Go to full page →

হারানো মেষ COLBen 166

খ্রীষ্ট এই সময় তাঁর শ্রোতাদের পবিত্র শাস্ত্রের কথা স্মরণ করিয়ে দেন নি। তিনি তাদের কাছে তাদের নিজ অভিজ্ঞতার সাক্ষ্য তুলে ধরেছিলেন। যর্দনের পূর্ব দিকে পাহাড়ের উপর সুদূর বিস্তৃত সমতল গোচারণ ভূমি ছিল, যেখানে প্রচুর পরিমাণে গবাদি পশুর জন্য ঘাসের প্রাচুর্য ছিল। গিরিখাতের মধ্য দিয়ে এবং গাছপালায় পূর্ণ পাহাড়ের উপরে পড়ে বেড়ানোর সময় অনেক মেষ হারিয়ে যেত। তবে মেষপালকেরা অনেক যত্নে হারিয়ে যাওয়া মেষগুলো খোঁজ করে এবং ফিরিয়ে নিয়ে আসতো। যে সমস্ত লোক যীশুর চারপাশে সমবেত ছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ ছিল মেষ পালক এবং অনেকে মেষ পাল কিংবা অন্য পশু পালের জন্য অর্থ বিনিয়োগ করেছিল। আর তাই সকলেই তাঁর ব্যাখ্যা সহজে বুঝতে পেরেছিল: “তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি- যাহার এক শত মেষ আছে, ও সেই সকলের মধ্যে একটি হারাইয়া যায়- নিরানব্বইটা প্রান্তরে ছাড়িয়া যায় না, আর যে পর্যন্ত সেই হারানোটি না পায়, সেই পর্যন্ত তাহার অন্বেষণ করিতে যায় না?” COLBen 166.1

যীশু বলেছিলেন, এই সকল প্রাণ, যাদের তোমরা তুচ্ছ ও অবজ্ঞা করছ, তারা ঈশ্বরের সম্পত্তি। সৃষ্টির দ্বারা এবং উদ্ধার করার দ্বারা তারা তাঁর হয়েছে এবং তাঁর দৃষ্টিতে এরা মূল্যবান। যেভাবে মেষ পালক মেষদের ভালবাসে এবং একটি হারিয়ে গেলে সেটি না পাওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নেয় না, ঠিক তেমনি অনন্ত অসীম ঈশ্বর সমাজের বঞ্চিত অবহেলিত প্রতিটি প্রাণকে ভালবাসেন। মানুষ তাঁর ভালবাসার দাবীকে অস্বীকার করতে পারে, তারা তাঁর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে, তারা অন্য মালিককে বেছে নিতে পারে; তবুও তারা ঈশ্বরের এবং যা তাঁর নিজের তা তিনি আবার ফিরে পাওয়ার জন্য আকাঙ্ক্ষিত থাকেন। তিনি বলেছেন, “পালক আপন ছিন্নভিন্ন মেষগণের মধ্যে থাকিবার দিনে যেমন আপন পাল খুঁজিয়া বাহির করে, তেমনি আমি আপন মেষগণকে খুঁজিয়া বাহির করিব, এবং যে সকল স্থানে তাহারা মেঘাচ্ছন্ন অন্ধকারময় দিবসে ছিন্নভিন্ন হইয়াছে, সেই সকল স্থান হইতে তাহাদিগকে উদ্ধার করিব।” যিহিস্কেল ৩৪:১২। COLBen 166.2

এই দৃষ্টান্তমূলক গল্পে দেখতে পাই যে, একটি মেষকে — সংখ্যার দিক থেকে মনে হবে এটি খুবই সামান্য, সেই মেষটিকে খুঁজে আনবার জন্য মেষ পালক বের হয়েছে। তেমনি যদি কেবল একটি প্রাণ হারিয়ে যায়, তবে খ্রীষ্ট ঐ একটি প্রাণের জন্য জীবন উৎসর্গ করতেন। COLBen 167.1

যে মেষ মেষপাল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, সেই মেষটি সমস্ত জীবের মধ্যে সবচেয়ে অসহায়। এই মেষটিকে অবশ্যই মেষপালকের খুঁজে বের করে আনতে হবে, কারণ ঐ হারিয়ে যাওয়া মেষটি ফিরে আসার পথ খুঁজে পাবে না। একই ভাবে যে মানুষ ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিপথে গেছে; সে ঐ হারানো মেষের মতই অসহায়, এবং স্বর্গীয় ভালবাসা দিয়ে তাকে মুক্ত করার জন্য তার কাছে না আসা পর্যন্ত সে ঈশ্বরের কাছে ফিরে আসার পথ খুঁজে পাবে না। COLBen 167.2

মেষ পালক, যে কখনো মেষ পালের প্রতি অযত্ন কিংবা অবহেলা করে নি, সব সময় লক্ষ রেখেছে ও নিরাপদ খোঁয়াড়ে রেখেছে, সে পাল থেকে একটি মেষ হারিয়ে গেছে বলে সে বলবে না, “আমার এখন নিরানব্বইটা মেষ আছে, যে একটি মেষ হারিয়ে গেছে সেটি খুঁজে বের করা আমার জন্য ব্যয় সাপেক্ষ, এবং খুবই কষ্টকর হবে। মেষটি নিজেই ফিরে আসুক এবং আমি মেষের খোঁয়াড়ের দরজা খোলা রাখব যেন মেষটি ভিতরে ঢুকতে পারে।” না! যে মুহূর্তে মেষ হারিয়ে গেছে, সেই মুহূর্তে মেষ পালক উৎকণ্ঠা এবং দুশ্চিন্তায় পতিত হয়। সে বার বার তার মেষপালের মেষের সংখ্যা গণনা করতে থাকে। যখন সে নিশ্চিত হয় যে, একটি মেষ হারিয়ে গেছে। সে নিরানব্বইটি মেষ খোঁয়াড়ের মধ্যে রেখে হারিয়ে যাওয়া মেষটির খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। গাঢ় অন্ধকার ও নিস্তব্ধ রাতে বিপদ সঙ্কুলপ পথে, মেষ পালকের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা আর দুশ্চিন্তাও আরও অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেতে থাকে, এবং অন্বেষণে তাঁর আন্তরিকতা আর একাগ্রতা আরো দৃঢ় হতে থাকে। হারানো মেষটি খুঁজে পেতে যত রকম চেষ্টা করা যেতে পারে সব চেষ্টাই সে করে। COLBen 167.3

সে হঠাৎ করে দূর থেকে ক্ষীণ কণ্ঠের ডাক শুনে স্বস্তি বোধ করে। সেই শব্দ অনুসরণ করে সে এগিয়ে যায়, সে উঁচু খাড়া পাহাড় বেয়ে উঠে, সে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাড়া স্থানের একেবারে কিনারায় চলে যায়। এভাবে খুঁজতে খুঁজতে সে মেষটির চিৎকার শুনতে পায়, যে চিৎকার ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসছিল, তা শুনে মেষ পালক বুঝতে পারে যে, মেষটি মারা যাচ্ছে। অবশেষে সে তার প্রচেষ্টার পুরস্কার পেল, যা হারিয়ে গিয়েছিল, সে তা ফিরে পেল। যদিও মেষটির জন্য তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছিল, তবুও সে মেষটিকে কোন তিরস্কার করল না। সে বেত দিয়ে মেরে তাকে তাড়িয়ে দিল না। সে ঘরে আনবার জন্য মেষটি হাঁটিয়ে নিয়ে এল না। ভীত ও কম্পিত এই জীবটিকে সে মহা আনন্দের সঙ্গে নিজের কাঁধের উপর তুলে নিল। মেষটির কোন অঙ্গ ভেঙ্গে গেছে কি না বা আঘাত পেয়েছে কি না, এই ভেবে সে তাকে দু হাতের মধ্যে পরম বন্ধুর মত খুব কোমল ভাবে জড়িয়ে ধরল, যাতে তার নিজ হৃদয়ের উষ্ণতায় মেষটির জীবন ফিরিয়ে দিতে পারে। সে ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ হল, কারণ তার প্রচেষ্টা বৃথা যায় নি। সে আবার মেষটিকে মেষদের খোঁয়াড়ে ফিরিয়ে আনতে পেরেছে। COLBen 167.4

ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই, তিনি আমাদের কল্পনায় কোন দুঃখার্ত বিষন্ন মেষ পালকের চিত্র তুলে ধরেন নি, যিনি মেষ ফিরিয়ে না এনেই ফিরে এসেছেন। এই দৃষ্টান্ত মূলক গল্পে ব্যর্থতা সম্পর্কে কোন কথা খ্রীষ্ট বলেন নি, কিন্তু সফলতার এবং ফিরে পাওয়ার আনন্দের কথা বলেছেন। এখানেই ঐশ্বরিক নিশ্চয়তা রয়েছে যে, ঈশ্বরের খোঁয়াড় থেকে হারিয়ে যাওয়া একটি মেষও উপেক্ষিত নয়। উদ্ধার না করে একটি মেষকেও পরিত্যাগ করা হবে না। প্রত্যেককেই উদ্ধারের জন্য মুক্তিপন দেয়া হয়েছে, খ্রীষ্ট পাপের গহ্বর থেকে এবং পাপের বন্ধন থেকে মুক্ত করবেন। COLBen 168.1

হতাশাগ্রস্ত প্রাণকে সাহস কর, যদিও তুমি মন্দ কাজ করেছ। এটি মনে করবেন না যে, ঈশ্বর “বোধ হয়” তাঁর আদেশ লঙ্ঘন করার জন্য তা ক্ষমা করে দেবেন না এবং আপনাকে তাঁর সান্নিধ্যে আসার অনুমতি দেবেন না। ঈশ্বর প্রথমে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। যখন আপনি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন তিনি সামনে এগিয়ে এসে আপনাকে ফিরে পেতে চেষ্টা করেন। নিরানব্বইটা মাঠে রেখে যা হারিয়ে গেছে তা মেষ পালকের সহানুভূতিশীল অন্তর দিয়ে খোঁজার জন্য মরুভূমি ও পর্বতে বের হয়ে যাবেন। যে মানুষ ক্ষত বিক্ষত ও আহত, যে মৃত্যু পথযাত্রী, তিনি তাকে তাঁর ভালবাসার দুই বাহু দিয়ে বেষ্টন করে রাখবেন, এবং আনন্দিত হৃদয়ে নিরাপদ মেষ পালের মধ্যে বয়ে নিয়ে আসবেন। COLBen 168.2

যিহুদীরা এই শিক্ষা পেয়েছিল যে, ঈশ্বরের ভালবাসা পাবার আগে পাপীকে, প্রথমে অনুতাপ করতে হবে। তাদের দৃষ্টিতে অনুতাপ হল এমন একটি কাজ যার মাধ্যমে স্বর্গের অনুগ্রহ লাভ করা যায়। এটি ছিল সেই চিন্তা, যার দ্বারা চালিত হয়ে ফরীশীরা বিস্ময়ে এবং সক্রোধে চিৎকার করে বলেছিল, “এ ব্যক্তি পাপীদিগকে গ্রহণ করে।” তাদের ধারণা অনুযায়ী, যারা অনুতাপ করে নি তাদের কাউকে তিনি তাঁর সান্নিধ্যে আসার জন্য অনুমতি দিতে পারেন না। কিন্তু হারানো মেষের দৃষ্টান্ত মূলক গল্পের মধ্য দিয়ে যীশু শিক্ষা দিয়েছেন যে, পরিত্রাণ আমাদের ঈশ্বরকে অনুসন্ধান করার মধ্য দিয়ে আসে না, কিন্তু আমাদেরকে ঈশ্বরের অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে আসে। “বুঝে এমন কেহই নাই, ঈশ্বরের অন্বেষণ করে এমন কেহই নাই, সকলেই বিপথে গিয়াছে।” রোমীয় ৩:১১, ১২। ঈশ্বর আমাদের ভালবাসতে পারেন, এই অভিপ্রায়ে আমরা অনুতাপ করব না। কিন্তু তিনি এই অভিপ্রায়ে আমাদের ভালবেসেছেন যেন আমরা অনুতাপ করতে পারি। COLBen 169.1

যে মেষটি হারিয়ে গিয়েছিল এবং অবশেষে যখন সেই মেষটিকে ঘরে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল, তখন মেষপালক তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে গিয়ে আনন্দের সুমধুর গান গেয়েছিল। সে তার বন্ধুদের এবং প্রতিবেশীদের ডেকে বলল, “আমার সঙ্গে আনন্দ কর, কারণ আমার যে মেষটি হারাইয়া গিয়াছিল, তাহা পাইয়াছি।” একই ভাবে মহান মেষ পালকের মাধ্যমে যখন বিপথগামী কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়, তখন স্বর্গ ও পৃথিবীর ধন্যবাদ ও প্রশংসা এক হয়ে যায়। COLBen 169.2

“তদ্রুপ এক জন পাপী মন ফিরাইলে স্বর্গে আনন্দ হইবে; যাহাদের মন ফিরান অনাবশ্যক, এমন নিরানব্বই জন ধার্মিকের বিষয়ে তত আনন্দ হইবে না।” খ্রীষ্ট বলেছেন, ‘তোমরা ফরীশীরা নিজেদের স্বর্গের অনুগ্রহ প্রাপ্ত বলে মনে করে থাক। তোমরা মনে কর যে, তোমরা তোমাদের নিজেদের ধার্মিকতাকে সুনিশ্চিত করেছ। তাহলে এখন জেনে রাখ, যদি তোমাদের অনুতাপের প্রয়োজন না থাকে, তাহলে আমার কাজ তোমাদের জন্য নয়। এই সব দরিদ্র লোকেরা, যারা তাদের নিঃস্বতা এবং পাপের জীবন বুঝতে পেরেছে, বাস্তবিক আমি তাদের মুক্ত করার জন্যই এই জগতে এসেছি। এই হারানোদের, যাদের তোমরা অবজ্ঞা করছ, তাদের প্রতি স্বর্গের দূতগণের বিশেষ মনোযোগ রয়েছে। যখন তাদের মধ্যে কোন একজন আমার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে, তখন তোমরা অভিযোগ কর, এবং উপহাস কর। কিন্তু জেনে রেখো, স্বর্গের দূতগণ উর্ধ্ব থেকে তখন বিজয়ের আনন্দ ধ্বনি করতে থাকে। COLBen 169.3

রব্বিদের একটি উক্তি ছিল যে, ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যে ব্যক্তি পাপ করেছে, সে যখন ধ্বংস হয়ে যায় তখন স্বর্গে আনন্দ হয়। কিন্তু যীশু শিক্ষা দিয়েছেন যে, ঈশ্বরের কাছে ধ্বংসের কাজ হল সম্পূর্ণ অজ্ঞাত কাজ। যে কাজের মধ্যে স্বর্গের আনন্দ নিহিত আছে তা হল, যাদের ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন সেই মানুষের মধ্যে তাঁর নিজ প্রতিমূর্তি পুনঃস্থাপন করা। COLBen 170.1

যখন কেউ তার জীবনের পাপের কথা ভেবে ঈশ্বরের কাছে ফিরে আসতে চায়, সে তখন সমালোচনা এবং উপহাসের সম্মুখীন হয়। অনেক লোক আছে যারা তার অনুতাপ খাঁটি কি না এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে অথবা তারা ফিস ফিস করে বলে, “তার কোন স্থিরতা নেই; আমি এটা বিশ্বাস করি না যে, সে বাস্তবিক অনুতাপ করার জন্য এগিয়ে আসবে।” যারা তাদের ভাইদের সম্বন্ধে কেবল অভিযোগ করে, তারা বস্তুত ঈশ্বরের কাজ করে না, কিন্তু শয়তানের কাজ করে। এভাবে সমালোচনার মধ্য দিয়ে কেউ কেউ মনে করে যে, সে ঐ ব্যক্তিকে নিরুৎসাহিত করতে পেরেছে এবং ঈশ্বরের কাছে আশা নিয়ে উপস্থিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে তাকে ফেরাতে সক্ষম হয়েছে। অনুতাপকারী পাপীকে এই বিষয়টি গভীর ভাবে উপলব্ধি করতে দিতে হবে যে, ঈশ্বরের কাছ থেকে যে হারিয়ে গেছে, সে যদি কখনো ফিরে আসে, তাহলে স্বর্গে আনন্দ হয়। তাকে ঈশ্বরের ভালবাসার মধ্যে অবস্থান করতে দিতে হবে এবং ফরীশীদের উপহাস অবজ্ঞা আর অবিশ্বাসের দ্বারা যেন কোন নিরুৎসাহের ও আশাভঙ্গের কোন ঘটনা না ঘটে। COLBen 170.2

ধর্মগুরুরা মনে করেছিল যে, খ্রীষ্ট এই দৃষ্টান্তমূলক গল্পটি করগ্রাহী এবং পাপীদের উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করেছেন; কিন্তু এর অর্থ সুদূর প্রসারী। হারানো মেষের দৃষ্টান্তটির দ্বারা খ্রীষ্ট কেবল একক কোন পাপীর ব্যাপারে উল্লেখ করেন নি, কিন্তু একটি জগত যা ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং পাপের দ্বারা বিনষ্ট হয়েছে, তার কথা বলেছেন। ঈশ্বরের বিশাল সাম্রাজ্য, যার উপর তিনি আধিপত্য বিস্তার করে আছেন এবং পরিচালনা করছেন, তার মধ্যে এই পৃথিবী কেবল একটা অণুর মত। তবুও এই ক্ষুদ্র পৃথিবীর একটি হারানো মেষ ঈশ্বরের দৃষ্টিতে নিরানব্বইটা মেষের চেয়ে আরও বেশি মূল্যবান, যারা পাল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় নি। খ্রীষ্ট, যিনি স্বর্গের প্রাসাদের প্রেমপাত্র অধিপতি ছিলেন, তিনি তাঁর উচ্চ অবস্থান থেকে নিজেকে অবনত করলেন, পিতার যে মহিমা তাঁর সঙ্গে ছিল, তা তিনি জগতের হারিয়ে যাওয়া মানুষকে উদ্ধার করার জন্য বর্জন করলেন। তিনি পাপহীন সুউচ্চ স্বর্গ ছেড়ে এই পৃথিবীতে এসেছেন, “আমাদের অধর্মের নিমিত্ত বিদ্ধ” এবং “আমাদের অপরাধের নিমিত্ত চূর্ণ হওয়ার জন্য” (যিশাইয় ৫৩:৫)। ঈশ্বর স্বয়ং নিজেকে তাঁর পুত্রকে দান করেছেন, যেন তিনি হারিয়ে যাওয়া মেষের ফিরে পাওয়ার আনন্দ লাভ করতে পারেন। COLBen 170.3

“দেখ, পিতা আমাদিগকে কেমন প্রেম প্রদান করিয়াছেন যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান বলিয়া আখ্যাত হই; আর আমরা তাহাই বটে। এই জন্য জগৎ আমাদিগকে জানে না, কারণ সে তাঁহাকে জানে নাই।” ১ যোহন ৩:১। আর খ্রীষ্ট বলেছেন, “তুমি যেমন আমাকে জগতে প্রেরণ করিয়াছ, তদ্রুপ আমিও তাহাদিগকে জগতে প্রেরণ করিয়াছি।” যোহন ১৭:১৮। “খ্রীষ্টের ক্লেশভোগের যে অংশ অপূর্ণ রহিয়াছে তাহা আমার মাংসে তাঁহার দেহের নিমিত্ত পূর্ণ করিতেছি; সেই দেহ মণ্ডলী।” কলসীয় ১:২৪। খ্রীষ্ট যাদের উদ্ধার করেছেন তাদের প্রত্যেককে তাঁর নামে যারা হারিয়ে গেছে, তাদের রক্ষা করার কাজের জন্য ডেকেছেন। ইস্রায়েল জাতি এই কাজ উপেক্ষা করেছিল। এই বর্তমান কালে যারা নিজেদের খ্রীষ্টের অনুসারী বলে দাবী করে থাকে, তারাও কি এই কাজ উপেক্ষা করছে না? COLBen 171.1

যারা ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিপথে গেছে, পাঠক তাদের মধ্যে কত জনকে আপনি খুঁজে বের করে ঈশ্বরের পালের মধ্যে ফিরিয়ে এনেছেন? যখন আপনি তাদের কাছ থেকে ফিরে এসেছেন তখন কে এই কথা ভেবেছে যে, এটি অনিশ্চিত এবং অনাকর্ষণীয় বিষয়? আপনি কি উপলব্ধি করতে পারছেন যে, আপনি যাদের উপেক্ষা করেছেন খ্রীষ্ট সেই মানুষদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন? প্রথমে যখন আপনি তাদের কাছ থেকে ফিরে এসেছিলেন, তখন হয়তো তাদের আপনার করুণার অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। প্রত্যেক সমবেত উপাসনায় অনেক প্রাণ সেখানে উপস্থিত থাকে যারা সান্ত্বনা এবং শান্তির জন্য আকাঙ্ক্ষিত থাকে। এদের মধ্যে অনেকেই হয়তো তাদের উদাসীন জীবন যাপনকে প্রকাশ করতে পারে, কিন্তু তারা পবিত্র আত্মার প্রভাবের বাইরে নয়। এদের মধ্যে এমন অনেকে আছে, যাদের হয়তো খ্রীষ্টের জন্য জয় করা সম্ভব ছিল। COLBen 171.2

যদি হারিয়ে যাওয়া মেষকে পালের মধ্যে ফিরিয়ে আনা না হয়, তাহলে তারা ধ্বংস হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত এই ভাবে বিপথে চালিত হতে থাকবে। এমন অনেকে আছে যারা তাদের দিকে রক্ষা করার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়ার অভাবে বিনাশের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হচ্ছে। এই বিপথে গমনকারীরা হয়তো কষ্টকর এবং হতাশা জনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে; কিন্তু তারা যদি একই সুযোগ লাভ করত যা অন্যরা পেয়েছে, তাহলে তারা তাদের জীবনে আরও বেশি করে শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করতে পারত এবং উপকার সাধনের জন্য আরও মহৎ গুণ লাভ করত। এই সব বিপথে গমনকারীদের জন্য স্বর্গদূতগণ সহানুভূতি বোধ করেন। যখন মানুষের চোখ শুষ্ক থাকে এবং হৃদয় দয়া লাভের জন্য আকাঙ্ক্ষিত হয়, তখন স্বর্গদূতগণ দুঃখ প্রকাশ করে কাঁদেন। COLBen 172.1

হায়! যারা প্রলোভিত হয়েছে ও বিপথে গমন করছে, তাদের জন্য গভীর এবং হৃদয় স্পর্শী সহানুভূতির কত না অভাব! হায়! আরও বেশি করে খ্রীষ্টের উৎসাহের জন্য নিজেকে আরও কতই না ছোট করতে হবে, নিজেকে অস্বীকার করতে হবে! COLBen 172.2

ফরীশীরা বুঝতে পেরেছিল যে, খ্রীষ্ট এই দৃষ্টান্তের মাধ্যমে তাদের তিরস্কার করেছেন। তাঁর কাজের জন্য তাদের সমালোচনা গ্রহণ করে নেবার পরিবর্তে তিনি করগ্রাহী ও পাপীদের উপেক্ষা করার জন্য তাদের তীব্র নিন্দা করলেন। তিনি সরাসরি এই কাজ করেন নি, পাছে তাঁর বিরদ্ধে তাদের অন্তর বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ঈশ্বর যে প্রকৃত কাজ তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করেছিলেন অথচ তারা তা সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছিল, সেই বিষয়টি তিনি ব্যাখ্যার মাধ্যমে তাদের সামনে উপস্থিত করেছিলেন। তারা প্রকৃত মেষ পালক হলে, এই নেতারা, ইস্রায়েলের মধ্যে মেষ পালকদের কাজ করতে পারত। তারা খ্রীষ্টের দয়া ও ভালবাসা প্রকাশ করত এবং তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাঁর কাজ করত। এই কাজ প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমে তারা যে অনুগ্রহশীল বলে তারা যে দাবী করে আসছিল তা মিথ্যা প্রমাণিত হল। এখনও অনেকে আছে যারা খ্রীষ্টের তিরস্কারকে উপেক্ষা করে। তথাপি এমন অনেকে আছে যারা তাঁর কথায় নিজের দোষ উপলব্ধি করতে পেরে তাঁর উপরে বিশ্বাস স্থাপন করে। খ্রীষ্টের স্বর্গারোহণের পর এদের উপর পবিত্র আত্মা নেমে এসেছিল এবং তারা তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে হারানো মেষের দৃষ্টান্তে বর্ণিত রূপরেখা অনুযায়ী প্রকৃত কাজে যুক্ত হয়েছিলেন। COLBen 172.3