নিজের নগণ্য ঐহিক সুখ-সুবিধা লাভার্থে সর্ব্বশক্তিমানের সহিত আপোষ নিষ্পত্তি করিবার দঃসাহস মর্ত্ত্য মানবের পক্ষে মহা ধৃষ্টতা। সময় CCh 101.3
সময় বিশ্রামবারে বৈষয়িক কাজকর্ম্ম করিলে তদ্দ্বারা যেমন নিদারুণরূপে ব্যবস্থা লঙ্ঘন করা হয়, তেমনি বিশ্রামবার একেবারে বাতিল করিলেও ব্যবস্থা লঙ্ঘন করা হয়। ফলতঃ মধ্যে বিশ্রামবার লঙ্ঘন করায় সদাপ্রভুর আজ্ঞাসকলকে একটু সবিধার ব্যাপার বলিয়া প্রতিপন্ন করা হয়। সদাপ্রভু সীনয় হইতে বজ্রনিনাদে ঘোষণা করিয়াছিলেন “আমি স্বগৌরব রক্ষণে উদ্যোগী ঈশ্বর। আমি পিতৃগণের অপরাধের প্রতিফল সন্তানদিগের উপরে বর্ত্তাই, যাহারা আমাকে প্রেম করে ও আমার আজ্ঞাসকল পালন করে, আমি তাহাদের সহস্র পুরুষ পর্য্যন্ত দয়া করি।” যিনি এই সকল ঘোষণা করিয়াছেলেন, তিনি কোন আংশিক বাধ্যতা বা আংশিক অনুরাগ গ্রাহ্য করেন না। কোন প্রতিবাসীকে ঠকান সামান্য বিষয় নহে; এ জন্য যাহারা ঐ দোষে দোষী তাহাদের কলঙ্কের আর সীমা থাকে না; তথাপি সহমানবকে প্রতারণা করার জন্য যে ব্যক্তি তাহাকে হেয় জ্ঞান করে, স্বর্গীয় পিতা যে সময়কে আশীর্ব্বাদ করিয়াছেন এবং বিশেষ উদ্দেশ্যের জন্য পৃথক্ করিয়া রাখিয়াছেন, সে নির্লজজভাবে তাহা অপহরণ করিতে একটুও কুণ্ঠা বোধ করে না।154T 249, 250; CCh 102.1
(বিশ্রামদিনে) অতি সতর্কভাবে চিন্তা করিতে ও কথা বলিতে হইবে। যাহারা বৈষয়িক ব্যাপার লইয়া আলাপ আলোচনা করে এবং বিশ্রামবারে সাংসারিক কার্য্যের পরিকল্পনা করে, ঈশ্বর আহাদের সম্বন্ধে মনে করিয়া থাকেন যে, তাহারা কার্য্যতঃই ব্যবসায়-সংক্রান্ত কাজ-কারবারে লিপ্ত। বিশ্রামবার পবিত্ররূপে পালন করিতে হইলে, এমন কি কোন সাংসারিক চিন্তাও মনে স্থান দেওয়া কর্ত্তব্য নহে।162TT 185; CCh 102.2
ঈশ্বর যাহা বলিয়াছেন, তিনি চাহেন, যেন মানব তাহা পালন করে। বস্ততঃউহা পালন করা মনুষ্যের পক্ষে সুবিধাজনক হইবে কিনা, তদ্বিষয়ে তিনি কোন প্রশ্নের স্থান দেন না। মানবকে তাহারা অবাধ্যতার পরিণামফল হইতে রক্ষার্থ ব্যথার পাত্র ও যাতনা পরিচিত হইবার এবং অপমান ও মৃত্যু ভোগ করিবার জন্য, যখন তিনি তাঁহার শ্রেষ্ঠ পদ ত্যাগ করিলেন, তখন জীবন ও গৌরবের প্রভু নিজের সুখস্বাচ্ছ্যন্দের দিকে আদৌ দৃষ্টিপাত করেন নাই। মানুষকে তাহার পাপের মধ্যে রক্ষার্থ নহে, কিন্তু পাপ হইতে রক্ষার্থ যীশু মৃত্যু ভোগ করিয়াছিলেন। এজন্য মানুষের কর্ত্তব্য- পথভ্রান্তি হইতে প্রত্যাবর্ত্তন করা খ্রীষ্টের দৃষ্টান্তের অনুসরণ করা, নিজের ক্রুশ তুলিয়া লইয়া খ্রীষ্টের পশ্চাদগামী হওয়া, আত্মত্যাগ করা বা নিজেকে অস্বীকার করা এবং যত ক্ষতিই হউক না কেন, ঈশ্বরের বাধ্য থাকা। CCh 102.3
জাগতিক লাভের জন্য বিশ্রামবারে কার্য্য করিয়া ঘতনাচক্রের দোহাই দিলেও নির্দ্দোষ প্রতিপন্ন হওয়া যাইবে না। ঈশ্বর একজনকে ক্ষমা করিলে, সকলকেই ক্ষমা করিতে পারেন। ভ্রাতা- ক, দরিদ্র লোক, জীবিকা নির্ব্বাহের জন্য বিশ্রামবারে কার্য্য করিয়া তিনি যখন অপেক্ষাকৃত ভালরূপে পরিবার প্রতিপালন করিতা পারেন, তখন তাহা করিতে দোষ কি? বিশ্রামবার পালন করা যখন সুবিধাজনক হয়, কেবল তখনই অন্যান্য ভ্রাতৃগণ কিংবা আমরা সকলে বিশ্রামবার পালন করি না কেন? ইহার উত্তরে সীনয় হইতে প্রভু কহেন, “ছয় দিন শ্রম করিও, আপনার সমস্ত কার্য্য করিও; কিন্তু সপ্তমদিন তোমরা ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশ্য বিশ্রাম দিন।” যাত্রা ২০:৯, ১০। CCh 103.1
বয়সের অজুহাত দেখাইয়া ঈশ্বরের আজ্ঞা সকল পালন হইতে বিরত থাকা যায় না। যেহেতু অব্রাহাম বৃদ্ধ বয়সে গুরুতরভাবে পরীক্ষিত হইয়াছিলেন। জরাজীর্ণ ব্যক্তির পক্ষে সদাপ্রভুর বাক্যগুলি যদিও অতিশয় ভয়াবহ ও অপ্রার্থিত ছিল, তথাপি ঐ সকল বাক্যকে তিনি কখনও অন্যায় বা অনুচিত বাক্য বলিয়া মনে করেন নাই, কিংবা ঐ সকল বাক্য পালন করিতে দ্বিধা বোধ করেন নাই। তিনি এই হেতু দর্শাইতে পারিতেন যে, তিনি অতিশয় বৃদ্ধ ও দুর্ব্বল, সুতরাং তিনি তাহার প্রাণের আনন্দদায়ক পুত্রটীকে বলিদান করিতে পারেন না। পুত্রটী সম্বন্ধে পূর্ব্বে যে সকল প্রতিজ্ঞা করা হইয়াছে, এই আজ্ঞাটী সেগুলির সম্পূর্ণ বিরুদ্ধভাবাপন্ন, ইহাও তিনি সদাপ্রভুকে স্মরণ করাইয়া দিতে পারিতেন। কিন্তু অব্রাহাম একটী মাত্র বচসা না করিয়া বা একটী মাত্র গালাগালিও না দিয়া, নিঃসঙ্কোচে ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিলেন। কারণ ঈশ্বরের তাঁহার বিশ্বাস ছিল অসন্দিগ্ধ।174T 250-253; CCh 103.2
যাহারা পবিত্ররূপে বিশ্রামদিন পালন করে না, তাহাদিগকে ভর্ৎসনা করা, যীশুর ধর্ম্মযাজকগণের অবশ্য কর্ত্তব্য। বিশ্রামবারে যাহারা বৈষ্যয়িক বিষয় সমূহ লইয়া কথাবার্ত্তা বলে, অথচ নিজেদিগকে শব্বাথ-পালনকারী বলিয়া দাবী করে, ধর্ম্ম-যাজকগণের কর্ত্তব্য- তাহাদিগকে মধুর ও গম্ভীর ভাবে তিরস্কার করা। তাঁহাদের কর্ত্তব্য- ঈশ্বরের পবিত্র দিনে, তাঁহার আরাধনা করিতে উৎসাহিত করা। CCh 104.1
কেহ যেন পবিত্র সময়গুলি স্বেচ্ছামত বৃথা ব্যয় না করে। শাব্বাথ পালনকারিগণের পক্ষে শাব্বাথদিনে অধিক্ষণ নিদ্রা যাওয়া ঈশ্বরের দৃষ্টিতে অপ্রীতিকর। শাব্বাথদিনে অধিক নিদ্রা যাইয়া, তাহারা তাহাদের স্বষ্টিকর্ত্তার অবমাননা করে এনং তাহাদের দৃষ্টান্ত দ্বারা তাহারা প্রকাশ করে যে, অন্য ছয়টি দিন তাহাদের পক্ষে এত মূল্যবান ছিল যে, তাহারা ঐ দিন গুলি বিশ্রামার্থে ব্যয় করিতে পারে না। এই জন্য প্রয়োজনীয় নিদ্রা হইতে বঞ্চিত হইতে হইলেও, অর্থোপাজর্জন করা চাই, এই মতলবে অনেকে পবিত্র সময়ে নিদ্রা যাইয়া উহা পূরণ করিয়া লয়। পরে তাহারা উপাসনায় যাইবার প্রতিকূলে এই আপত্তি উত্থাপন করেঃ- “বিশ্রামদিন দেওয়া হইয়াছিল, বিশ্রামের জন্য, আর আমার বিশ্রামের প্রয়োজন সুতরাং উপসানায় যাইয়া বিশ্রাম হইতে বঞ্চিত হওয়া আমার কর্ত্তব্য নহে।” এইরূপে বহুলোক পবিত্র দিনের অপব্যবহার করিয়া থাকে। কিন্তু এই দিনে বিশ্রমবার পালনের বিষয়ে এবং অবস্থা বিশেষে অল্প হউক কিংবা অধিক হউক, প্রার্থনা-গৃহে সমবেত হইবার বিষয়ে তাহাদের পরিবারস্থ সকলকে বিশেষ ভাবে উৎসাহিত করা কর্ত্তব্য। বিশ্রামবারের উপরে যে আধ্যাত্মিক প্রভাব বিরাজিত, সারা সপ্তাহ ব্যাপী তাহা যেন তাহারা উপভোগ করিতে পারে, তজজন্য তাহাদের সময় ও শক্তি আধ্যাত্মিক বিষয়ের চচর্চায় যাপন করা উচিত। বিশ্রামদিনে ঐশ্বরিক ধ্যান চিন্তায় ও অনুভূতিতে যাপন করা যেমন সুবিধাজনক, সপ্তাহের অন্য কোন দিনে তেমন সুবিধাজনক নহে।182T 704; CCh 104.2
“শাব্বাথ যদি সতত পবিত্ররূপে মান্য হইত, তবে বিশ্বে কোনদিনই একটি নাস্তিক বা একটী পৌত্তলিক থাকিতে পারিত না। শাব্বাথ বিধিটী, যাহার উৎপত্তি এদনে হইয়াছিল, উহা পৃথিবীর ন্যায় পুরাতন। স্বষ্টিকাল অবধি সমস্ত কুলপতি শাব্বাথ বিধিটি প্রতিপালন করিয়াছিলেন। মিসরে দাসত্বকালীন অবস্থায় কার্য্যশাসকদিগের দ্বারা ইস্রায়েলগণ শাব্বাথ লঙ্ঘন করিতে বাধ্য হইয়াছিল এবং বহুল পরিমাণে তাহারা শাব্বাথের পবিত্রতা জ্ঞান হারাইয়া ফেলিয়াছিল। সীনয়ে যখন ব্যবস্থা ঘষিত হইয়াছিল, তখন চতুর্থ আজ্ঞার প্রথম কয়েকটি কথা ছিল এই, “বিশ্রামদিন স্মরণ করিয়া পবিত্র করিও”,- এতদ্দ্বারা ইহাই দেখান হইয়াছিল যে, শাব্বাথ তখনই স্থাপিত হয় নাই; কিন্তু ইহার উৎপত্তি স্বষ্টিকালেই হইয়াছিল। শয়তান যাহাতে মানবের মন হইতে ঈশ্বরকে মুছিয়া দিতে পারে, এই নিমিত্ত তাহার লক্ষ্য ছিল, এই মহান্ স্মৃতিটিকে উচ্ছেদ করা। মনুষ্যদিগকে, যদি তাহাদের স্বষ্টিকর্ত্তাকে ভুলাইবার নিমিত্ত চালিত করা যাইত, তবে তাহারা শয়তানের শক্তিকে প্রতিরোধ করিবার কোনই চেষ্টা করিত না, এবং নিশ্চয়ই তাহারা শয়তানের শিকার-রূপে ধরা পড়িত।” —Patriarchs and Prophets, p. 336. CCh 105.1
“আমি দেখিলাম যে, ঈশ্বরের পবিত্র নামটি ভয় ও ভক্তি সহকারে লইতে হইবে। কেহ, কেহ, চিন্তা না করিয়া অসতর্করূপে, ‘সর্ব্বশক্তিমান ঈশ্বর’ এই দুইটি শব্দ একত্রে প্রার্থনায় ব্যবহার করে; কিন্তু উহা তাঁহার নিকট প্রীতিজনক নহে। এই প্রকার লোকদের ঈশ্বর বিষয়ক অনুভূতি ও সত্ত্যর জ্ঞান নাই। যদি থাকিত, তবে তাহারা মহান্, ও ভয়াবহ ঈশ্বর, যিনি অন্তিমে শীঘ্রই তাহাদিগের বিচার করিতে যাইতেছেন, তাঁহার নাম ভক্তিবিহীন ভাবে উচ্চারণ করিত না। দূত বলিলেন, ‘উহাদিগকে (এই দুইটী শব্দ) একত্রে যুক্ত করিও না; কারণ ভয়াবহ তাঁহার নাম।’ যাহারা ঈশ্বরের মর্য্যাদা ও মহত্ত্ব অনুভব করিবে, তাহারা ভয় ও পবিত্রতা সহকারে তাহাদের ওষ্ঠাধরে তাঁহার নাম উচ্চারণ করিবে। তিনি অগম্য দীপ্তি নিবাসী, তাহাকে দেখিয়া কেহই জীবিত থাকিতে পারে না। আমি দেখিলাম যে, এই সকল বুঝিয়া উহার সংশোধন করিতে হইবে। নতুবা ইহার পূর্ব্বে মণ্ডলীর শ্রীবৃদ্ধি হইবে না।”- Early Writings, p. 122. CCh 105.2