যীশু স্বীয় ভক্তগণের নিমিত্ত যে সুরম্য বাসস্থান প্রস্তুত করিতে গিয়াছেন, তথায় লইয়া যাইবার নিমিত্ত তিনি কখন্ ফিরিয়া আসিবেন, তৎ প্রতীক্ষায় সমুদয় সেভেন্থ-ডে-এ্যাডভেন্টিষ্টই উৎকণ্ঠিত নেত্রে পথপানে চাহিয়া আছেন। সেই সুন্দর স্বর্গীয় আবাস গৃহে কোন পাপ, কোন নিরাশা, কোন ক্ষুধা, কোন দরিদ্রতা, কোন ব্যাধি ও কোন মৃত্যু অবস্থিতি করিবে না। বিশ্বস্তদিগের জন্য ভবিষ্যতে যে সকল বিশেষ অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা রহিয়াছে, তদ্বিষয় চিন্তা করিয়া প্রেরিত যোহন হর্ষোৎফুল্ল হইয়া কহিলেন, “দেখ, পিতা আমাদিগকে কেমন প্রেম প্রদান করিয়াছেন যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান বলিয়া আখ্যাত হই ......... এখন আমরা ঈশ্বরের সন্তান; এবং কি হইব, তাহা এপর্য্যন্ত প্রকাশিত হয় নাই। আমরা জানি, তিনি যখন প্রকাশিত হইবেন, তখন আমরা তাঁহার সমরুপ হইব।” ১ যোহন ৩ : ১, ২। CCh 13.1
ঈশ্বরের লোকদের স্বভাব, যেন যীশুর স্বভাবের মত হয়, ইহাই ঈশ্বরের আকাঙ্খা। ঈশ্বরের প্রতিমুর্ত্তিতে — সৃষ্ট-মানব-পরিবারের সকলেই যেন তাঁহার স্বভাবের মত স্বভাব বিশিষ্ট হয়, আদি হইতে ইহাই ছিল ঈশ্বরের অভিপ্রায়। তাঁহার এই সুবাসনা পূরনার্থে আমাদের আদি মাতা-পিতার প্রধান কর্ত্তব্য ছিল — এদন উদ্যানে খ্রীষ্টের ও পবিত্র দূতগণের সহিত সম্মুখাসম্মুখী আলাপ করিয়া শিক্ষা গ্রহন করা। কিন্তু মানব পাপে পাতিত হওয়ার পর, তাঁহারা স্বর্গীয় বাক্তিগনের সহিত এইরূপ ভাবে অবাধে আর আলাপ করিতে পারিলেন না। CCh 13.2
মানব যেন পথ প্রদর্শক বিহীন না থাকে, এজন্য ঈশ্বর স্বীয় লোকদের নিকট নিজ অভিপ্রায় প্রকাশার্থে অন্যবিধ উপায়রাশি নির্ব্বাচন করিলেন, ইহাদের মধ্যে ভাববাদিগণই প্রধান ইঁহারা এমন পুরুষ ও স্ত্রীলোক, যাঁহারা ঈশ্বরের নিকট হইতে বার্ত্তা পাইয়া তাঁহার লোকদের নিকট পুনর্ব্বার তাহা ব্যক্ত করেন। ইস্রায়েলসন্তানগণের নিকট ঈশ্বর বলিয়াছিলেন যে, “তোমাদের মধ্যে যদি কেহ ভাববাদী হয়, তবে আমি সদাপ্রভু তাহার নিকটে কোন দর্শন দ্বারা আপনার পরিচয় দিব, স্বপ্নে তাহার সহিত কথা কহিব।” গণনা ১২ : ৬। CCh 13.3
ঈশ্বরের লোকেরা কোন্ কালে বসবাস করিতেছে, ইহা জানা এবং বুঝাই যে কেবল তাহাদের পক্ষে যথেষ্ট তাহা নহে, কিন্তু ভবিষ্যতে কি ঘটিবে, তাহাও তাহাদিগকে জানাইয়া দেওয়া এবং তদ্বিষয়ে জ্ঞানোদীপ্ত করাই ঈশ্বরের অভিপ্রায়। “নিশ্চয়ই প্রভু সদাপ্রভু আপনার দাস ভাবভাদিগনের নিকটে আপন গূঢ় মন্ত্রণা প্রকাশ না করিয়া কিছুই করেন না।” আমোষ ৩ : ৭। এইস্থানেই জগতের লোকদের সহিত ঈশ্বরের লোকদের অর্থাৎ “দীপ্তির সন্তানদের” (১ থিষলনীকীয় ৫ : ৫) বৈষম্য দৃষ্ট হয়। CCh 14.1
পরে কি ঘটিবে, কেবল তৎসম্বন্ধে ভবিস্যদ্বানী করাই ভাববাদীর কার্য্য নহে; তাঁহার কার্য্য ইহা অপেক্ষা আরও অনেক বেশী। মোশি ঈশ্বরের একজন ভাববাদী ছিলেন, তিনি বাইবেলের ৬ খানি পুস্তক লিখিয়াছিলেন ; কিন্তু ভবিষ্যতে কি ঘটিবে তদ্বিসয় তিনি অল্পই লিখিয়া গিয়াছেন। হোশেয় ভাববাদী মোশির কার্য্য সম্বন্ধে সুস্পষ্ট রূপে বলেন যে, “সদাপ্রভু একজন ভাববাদী দ্বারা ইস্রায়েলকে মিসর হইতে আনিয়াছিলেন; আর একজন ভাববাদী দ্বারা সে পালিত হইয়াছিল।” হোশেয় ১২ : ১৩। CCh 14.2
কেহই নিজে নিজে ভাববাদী হইতে পারেনা, অথবা কোন মানব তাহাকে ভাববাদী পদে নিযুক্ত করিতে পারেনা। যিনি মানব-অন্তঃকরন দেখিতে ও জানিতে পারেন, একমাত্র সেই ঈশ্বরই ভাববাদী মনোনীত করিতে পারেন। ঈশ্বরের প্রজাবৃন্দের ইতিহাসে সুস্পষ্ট রূপে দেখিতে পাওয়া যায় যে, ঈশ্বরের জন্য কথা বলিবার নিমিত্ত পুরুষ ও স্ত্রী এই উভয়ের মধ্য হইতেই ঈশ্বর লোক মনোনীত করিয়াছেন। পবিত্র দর্শনে ঈশ্বর এই সকল ভাববাদীর — পুরুষ ও স্ত্রী লোকের নিকটে যাহা যাহা প্রকাশ করিয়াছেন, তাঁহারা তাহা মুখে বলিয়া এবং হাতে লিখিয়া মানবের নিকট ব্যক্ত করিয়াছেন। ঈশ্বরের বহুমূল্য বাক্যই তাঁহাদের বার্ত্তার অন্তর্ভুক্ত হইয়াছে। মানবগণের আত্মার নিমিত্ত, খ্রীষ্ট ও তাঁহার দূতগণের সহিত শয়তান ও তাহার দূতগণের প্রতিনিয়ত যে মহা-সংগ্রাম চলিতেছে, এই সকল ভাববাদীর সাহায্যেই মানবগণ তাহা সবিশেষ অবগত হইতে পারে। জগতের অন্তিম কালের এই মহাসংগ্রাম সম্বন্ধে ও তাঁহার কার্য্য যেন সুচারুরূপে পরিচালিত হয় এবং যে সকল নরনারী তাঁহাদের প্রভুর সহিত সাক্ষাৎ করিবার জন্য অপেক্ষায় আছেন, তাঁহাদের চরিত্র যেন বিশুদ্ধ হয়, তজ্জন্য ঈশ্বর যে সকল উপায় দান করিয়াছেন, সেই সকল সম্বন্ধে আমাদিগকে সম্যকরূপে বুঝাইয়া দেওয়া হইয়াছে। প্রেরিতগণ বা শেষ বাইবেল লেখকগন, শেষকালের ঘটনাদি সম্বন্ধে আমাদিগকে একটী সুস্পষ্ট চিত্র দান করিয়াছেন। প্রেরিত পৌল শেষ-কালের “বিষম সময়” সম্বন্ধে লিখিয়া গিয়াছেন এবং প্রেরিত পিতর সতর্ক করিয়া দিয়াছেন যে, “শেষকালে উপহাসের সহিত উপহাসকেরা উপস্তিত হইবে; তাহারা আপন আপন অভিলাষ অনুসারে চলিবে এবং বলিবে ” তাঁহার আগমনের প্রতিজ্ঞা কোথায় ?” মণ্ডলী এই সময় সংগ্রামে লিপ্ত থাকিবে, বস্তুতঃ যোহন দেখিলেন, শয়তান “অবশিষ্ট লোকদের সহিত... যুদ্ধ করিতে গেল।” CCh 14.3
এই সকল বাইবেল-লেখকগন দর্শনে দেখিতে পাইলেন যে, যীশুর আগমনের পূর্ব্বে তাঁহার লোকদের সাহায্য করা ও তাহাদিগকে বিশেষ জ্যোতি প্রদান করা ঈশ্বরের অভিপ্রায়। CCh 15.1
প্রেরিত পৌলের বর্ণনা এই — যে এ্যাডভেন্টিষ্ট মণ্ডলী ব্যগ্রমনে খ্রীষ্টের দ্বিতীয় আগমনের অপেক্ষায় আছে, তাহা কোন বরে পিছাইয়া থাকিবেনা ; (১ করিন্থীয় ১ : ৭, ৮)। এই মণ্ডলী হইবে, যুক্ত-মণ্ডলী, পূর্ণাঙ্গ মণ্ডলী। ইহা হইবে উত্তম নায়কের ও ভাব্বানীর আত্মার দানের দ্বারা আশীর্ব্বাদযুক্ত। কারণ, ইহার মধ্যে দেখা যাইবে প্রেরিতগণকে, ভাব্বাদিগণকে, প্রচারকদিগকে, পালক এবং শিক্ষকদিগকে। (ইফিষীয় ৪ : ১১)। CCh 15.2
প্রেরিত যোহন শেষকালের মণ্ডলীর সভ্যদিগকে “অবশিষ্ট মণ্ডলী” —“যহারা ঈশ্বরের আজ্ঞাপালন করে” (প্রকাশিত ১২ঃ১৭) বলিয়া সনাক্ত করেন; আর এইরূপে তিনি তাহাদিগকে ঈশ্বরের আজ্ঞাপালঙ্কারী মণ্ডলী বলিয়া অভিহিত করেন। এই অবশিষ্ট মণ্ডলীতে “যীশুর সাক্ষ্য” বা “ভাববানীর আত্মা” বিদ্যমান থাকিবে। (প্রকাশিত ১৯ঃ১০)। CCh 16.1
তাহা হইলে সুস্পষ্টরূপে বুঝা যাইতেছে যে, সেভেন্থ-ডে-এ্যাডভেন্টিষ্ট মণ্ডলীর- বা ভাববানীর মণ্ডলীর যখন উদ্ভব হইবে, তখন ইহার মধ্যে ভাববানীর আত্মা থাকিবে, ইহাই ঈশ্বরের অভিপ্রায়। বহু শতাব্দী পুর্ব্বে বিশেষ আবশ্যকতার সময়ে ঈশ্বর যেমন তাঁহার লোকদের নিকট কথা বলিতেন, তেমনি জগতের এই অন্তিমকালে যখন শয়তানের সহিত গুরুতর সংগ্রাম চলিতেছে এবং বিষম সময় উপস্থিত হইয়াছে, তখন ঈশ্বর তাঁহার লোকদের নিকটে কথা বলিবেন, ইহা কতই না যুক্তিযুক্ত? CCh 16.2
ভবিষ্যতবাণীতে যে সময়ের নির্দ্দেশ দেওয়া হইয়াছে, ঠিক্ সেই সময়ে- একশত বৎসরের কিঞ্চিৎ অধিক পুর্ব্বে- যখন এই ভাববাণীর মণ্ডলীর- বা সেভেন্থ-ডে-এ্যাডভ্যান্টিষ্ট মণ্ডলীর অভ্যুদয় হয়, তখন এই বলিয়া একটী রব আমাদের মধ্যে শ্রুত হয়, - “ঈশ্বর আমাকে পবিত্র দর্শনে দেখাইয়াছেন।” CCh 16.3
এই বাক্যগুলি গর্ব্বের সহিত বলা হয় নাই, কিন্তু ঐ গুলি সতের বৎসর বয়স্কা এমন একটী বালিকার উক্তি, যাঁহাকে ঈশ্বর তাঁহারই জন্য কথা বলিবার নিমিত্ত আহ্বান করিয়াছিলেন। সত্তর বৎসর ব্যাপী বিশ্বস্ত পরিচর্য্যার মধ্য দিয়া ঐ রব আমাদের মধ্যে শ্রুত হইয়াছে। ইহা আমাদিগকে চালাইয়াছে, সংশোধন করিয়াছে ও শিক্ষা দিয়াছে। ঈশ্বরের মনোনীতা বার্ত্তাবাহিকা মিসেস্ ঈ, জি, হোয়াইট্ তদীয় অক্লান্ত লেখনী দ্বারা সহস্র পৃষ্ঠায় আমাদের জন্য যে সকল উপদেশবাণী লিখিয়া গিয়াছেন, সেই সকলের মধ্য দিয়া অদ্যও সেই রব শ্রুত হইতেছে। CCh 16.4