ঈশ্বর যে সকল বিষয় তাঁহার নিকট প্রকাশ করিয়াছেলেন, এলেন হোয়াইট্ ৭০ বৎসর পর্য্যন্ত সেই সকল বিষয় বলিয়া এবং লিখিয়া গিয়াছেন। যাহারা বাইবেলের সত্য হইতে ভ্রষ্ট হইয়া পড়িয়াছিল, তাঁহাদের সংশোধনের নিমিত্ত বহুবার পরামর্শ দেওয়া হইয়াছিল। ঈশ্বরের লোকেরা যে পথের অনুসরণ করিবে বলিয়া ঈশ্বর চাহিতেন, অনেক সময়ে সাক্ষের বাক্য সমূহে তাহাই দেখান হইত। কখন-কখন গৃহে ও মণ্ডলীতে সাক্ষ্য দেওয়া হইত। এই সকল বার্ত্তা মণ্ডলীর সভ্যগণ কি ভাবে গ্রহণ করিয়াছিলেন? CCh 58.1
মিসেস্ হোয়াইট্ যথার্থই ভাববাণীর দান পাইয়াছেন কি না তদ্বিষয়ে নিঃসন্ধিগ্ধ হইবার নিমিত্ত দায়িত্বপূর্ণ নায়কেরা আরম্ভ হইতেই তাঁহার কার্য্য পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছেন। প্রেরিত পৌল বলেন, “ভাবরাণী তুচ্ছ করিও না। সর্ব্ববিষের পরীক্ষা কর; যাহা ভাল তাহা ধরিয়া রাখ।” ১ থিষলনীকীয় ৫:২০, ২১। ভাববাদীগণকে পরীক্ষা করিয়া লইবার জন্য বাইবেলে নিয়ম আছে, মিসেস্ হোয়াইটের কার্য্যও সেই নিয়ম দ্বারা পরীক্ষা করিয়া লওয়া হইয়াছিল। আর তিনিও উহা চাহিয়াছিলেন। কারণ তিনি লিখিয়াছিলেন ঃ- “এই কার্য্য ঈশ্বরের কার্য্য, কিংবা ইহা একেবারেই ঈশ্বরের কার্য্য নহে। ফলতঃ শয়তানের অংশীদার হইয়া ঈশ্বর কিছুই করেন না। আমার গত ৩০ বৎসরের কার্য্যে হয় ঈশ্বরের ছাব, নতুবা শয়তানের ছাব অঙ্কিত রহিয়াছে। এই ব্যাপারে কোন আধা আধি ভাগ নাই।” CCh 58.2
ভাববাদী পরীক্ষা করিয়া লইবার জন্য বাইবেলে ৪টী পরীক্ষা আছে। প্রত্যেক পরীক্ষায়ই মিসেস্ হোয়াইটের কার্য্য স্থায়ী হইয়াছে। CCh 58.3
১। যথার্থ ভাববাদীর বার্ত্তা, ঈশ্বরের ব্যবস্থার ও ভাববাদীগণের বার্ত্তাসমূহের অনুরূপ হইবে। (যিশাইয় ৮:২০।) CCh 58.4
ঈ, জি, হোয়াইটের লেখনীগুলি ঈশ্বরের ব্যবস্থাকে উন্নত করে এবং নরনারিগণকে সর্ব্বতভাবে বাইবেলের দিকে সর্ব্বদাই চালাইয়া লইয়া যাই। তিনি বাইবেলকে বিশ্বাসের ও কার্য্যের মূলনীতি এবং বৃহৎ জ্যোতি বলিয়া নির্দ্দেশ করেন। তাঁহার লেখনীগুলি,- বা “ক্ষুদ্রতর জ্যোতিটী”- ইহা অধ্যয়নকারী সকলকে ঐ বৃহৎ জ্যোতির নিকটে চালাইয়া লইয়া যায়। CCh 59.1
(২) সত্য ভাববাদীর ভবিষ্যদ্বাণীগুলি সফল হওয়া আবশ্যক। (যির ২৮:৯) CCh 59.2
মিসেস্ হোয়াইটের কার্য্য অনেকাংশে মোশির কার্য্যের ন্যায় লোকদিগকে চালাইয়া লইয়া যাইবার কার্য্য ছিল, তথাপি তিনি অনেক ঘটনা ভবিষ্যদ্বাণী করিয়াছেন। ১৮৪৮ খৃষ্টাব্দে যখন আমাদের ছাপাখানার কার্য্য আরম্ভ হয়, তখনই তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করিয়াছিলেন যে, এই কার্য্য বৃ্দ্ধি পাইয়া সমুদয় পৃথিবীকে ইহার দীপ্তিতে পরিবেষ্টিত করেবে। এই বাক্যের সফলতার প্রমাণ স্বরূপ অধুনা দেখিতে পাই, সেভেন্থ- ডে- এ্যাডভেণ্টিষ্টগণ ২০০ ভাষায় পুস্তক পুস্তিকা প্রকাশ করিয়াছেন, আর উহার মূল্য বৎসরে ১০০০০০০০০ টাকারও অধিক। CCh 59.3
১৮৯০ খৃষ্টাব্দে জগতের প্রধান জাতিগণ যখন ঘোষণা করিয়াছেলেন যে, আর যুদ্ধ হইবে না এবং বর্ষ সহস্রের শান্তি- রাজ্য নিকটবর্ত্তী হইতেছে, তখন এলেন হোয়াইট্ লিখিয়াছেন, “ঝটিকা বা দাঙ্গাহাঙ্গামা আসিতেছে; ইহার প্রচণ্ডতার জন্য আমাদের প্রস্তুত হইতেই হইবে।......... আমরা চতুর্দ্দিকে গণ্ডগোল দেখিতা পাইব, সহস্র সহস্র জাহাজ সমুদ্রের অতল গহ্বরে নিমজিজত হইবে। রণতরী সমূহ ডুবিয়া যাইবে এবং লক্ষ্য লক্ষ্য মানব মৃত্যুর করালগ্রাসে নিপতিত হইবে।” ইহা প্রথম ও দ্বিতীয় মাহাযুদ্ধে সফল হইয়াছে। CCh 59.4
(৩) সত্য ভাববাদী যীশু খ্রীষ্টকে মাংসে আগত, ঈশ্বর মাংসে মূর্ত্তিমান হইয়াছিলেন বলিয়া স্বীকার করিবে। (১ যোহন ৪:২।) CCh 59.5
এলেন, জি, হোয়াইট্ প্রণীত Desire of Ages নামক গ্রন্থখানি পাঠে সুস্পষ্টরূপে জানা যাইবে যে, তাঁহার লেখনীগুলি এই পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হইয়াছে। কথাগুলি লক্ষ্য করুনঃ- যীশু পিতার পার্শ্বেই থাকিতে পারিতেন। তিনি স্বর্গের গৌ্রব এবং দূতগণের সম্মান ও ভক্তি ধরিয়া রাখিতে পারিতেন। কিন্তু তিনি তাহা না করিয়া অন্ধকারবাসিগণের কাছে দীপ্তি ও ধ্বংসোম্মুখ লোকদের নিকট জীবন আনয়ন করিবার জন্য, পিতার হস্তে রাজদণ্ড প্রত্যর্পণ করা এবং বিশ্বের সিংহাসন হইতে অবতরণ করা মনোনীত করিয়া লইলেন। CCh 60.1
প্রায় দুই সহস্র বৎসর পুর্ব্বে স্বর্গে ঈশ্বরের সিংহাসন হইতে নিগূঢ় অর্থ ব্যঞ্জক এই রব শ্রুত হইল, ’ দেখ আমি আসিয়াছি।’ ‘তুমি যজ্ঞ ও নৈবেদ্য ইচ্ছা কর নাই, কিন্তু আমার জন্য দেহ রচনা করিয়াছ......... দেখ, আমি আসিয়াছি (গ্রন্থখানিতে আমার বিষয় লিখিত আছে) হে ঈশ্বর, যেন তোমার ইচ্ছা পালন করি।’ ইব্রীয় ১০:৫-৭। অনন্ত কাল হইতে যে উদ্দেশ্য গুপ্ত ছিল, এই সকল বাক্যে তাহারই পূর্ণতার বিষয় বলা হইয়াছে। খ্রীষ্ট আমাদের জগৎ পরিদর্শন করিতে ও মাংসে মূর্ত্তিমান হইতে উদ্যত ছিলেন। ...... জগতের দৃষ্টিতে তাঁহার কোন সৌন্দর্য্য ছিল না যে, লোকেরা তাহাতে মুগ্ধ হইতে পারে; তথাপি তিনি মাংসে আগত ঈশ্বর, স্বর্গের ও পৃথিবীর জ্যোতি। তাঁহার গৌরব আচ্ছাদিত হইয়াছিল। তিনি যেন দুঃখার্ত্ত ও পরীক্ষিত লোকদের নিকটবর্তী হইতে পারেন, তজজন্য তাঁহার মহত্ত্ব ও প্রাধান্য লুক্কায়িত রাখা হইয়াছিল।” CCh 60.2
(৪) সত্য ভাববাদীর সর্ব্বাপেক্ষা কঠিনতম পরীক্ষা হইবে, সম্ভবতঃ তাঁহার জীবন, কার্য্য ও শিক্ষার প্রভাবের দ্বারা। মথি ৭:১৫, ১৬ পদে খ্রীষ্ট স্বযং এই পরীক্ষার বিষয় বিবৃতি দিয়াছেন; - “তোমরা তাঁহাদের ফল দ্বারাই তাহাদিগকে চিনিতে পারিবে।” CCh 60.3
এলেন জি, হোয়াইটের জীবনী পর্য্যালোচনা করেলে আমরা স্বীকার করিতে বাধ্য হইব যে, একজন ভাববাদীর যে যে গুন থাকা প্রয়োজন, তাহার সকলই ছিল এবং তিনি তাহার শিক্ষানুযায়ী সঙ্গত খ্রীষ্টীয় জীবন যাপন করিয়া গিয়াছেন। যাঁহারা ভাববাণীর আত্মার পরামর্শানুযায়ী জীবন যাপন করিয়া গিয়াছেন, তাঁহাদের জীবনে যে ফল দেখা যায়, তাহা ভালই দেখা যায়। সাক্ষ্যের বাক্যানুযায়ী বিভিন্ন বিভাগীয় কার্য্যে পরিচালিত হইয়া আমরা স্বীকার করিতে বাধ্য হই যে, মিসেস্ হোয়াইটের কেখনী এই পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হইয়াছে। ৭০ বৎসরেরও অধিক কাল ব্যাপীয়া তিনি এই যে সকল শিক্ষা লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন, তাঁহাদের মধ্যে যে পূর্ণ সামঞ্জস্য দেখা যায়, তাহাও ভাববাণীর দানের পূর্ণতার একটী জলন্ত সাক্ষী। CCh 60.4