জগতের প্রতিকূলাচরণ আমাদিগকে সর্ব্বাপেক্ষা অধিক বিপদ্সস্কুল করে এমন নহে, কিন্তু নামধারী বিশ্বাসিগণের হৃদয়- পোষিত মন্দ দ্বারাই সর্ব্বাধিক দুঃখজনক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়, এবং ঈশ্বরের কর্য্যোন্নতিতে সর্ব্বাপেক্ষা অধিক বিঘ্ন ঘটে। ঈর্ষ্যা, পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস ছিদ্রান্বেষন ও কুসন্দেহ আধ্যাত্মিকতাকে যেরূপ দুর্ব্বল করিয়া ফেলে, অন্য কিছুতে সেরূপ করে না। “সেই জ্ঞান এমন নয়, যাহা উপর হইতে নামিয়া আইসে, বরং তাহা পার্থিব, পৈশাচিক। কেননা যেখানে ঈর্ষ্যা ও প্রতিযোগিতা, সেইখানে অস্থিরতা ও সমুদয় দুষ্কর্ম্ম থাকে। কিন্তু যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে, তাহা প্রথমে শুচি, পরে শান্তি প্রিয়, ক্ষান্ত, সহজে অনুনীত, দয়া ও উত্তম উত্তম ফলে পরিপূর্ন, ভেদাভেদ বিহীন ও নিষ্কপট। আর যাহারা শান্তি আচরণ করে, তাঁহাদের জন্য শান্তিতে ধার্ম্মিকতা ফলের বীজ বপন করা যায়।” যাকোব ৩ ঃ ১৫-১৮। CCh 166.1
পাপীর পরিত্রানের নিমিত্ত ঈশ্বর স্বীয় পুত্রকে এই জগতে প্রেরণ করিয়াছেন, বিভিন্ন প্রকৃতির লোকদের মধ্যে ঐক্য ও মিলনই তাঁহার সর্ব্বাপেক্ষা শক্তিশালী সাক্ষ্য বহন করা আমাদের বিশেষ অধিকার। কিন্তু ইহা করণার্থে আমাদের খ্রীষ্টের আজ্ঞাবহ হইতে হইবে। আমাদের স্বাভাব খ্রীষ্টের স্বভাবের ন্যায় গড়িয়া তুলিতে হইবে; আমাদের ইচ্ছা তাঁহার ইচ্ছায় সমর্পণ করিতে হইবে। তাহা হইলে সংঘর্ষের আশস্কা না করিয়া আমরা এক সঙ্গে কার্য্য করিতে পারিব। সামান্য অনৈক্য লইয়া অধিকক্ষন আলোচনা করিতে থাকিলে, অবশেষে উহা এরূপ তিক্ততায় পর্য্যবসিত হয় যে, এতদ্দ্বারা খ্রীষ্টীয় সহভাগিত্ব একেবারে ক্ষুন্ন হইয়া যায়। আমরা যেন শত্রুকে আমাদের উপরে এইরূপে সুযোগ লাভ করিতে না দেই। আইসুন, আমরা ঈশ্বরের ও পরস্পরের নিকটতর হইতে থাকি। তাহা হইলে আমরা সদাপ্রভুর রোপিত ধার্ম্মিকতা বৃক্ষ সদৃশ্য হইব, এবং জীবন নদীর জল দ্বারা সিক্ত হইয়া কতই না ফলবন্ত হইব! খ্রীষ্ট কি বলেন নাই ঃ- “ইহাতেই আমার পিতা মহিমান্বিত হন যে, তোমার প্রচুর ফলে ফলবান হও?” যোহন ১৫ঃ৮। CCh 166.2
আমরা যখন খ্রীষ্টের প্রার্থনায় পুর্ন আস্থা স্থাপন করিব, ঈশ্বরের লোকদের দৈনন্দিন জীবনে ইহার শিক্ষার প্রভাব যখন চাক্ষুস দেখা যাইবে, তখন আমাদের সমাজের লোকদের মধ্যে কার্য্যে ঐক্য পরিলক্ষিত হইবে। খ্রীষ্টের প্রেমের স্বর্ণ — শৃঙ্খলে ভ্রাতা ভ্রাতার সহিত আবদ্ধ হইবে। একমাত্র ঈশ্বরের আত্মাই এই একতা আনায়ন করিতে পারেন। যিনি নিজেকে পবিত্র করিয়াছিলেন, তিনি তাঁহার শিষ্যগণকেও পবিত্র করিতে সমর্থ। তাঁহার সহিত সম্মিলিত হইয়া মহা পবিত্র বিশ্বাসে তাঁহারা পরস্পরের সহিত সম্মিলিত হইয়া মহা পবিত্র বিশ্বাসে তাঁহারা পরস্পরের সহিত সম্মিলিত হইয়া মহা পবিত্র বিশ্বাসী হইবেন। ঈশ্বর যতটা চেষ্টা আকাঙ্ক্ষা করেন, এই একতার জন্য আমরা যখন ততটা চেষ্টা করিব, তখন আমরা ইহা লাভ করিব।38T 242, 243; CCh 167.1
বহু সংখক প্রতিষ্ঠান, বৃহৎ বৃহৎ অট্টালিকা, কিংবা বাহ্য আড়ম্বর ঈশ্বর চাহেন না, কিন্তু তিনি চাহেন, তাঁহার নিজস্ব প্রজাবৃন্দের, ঈশ্বরের মনোনীত ও পরস্পরের সহিত সম্মিলিত বহুমূল্য লোকদের এবং যাঁহাদের জীবন খ্রীষ্টের সহিত ঈশ্বরে গুপ্ত রহিয়াছে, তাঁহাদের ঐক্যবদ্ধ কার্য্য। প্রত্যেকের নিজ নিজ অংশে ও নিজ নিজ স্থানে দণ্ডায়মান থাকিয়া চিন্তায়, বাক্যে ও কার্য্যে যথোপযুক্ত প্রভাব বিস্তার করিতে হইবে। ঈশ্বরের প্রত্যেকটী কার্য্যকারী যখন ইহা করিবে, কেবল তখনই ঈশ্বরের কার্য্য সমাপ্ত ও যথোপযুক্তরূপে ব্যবস্থিত হইবে।48T 143; CCh 167.2
যাহারা সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য নির্দ্দেশ করিতে পারেন, প্রভু এরূপ খাঁটি বিশ্বাসী ও সুস্থির চিত্তলোক চাহেন। যোহন ১৭শ অধ্যায়ে যে শিক্ষা রহিয়াছে তাহা অধ্যয়ন ও তদানুযায়ী জীবন যাপন করিয়া এবং বর্ত্তমান সত্যে জীবন্ত বিশ্বাস অবিকৃত রাখিয়া প্রত্যেকেরই সতর্ক জীবন যাপন করা কর্ত্তব্য। যেরূপ আত্ম- সংযমে খ্রীষ্টের প্রার্থনার সহিত আমাদের স্বাভাবের পূর্ণ সামঞ্জস্য দেখা যায়, সেইরূপ আত্ম-সংযম আবশ্যক।58T 239; CCh 168.1
খ্রীষ্টের অনুগামিগণ যেন পূর্ণ মাত্রায় ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করেন, ইহাই ত্রান কর্ত্তার হৃদয়ের বাসনা। তাঁহারা জগতের সর্ব্বত্র ছিন্নভিন্ন অবস্থায় রহিলেও ঈশ্বর চাহেন, যেন তাঁহারা সকলে খ্রীষ্টে এক হয়। কিন্তু যে পর্য্যন্ত না তাঁহারা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালনের নিমিত্ত নিজেদের ইচ্ছা বজর্জন করেন, তাবৎ ঈশ্বর তাঁহাদিগকে খ্রীষ্টে এক করিতে পারেন না।68T 243; CCh 168.2