‘মানব হৃদয়ে এবং জীবনের ওপরে যে কোন পার্থিব
প্রভাব সমূহ অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী
হচ্ছে একটি প্রকৃত গৃহের প্রভাব।
ছোট ছেলেমেয়েদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হওয়া উচিত গৃহ এবং তার থেকেও আকর্ষণীয় মা’য়ের উপস্থিতি। ছোটরা স্পর্শকাতর এবং ভালবাসা প্রিয়। তারা খুব সহজেই সুখী হয় আবার খুব অল্পতেই দুঃখ পায়। একজন মা তার সুন্দর নিয়ম কানুন, সুন্দর কথা এবং কাজের মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের তার হৃদয়ের বন্ধনে রাখতে পারেন। MHBen 364.1
ছোট ছেলেমেয়েরা সাহচর্য বা বন্ধুত্ব ভালবাসে এবং কদাচিৎ একা থেকে আনন্দ পায়। তারা অন্যদের কাছ থেকে সমবেদনা ও দয়া আশা করে। যাতে তারা আনন্দ পায়। তারা চিন্তাকরে তাদের মাও তাতে সুখী হবে এবং এটা তাদের জন্য খুবই স্বাভাবিক তাদের ছোট ছোট আনন্দ, বেদনা নিয়ে মার কাছে যাওয়া। আর মায়ের কোনমতেই উচিত না তাদের অভিমানী ছোট হৃদয়ে আঘাত দেয়া অন্য কোন ঔদাসীন্য বিষয় নিয়ে। যদিও বিষয়টা তার কাছে তুছ কিন্তু ছেলেমেয়েদের কাছে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মা’য়ের সহযোগিতা এবং সম্মতি খুবই মূল্যবান। একটা চমক দেয়া একটা অনুমোদন, একটা উৎসাহের বাক্য যা প্রশংসা হবে তাদের হৃদয়ে সূর্যের কিরণের মতো, যা কিনা তাদের সারা দিন সুখী করবে। MHBen 364.2
ছেলেমেয়েদের হৈ চৈ বা গন্ডগোলে বা ছোট ছোট আবদারে বিরক্তি হয়ে অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়ার পরিবর্তে, মা যদি তাদের আনন্দ দেয়ার জন্য পরিকল্পনা বা তাদের হালকা মজার কোন কাজ দেন, যেটা তাদের হৃদয়ে সূর্য কিরণের ন্যায় হবে, সারাদিন প্রায়ই তারা সুখী হবে। MHBen 365.1
তাদের সুখ দুঃখ বোঝার মাধ্যমে, তাদের আমোদ প্রমোদ ও কাজের নির্দেশ দেবার মাধ্যমে, মা তার সন্তানদের বিশ্বস্ততা জয় করতে পারে, এবং সে খুব কার্যকরভাবে খারাপ অভ্যাসকে পরিবর্তন করতে পারে, বা তাদের স্বার্থপরতা বা স্বার্থপর ভাবাবেগ প্রদর্শন করতে পারে। ঠিক সময়ে একটা সতর্কতামূলক বাক্য বা একটা তিরস্কারের কথা খুবই মূল্যবান। ভালবাসার মাধ্যমে ধৈর্যের মাধ্যমে মা তার সন্তানের মনের পরিবর্তন করতে পারে এবং সঠিক পথে চলার নির্দেশ দিতে পারে। এবং মা তাদের মধ্যে সুন্দর এবং আকর্ষণীয় চরিত্র গঠন করতে পারেন। MHBen 365.2
মা’য়েরা অবশ্যই তাদের সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। যাতে তারা নিজেদের ওপর নির্ভরশীল হয় এবং নিজেরা চিন্তাশীল হয়। তারা যেন কোনমতেই চিন্তাকরতে না পারে যে তারাই মধ্যমনি এবং সবকিছুই তাদের জন্য করা হয়। অনেক বাবা-মা আছেন যারা তাদের সন্তানদের আমোদ-প্রমোদের জন্য অনেক সময় দেন কিন্তু শিশুদের শেখানো উচিত তারা নিজেদের কিভাবে আনন্দিত করতে পারে। নিজেদের কৌশল এবং দক্ষতা ব্যবহার করেন, এভাবেই তারা ছোট সাধারণ একটা আনন্দের বিষয় নিয়ে নিজেদেরকে সুখী করতে শিখবে। তাদের অবশ্যই শেখা উচিত কিভাবে ছোট ছোট নিরুৎসাহ বা পরীক্ষাকে সাহসের সাথে সহ্য করা যায়। সন্তানের সব মামুলী ব্যথা বা কষ্টের জন্য তাদের হৃদয় ভেঙ্গে দেয়ার পরিবর্তে, তাদের এমন শিক্ষা দিতে হবে, তারা যেন ছোট ছোট বিরক্তিকর বিষয় বা কষ্টদায়ক কোন বিষয়ের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হতে পারে। সন্তানদের এমন পথে চলার নির্দেশ দিতে হবে যাতে তারা অন্যের জন্য চিন্তাশীল হতে শিখে। MHBen 365.3
কিন্তু সন্তানেরা যেন অবহেলিত না হয়। অনেক দুশ্চিন্তার ভারগ্রস্ত মায়েরা অনেক সময় চিন্তাকরে সন্তানেরা ধৈর্যের সাথে তাদের এই ছোট বয়সে নিজেদেরকে পরিচালনা দিতে পারবে না, এজন্য তাদেরকে ভালবাসা ও সহযোগিতা দেয়। কিন্তু তাদের অবশ্যই স্মরণ রাখা উচিত যে, যদি সন্তানেরা তাদের বাবা মাকে না দেখে, এবং তাদের গৃহে তাদের বিভিন্ন ইচ্ছা পূরণ না করে তাদের সহযোগিতা ও সঙ্গ না দেয় তখন তারা অন্য পন্থা খোঁজে, যেখানে তাদের মন এবং চরিত্র দুটোই বিপন্ন হয়। MHBen 365.4
সময় এবং চিন্তার অভাবে কোন কোন মা তার সন্তানের কিছু নিষ্পাপ আনন্দকে মূল্য দেয় না বা অগ্রাহ্য করে, তখন তাদের সন্তানের ব্যস্ততম অঙ্গুলীগুলো এবং পরিশ্রান্ত চোখগুলো অধ্যবসায়ী হয়ে সুন্দর কোন কাজ করার জন্য নিজেকে নিয়োজিত রাখে এমন কিছু, যা মনে করে সবচেয়ে উত্তম, তাদের ছোট মনকে বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত করে তাদের দেমাক, বাড়াবাড়ি এবং বৃথা অহংকার। সন্তানরা যখন বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে নারীত্বে ও পৌরষে প্রবেশ করে, এই সব অভিজ্ঞতা তাদের গর্ভের ফল হয়ে দাঁড়ায় এবং নৈতিক মূল্যবোধহীন বা অপদার্থ হয়ে পড়ে। মা তার সন্তানের ভুলের জন্য ব্যথিত হয়, কিন্তু এটা উপলব্ধি করে না যে, তার কর্মফল, সে যে বীজ বপন করেছিল সেই বীজের ফসলই এখন ভোগ করতে হয়। MHBen 366.1
কিছু মায়েরা আছেন, তাদের সন্তানের শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারে তাদের আচরণ একরূপ নয়। সন্তানের কষ্টের সময় তারা তাদের সাহায্য করে এবং আবার যখন সন্তানের কিছু নিস্পাপ তৃপ্তি অগ্রাহ্য করে যেটা সন্তানের মনকে খুব খুশী করে। এখানে তারা যীশু খ্রীষ্টকে অনুকরণ করছে না; তিনি ছোটদের ভালবাসতেন; তিনি তাদের সুখ দুঃখকে হৃদয় দিয়ে বুঝতেন; এবং তাদের সাথে আনন্দ, কষ্ট এবং সহানুভূতি প্রকাশ করতেন। MHBen 366.2