Go to full page →

মাতার কার্য্যের পবিত্রতা CCh 383

উৎপত্তিতেই ঈশ্বরের পরিকল্পনা ছিল যে, নারী স্বামীর সমকক্ষ হইয়া কার্য্য করিবেন । জগতের, মাতার প্রয়োজন ; যাঁহারা কেবল মাত্র নামে মাতা, তাঁহাদের নহে, কিন্তু নামের সার্থকতা যাঁহাদের দ্বারা হয়, তদ্রূপ মাতা । আমরা নিঃসঙ্কোচে বলিতে পারি যে, নারীর বিশেষ কর্ত্তব্য-কর্ম্মগুলি পুরুষের কর্ত্তব্য-কর্ম্ম অপেক্ষা অধিকতর পবিত্র ও ধর্ম্ম সঙ্গত । নারীর কর্ত্তব্য তাঁহার কার্য্য উপলব্ধি করা এবং ঈশ্বরের পরাক্রমে ও তাঁহার ভয়ে জীবনের কার্য্যভার বহন করা । এই জগতের কার্য্যের জন্য ও অধিকতর উত্তম জগতে বসবাসের নিমিত্ত মাতার কর্ত্তব্য, তাঁহার সন্তানসন্ততিগণকে সুশিক্ষিত করে তোলা । CCh 383.2

সম্পূর্ণরূপে স্বামীর উপরে নির্ভর করিয়া স্ত্রী ও মাতা যেন তাঁহার ক্ষমতা না হারান এবং তাঁহার শক্তি নিস্ক্রিয় হইতে না দেন । স্ত্রীর ব্যক্তিত্ব স্বামীতে কবলিত করা যায় না । তাঁহার ইহা মর্ম্মে মর্ম্মে অনুভব করা কর্ত্তব্য যে, স্বামীর পার্শ্বে দণ্ডায়মান থাকিবার নিমিত্ত তিনি আপন স্বামীর সমকক্ষ এবং তিনি নিজ কর্ত্তব্য-কর্ম্মে বিশ্বস্ত । স্বামী যে কোন দায়িত্বপূর্ণ পদে প্রতিষ্ঠিত হইলে, এমন কি জাতির প্রধান শাসন-কর্ত্তা হইলেও তাঁহার পদ যেরূপ উন্নত ও মর্য্যাদা-সম্পন্ন, সন্তানসন্তনিগণের শিক্ষা-কার্য্যে মাতার পদও সর্ব্ববিষয়ে তেমনি উন্নত ও মর্য্যাদাসম্পন্ন । CCh 383.3

সিংহাসনোপবিষ্ট রাজার কার্য্য মাতার কার্য্য অপেক্ষা কোন অংশে শ্রেষ্ঠ নহে । মাতা তাঁহার পরিবারের রাণী । তাঁহার সন্তান-সন্ততিগণ যেন উন্নততর অনন্তজীবনের অধিকারী হইতে পারে, তজজন্য তাহাদের চরিত্র গঠন কল্পে তাঁহার শক্তি অসীম । এই উচ্চতর কার্য্যের উদ্দেশ্যে কোন দূতকে নিয়োজিত করা হয় নাই ; এই কার্য্য সম্পাদন করিয়া মাতা ঈশ্বরেরই কার্য্য সাধন করিয়া থাকেন । তাঁহার কার্য্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করিতে পারিলেই তিনি সাহসে অনুপ্রাণিত হইবেন । তিনি যেন তাঁহার কার্য্যের মূল্য উপলব্ধি করেন ; জগতের রীতিনীতির অনুসরণ করিয়া চলিবার যে প্রলভন আইসে, তিনি যেন তাহার প্রতিরোধ করিতে পারেন, তজজন্য তিনি ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধ-সজজা পরিধান করুন । কারণ তাঁহার কার্য্য যেমন এখনকার নিমিত্ত, তেমনি অনন্তকালের নিমিত্ত । CCh 384.1

সন্তানসন্ততিগণের তত্ত্বাবধানের নিমিত্ত স্ত্রীগণকে গৃহে রাখিয়া স্বামীরা কার্য্যক্ষেত্রে গমন করতঃ স্বামী ও পিতা যেরূপ মহৎ ও আবশ্যক কার্য্য সাধন করেন, স্ত্রী ও মাতাও তেমনি সম্পূর্ণরূপে সেই একই মহৎ ও আবশ্যক কার্য্য সাধন করেন গৃহে থাকিয়া । যদিও ইঁহাদের একজন মিশনারী ক্ষেত্রে কার্য্য করেন ও অন্যজন হোম-মিশনারী, তথাপি তাঁহার যত্ন, উদ্বেগ ও বোঝা, স্বামী ও পিতার যত্ন, উদ্বেগ ও বোঝা অপেক্ষা প্রায়ই বহুগুণ অধিক । তাঁহার কার্য্য অতি পবিত্র ও গুরুতর । প্রকাশ্য মিশনারী ক্ষেত্রে কার্য্য করিয়া স্বামী হয়তো লোকের নিকট হইতে সম্মান লাভ করিতে পারেন, কিন্তু গৃহে থাকিয়া অক্লান্ত পরিশ্রম করিয়াও স্ত্রী তাঁহার পরিশ্রমের জন্য কোন পার্থিব শ্রদ্ধা প্রাপ্ত হন না । তিনি যদি তাঁহার পরিবারের মঙ্গলার্থে আপ্রাণ চেষ্টা করিয়া ঐশ্বরিক আদর্শে তাঁহার চরিত্র গঠন করেন, তবে হিসাব রক্ষক দূত তাঁহার নাম, জগতের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ মিশনারীগণের নামের সঙ্গে লিখিয়া রাখেন । সীমাবদ্ধ দৃষ্টিতে মানব যেমন দেখিয়া থাকে, ঈশ্বর সেরূপ দেখেন না । CCh 384.2

জগৎ ভ্রষ্ট প্রভাবে পরিপূর্ণ । যুবক যুবতিগণের উপরে সৌখিনতা বা বাবুগিরি ও রীতিনীতির শক্তি অতি প্রবল । মাতা যদি তাঁহার সন্তান-সন্ততিগণকে শিক্ষা দিতে, পরিচালিত করিতে ও সংযত রাখিতে অসমর্থ হন, তবে তাঁহার সন্তানগণ স্বভাবতঃই ভাল হইতে প্রত্তাবর্ত্তন করিয়া মন্দের দিকে ধাবিত হইবে । প্রত্যেক মাতা প্রার্থনায় সর্ব্বদা ত্রাণকর্ত্তার নিকট যাইয়া বলুন, “হে প্রভু, সন্তানকে কি ভাবে সুনিয়ন্ত্রিত করিব, এবং তাহার প্রতি কি করিব, তাহা আমাদিগকে শিক্ষা দান করুন ।” ঈশ্বর স্বীয় বাক্যে যে উপদেশ দান করিয়াছেন, তিনি তাহাতে মনোনিবেশ করুন ; তাহাতে প্রয়োজন অনুযায়ী তাঁহাকে বিজ্ঞতা দত্ত হইবে । CCh 385.1

প্রত্যেক মাতা হৃদয়ঙ্গম করুন যে, তাঁহার মুহূর্ত্তগুলি অমুল্য ; ভয়াবহ বিচার দিনে তাঁহার কার্য্যের হিসাব দিতে হইবে । তখন দেখা যাইবে যে, শিশুগণকে সুপথে চালান যাঁহাদের কর্ত্তব্য ছিল, তাঁহাদের অবহেলা ও কর্ত্তব্য জ্ঞানের অভাব প্রযুক্ত বহু অকৃত-কার্য্যতার ও অপরাধের সৃষ্টি হইয়াছে । যাঁহারা প্রতিভার, সত্যের ও পবিত্রতার দীপ্তিতে জগৎকে আশির্ব্বাদযুক্ত করিয়াছেন, প্রার্থনাশীলা খ্রীষ্টীয়ান মাতার মূলনীতিগুলিই এমন অনেকের প্রভাবের ও কৃতকার্য্যতার নিদান । CCh 385.2