দশমাংশ দানের বিশেষ বিধিটী এমন একটী মূলনীতির উপরে ভিত্তি করিয়া দেওয়া হইয়া ছিল, যাহা ঈশ্বরের ব্যবস্থার ন্যায় চিরস্থায়ী। এই বিধিটী যিহূদী জাতীয় পক্ষে আশীর্ব্বাদ স্বরূপ না হইলে, ঈশ্বর কখনই তাঁহাদিগকে ইহা দিতেন না। এক্ষনে যাঁহারা শেষকাল পর্য্যন্ত ইহা পালন করিবে, তাঁহাদের পক্ষে ইহা আশীর্ব্বাদ স্বরূপ হইবে। CCh 154.2
যে সকল মন্ডলী প্রভুর কার্য্য সংরক্ষনের নিমিত্ত ধারাবাহিক রূপে ও মুক্ত হস্তে দান করে, তাঁহারই আধ্যাত্মিকতায় সর্ব্বাপেক্ষা সম্পদশীল। খ্রীষ্টের অনুগামীবর্গের, প্রভুর প্রতি কতটা অনুরাগ আছে, তাহা তাঁহাদের দানশীলতা দ্বারা জানা যাইবে। যাহাদের অর্থ আছে, তাঁহারা যদি সম্যক রূপে হৃদয়ঙ্গম করিতে পারেন যে, তাঁহারা যে প্রত্যেকটী টাকা ব্যয় করেন, তাঁহার জন্য তাঁহাদিগকে ঈশ্বরের নিকটে হিসাব দিতে হইবে, তাহা হইলে তাঁহাদের কল্পিত অভাব অনেকটা কমিয়া যাইবে। বিবেক জাগ্রত থাকিলে, লালসা, অহংকার, জাঁকজমক, ও আমোদস্পৃহা চরিতার্থের জন্য অনর্থক অর্থ নিয়োগের বিরুদ্ধে সে তীব্রকন্ঠে সাক্ষ্য দিবে এবং সদাপ্রভুর যে অর্থ তাঁহার কার্য্য বিস্তৃতির জন্য ব্যয় করা উচিত ছিল, তাহা অপব্যয় করার নিমিত্ত দোষী করিবে। যাঁহারা তাঁহাদের হিসাব দিতে হইবে। CCh 154.3
নামধারী খ্রীষ্টীয়ানগণ তাঁহাদের দেহ অলঙ্কৃত ও গৃহাদিসুসজিজত করিবার জন্য যদি অল্পই অর্থ ব্যয় করিত, এবং অমিতাচারে ও স্বাস্থ্য নাশক বিলাস ভোজনে অল্প অর্থ নাশ করিত, তাহা হইলে ঈশ্বরের ধনভান্ডারে তাঁহারা বহু অর্থ দান করিতে পারিত। - যিনি স্বর্গ, তাঁহার ধনসম্পত্তি; মুক্তিকর্ত্তার অনুকরণ করিতে পারিত, - যিনি স্বর্গ, তাঁহার ধনসম্পত্তি; ও গৌরব ত্যাগ করিয়াছিলেন,- এবং আমরা যেন অনন্ত ধনের অধিকারী হইতে পারি, তজ্জন্য আমাদের নিমিত্ত দরিদ্র হইয়াছিলেন। CCh 155.1
লোকেরা যখন গননা করিতে আরম্ভ করে যে, কত দিনে তাঁহারা এক নির্দ্দিষ্ট সংখক ধনের অধিকারী হইতে পারিবে। পার্থিব ধন সঞ্চয়ের চেষ্টা ও উদ্বেগে তাঁহারা ঈশ্বরীয় ধনে ধনী হইতে অপারক হয়। তাঁহারা যে পরিমাণে ধন সঞ্চয় করে, সে পরিমানে দান করেনা। তাঁহাদের ধনের লালসা যত বৃদ্ধি পাইতে থাকে, তত তাঁহারা ধনাসক্ত হইয়া পড়ে। ধন সম্পত্তি বৃদ্ধি পাওয়ায়, ধনের পরিমাণ আরও বাড়াইবার জন্য মনে এরূপ এক বাসনা জাগিয়া উঠে যে, প্রভুকে উহার দশ ভাগের এক ভাগ দান করা, যেন অতি কঠোর ও অন্যায় চাপ বলিয়া মনে হয়। ঈশ্বর নিঃশ্বসিত গ্রন্থে লিখিত আছেঃ- ঐশ্বর্য্যের বাহুল্য হইলে তাহাতে মন দিও না। গীত ৬২ঃ১০। অনেকে বলিয়াছেঃ- “অমুক ব্যক্তির মত আমি যদি ধনবান হইতাম, তবে ঈশ্বরের ধনভান্ডারে প্রচুর অর্থ দান করিতাম। ঈশ্বরের কার্য্য বিস্তৃতির নিমিত্ত ব্যবহার করা ভিন্ন, অন্য কিছুতেই আমি আমার ধন সম্পত্তি ব্যয় করিতাম না।” ইহাদের কোন কোন লোককে ধন সম্পত্তি দিয়া ঈশ্বর তাঁহাদের পরীক্ষা করিয়া ছিলেন, তাহাতে দেখা গিয়াছিল যে, ধন সম্পত্তি প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে তাঁহাদের মধ্যে এরূপ ভীষণতর প্রলোভন আসিয়াছিল যে, তাঁহাদের দারিদ্রাবস্থায় তাঁহারা যতটা দান করিয়াছিল, প্রাচুর্য্যের মধ্যে তদপেক্ষা অনেক কম দান করিয়াছিল। অধিকতর প্রচুর ধন লাভের প্রবল আখাঙ্খা তাঁহাদের হৃদয় ও মন একেবারে অভিভূত করিয়া ফেলিয়াছিল, তাহাতে তাঁহারা পৌত্তলিক হইয়া পড়িয়াছিল।213T 401-405; CCh 155.2