অলস দাসের উদ্দেশ্যে বলা কথাটা ছিল, “অতএব তোমরা ইহার নিকট হইতে ঐ তালন্ত লও, এবং যাহার দশ তালন্ত আছে, তাহাকে দেও।” এখানে বিশ্বস্ত কার্যকারীর পুরস্কারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এটি কেবল চূড়ান্ত বিচারের পুরস্কার লাভের বিষয়কেই নির্দেশ করে নি, কিন্তু এই জীবনে ক্রমাগত প্রতিদান দেবার প্রক্রিয়াকেও নির্দেশ করে। COLBen 350.1
প্রকৃতিগত ভাবে যেমন তেমনি আত্মিক জগতেও অব্যবহৃত প্রতিটি শক্তি দুর্বল হয়ে যায়, কমে যায়, এমন কি নষ্ট হয়ে যায়। কর্মশীলতা হল জীবনের নিয়ম। অলসতা হল মৃত্যু। “কিন্তু প্রত্যেক জনকে হিতের জন্য আত্মার আবির্ভাব দত্ত হয়।” ১ করিন্থীয় ১২:৭। অন্যদের আশীর্বাদের কাজে নিযুক্ত থাকলে তার দান বৃদ্ধি পাবে। নিজেকে সাহায্য করার অভ্যাস বন্ধ করলে আশীর্বাদ কমে যাবে এবং অবশেষে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। যে যা গ্রহণ করেছে তাতে অংশী হতে অসম্মত হয়, অবশেষে সে দেখতে পাবে যে তার দেবার মত কিছুই নেই। সে একটি পদ্ধতির সঙ্গে একমত হয় যা নিশ্চিত ভাবে হ্রাস করে এবং চূড়ান্ত ভাবে জীবনের সমস্ত ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে যায়। COLBen 350.2
কেউ যেন এটা মনে না করে যে, তারা স্বার্থপরতার জীবন যাপন করতে পারবে এবং এর পর নিজের লাভের জন্য কাজ করবে এবং তাদের প্রভুর আনন্দের সহভাগী হবে। স্বার্থহীন ভালবাসার আনন্দে তারা অংশগ্রহণ করতে পারবে না, স্বর্গীয় স্থানের জন্য তারা যোগ্য হতে পারবে না। ভালবাসার বিশুদ্ধ পরিবেশ তারা সমর্থন করতে পারে নি যা স্বর্গে পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে। স্বর্গদূতদের কণ্ঠস্বর এবং তাদের বীণার সুর তাদের সুখী করতে পারে না। স্বর্গের জ্ঞান বিজ্ঞান তাদের মনে হেঁয়ালির মত লাগে। COLBen 350.3
যারা খ্রীষ্টের জন্য কাজ করে নি, যারা সম্পূর্ণ নিক্রিয় ভাবে ছিল, কোন দায়িত্ব বহন করে নি, নিজের চিন্তায় ব্যস্ত ছিল, নিজেদের সুখের কথা ভেবেছিল, নিজেদের পরিতৃপ্ত করেছিল, এই জগতের বিচার করার সময়, এই জগতে যে সমস্ত লোক মন্দ কাজ করেছিল, বিচারে তাদের জন্য যে স্থান নির্ধারণ করা হবে, তারাও সেই স্থানে যাবে। তারাও একই দণ্ড ভোগ করবে। COLBen 350.4
অনেকে আছেন যারা নিজেদের খ্রীষ্টান বলে দাবি করেন, কিন্তু তারা ঈশ্বরের দাবিকে অবহেলা করেন; তবুও এই কাজের দ্বারা যে তারা ভুল করছে এই বিষয়টি তারা উপলব্ধি করতে পারে না। তারা জানে যে, যারা ঈশ্বরের নিন্দাকারী, যারা খুনী, যারা ব্যভিচারী, তাদের জন্য শাস্তি নিরূপিত আছে। কিন্তু তাদের কাছে ধর্মীয় কাজে অংশ গ্রহণ করা আনন্দের বিষয় মাত্র। তারা সুসমাচার প্রচার শুনতে ভালবাসে, কারণ তারা মনে করে যে, তারা খ্রীষ্টান। যদিও তারা তাদের নিজেদের জন্য তাদের জীবন ব্যয় করেছে, তারা দৃষ্টান্তমূলক গল্পে বর্ণিত সেই অবিশ্বস্ত দাসের মত এই কথা শুনে ভীষণ অবাক হবে, “তোমরা ইহার নিকট হইতে ঐ তালন্ত লও।” তাদের আশীর্বাদ সমূহ ব্যবহার করলে ঈশ্বরের কাছ থেকে আরও আশীর্বাদ তারা লাভ করতে পারত এবং এর দ্বারা তারা প্রকৃত আনন্দ উপভোগ করতে সক্ষম হত, এই বিষয়টি তারা যিহূদীদের মত বুঝতে ভুল করেছিল। COLBen 351.1
অনেকে আছেন যারা নিজেদের অক্ষমতার অজুহাত দেখিয়ে খ্রীষ্টিয় কাজের জন্য নিজেকে সম্পৃক্ত করা থেকে সরিয়ে নেন। কিন্তু ঈশ্বর কি তাদের এত অক্ষম করে সৃষ্টি করেছেন? না, কখনো না। এই অক্ষমতা সৃষ্টি হয়েছে তাদের নিজেদের নিষ্ক্রিয়তা ও অলসতা থেকে এবং তাদের স্বেচ্ছাচারী ও স্বার্থপরতার মনোভাব থেকে। তারা তাদের চারিত্রিক অবস্থার কারণে “তোমরা ইহার নিকট হইতে ঐ তালন্ত লও” এই কথাটির পরিণতি কী হবে তা বুঝতে পারবে। অব্যহতভাবে তাদের তালন্ত অপব্যবহারের ফলে পবিত্র আত্মাকে তারা নিভিয়ে ফেলবে, যা একমাত্র আলো। যারা অনন্ত জীবন ঈশ্বরের সান্নিধ্যে থাকার জন্য তাঁর ইচ্ছা পালন করে স্বর্গের মুদ্রাঙ্ক লাভ করেছে—তাদের জন্য এই কথা প্রযোজ্য হবে না “তোমরা ঐ অনুপযোগী দাসকে বাহিরের অন্ধকারে ফেলিয়া দেও,“। COLBen 351.2