আহার সম্বন্ধীয় সংস্কারে প্রকৃত সাধারণ জ্ঞান দেখিতে পাওয়া যায়। এই বিষয়টী সম্বন্ধে বিশদরূপে ও গভীর ভাবে চচর্চা কইয়া দেখা কর্ত্তব্য এবং অন্যদের অভ্যাস সর্ব্ববিষয়ে তাহার নিজের অভ্যাসের মত নয় বলিয়া অন্যের দোষ ধরা বা অন্যের সমালোচনা করা উচিত নহে। প্রত্যেকের অভ্যাস সুনিয়ন্ত্রিত করণার্থে একরূপ নিয়ম করা অসম্ভব, এবং কারাহও ইহা চিন্তা করা উচিত নহে যে, সে-ই সকলের নির্ণায়ক। সকলেই একরূপ খাদ্য খাইতে পারে না। যে খাদ্য সামগ্রী একজনের পক্ষে রসনা তৃপ্তিকর ও স্বাস্থ্যজনক, সেই দুগ্ধ ব্যবহার করিতে পারে না, আবার অন্যেরা ইহাতেই বাড়িয়া উঠে। কেহ কেহ শিম ও মটর হজম করিতে পারে না; আবার অন্যদের পক্ষে ঐ গুলি উপকারী। কাহারও কাহারও পক্ষে মোটা শস্যের আহার্য্য উত্তম, আবার অন্যেরা উহা খাইতেই পারে না। 23MH 319, 320; CCh 541.1
যাহাদের আহারের মন্দ অভ্যাস জন্মিয়াছে, তাহাদের অবিলম্বে উহা সংশোধন করা কর্ত্তব্য। পাকস্থলীর অপব্যবহারে যাহাদের অজীর্ণ রোগ জন্মিয়াছে, তাহাদের কর্ত্তব্য পাকস্থলীর প্রত্যেক অতিরিক্ত খাটুনির ভার অপসারিত করিয়া প্রধান শক্তির অবশিষ্ট বল সযত্নে রক্ষা করিবার চেষ্টা করা। বহুদিন পর্য্যন্ত অপব্যবহারের পর, পাকস্থলী হয়তো কখনও আর পূর্ণ স্বাস্থ্য লাভ করিতে নাও পারে; কিন্তু যথোপযুক্ত আহারের ফলে আর অধিক দুর্ব্বলতার আইসে না, এবং অনেকে অল্প বিস্তর সুস্থ হইয়া উঠে। CCh 541.2
যে সকল বলবান ব্যক্তি শারীরিক পরিশ্রমে তৎপর, অলস স্বভাবের লোকদের কিংবা উপবেশনশীল কর্ম্মীর ন্যায় খাদ্যের পরিমাণ বা খাদ্যের প্রকার ভেদের বিষয় তাহাদের তত সতর্ক হওয়া প্রয়োজন হয় না; কিন্তু খাদ্য ও পানীয়ে তাহারা যদি আত্মসংযম করিতে অভ্যস্ত হইত, তাহা হইলে এমন কি ইহারাও অধিকতর উত্তম স্বাস্থ্য লাভ করিতে পারিত। CCh 541.3
কেহ কেহ চাহে যেন, তাহাদের আহার্য্য দ্রব্য সম্বন্ধে একটা বাঁধা নিয়ম করিয়া দেওয়া হয়। এক জন অন্য এক জনের জন্য কোন নির্দ্দষ্ট নিয়ম করিয়া দিতে পারে না। প্রত্যেকেরই বুদ্ধি বিবেচনা পূর্ব্বক চলা এবং আত্মসংযমী হওয়া ও নীতি আনুযায়ী কার্য্য করা উচিত। 24MH 308, 310; CCh 542.1
খাদ্য সংস্কার উন্নতিশীল হওয়া আবশ্যক। প্রাণিগণের মধ্যে রোগ বাড়িয়া যাইতেছে বলিয়া দুগ্ধ ও ডিম্বের ব্যবহারও উত্তরোত্তর বিপদ সঙ্কুল হইয়া পড়িতেছে। এজন্য অন্যান্য যাহা কিছু স্থাস্থ্যকর ও ব্যয়-স্বল্প তদ্দ্বারা ঐ সকলের স্থান পূরণের চেষ্টা করা কর্ত্তব্য। যতদূর সম্ভব, সর্ব্বস্থানের লোকদের সুগ্ধ ও ডিম্ব ব্যতীত রন্ধন করিতে শিক্ষা করা কর্ত্তব্য; তথাপি দেখিতে হইবে যেন খাদ্য সামাগ্রী উপকারী ও সুস্বাদু হয়। CCh 542.2
দেহের যত্ন না লইলে অথবা ইহার অপব্যবহার করিলে ঈশ্বরের প্রতি অনাদর প্রদর্শন করা হয়; আর এইরূপে তাঁহার শেষ কার্য্যের অনুপযুক্ত হইয়া পড়িতে হয়। গৃহাধাক্ষের প্রথম কর্ত্তব্য সুস্বাদ বলকর খাদ্য যোগাইয়া দেহের উপযুক্ত যত্ন লওয়া। খাদ্যসামাগ্রী কমাইয়া দেওয়া অপেক্ষা পোষাক-পরিচ্ছদ ও গৃহাদির আস্বাব্পত্রের খরচ কমান বহুলাংশে শ্রেয়ঃ। CCh 542.3
অতিথিকে মূল্যবান ভোজে তৃপ্ত করিবার জন্য কোন গৃহকর্ত্তা পারিবারিক আহার্য্য-ব্যয় কমাইয়া দেন। কিন্তু ইহা বড়ই অবিবেচনার কার্য্য। অতিথি-সৎকারে অধিকতর সাদাসিধে ভাব প্রদর্শন করা কর্ত্তব্য। কারণ প্রথমে পারিবারিক অভাবের দিকে মনোনিবেশ করিতে হইবে। CCh 542.4
বিবেচনাশূন্য মিতব্যয়িতা ও কৃত্রিম রীতিনীতি অনেক সময়ে এমন অতিথি সেবায় বাধা জন্মায়, যাহা নিতান্ত আবশ্যক ও আশীর্ব্বাদ-জনক। আমাদের নিয়মিত বা দৈনন্দিন ভোজ্য দ্রব্য এরূপ হওয়া উচিত, যেন অনাহূত কোন অতিথি আসিলে তাহাকে অভ্যর্থনা করিতে গৃহকর্ত্রীর কোন প্রকার অতিরিক্ত খাটুনি খাটিতে না হয়। CCh 542.5
বিশেষ সতর্কতা সহকারে খাদ্য নির্ব্বাচন করিবেন। উৎপত্তি হইতে ফলাফল পর্য্যন্ত মনোযোগ সহকারে বিবেচনা করিয়া দেখিবেন। আত্ম সংযমী হইবেন। ক্ষুধাকে বিচারাধীন রাখিবেন। অতিরিক্ত আহার করিয়া পাকস্থলীকে কখনও অযথা খাটাইবেন না। আবার স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য যে সুস্বাদু ও হিতকর উপাদেয় খাদ্যের প্রয়োজন, তাহা হইতে নিজেকে বঞ্চিত করিবেন না। CCh 543.1
যাঁহারা স্বাস্থ্য-রক্ষার নিয়ম জানেন ও যাঁহারা নিয়মানু্যায়ী জীবন যাপন করেন, তাঁহারা অমিতাচার ও সংযম এই উভয়ের আতিশয্য বজর্জন করিবেন। তাঁহারা কেবল ক্ষুন্নিবৃত্তির নিমিত্ত খাদ্য সামগ্রী মনোনীত করিবেন না, কিন্তু দেহ গঠনের নিমিত্ত। সর্ব্বোত্তমরূপে ঈশ্বরের ও মানবের সেবা্র নিমিত্ত তাঁহারা তাঁহাদের প্রত্যেকটী শক্তি সংরক্ষিত করিতে চেষ্টা করিবেন। ক্ষুধা, বিচার ও বিবেকের কর্ত্তৃত্বাধীন ; আর তাঁহারা দেহের ও মনের স্বাস্থ্যের সহিত তাঁহাদের পুরস্কার প্রাপ্ত হইবেন। তাঁহারা যে পর্য্যন্ত না তাঁহাদের মতামতগুলি অন্যের অপ্রীতিকর করিয়া তুলেন, সে পর্য্যন্ত তাঁহাদের দৃষ্টান্ত যথার্থ নীতির অনুকূলে এক সাক্ষ্য সদৃশ। ভালর পক্ষে এই সকল লোকের প্রভাব স্থায়িরূপে সুদূর প্রসারী। 25MH 319-323; CCh 543.2
বিশ্রামদিনের খাদ্যোপকরণ অন্যদিন অপেক্ষা অধিকতর প্রচুর ও নানা প্রকারের না হইয়া বরং অধিকতর সাদাসিধে হওয়া ও আধ্যাত্মিক বিষয় সমূহ বুঝিবার জন্য মন যেন বিশুদ্ধ ও তেজস্কর থাকে, তন্নিমিত্ত অল্প আহার করা কর্ত্তব্য। CCh 543.3
বিশ্রামবারে রান্না বজর্জন করিতে হইবে ; কিন্তু তাই বলিয়া ঠাণ্ডা ভক্ষণের আবশ্যকতা নাই। শীতকালে পূর্ব্বদিনে-প্রস্তুত খাদ্য বিশ্রামবারে গরম করিয়া লওয়া যাইতে পারে। ভোজ্য দ্রব্য যতই সাদাসিধে হউক না কেন, উহা সুস্বাদু ও নয়নের তৃপ্তকর হওয়া আবশ্যক। বিশেষতঃ যে সকল পরিবারে বালকবালিকা আছে, সেই সকল পরিবারে বিশ্রামবারে এমন খাদ্যের আয়োজন করিতে হইবে, যাহা একটী ভোজ বলিয়া গৃহীত হইবে ও যাহা পরিবারস্থ সকলে অন্য দিনে খায় না। 25MH 307; CCh 543.4