“অবােধদিগকে ‘চতুরতা প্রদান করা যায়,
যুবক জ্ঞান ও পরিণামদর্শিতা প্রাপ্ত হয়।”
যুগ যুগ ব্যাপী শিক্ষা প্রধানত মুখস্থ বিদ্যার উপর গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। এই কর্মশক্তির ওপরে অত্যধিক চাপ পড়ার ফলে অন্যান্য কর্মশক্তিগুলাে সমভাবে বাড়ে না। ছাত্র-ছাত্রীরা অত্যধিক পরিশ্রমের মাধ্যমে তাদের সময় ব্যয় করেছে এবং জ্ঞান দ্বারা তাদের মন এবং চিন্তাধারাকে ঘনসন্নিবিষ্ট করেছে, যার অল্পই মাত্র কাজে প্রয়ােগ করা যায়। মন ঐ সকল দ্বারা ভারগ্রস্ত হত যা অঙ্গীভূত করা যেত না ফলে হজম ক্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়ত, তা সক্রিয় শক্তিসম্পন্ন, আত্মনির্ভরশীল হতে অসমর্থ হত, এবং অন্যের বিচার ও কল্পমূর্তির ওপর নির্ভরশীল হতে হত। EdBen 213.1
এই পদ্ধতির মন্দতা লক্ষ করে কেউ কেউ অন্য পথ অবলম্বন করেছে। তাদের দৃষ্টি ভঙ্গিতে, মানুষের কেবল তাদের মধ্যে যা তারই উন্নতি হওয়া আবশ্যক। এমন শিক্ষা ছাত্রকে আমিত্বের দিকে পরিচালিত করে, এভাবে সে তাকে প্রকৃত জ্ঞান এবং শক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন করে EdBen 213.2
যে শিক্ষা মুখস্থবিদ্যার প্রশিক্ষণ দেয়, তা স্বাধীন চিন্তাকে নিরুৎসাহিত করে, যা খুব অল্পই প্রশংসা পাবার যােগ্য। শিক্ষার্থী যেমন নিজের বিচার বুদ্ধির ক্ষমতা বিসর্জন দেয়, তখন সে সত্য এবং মিথ্যার মধ্যে ব্যবধান আবিষ্কার করতে ব্যর্থ হয় এবং সে খুব সহজেই প্রতারণার শিকার হয়ে পড়ে। সে সহজেই পরম্পরাগত আচার-আচরণ অনুসরণ করতে পরিচালিত হয়। EdBen 213.3
একটি সত্য যা ব্যাপকভাবে উপেক্ষা করা হয়, যা কখনাে। বিপদমুক্ত নয়, তা হল, আসলে ভুলটি কি তা খুব অল্পই লক্ষ করা হয়। একটি সত্যের সংস্পর্শে আসার অর্থ হল, এর গ্রহণযােগ্যতা লাভ করা । সদস-জ্ঞান দায়ক গাছের ফল খেয়ে আমাদের সর্বপ্রথম পিতা-মাতা ধ্বংস ডেকে এনেছিল; তাই ভালাে ও মন্দের মিশ্রণ গ্রহণ করা আজো মানুষের বিনাশের কারণ। যে মন অন্যের বিচার বুদ্ধির ওপর নির্ভরশীল তা নিশ্চয়ই এখন হােক বা পরে থােক অবশ্যই ভুল পথে পরিচালিত হবে। EdBen 213.4
কেবল ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীল হওয়ার মাধ্যমেই আমরা ন্যায়অন্যায়ের মধ্যে ব্যবধানটি বুঝতে পারি। প্রত্যেককেই তাঁর বাক্যের মাধ্যমে তার কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আমাদের ব্যবহারের জন্য, আমাদের বিচার বিবেচনা শক্তি দেয়া হয়েছে এবং ঈশ্বর চান যেন আমরা ওগুলাের অনুশীলন করি। “আইস, আমরা উত্তর প্রত্যুত্তর করি” (যিশাইয় ১:১৮), তিনি আমাদের কাছে আহ্বান জানাচ্ছেন। তাতে নির্ভর করেই আমরা জ্ঞান লাভ করতে পারি যেন “যাহা মন্দ তাহা অগ্রাহ্য করিতে” এবং যা “ভাল তাহা মনােনীত করিতে পারি। যিশাইয় ৭:১৫; যাকোব ১:৫ । EdBen 214.1
সমস্ত প্রকৃত শিক্ষার মধ্যে ব্যক্তিগত যােগ্যতা থাকা আবশ্যক। খ্রীষ্ট তার শিক্ষার মধ্যে লােকদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক রক্ষা করতেন। ব্যক্তিগত মেলামেশা এবং সাক্ষাতের মাধ্যমেই তিনি তার শিষ্যদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। প্রায়ই ব্যক্তিগত ভাবে বা মাত্র এক জন শ্রোতার কাছে তার খুবই মূল্যবান উপদেশ বা শিক্ষা উপস্থাপন করতেন। রাতের বেলা জৈতুন পর্বতের উপরে সম্মানিত রব্বিগণের কাছে; শূখর নামক গ্রামের কৃপের কাছে নিন্দিতা স্ত্রীলােকটির কাছে তিনি তার সর্বশ্রেষ্ঠ মূল্যবান ধনাগার খুলে দিয়েছিলেন; কেননা এই শ্রোতাদের মধ্যে তিনি অনুপ্রেরণার হৃদয়, খােলা মন, গ্রহণে ইচ্ছুক আত্মা লক্ষ করেছিলেন। এমন কি যে বিশাল জনতা, যারা প্রায়ই যীশুর পিছে পিছে ভিড় জমাত, তারা মানব সত্তার একটি এলােমেলাে বিশৃঙ্খল জনতা প্রকৃত পক্ষে খ্রীষ্টের অনুসরণ করে নি। তিনি সরাসরি প্রত্যেকের মনে কথা বলেছিলেন এবং প্রতিটি হৃদয়ে আবেদন জানিয়েছেন। তিনি তাঁর শ্রোতার মুখমণ্ডলের দিকে চেয়ে দেখতেন, এবং তাদের মুখের ওপরে আলােচছটা লক্ষ করতেন, দ্রুত সাড়া দানকারী চাহনী, যা বলে দিত যে সত্য তাদের হৃদয়ে প্রবেশ করেছে; এবং তার হৃদয়ে সহানুভূতির আনন্দের উত্তর প্রদানকারী তন্ত্র বেজে উঠত । . খ্রীষ্ট প্রত্যেক মানব সত্বর মধ্যে সম্ভাবনা লক্ষ করেছেন। তিনি আশাহীন বহিরাগত অথবা একটি প্রতিকূল পরিবেশ দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হন নি। তিনি মথিকে কর আদায়ের মেঝে হতে ডেকে এনেছেন, এবং পিতর ও তার ভাইদের মাছ ধরার নৌকা থেকে ডেকে এনেছেন যেন তাঁর কাছে। শিক্ষা লাভ করেন। EdBen 214.2
এমন ব্যক্তিগত আগ্রহ, ব্যক্তিগত উন্নয়নের প্রতি একই প্রকার মনােযােগ, বর্তমান যুগের শিক্ষার মধ্যে আবশ্যক। আপাতঃদৃষ্টিতে অনেক আশাহীন যুবক-যুবতির বহুবিধ তালন্ত রয়েছে, যা ব্যবহৃত হচ্ছে না। তাদের কর্মশক্তি গুপ্ত রয়েছে, তাদের শিক্ষাদাতাদের অদূরদর্শিতাই এর কারণ। অনেক বালক-বালিকাকে একটি এবড়াে-থেবড়াে এবং অমসৃণ পাথরের টুকরাের মত অসুন্দর দেখালেও তাদের মধ্যে অমূল্য সম্পদ রয়েছে; যা উত্তাপ, ঝড়-ঝাপটা এবং চাপের মধ্যে টিকে থাকবে। প্রকৃত শিক্ষাদাতা, তার ছাত্র-ছাত্রীরা ভবিষ্যতে কি হবে সেদিকে খেয়াল রেখে তিনি কি সব বস্তু নিয়ে কাজ করছেন, তার মূল্য বিবেচনা করবেন। তিনি প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর প্রতি ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখিয়ে তার পুরাে শক্তির ক্রমবিকাশে সাহায্য করবেন। তাদের প্রচেষ্টা নিখুৎ না হলেও তাদের সঠিক নীতির প্রতি উৎসাহ দিতে হবে । EdBen 215.1
প্রত্যেক যুবক-যুবতিকে প্রয়ােগের আবশ্যকতা এবং শক্তি সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে। সহজাত সৃজনী ক্ষমতার উপরে কৃতকার্যতা যতটা নির্ভর, করে তারচেয়ে বেশি নির্ভর করে এর ওপর। ব্যবহার ব্যতিরেকে সবচেয়ে ভালাে তালন্তও মূল্যহীন ও অকেজো হয়ে পড়ে কিন্তু যথার্থ পরিচালনা এবং প্রচেষ্টায় সাধারণ সামর্থ ও কর্মদক্ষতা আশ্চর্য কাজ সাধন করেছে; সহজাত দক্ষতা, যার সম্পাদিত কাজ এবং কীর্তি দেখে আমরা অবাক হয়ে থাকি তাও প্রায় একইরূপে অক্লান্ত, পূর্ণমনােযােগ প্রচেষ্টার সহিত সংযুক্ত। EdBen 215.2
যুবক-যুবতি যতই দুর্বল হােক অথবা যতই শক্তিশালী হােক তাদের কর্মশক্তির ক্রমবৃদ্ধির প্রতি দৃষ্টি রাখতে শিক্ষা দিতে হবে। তাদের অনেকের কোন নির্দিষ্ট পেশায় অধ্যয়নে সীমাবদ্ধকরণের স্বাভাবিক প্রবণতা রয়েছে, যার জন্য তাদের একটি স্বাভাবিক ভুলের বিরুদ্ধে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। স্বাভাবিক প্রবণতা জীবনের প্রধান কাজের দিক নির্দেশনা দেয় কিন্তু যখন তা বৈধকরণ করা হয়, তখন তা সতর্কতার সঙ্গে অনুশীলন করতে হবে। একই সময়ে মনে রাখতে হবে যে, একটি সুষম চরিত্র এবং যে কোন পেশায় দক্ষতার কাজ বিশেষভাবে সামঞ্জস্য ক্রমবৃদ্ধির ওপরে নির্ভর করে যা ব্যাপক চৌকস প্রশিক্ষণের ফল। EdBen 215.3
শিক্ষক-শিক্ষিকা অবিরত সরলতা এবং কার্যকারীতার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখবেন। তিনি বেশির ভাগ সময়ে দৃষ্টান্তের মাধ্যমে শিক্ষা দেবেন। এবং বয়স্ক ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে আচরণে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করবেন। এবং প্রতিটি বিষয়ে সহজ, সরল ও পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দেবেন। অনেক ছাত্র-ছাত্রী বয়স বড় হলেও তারা জ্ঞানে শিশু রয়ে গেছে। EdBen 216.1
শিক্ষাক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে উদ্যম ও উৎসাহ। এই বিষয়ে একজন সুবিখ্যাত অভিনেতা কর্তৃক একটি মন্তব্যের মধ্যে একটি কার্যকর পরামর্শ রয়েছে। ক্যানটেরবারির আর্চবিশপ তাকে প্রশ্ন করলেন কেন অভিনেতা/অভিনেত্রীরা একটি অভিনয়ে তাদের দর্শক ও শ্রোতা মণ্ডলীকে তাদের কাল্পনিক বিষয় নিয়ে কথা বলে এত জোরালাে ভাবে প্রভাবিত করতে পারে, অথচ প্রচারকগণ বাস্তব বিষয় নিয়ে কথা বলে খুব অল্প সংখ্যক লােককে প্রভাবিত করতে পারেন। অভিনেতা সশ্রদ্ধ ভাবে উত্তর দেবার অনুমিত লাভ করলেন: এতে আবশ্যক উদ্যম ও উৎসাহ। আমরা মঞ্চে কাল্পনিক বিষয়গুলাে নিয়ে এমন ভাবে কথা বলি যেন তা বাস্তব, আর আপনারা বাস্তব বিষয় নিয়ে এমন ভাবে কথা বলেন যেন তা কাল্পনিক । EdBen 216.2
শিক্ষক বাস্তব বিষয় নিয়ে কাজ করেন, এবং তিনি ঐ সকল বিষয়। সর্বশক্তি এবং উৎসাহ সহকারে কথা বলবেন যা তাদের বাস্তবতা এবং গুরুত্বপূর্ণতার বিষয়ে অনুপ্রেরণা দান করতে পারে। EdBen 216.3
প্রত্যেক শিক্ষক লক্ষ রাখবেন যেন তার কাজ একটি নির্দিষ্ট ফলাফলের অভিমুখি হয়। একটা বিষয় শিক্ষা দেবার প্রয়াসে তার মনে একটি স্বতন্ত্র পরিকল্পনা থাকবে, এবং তাকে জানতে হবে তিনি কি সম্পাদন করতে চান। যে পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রী বিষয়বস্তু সম্পর্কিত নীতি, এর মধ্যে নিহীত সত্য এবং সে কি শিক্ষালাভ করছে, তা সে বুঝতে ও বলতে পারবে সে পর্যন্ত শিক্ষক/শিক্ষিকা তার উপস্থাপনায় সন্তুষ্ট হবেন না । EdBen 216.4
শিক্ষার মহৎ উদ্দেশ্যর প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকবে, যুবক-যুবতিদের তাদের সামর্থ্য অনুসারে এগিয়ে যাবার জন্য উৎসাহ দিতে হবে কিন্তু উচ্চ শিক্ষা নেয়ার আগে তাদেরকে প্রাথমিক শিক্ষাগুলাের ওপরে পারদর্শিতা লাভ করতে হবে যা প্রায়ই তুচ্ছ জ্ঞান করা হয়ে থাকে। এমন কি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এবং মহা বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে শিক্ষালাভের ক্ষেত্রে সাধারণ বিষয়ে জ্ঞানের অভাব পরিলক্ষিত হয়। অনেক ছাত্র-ছাত্রী উচ্চ গণিত শিক্ষা লাভ করতে গিয়ে অনেক সময় ব্যয় করে, অথচ দেখা যায়, তারা সাধারণ হিসাবটি বােঝে না। অনেকে বক্তৃতাকৌশল বিষয়ে অধ্যয়ন করে যেন তারা সুবক্তা হতে পারে, কিন্তু দেখা যায় তারা পঠনেই অত্যন্ত দুর্বল। অনেকে বক্তৃতা বিষয়ক অধ্যয়ন শেষ করছে, অথচ একটি সাধারণ চিঠি লিখতে গিয়ে বানান ভুল করে EdBen 216.5
শিক্ষার অপরিহার্য বিষয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান কেবল একটি উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হবার শর্তই হবে না, কিন্তু অবিরল এবং অগ্রগতির জন্য বিরামহীন পরীক্ষাস্বরূপ হবে। EdBen 217.1
আর শিক্ষার প্রতিটি শাখায় কয়েকটি বিষয়ের উপর জ্ঞান অর্জন করতে হবে যা প্রায়ােগিক বিদ্যা অপেক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ। ভাষার দৃষ্টান্তই ধরা যাক। বিদেশী ভাষার উপরে যতই দক্ষতা অর্জন করা হােক না কেন, মাতৃভাষায় সহজ এবং নির্ভুল ভাবে লেখার ও বলার জ্ঞান অর্জন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ব্যাকরণের উপরে জ্ঞান অর্জন অপেক্ষা শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারা। এই বিষয় অধ্যয়নের উপরেই জীবনের মঙ্গল ও অমঙ্গল বিশেষভাবে নির্ভরশীল। EdBen 217.2
আমাদের ব্যবহৃত ভাষার প্রধান অপরিহার্য বিষয়ের মধ্যে থাকবে বিশুদ্ধতা, দয়া এবং সত্য “এক অভ্যন্তরীণ মাধুর্যের বাহ্যিক প্রকাশ।” ঈশ্বর বলেন, “অবশেষে, হে ভ্রাতৃগণ, যাহা যাহা সত্য, যাহা যাহা আদরণীয়, যাহা যাহা ন্যায্য, যাহা যাহা বিশুদ্ধ, যাহা যাহা প্রীতিজনক, যাহা যাহা সুখ্যাতিযুক্ত, যে কোন সদ্গুণ ও যে কোন কীর্তি হউক, সেই সকল আলােচনা কর।” ফিলিপীয় ৪:৮। আর চিন্তারাশি যদি এরূপই হয়, তবে প্রকাশভঙ্গি ড্রপ হবে । EdBen 217.3
এভাবে ভাষা শিক্ষার সর্বোত্তম বিদ্যালয় হবে ঘর; কিন্তু যেহেতু ঘরের কাজ প্রায়ই অবহেলার চোখে দেখা হয়ে থাকে, তখন সঠিক বাচন ভঙ্গির শিক্ষাদানের দায়িত্ব শিক্ষকের উপরেই ন্যাস্ত হয়ে থাকে। EdBen 217.4
শিক্ষক, সমাজ, প্রতিবেশী, এবং ঘরের অভিশাপ স্বরূপ মন্দ অভ্যাসের প্রতি নিরুদ্যম আনয়ন করার জন্য অসাক্ষাতে নিন্দা, কানাঘুষা, সমালােচনা, অনৌদার্যের উক্তি ইত্যাদিসহ অনেক কিছু করতে পারেন। যে কোন ত্যাগ স্বীকার এবং যে কোন মূল্যে এর প্রতিরােধ করতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের মনে এই ছাপ অঙ্কিত করুন যে, এই অভ্যাস কৃষ্টি এবং বিশুদ্ধতা এবং চিত্তের প্রকৃত উত্তমতার অভাব প্রকাশ করে; এটি ইহ জগতে একজন ব্যক্তিকে প্রকৃত সুশিক্ষিত সমাজ এবং স্বর্গের পবিত্রগণের সহভাগিতা লাভে অনপুযুক্ত করে EdBen 217.5
আমরা নরপিশাচের জঘন্যতার কথা চিন্তা করি, যে তার শিকারের উষ্ণ এবং কম্পমান মাংস খেয়ে বেঁচে থাকে; কিন্তু এই অভ্যাসের অনুশীলনের পরিণাম কি বিকৃত মনােভাব, দুর্নাম, কুচরিত্র দ্বারা সংঘটিত আর্তনাদ ও ধ্বংসের চেয়ে বেশি ভয়াবহ? এই সকল বিষয়ে ঈশ্বর বলেছেন, তা ছােট ছােট ছেলে-মেয়েরা যেমন, একইভাবে যুবক-যুবতিদের শিক্ষালাভ করা উচিত। EdBen 218.1
“মরণ ও জীবন জিহ্বার অধীন।” হিতােপদেশ ১৮:২১। শাস্ত্রে, অসাক্ষাতে বদনামকারীরা “ঈশ্বর ঘূণিত”, “মন্দ বিষয়ের উৎপাদক, “অনাজ্ঞাবহ, নির্বোধ, নিয়মভঙ্গকারী, স্নেহরহিত, নির্দয়” লােকদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। “তাহারা ঈশ্বরের বিচার জ্ঞাত ছিল যে, যাহারা এইরূপ আচরণ করে তাহারা মৃত্যুর যােগ্য।” (রােমীয় ১:৩০, ৩১, ২৯, ৩২। ঈশ্বর যাকে সিয়ােন পুরীর নাগরিকরূপে গণনা করেন, সেই ব্যক্তি “হৃদয়ে সত্য কহে;” “যে পরীবাদ জিহ্বাগ্রে আনে না,” “আপন প্রতিবাসীর দুর্নাম করে না।” গীতসংহিতা ১৫:২, ৩। EdBen 218.2
ঈশ্বরের বাক্য-অনর্থক ও নিরর্থক বাক্য এবং অনুরূপ শব্দ ব্যবহারকে দোষারােপ করে। এটি প্রতারণাপূর্ণ উক্তি, কৌশলপূর্ণ ভাবে সত্য এড়াবার চেষ্টা, অতিরঞ্জিত, ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ভুল প্রতিনিধিত্ব করণেও দোষারােপ করে, যা সমাজে এবং ব্যবসায়িক বিশ্বে সচরাচর বিদ্যমান। “কিন্তু তােমাদের কথা হ, হাঁ; না, না, হউক; ইহার অতিরিক্ত যাহা, তাহা মন্দ হইতে জন্মে” মথি ৫:৩৭ । EdBen 218.3
“যে পাগল জ্বলন্ত বাণ নিক্ষেপ করে, তীর ও মৃত্যু নিক্ষেপ করে, সে যেমন, তেমনি সেই ব্যক্তি, যে প্রতিবাসীকে প্রতারণা করে, আর বলে । আমি কি খেলা করিতেছি না?” হিতােপদেশক ২৬:১৮, ১৯। EdBen 218.4
কানাঘুষার সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রক্ষা বক্রোক্তির আশ্রয়, ধূর্ত কটাক্ষ, যার মাধ্যমে হৃদয়ের অশুচিতা, বক্রোক্তি, এবং কটাক্ষের চেষ্টা করে, যা তারা খােলাখুলি ভাবে বলতে পারে না বা চায় না—এই সব অভ্যাস করার প্রতিটি প্রচেষ্টা যুবক-যুবতিদের কুষ্ঠ রােগের মত পরিত্যাগ করতে শিক্ষা দিতে হবে। EdBen 218.5
দেখা যায় যে, বেখেয়ালে অধৈর্যের সঙ্গে কথা বলতে গেলে, হয়ত তা ভাষার কোন ভুলই পাওয়া যায় না। তারা এই ওজুহাত তুলে ধরবে, “আমি বুঝতে পারি নি কি বলেছি।” কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য এটা সামান্য চোখে দেখে না। শাস্ত্র বলে, EdBen 219.1
“তুমি কি হঠকারী লােককে দেখিতেছ? তাহার অপেক্ষা বরং । হীনবুদ্ধির বিষয়ে অধিক আশা আছে।” হিতােপদেশ ২৯:২০। EdBen 219.2
“যে আপন আত্মা দমন না করে, সে এমন নগরের তুল্য, যাহা ভাঙ্গিয়া গিয়াছে, যাহার প্রাচীর নাই।” হিতােপদেশ ২৫:২৮। EdBen 219.3
দ্রুত, আবেগচালিত এবং অসতর্ক জিহ্বা, মুহূর্তের মধ্যে এমন মন্দ কাজ করতে পারে যা সারা জীবনের অনুশােচনা দ্বারা শােধরানাে যায় না। হায়, যাদের কর্কশ ও ত্বরান্বিত জিহ্বা দ্বারা হৃদয় ভেঙ্গে গিয়েছে, বন্ধুবান্ধদের মধ্যে সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে, জীবন ছারখার হয়ে গেছে তারা হয়ত সাহায্য ও সুস্থতা আনয়ন করতে পারত! EdBen 219.4
“কেহ কেহ অবিবেচনার কথা বলে, খড়গঘাতের মত, কিন্তু জ্ঞানবানের জিহ্বা স্বাস্থ্যস্বরূপ।” হিতােপদেশ ১২:১৮। EdBen 219.5
আপন ভােলা মন হল অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যা প্রতিটি শিশুর বিশেষভাবে লালন-পালন ও চর্চা করা উচিৎ, যা অজ্ঞাতসারে আসা অনুগ্রহের মত জীবনেরই একটি অংশ। চরিত্রের সর্বোৎকৃষ্ট বিষয়ের মধ্যে এটি অতি চমৎকার, এবং জীবনের প্রত্যেক প্রকৃত কাজের জন্য এটি একটি যােগ্যতা যা অত্যন্ত অপরিহার্য। EdBen 219.6
ছেলে-মেয়েদের কাজের প্রশংসাসহ দরদ এবং উৎসাহ দান করা আবশ্যক, কিন্তু একটি বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেন তারা কেবল প্রশংসা প্রিয় না হয়ে উঠে। তা বিশেষ ঘােষণা দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না, অথবা তাদের চাতুর্যের বাক্য বারংবার বলা ঠিক হবে না । পিতা-মাতা অথবা শিক্ষক যারা চরিত্র এবং সম্ভাবনার দিকে চোখ রাখেন, তারা অতি আত্মবিশ্বাস লালন করতে বা এতে উৎসাহ দান করবেন না । তিনি যুবক-যুবতিদের মধ্যে তাদের দক্ষতা এবং সুনিপুণতা জাহির করার চেষ্টা করেন না। যাকে নিজের থেকে উঁচু মানের মনে হবে সে নম্র হবে। তথাপি সে একটি মর্যাদার অধিকারী হবে যা বাহ্যিক প্রদর্শনী অথবা মহত্ব দ্বারা ব্যহত হবে না। EdBen 219.7
কোনাে খামখেয়ালী নিয়ম-কানুন অথবা আইন দ্বারা চরিত্রের মাধুর্য। গঠিত হয় না। এটি, পবিত্র, আদর্শ, সত্যের বায়ুমণ্ডলে অবস্থানের মাধ্যমে গঠিত হয়। যেখানে হৃদয়ের শুচিতা এবং চরিত্রের মহত্ব বিরাজ করবে, সেখানেই বাক্যে এবং কাজে, পবিত্রতা এবং মহত্ব প্রকাশিত হবে। EdBen 220.1
“যে হৃদয়ের শুচিতা ভালােবাসে তাহার ওষ্ঠে অনুগ্রহ থাকে, রাজা তাহার বন্ধু হন।” হিতােপদেশ ২২:১১ পদ। EdBen 220.2
যেমন ভাষার ক্ষেত্রে, একইভাবে অন্যান্য অধ্যয়নের ক্ষেত্রেও, এটি চরিত্রকে শক্তিশালী এবং গঠন করবে। ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞানার্জন ছাড়া শ্রেষ্ঠতর আর কোন বিষয়ই নেই। এটি ঐশ্বরিক দৃষ্টি ভঙ্গিতে বিবেচনা করা উচিত। EdBen 220.3
যেমন প্রায়ই শিক্ষা দেয়া হয়ে থাকে, ইতিহাস কেবল রাজরাজাদের উত্থান-পতনের তথ্য, আদালত, বিচার, সৈন্য সামন্তদের জয় পরাজয়, উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং লােভ, প্রতারণা, নিষ্ঠুরতা এবং রক্তপাতের কাহিনীতে পরিপূর্ণ। এমন শিক্ষার পরিণতি ক্ষতিকর ছাড়া আর কিছুই নয়। জঘন্য অপরাধ এবং দারুণ নিষ্ঠুরতার মর্মপীড়াদায়ক পুনরাবৃত্তি, নিদারুণ দুষ্কার্য, নিষ্ঠুরতার বীজ বােনে যা অনেক জীবনে মন্দতার ফল উৎপন্ন করে। EdBen 220.4
ঈশ্বরের বাক্যের আলোকে রাজ্যগুলাের উত্থান পতন নিয়ন্ত্রণের কারণ সম্পর্কে শিক্ষালাভ করা অধিক উত্তম। যুবক-যুবতিরা এ সব বিবরণ সমূহ পাঠ করবে এবং তারা দেখবে কিভাবে বিভিন্ন জাতির প্রকৃত উন্নতি ঐশ্বরিক নীতিমালা গ্রহণের সঙ্গে একান্তভাবে সম্পৃক্ত। সে সংস্কারমূলক আন্দোলন সম্পর্কেও অধ্যয়ন করবে এবং লক্ষ করবে কিভাবে এ সব। নীতিমালা, তুচ্ছ ও ঘৃণীত হলেও, তাদের সমর্থনকারিরা কারাগার এবং প্রাণদণ্ডের শিকার হলেও তারা ঐ ত্যাগ স্বীকারের মধ্য দিয়ে বিজয়ী। হয়েছিল। EdBen 220.5
এরূপ অধ্যয়ন জীবনের পূর্ণতা এবং উপলদ্ধি করার ক্ষমতা সম্পন্ন বিচার বিবেচনা দান করবে। এটা যুবক-যুবতিদের এর সম্পর্কগত ও নির্ভরশীলতার বিষয় উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে, আমরা সমাজে ও EdBen 220.6
দেশের মহান ভ্রাতৃপ্রেমে কি চমৎকার বন্ধনেই না একসঙ্গে আবদ্ধ। আর একজন অন্যজনার প্রতি নিপীড়ন বা ক্ষতি হওয়ায় সবার কাছেই কষ্টের। EdBen 221.1
ব্যক্তিত্ব অধ্যয়নের সাথে সাথে ব্যবহারিক কাজ ঘনিষ্ট সম্পর্কযুক্ত। প্রত্যেক তরুণ-তরুণী এবং শিশুকে কেবল কাল্পনিক সমস্যাবলী সমাধানের বিষয়ই শিক্ষা দিলে চলবে না, কিন্তু তার নিজের আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাব রাখতে হবে। তাকে অর্থ-কড়ির যথােপযুক্ত ব্যবহার শিখতে হবে। সে বাবা-মা, অভিভাবক অথবা তার নিজের অর্জিত অর্থকড়ি হলেও ছেলে-মেয়েরা তাদের নিজেদের কাপড়-চোপড়, পাঠ্যবই এবং তাদের অন্যান্য আবশ্যকীয় জিনিসপত্র, নিজেদের কিনতে শিখতে হবে; এবং তার খরচের হিসাব রাখার মাধ্যমে তারা, অর্থকড়ির মূল্য যে ভাবে শিখবে, অন্য কোন উপায়েই তারা এটি শিখতে পারবে না। এই প্রশিক্ষণ তাদের অপব্যয়িতা এবং প্রকৃত অর্থনীতির মধ্যকার ব্যবধানটি উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে। যথােপযুক্ত পরিচালনা দান করতে পারলে এটি পরােপকারি মনােভাবের অভ্যাসে উৎসাহ দান করবে। এটি যুবকযুবতিদের দান করতে শেখাবে, কেবল মুহূর্তের আবেগ অনুভূতি থেকে নয়, কিন্তু তারা নিয়মপদ্ধতি অনুসারে দান করবে। EdBen 221.2
এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রের অধ্যয়ন, শ্রেষ্ঠ সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে, নর-নারীকে জীবনের দায়িত্বগুলাে সর্বোত্তমভাবে পালনে সাহায্য করবে। EdBen 221.3