Go to full page →

বিশ্রামের কাল MHBen 37

তাদের প্রথম মিশনারী যাত্রা শেষে ফিরে এলে যীশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, নির্জনে এসে কিছু সময় বিশ্রাম কর। শিষ্যরা ফিরে এসেছেন সুসংবাদ ঘোষণায় কৃতকার্যতার আনন্দে পরিপূর্ণ, কিন্তু যখন হেরোদের হাতে বাপ্তিস্মদাতা যোহনের মৃত্যুবরণের সংবাদ তাদের কাছে পৌঁছাল এটা ছিল তাদের কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও নিরুৎসাহজনক সংবাদ। যীশু জানতেন যে বাপ্তিষ্মদাতাকে জেলখানায় হত্যা করতে দিয়ে তিনি শিষ্যদের বিশ্বাসের এক ভয়াবহ পরীক্ষা নিয়েছিলেন। সমবেদনাপূর্ণ সহানুভূতিতে তিনি তাদের দুঃখার্ত, অশ্রুমাখা মুখমণ্ডলের দিকে তাকালেন। তাঁর নিজের চোখে ও স্বরে অশ্রু নেমে এল তিনি বললেন, “তোমরা বিরলে এক নির্জ্জন স্থানে আসিয়া কিছু কাল বিশ্রাম কর।” (মার্ক ৬:৩১)। MHBen 37.1

গালীল সাগরের উত্তর প্রান্তে বৈৎসৈদার কাছে বসন্তের সবুজ সতেজ সুন্দর নির্জন এলাকা যীশু ও তাঁর শিষ্যদের বিশ্রামের জন্য স্বাগতম জানাল। এই জায়গার উদ্দেশ্যে তাঁরা তাঁদের নৌকায় হ্রদ পাড়ি দিয়ে চললেন। এখানে জনতার কোলাহল থেকে নির্জনে তাঁরা বিশ্রাম নিতে পারতেন। এখানে শিষ্যরা ফরীশীদের প্রতিশোধমূলক জবাব ও দোষারোপ থেকে মুক্ত পরিবেশে যীশুর বাক্য শুনতে পারত। এখানে তাদের গুরুর সাথে সহযোগিতায় কিছু সময় আনন্দ উপভোগ করতে পারবে এ প্রত্যাশাই তারা করেছিলো। MHBen 37.2

কেবল মাত্র কিছু সময়ের জন্য যীশু তাঁর প্রিয় শিষ্যদের সঙ্গে একাকী যাপন করতে পেরেছিলেন, কিন্তু তাঁদের কাছে এ মুহূর্তগুলো কতই না মূল্যবান ছিল। তারা একত্রে সুসংবাদ প্রচার সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন এবং আরো আলোচনা করছিলেন কিভাবে লোকদের কাছে পৌঁছাতে তাদের শ্রমকে আরও কার্যকরী করা যায়। যেমন যীশু তাদের কাছে সত্যের অতীব মূল্যবান সম্পদ খুলে দিলেন, তারা ঐশ্বরিক শক্তি দ্বারা সঞ্জীবিত হলেন এবং প্রত্যাশা ও সাহস দ্বারা অনুপ্রাণিত হলেন। MHBen 37.3

কিন্তু সত্বর বিশাল জনতা পুনরায় তাঁর খোঁজ করতে লাগল। তিনি তাঁর নিয়মিত বিশ্রাম স্থানে গিয়েছেন। ভেবে তারা সেখানে তাঁকে অনুসরণ করতে গেল। এক ঘণ্টা বিশ্রামের জন্য পাওয়ার আশা ব্যাহত হল। কিন্তু তাঁর খাঁটি, সহানুভূতিশীল অননতর গভীরে এই অস্থির অবিশ্রান্ত, তৃষ্ণার্ত আত্মাদের প্রতি উত্তম রাখালের মতো ভেড়ার প্রতি প্রেম ও দরদ ছিল। সারাদিন তিনি তাদের চাহিদানুসারে সেবাকাজ করলেন এবং তাদেরকে নিজ নিজ ঘরে যাবার জন্য বিদায় দিলেন। MHBen 38.1

অন্যের উপকারার্থে সম্পূর্ণ উৎসর্গীকৃত জীবনে পরিত্রাণকর্তা মানুষের চাহিদা মেটাতে অবিরাম কাজ ও যোগাযোগ হতে কিছুদিনের জন্য পাশ কাটিয়ে অবসর গ্রহণের প্রয়োজন মনে করলেন, যেন তাঁর স্বর্গস্থ পিতার সাথে অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ বজায় রাখা যায়। যেমন তাঁকে অনুসরণকারী জনতা বিদায় নিল, তিনি পাহাড়ে চলে গেলেন, আর সেখানে একাকী ঈশ্বরের সাথে প্রার্থনার মাধ্যমে এই দুঃখ-বেদনা ক্লিষ্ট, পাপিষ্ঠ, দরিদ্রদের জন্য তাঁর প্রাণ ঢেলে দিলেন। MHBen 38.2

যীশু তার শিষ্যদের যখন বললেন, ফসল প্রচুর বটে কিন্তু কার্যকারী লোক অল্প। এর দ্বারা তিনি শিষ্যদের অবিরত কাজ করার প্রয়োজন আছে তা বুঝাতে চাননি, বরং তিনি বলেছিলেন, “অতএব শস্যক্ষেত্রের স্বামীর নিকটে র্প্রাথনা কর, যেন তিনি নিজ শস্য ক্ষেত্রে কার্য্যকারী লোক পাঠাইয়া দেন।” (মথি ৯:৩৮)। তাই আজও তিনি তাঁর প্রথম শিষ্যদের মত কর্ম্মক্লান্ত পরিশ্রান্ত কার্যকারীদের সহানুভুতিশীল বাক্য দ্বারা বলেন, “তোমরা বিরলে এক নির্জ্জন স্থানে আসিয়া কিছুকাল বিশ্রাম কর।” MHBen 38.3

যারা ঈশ্বরের প্রশিক্ষণের অধীনে আছে তাদের নিজ নিজ অনন্তর প্রকৃতির ও ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য নীরব নিভৃত সময়ের প্রয়োজন। তাদের মাঝে এমন এক জীবন প্রকাশ পাবে যার মাঝে এই পৃথিবী, এর রীতিনীতি আচার অনুষ্ঠান বা অভ্যাসের কোন মিল নেই, বরং ঈশ্বরের ই‪ছা জানবার জন্য তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন। তিনি যে, আমাদের অনন্তর মাঝে কথা বলেন তা ‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬ ব্যক্তিগতভাবে আমাদের অবশ্যই শুনতে হবে। যখন অন্য সব স্বর নিস্তব্ধ, আর নীরবতায় তাঁর সাক্ষাতে অপেক্ষা করি, আত্মার নিস্তব্ধতা ঈশ্বরের স্বর, আরো অধিক স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিনি আমাদের বলেন, “তোমরা ক্ষান্তহও; জানিও, আমিই ঈশ্বর।” (গীত ৪৬:১০)। যারা ঈশ্বরের জন্য কাজ করে তাদের সকলের এটাই সফল প্রস্তুতি গ্রহণ। দ্রুত অগ্রসরমান জনতার মাঝে, জীবনে কাজের প্রচন্ড চাপের মাঝে যে ব্যক্তি ঐ প্রকারে সবল-সতেজ হয়, সে আলো ও শান্তির পরিবেশে বেষ্টিত হবে। সে উভয় শারীরিক ও মানসিক শক্তিরূপ এক নতুন গুণ প্রাপ্ত হবে। তার জীবন এক সৌরভ ছড়াবে এবং আধ্যাত্মিক শক্তি প্রকাশিত হবে যা লোকদের অন্তর পর্যন্ত পৌছে যাবে। MHBen 38.4

*****