সকলে একত্রে সানফ্রানসিসকো উপসাগরে জাহাজ ভ্রমনে গেলেন। ক্ষুদ্র জাহাজের অধ্যক্ষ ঐ মণ্ডলীর একজন সভ্য ছিলেন, আর ঐ অপরাহ্নটী সুখকর সময় ছিল; তজ্জন্য প্রস্তাব করা হইল যে, তাঁহারা একেবারে উন্মুক্ত- সাগর- ভ্রমণে যাইবেন। এই ঘটনার বিষয় উল্লেখ করিয়া মিসেস্ হোয়াইট্ লিখিয়া ছিলেন যে, “ঢেউগুলি খুব উচ্চ ছিল, এবং আমরা বেশ চমৎকার ভাবে একবার নীচে ও একবার উপরে উঠিতেছিলাম। আমার মনোবৃত্তিগুলি উল্লাসিত হইয়া উঠিয়াছিল, কিন্তু কাহাকেও কিছু বলিবার আমার ছিল না। ইহা চমৎকার ছিল ! বায়ু দ্বারা উৎক্ষিপ্ত জলবিন্দুগুলি আমাদের উপর দিয়া দ্রুতবেগে চলিয়া যাইতেছিল। গোল্ডেন গেটের বাহিরে প্রবলবেগে বায়ু বহিতেছিল; এই সময়ে আমি যেরূপ আনন্দ উপভোগ করিয়াছিলাম, জীবনে সেরূপ আনন্দ আর কখনও উপভোগ করি নাই !” CCh 40.3
তৎপরে তিনি জাহাজের অধ্যক্ষের সতর্ক- দৃষ্টি ও নাবিকগণের আজ্ঞাবহনে তৎপরতা দেখিয়া ধ্যানমগ্না হইয়া কহিলেন- CCh 41.1
“ঈশ্বর স্বীয় হস্তদ্বয়ে বায়ু ধারণ করেন। তিনি জলরাশি নিয়ন্ত্রিত করেন। প্রশান্ত মহাসাগরের বিস্তীর্ন ও গভীর জলরাশির উপরে আমরা ধুলি কণা মাত্র। তথাপি তরঙ্গাহত ক্ষুদ্র এই পালের জাহাজখানিকে বিপদ হইতে রক্ষা করিবার জন্য স্বর্গীয় দূতগণ প্রেরিত হইয়াছেন। আহা ! ঈশ্বরের কার্য্য কী আশ্বর্য্য জনক ! ইহা বোধের অগম্য ! এক কটাক্ষে তিনি সর্ব্বোচ্চ স্বর্গ এবং সমুদ্রের মধ্যস্থল সন্দর্শন করেন !” CCh 41.2
বাল্যকাল হইতেই মিসেস্ হোয়াইট্ প্রফুল্ল-বদনা ছিলেন। একদা তিনি জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, “তোমরা কি কখনও আমার মুখ বিষণ্ণ, নৈরাশ্য ও অসন্তোষ ব্যঞ্জক দেখ? আমার বিশ্বাস আমাকে এইরূপ হইতে নিষেধ করে। কারণ এইরূপ বিসন্নতা, নৈরাশ্য ও অসন্তোষ খ্রীষ্টের স্বভাবের ও খ্রীষ্টীয় সেবাকার্য্যের প্রকৃত আদর্শের বা মুলনীতির সম্পূর্ণ বিপরীত। ......... যীশুর জন্য সর্ব্বান্তঃকরনে ও স্বেচ্ছায় কার্য্য করিলে মনে অপার আনন্দ লাভ করা যায়। যাহারা সর্ব্বাপেক্ষা নিবিড় ভাবে খ্রীষ্টের অনুগমন করে, তাঁহারা বিষণ্ণ বদন হয় না।” CCh 41.3
পরে অন্য এক সময় তিনি লিখিয়াছিলেনঃ- “কোন কোন ক্ষেত্রে কেহ কেহ ধারনা করিয়া থাকে যে, খ্রীষ্টীয় স্বভাবের মর্যাদা রক্ষা কল্পে প্রফুল্লতা অসঙ্গত; কিন্তু ইহা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ স্বর্গ আনন্দ ময়।” আর তিনি ইহাও আবিষ্কার করিয়াছেন যে, হাসি দিলে প্রতিদানে হাসি পাওয়া যায় এবং সদয় বাক্য বলিলে প্রত্যুত্তরে সদয় বাক্য পাওয়া যায়। CCh 41.4
পরন্তু কখনও কখনও তিনি ভয়ানক ভুগিয়াছেন। এইরূপ ঘটিয়াছিল, কার্য্যের সাহায্যার্থে অষ্ট্রেলিয়া যাইবার অব্যবহিত পরেই। তিনি অত্যন্ত পীড়িতা হইয়া প্রায় এক বৎসর পর্য্যন্ত গুরুতররূপে ভুগিয়াছিলেন। অধিকাংশ সময়ে তাঁহার শয্যাশায়ী হইয়া থাকিতে হইত এবং রাত্রে মাত্র অল্প কয়েক ঘণ্টা ঘুমাইতে পারিতেন। এক চিঠিতে কোন এক বন্ধুর নিকট তিনি এই বিষয় জ্ঞাত করেন যে, “প্রথমে যখন আমি নিজেকে সহায়হীন অবস্থায় দেখিলাম, তখন আমার এই গভীর মনোবেদনা হইতে লাগিল যে, বিস্তীর্ণ জলরাশি অতিক্রম করিয়া আমি কেন এদেশে আসিলাম ? আমি কেন আমেরিকায় থাকিলাম না ? এত অর্থ ব্যয় করিয়া আমি কেন এদেশে আসিলাম ? বারংবার বিছানার লেপের মধ্যে মুখ লুকাইয়া আমি সাধ মিটাইয়া কাঁদিতাম। কিন্তু এই বিলাসের কান্নাকে আমি বেশী দিন প্রশ্রয় দিলাম না। আমি নিজে নিজেকে বলিলাম, এলেন জি, হোয়াইট্, তুমি কী মনে কর? কনফারেন্স তোমাকে যে স্থানে যাইতে বলেন, তোমার সেই স্থানে যাওয়া কর্ত্তব্য, ইহা বিবেচনা করিয়াই কি তুমি অষ্ট্রেলিয়ায় আস নাই? কনফারেন্সের বাধ্য থাকা কি তোমার অভ্যাস নয় ?” CCh 42.1
“আমি বলিলাম, ‘হাঁ’।” CCh 42.2
“তাহা হইলে তুমি নিজেকে এত হতাশ ও পরিত্যক্ত মনে কর কেন? এইরূপ মনে করা কি শত্রুর কার্য্য নহে? আমি কহিলাম, ‘হাঁ, আমি বিশ্বাস করি ইহা শত্রুরই কার্য্য।” CCh 42.3
“যত শীঘ্র সম্ভব চক্ষের জল মুছিয়া আমি কহিলাম, ‘যথেষ্ট হইয়াছে। অন্ধকার ভাগের দিকে আমি আর দৃষ্টি নিক্ষেপ করিব না। আমি বাঁচি কি মরি, যিনি আমার জন্য মৃত্যুভোগ করিয়াছিলেন, আমি তাঁহার হস্তে আমার আত্মা সমর্পণ করি।” CCh 42.4
“পরে আমি বিশ্বাস করিলাম যে, প্রভু যাহা করিবেন, তাঁহার সকলই মঙ্গলার্থে করিবেন। আর নিঃসহায় অবস্থার এই আট মাসের মধ্যে আমার কোন নৈরাশ্য কিংবা সন্দেহ ছিলনা। এই বিষয়টীকে আমি এক্ষণে প্রভুর মহা পরিকল্পনার একটী অংশ বলিয়া মনে করি। আমি মনে করি, এই দেশে তাঁহার লোকদের, আমেরিকার লোকদের ও আমার নিজের মঙ্গলের জন্যই এই ঘটনা ঘটিয়াছে। ইহা কেন ও কেমন করিয়া হইতে পারে, তাহা আমি বলিতে পারিনা, কিন্তু আমি ইহা বিশ্বাস করি। আর আমি আমার এই ক্লেশের জন্য এক্ষণে সুখী আছি। আমি আমার স্বর্গীয় পিতার উপরে নির্ভর রাখিতে পারি। আমি তাঁহার প্রেমে সন্দিহান হইব না।” CCh 42.5
মিসেস্ হোয়াইটের জীবনের শেষ ১৫ বৎসর তিনি তাঁহার কালিফর্নিয়াস্থ গৃহে বসবাস করিতেছিলেন। এই সময় যদিও তিনি বৃদ্ধা হইতেছিলেন, তথাপি ক্ষুদ্র কৃষি-ক্ষেত্রের প্রতি তাঁহার সবিশেষ দৃষ্টি ছিল এবং যাহারা তাঁহার কার্য্যে সহায়তা করিত, তাঁহাদের পরিবারের মঙ্গলের দিকেও তাঁহার সবিশেষ লক্ষ্য ছিল। তিনি সকাল সকাল ঘুমাইতে যাইতেন এবং প্রায়ই মধ্যরাত্রের পরক্ষণেই তাঁহার লেখনীকার্য্যে ব্যাপৃত হইতেন। দিনটী বেশ ভাল হইলে এবং কার্য্য হইতে অবসর গ্রহন করিতে পারিলে তিনি গাড়ীতে করিয়া গ্রামের দিকে একটু ঘুরিয়া আসিতেন এবং চলিবার পথে বাগানের মধ্যে কিংবা ঘরের বারান্দায় কোন মাতাকে দেখিলে কিছুক্ষন থামিয়া তাঁহার সহিত আলাপ করিতেন। কখনও কখনও খাদ্যের ও বস্ত্রের প্রয়োজন দেখিয়া তিনি গৃহে প্রত্যাবর্ত্তন করতঃ নিজ গৃহ হইতে সেই সকল দ্রব্য লইয়া গিয়া অভাব- গ্রস্তদিগকে দান করিতেন। তিনি যে স্থানে বাস করিতেন, সেই উপত্যকার প্রতিবাসিগন তাঁহার মৃত্যুর বহু বৎসর পরেও তাঁহাকে চুলপাকা ক্ষুদ্রমহিলা, যিনি সর্ব্বদা গভীর প্রেমের সহিত যীশুর বিষয় বলিতেন-বলিয়া স্মরণ করিত। CCh 43.1
জীবনের মোটামুটী আরামের ও আবশ্যক দ্রব্যাদির জন্য যাহা প্রয়োজন, তাঁহার মৃত্যুর সময় তাহা অপেক্ষাও তাঁহার অল্প কিছু বেশী ছিল। অন্যে যেন তাঁহাকে দৃষ্টান্তরূপে ধরিয়া লয়, ইহা তিনি চাহেন নাই; কারণ তিনি ঠিক্ আমাদেরই মত একজন সেভেন্থ-ডে-এ্যাডভেন্টিষ্ট ছিলেন; তিনি তাঁহার পুনরুন্থিত প্রভুর সদ্গুনে নির্ভর রাখিতেন এবং প্রভু তাঁহার হস্তে যে কার্য্যভার দিয়াছিলেন, বিশ্বস্তভাবে তাহা সুসম্পন্ন করিবার চেষ্টা করিতেন। এইরূপে তিনি তাঁহার হৃদয়ে বিশ্বাস রাখিয়া এবং খ্রীষ্টীয় জীবনে অচল ও অটল থাকিয়া তাঁহার পূর্ণ জীবনের শেষ প্রান্তে আসিয়া উপস্থিত হন। CCh 43.2