Go to full page →

নব-দম্পতির জন্য উপদেশ CCh 354

হে আমার প্রিয় ভ্রাতা ও ভগ্নী ! তোমার সারাজীবনের জন্য নিয়মে আবদ্ধ হইয়াছ । তোমাদের জীবনের শিক্ষা কেবল আরম্ভ হইছে । বিবাহিত জীবনের প্রথম বৎসরটি, অভিজ্ঞতা অর্জ্জনের বৎসর, শিশু যেমন স্কুলে শিক্ষালাভ করে, এই বৎসরে স্বামী ও স্ত্রী পরস্পরের স্বভাবের বিভিন্ন গুনাবলী সম্বন্ধেও তেমনি শিক্ষা লাভ করে । এই বৎসরে— তোমাদের বিবাহিত জীবনের প্রথমে প্রথম বৎসরে, এমন কিছু না ঘটুক, যাহাতে তোমাদের ভবিষ্যৎ-সুখে বিঘ্ন ঘতিবে । CCh 354.1

বিবাহ — সম্বন্ধ সম্পর্কে উপযুক্ত জ্ঞান লাভ করা, সারা জীবনের কার্য্য । যাহারা বিবাহ করে, তাহারা এমন একটী স্কুলে প্রবেশ করে, যে স্থান হইতে এ জীবনের শিক্ষা শেষ করিয়া তাহারা কখনও উপাধি গ্রহন করিতে পারে না । হে আমার ভ্রাতা, তোমার স্ত্রীর সময়, শক্তি ও সুখ এক্ষনে তোমার সহিত বাঁধা । তাহার উপরে তোমার যে প্রভাব রহিয়াছে, তাহা জীবনমূলক জীবন দায়ক গন্ধে পরিনত হইতে পারে । অতএব তাহার জীবন যেন নষ্ট না হয়, তজ্জন্য সতর্ক হও । CCh 354.2

হে আমার ভগ্নি, বিবাহিত জীবনের দায়িত্ব সম্পর্কীয় প্রথম ব্যাবহারিক পাঠগুলি এক্ষনে তোমার শিক্ষা লাভ করিতে হইবে । দিনের পর দিন এই পাঠগুলি বিশ্বস্ত ভাবে শিক্ষা করিতে কৃত-নিশ্চয় হও । অসন্তোষ কিংবা ক্রোধকে মনে স্থান দিও না । আরামে কিংবা আলস্যে জীবন যাপন করিবার বাসনা করিও না । হৃদয় যেন স্বার্থপরতা প্রবেশ করিতে না পারে, তজ্জন্য অবিরত সতর্ক থাকিবে । CCh 354.3

তোমাদের জীবনব্যাপী মিলনে তোমাদের ভালবাসা যেন পরস্পরের সুখের জন্য হয় । প্রত্যেকেরই অন্যের সুখের চেষ্টা করা কর্ত্তব্য । কারন তোমাদের সম্পর্কে ইহাই ঈশ্বরের ইচ্ছা । কিন্তু তোমাদের যখন পরস্পরের সহিত একের মতন মিশ্রিত হইতে হইবে, তখান যেন একে অন্যের মধ্যে তোমাদের কাহারও না হারাও । তোমাদের ব্যক্তিত্তের মালিক ঈশ্বর । তাঁহাকেই তোমাদের জিজ্ঞাসা করিতে হইবেঃ- কোনটা ঠিক্ ? কোনটা ভুল ? আমার সৃষ্টির উদ্দেশ্য আমি কোন্ সর্ব্বোৎকৃষ্ট উপায়ে পূর্ণ করিতে পারে ? শাস্রে লিখিত আছেঃ- “তোমরা নিজের নও, কারন মূল্য দ্বারা ক্রীত হইয়াছ । অতএব তোমাদের দেহে ঈশ্বরের গৌরব কর ।”( ১ করিন্থীয় ৬ ঃ ১৯, ২০ ) মানুষের প্রতি প্রেম গৌণ, ও ঈশ্বরের প্রতি প্রেম মুখ্য হওয়া আবশ্যক । যিনি তোমার জন্য প্রান দিয়াছেন, তাহারই দিকে তোমার প্রেমস্রোত প্রবাহিত হওয়া কর্ত্তব্য । ঈশ্বরের জন্য জীবন যাপন করিলে, আত্মা তাহারই প্রতি সর্ব্বোৎকৃষ্ট ও সর্ব্বোশ্রেষ্ঠ প্রেম প্রদর্শন করে । তিনি তোমার জন্য মৃত্যুভোগ করিয়াছিলেন ; তুমি কি তাহাকে সর্ব্বাপেক্ষা অধিক প্রেম কর ? যদি তাহাই হয়, তবে পরস্পরের প্রতি তোমার প্রেম স্বর্গের অনুরুপ হইবে । CCh 354.4

ভালবাসা, সচ্ছতায় কাচবৎ ও পবিত্রতায় সৌন্দর্যপূর্ণ হইতে পারে তথাপি গভীর নাও হইতে পারে, যেহেতু পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত হয় নাই । প্রত্যেক বিষয়ে খ্রীষ্টকে প্রথম, ও শেষ ও সর্ব্বশ্রেষ্ঠ স্থান দিবে । অবিরত তাহার দিকে দৃষ্টি রাখিবে, ইহা হইলে পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত হইয়া যাহার প্রতি তোমার প্রেম, দিনের পর দিন গভীরতর ও প্রবলতর হইতে থাকিবে । এইরুপে খ্রীষ্টের প্রতি তোমার প্রেম যখন বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইতে থাকিবে,পরস্পরের জন্য তোমার প্রেম তখন গভীরতর ও প্রবলতর হইতে থাকিবে । কেননা “আমরা সকলে অনাবৃত মুখে প্রভুর তেজ দর্পণের ন্যায় প্রতিফলিত করিতে করিতে তেজ হইতে তেজ পর্য্যন্ত যেমন প্রভু হইতে, আত্মা হইতে হইয়া থাকে, তেমনি সেই মুর্ত্তিতে স্বরুপান্তরিত হইতেছি ।” (২ করিন্থীয় ৩ঃ ১৮) বিবাহের পুর্ব্বে যে সকল কর্ত্তব্য পালন করিতে হইবে । তোমার ঈশ্বরের মনোনীত লোকদের, পবিত্র ও প্রিয় লোকদের উপযোগীমতে করুনার চিত্ত, মধুর ভাব, নম্রতা, মৃদুতা, সহিষ্ণুতা পরিধান কর ।” নিম্নলিখিত উপদেশগুলি মনোনিবেশ পূর্ব্বক অধ্যয়ন করিবে ঃ- “নারীগণ, তোমার যেমন প্রভুর, তেমনি নিজ নিজ স্বামীর বশীভূতা হও । কেননা স্বামী স্ত্রীর মস্তক, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর মস্তক । ……………কিন্তু মণ্ডলী যেমন খ্রীষ্টের বশীভূতা হউক । স্বামীরা, তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে সেইরুপে প্রেম কর, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীকে প্রেম করিলেন, আর তাহার নিমিত্ত আপনাকে প্রদান করিলেন ।” (কলসীও ৩ঃ ১২; ইফিষীয় ৫ঃ২, ২২-২৫ ।) CCh 355.1

বিবাহের সারা জীবনের জন্য যে মিলনে ঘটে, তাহা খ্রীষ্ট ও মণ্ডলীর মধ্যে মিলনের এক প্রতিরুপ বা প্রদর্শন বা নিদর্শন । মণ্ডলীর প্রতি খ্রীষ্ট যেরূপ ভাব প্রদর্শন করেন, স্বামী ও স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি সেইরুপ ভাব প্রদর্শন করা আবশ্যক । CCh 356.1

স্বামী ও স্ত্রী, ইহাদের কাহারও প্রভুত্বের চেষ্টা করা কর্তব্য নহে । এই বিষয়ে প্রভু এক বিধি স্থাপন করিয়াছেন । খ্রীষ্ট যেমন মণ্ডলীকে লালন —পালন করেন, স্বামীরও তদ্রুপ লালন-পালন করা কর্ত্তব্য । স্ত্রীর কর্ত্তব্য স্বামীকে প্রেম করা ও সমাদর করা । এক জন আর একজনের মনে ব্যথা দিবেনা, এই বিষয়ে স্থির সঙ্কল্প হইয়া উভয়েরই সদয় ভাব পোষণ করা কর্ত্তব্য । CCh 356.2

হে আমদের প্রিয় ভ্রাতা ও ভগ্নি, তোমাদের উভয়েরই ইচ্ছাশক্তি প্রবল । তোমাদের নিজেদের জন্য, কিংবা যাহাদের সংস্পর্শে তোমরা আইস, তাহাদের জন্য তোমাদের এই ইচ্ছাশক্তিকে তোমরা মহা আশির্ব্বাদ কিংবা মহা অভিশাপ সরুপ করিয়া তুলিতে পার । তোমরা এক জন অন্যকে নিজের ইচ্ছায় বশীভূত করিতে চেষ্টা করিও না । কারণ এতোদ্দ্বারা পরস্পরের প্রেম বজায় রাখা অসম্ভব । আত্ম-ইচ্ছা প্রকাশের ফলে পরিবারের সুখ ও শান্তি নষ্ট হইয়া যায় । তোমাদের বিবাহিত জীবন যেন কলহের জীবন না হয় । যদি তোমরা কলহ কর, তবে তোমাদের কেহই সুখী হইতে পারিবে না । নিজের ইচ্ছা বিসর্জ্জন দিয়া বাক্যে সদয় ও কার্য্যে ধীর হও । ভাল কি মন্দ সাধন করিতে বাক্যের প্রভাব অতিশয় প্রবল, এজন্ন অতি সাবধানে কথা বল । কথার মধ্যে কোন কর্কশতা আসিতে দিও না । তোমাদের মিলিত জীবনের মধ্যে খ্রীষ্টীয় সৌরভ প্রকাশ করিও । CCh 356.3

কি ভাবে নিজেকে রাখিতে ও কি ভাবে অন্যের সহিত ব্যাবহার করিতে হয়, বৈবাহিক সম্বন্ধের মত ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধে সম্মিলিত হইবার পূর্ব্বে প্রত্যেক পুরুষের তাহা জানা কর্ত্তব্য । CCh 357.1

হে আমার প্রিয় ভ্রাতা, দয়ালু হও, ধৈর্যশীল হও, ও সহিষ্ণু হও । স্মরণে রাখিও যে, তোমার স্ত্রীর উপর কর্তিত্ব করিবার জন্য নহে, কিন্তু তাহাকে সাহায্য করিবার জন্যই সে তোমাকে স্বামী রুপে গ্রহন করিয়াছে । কখনও অসহিষ্ণু কিংবা যথেচ্ছাচারী হইও না । তুমি যেরূপ ইচ্ছা কর, তোমার স্ত্রীকে সেইরূপ করিতে বাধ্য করিবার জন্য তোমার প্রবল ইচ্ছা শক্তি ব্যবহার করিও না । স্মরণে রাখিও যে, তাহারও একটা ইচ্ছা আছে, এবং তুমি যেরূপ তোমার ইচ্ছা মত চলিতে বাসনা কর সেও তদ্রূপ তাহার ইচ্ছা মত চলিতে বাসনা করে । ইহাও স্মরণে রাখিও যে, তুমি অধিকতর সুপ্রসারিত অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ পাইয়াছ । অতএব তুমি বিবেচক ও শিষ্ট হও ।ফলতঃ “যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে, তাহা প্রথমে শুচি, পরে শান্তিপ্রিয়, ক্ষান্ত, সহজে অনুনীত, দয়া ও উত্তম উত্তম ফলে পরিপূর্ণ ।” ( যাকব ৩ ঃ ১৭ )। CCh 357.2

হে আমার প্রিয় ভ্রাতা ও ভগ্নি, স্মরণে রাখিও যে, ঈশ্বর প্রেম; আর বিবাহ-প্রতিজ্ঞায় তোমরা যেমন পরস্পরকে সুখী করিবে বলিয়া প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইয়াছিলে, ঈশ্বরের করুনায় তোমরা তেমনি ঐ বিষয়ে কৃতকার্য্যও হইতে পার । ঈশ্বরের সরল হইবার নিমিত্ত কোন বক্র জীবনকে সাহায্য করনার্থে মুক্তিদাতার শক্তিতে তুমি জ্ঞান ও শক্তি সহকারে কার্য্য করিতে পার । খ্রীষ্ট কী করিতে পারেন না ? তিনি জ্ঞানে ধার্ম্মিকতায় প্রেমে সিদ্ধ । তোমাদের সকল ভালবাসা পরস্পরের উপরে ঢালিয়া দিয়া এবং নিজেদিগকে নিজেদের মধ্যে রুদ্ধ রাখিয়া তৃপ্ত হইও না । তোমাদের চতুর্দ্দিকে যাহারা বসবাস করে, তাহাদের সুখের নিমিত্ত তোমাদের ভালবাসা তাহাদিগকে বণ্টন করিয়া দিবার জন্য প্রত্যেকটী সুযোগের সদ্ব্যবহার করিও । পিপাসিত প্রানের জন্য এক বাতি শীতল জল যেমন তৃপ্তিকর, বহু শ্রান্ত সহায়হীন লোকের জন্য দয়ার বাক্য, সহানুভূতির দৃষ্টি ও গুণ স্বীকারও তেমনি প্রানের তৃপ্তিকর । শ্রান্ত ও ক্লান্ত স্কন্ধিগুলির উপরে যে গুরুভার অর্পিত আছে, তাহা লঘু করনার্থে আনন্দের একটী বাক্য, দয়ার একটি কার্য্য সুদূর প্রসারী । নিঃস্বার্থ সেবাকার্য্যে প্রকৃত সুখ পরিদৃষ্ট হয় । এইরূপ সেবা কার্য্যের প্রত্যেকটী বাক্য ও কার্য্য খ্রীষ্টের প্রতি বলা বা করা হইয়াছে বলিয়া স্বর্গীয় বিবরন পুস্তকে লিপিবদ্ধ রহিয়াছে । তিনি বলেন, “এই ক্ষুদ্রতমদিগের মধ্যে একজনের প্রতি যখন ইহা করিয়াছিলে, তখন আমারি প্রতি করিয়াছিলে ।” (মথি ২৫ঃ৪০) CCh 357.3

ত্রানকর্ত্তার প্রেমরূপ সূর্য্য-কিরনে বসবাস কর । তাহা হইলে তোমার প্রভাবে জগৎ আশির্ব্বাদ যুক্ত হইবে । খ্রীষ্টের আত্মা তোমাকে বশে রাখিতে চালাউন । তোমার ওষ্ঠদয়ে সর্ব্বদা দয়ার ব্যবস্থা থাকুক । খ্রীষ্টে নূতন জীবন যাপনের জন্য যাহারা পুর্নজন্ম প্রাপ্ত হইয়াছে, তাহাদের বাক্যে ও কার্য্যে সহিষ্ণুতা ও নিঃস্বার্থপরতা বিরাজ করুক । 17T 45-50 CCh 358.1