“সদাপ্রভু একাই তাহাকে পরিচালিত করিয়াছিলেন, তিনি তাহাকে শিক্ষা
দিয়াছিলেন, তিনি তাহাকে নয়ন তারার ন্যায় রক্ষা করিলেন।”
এদনে প্রতিটি শিক্ষা পদ্ধতি ছিল পরিবার কেন্দ্রিক। আদম ছিলেন “ঈশ্বরের পুত্র” (লুক ৩:৩৮), এবং ঈশ্বরের এই সন্তানগণ তাদের পিতার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতেন। প্রকৃত পক্ষে তাদের এই বিদ্যালয়টি ছিল একটি পারিবারিক বিদ্যালয় EdBen 29.1
পাপে পতিত হবার পর মানুষের অবস্থার উপযােগী করে শিক্ষাদানের যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল, তাতে খ্রীষ্ট পিতার প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, তিনিই ছিলেন মানুষ ও ঈশ্বরের মধ্যে যােগসূত্র; তিনি মানব জাতির মহান শিক্ষক। তিনি নর-নারীকে তার প্রতিনিধি রূপে অভিষিক্ত করলেন। পরিবারটিই ছিল বিদ্যালয়, পিতা-মাতাই ছিলেন শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রী। EdBen 29.2
পরিবার কেন্দ্রিক শিক্ষা, যা পিতৃকুলপতিগণের সময়ে বিদ্যমান ছিল। ঈশ্বর কর্তৃক স্থাপিত এই বিদ্যালয়গুলাে চরিত্রের বিকাশলাভের জন্য অত্যন্ত উপযােগী। যারা তার নির্দেশ মেনে চলেছিল তারা জীবনের পরিকল্পনা অনুসরণ করল, যা ঈশ্বর আদিতেই স্থির করেছিলেন। যারা ঈশ্বরের নিকট থেকে দূরে চলে গিয়েছিল, তারা শহর নির্মাণ করল, এবং তথায় বসবাস করল, জাক-জমক, বিলাসিতা, এবং অনৈতিকতায় উল্লাস করল, যা আজ পৃথিবীর গর্ব ও অভিশাপস্বরূপ। কিন্তু যারা ঈশ্বরের জীবনের নীতিমালা ধরে রেখেছিল, তারা ক্ষেত্রে এবং পাহাড়ে বসবাস করতে গেল। তারা জমি চাষ করত, গরু ও মেষ চরাত, এবং এই মুক্ত স্বাধীন জীবনে, পরিশ্রম, অধ্যয়ন এবং ধ্যানের মাধ্যমে তারা ঈশ্বরের বিষয় শিক্ষা লাভ করত এবং তাদের সন্তান-সন্ততিদেরও তাঁর কাজ এবং নীতিমালা শিক্ষা দিত। EdBen 29.3
ঈশ্বর ইস্রায়েল সন্তানদের মধ্যে একই শিক্ষা পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যখন তাদের মিসর দেশ থেকে বের করে আনা হয়েছিল, তখন তাদের মধ্যে, সন্তান-সন্ততিদের শিক্ষা দেবার, ঈশ্বরের সঙ্গে সহকার্যকারী হবার জন্য প্রশিক্ষিতপ্রাপ্ত লােক খুব অল্পই ছিল। পিতামাতাদের উপদেশ এবং শৃঙ্খলাবােধ শিক্ষা লাভের আবশ্যকতা ছিল। দীর্ঘ জীবনের দাসত্বে থেকে তারা অজ্ঞান অশিক্ষিত, এবং তুছের পাত্র স্বরূপ হয়ে পড়ল। ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞান এবং তাতে তাদের বিশ্বাস ছিল খুবই সামান্য। তারা ভ্রান্ত শিক্ষা দ্বারা হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছিল এবং পৌত্তলিকতার মধ্যে বসবাস করে তারা ভ্রষ্ট হয়েছিল। ঈশ্বর তাদের নৈতিকতার এক উচ্চতর সােপানে তুলতে চাইলেন এবং যাতে তারা তার বিষয়ে শিক্ষা লাভ করতে পারে, তার জন্য চেষ্টা করলেন। EdBen 30.1
মরুভূমি ও প্রান্তরের মধ্যে, তাদের সামনে-পিছনে থাকা, তাদের ক্ষুধা, পিপাসা, ক্লান্তি, পৌত্তলিক শত্রুগণের দ্বারা সৃষ্ট সন্ত্রাস, এবং তাদের ক্লান্তি নিরসনের চেষ্টার মাধ্যমে, যে শক্তি অবিরত তাদের মঙ্গলার্থে কাজ করে যাচ্ছিল, তার দ্বারা ঈশ্বর তাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছিলে । এভাবে তিনি তার প্রেম এবং শক্তিতে নির্ভরশীলতা শিক্ষা দিলেন; উদ্দেশ্য এই, যেন তিনি তাদের সামনে তাঁর ব্যবস্থামালা স্থাপন করতে পারেন। তা-ই ছিল তাঁর চরিত্রের মানদণ্ড, যেন তারা তাঁর অনুগ্রহে। তা পালন করতে পারে। EdBen 30.2
সীনয়ের পাদদেশে সাময়িক বসবাসকালে ইস্রায়েলকে খুব মূল্যবান শিক্ষা প্রদান করা হয়েছিল। কনান দেশ অধিকার করার আগে এটি ছিল একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ দানের সময়। ঈশ্বরের উদ্দেশ্যকল্পে এটি ছিল তাদের পক্ষে একটি চমৎকার পরিবেশ। সীনয় পর্বতের সমতল ভূমিতে ইস্রায়েল সন্তানেরা তাদের তাবু স্থাপন করল। সীনয়ের শিখরে তাদের পথ নির্দেশক মেঘস্তম্ভ দাঁড়াত। রাতের বেলা আগুনের স্তম্ভ তাদের উপরে ঐশ্বরিক নিরাপত্তা দান করত, তারা যখন গভীর ঘুমে অচেতন থাকত তখন তাদের শিবিরপ্রাঙ্গণে স্বর্গীয় খাদ্য বর্ষণ হত। তাদের চারিদিকে বিশাল পর্বতমালা চির সহিষ্ণুতা এবং ঈশ্বরের মহত্তের কথা প্রচার করত। যেন মানুষ তার সামনে নিজের অজ্ঞানতা এবং দুর্বলতা উপলব্ধি করতে পারে। “পাল্লাতে পর্বতগণকে ও নিক্তিতে উপপর্বতগণকে তৌল” যিশাইয় ৪০:১২ করেন, এই স্থানে ঈশ্বর তার মহিমা প্রকাশের মাধ্যমে ইস্রায়েলকে তার চরিত্র ও তার কাজ এবং আজ্ঞা লঙ্ঘনের দোষসহ গভীর ভাবে প্রভাবিত করতে চাইলেন। EdBen 30.3
কিন্তু শিক্ষালাভে ইস্রায়েল সন্তানগণ ছিল ধীর। মিসর দেশে ইস্রায়েলীয়রা ঈশ্বরের স্থানে বস্তু স্থাপন করে তার পূজা করত, আর এটি ছিল তাদের খুবই হীন স্বভাব, যার ফলে অদশ্য ব্যক্তির বিদ্যমানতা, এবং চরিত্র কল্পনা করা কার্যকর হয়ে পড়ছিল। তাদের দুর্বলতার প্রতি দরদ অনুভব করে ঈশ্বর তাদের নিকটে তার উপস্থিতির একটি চিহ্ন দিলেন। “আর তাহারা আমার নিমিত্ত একটি ধর্মধাম নির্মাণ করুক, তাহাতে আমি তাহাদের মধ্যে বাস করিব।” যাত্রাপুস্তক ২৫:৮। EdBen 31.1
ঈশ্বরের আবাস স্থল ধর্মধামের মধ্যে, সব কিছু স্বর্গীয় ধর্মধামের নমুনা অনুসারে তৈরি করার জন্য মােশিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। ঈশ্বর তাকে পর্বতে আহ্বান করলেন, এবং তাকে স্বর্গীয় বিষয় সকল দেখালেন, আর ধর্মধামের সব কিছুই সেভাবে ভাবে তৈরি করা হল । EdBen 31.2
সুতরাং ইস্রায়েলকে, যাদের তিনি চাইলেন যেন তারা তার আবাস স্থল তৈরি করে, সেজন্য তাদের কাছে তার চরিত্রের চমৎকার আদর্শ প্রকাশ করলেন। যখন সীনয় পর্বতে ব্যবস্থা দেয়া হয়েছিল, এবং যখন ঈশ্বর মােশির সামনে দিয়ে যাবার সময় এই কথা ঘােষণা করলেন, “সদাপ্রভু, স্নেহশীল ও কৃপাময় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে ও সত্যে মহান” তখন তাকে ঐ নমুনাটি দেখান হয়েছিল। EdBen 31.3
কিন্তু এই আদর্শ এবং লক্ষ্যে পৌছবার জন্য তারা ছিল দুর্বল। সীনয়ের প্রকাশপ্রাপ্তি কেবল তাদেরকে তাদের অভাব এবং তারা যে অসহায়, তা-ই জানিয়ে দিয়েছিল। ধর্মধামের মধ্য দিয়ে তাদের পাপের ক্ষমা, জীবন পাবার জন্য আজ্ঞাবহতায় ত্রাণকর্তার মাধ্যমে শক্তি লাভ বিষয়ক শিক্ষা দেয়া হয়েছিল । EdBen 31.4
খ্রীষ্টের মাধ্যমেই সেই উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে এবং ধর্মধামই ছিল তাঁর চমৎকার গৃহটি, চৰ্চকে সােনার দেওয়াল, পর্দায় মেঘধনু এবং দূতের আকৃতি অঙ্কিত, বিরামহীন জ্বলন্ত ধূপের গন্ধ, শুভ্র পােশাক পরিহিত যাজক, ধর্মধামের অভ্যন্তরের গভীর রহস্য, অনুগ্রহ সিংহাসনের উপরে আরাধনারত। দূতগণের মধ্যস্থানে পবিত্রতমের মহিমা ছিল তাঁর প্রতীক। সব কিছুর মধ্যে । ঈশ্বর চান যেন তাঁর প্রজাবৃন্দ মানবাত্মার জন্য তাঁর উদ্দেশ্য পাঠ করে। এই একই উদ্দেশ্য যা দীর্ঘকাল পরে পৌলের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে, যে। বিষয়ে পবিত্র আত্মা বলেছেন: EdBen 31.5
“তােমরা কি জান যে, তােমরা ঈশ্বরের মন্দির, এবং “ঈশ্বরের আত্মা তােমাদের অন্তরে বাস করেন? যদি কেহ ঈশ্বরের মন্দির নষ্ট করে, তবে ঈশ্বর তাহাকে নষ্ট করিবেন, কেননা ঈশ্বরের মন্দির পবিত্র, আর সেই মন্দির তােমরাই।” ১ করিন্থীয় ৩:১৬, ১৭। EdBen 32.1
ধর্মধামের প্রস্তুতি কাজে ইস্রায়েল সন্তানদের মহা সুর্যোগ এবং সম্মান দেখানাে হয়েছিল, আর তাদের উপরে মহান দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। যে জাতি কেবলই দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছে, তাদেরই দ্বারা অতি মূল্যবান। বস্তু দিয়ে, অতি সূক্ষ্ম শিল্পকারুকার্য সম্বলিত সবচেয়ে ভালাে এই মন্দিরটি তৈরি হবে। এটি ছিল বিস্ময়কর এবং বিশাল একটি কর্ম-দায়িত্ব। কিন্তু যিনি এই উপাসনা ঘরটি তৈরির পরিকল্পনার নক্সা দিয়েছিলেন, তিনি নির্মাতাদের সঙ্গে সহযােগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন । EdBen 32.2
“আর সদাপ্রভু মােশিকে কহিলেন, দেখ, আমি যিহূদা বংশীয়। হুরের পৌত্র ঊরির পুত্র বৎসলেলের নাম ধরিয়া ডাকিলাম। আর আমি তাহাকে ঈশ্বরের আত্মায়, 9ানে, বুদ্ধিতে, বিদ্যায় ও সর্ব প্রকার শিল্প। কৌশলে-পরিপূর্ণ করিলাম... আর দেখ, আমি দান-বংশ জাত অহীমকের পুত্র অহলীয়াবকে তাহার সহকারী করিয়া দিলাম, এবং সকল বিজ্ঞমনা লােকের হৃদয়ে বিজ্ঞতা দিলাম; অতএব আমি তােমাকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি, সে সমস্ত তাহারা নির্মাণ করিবে। যাত্রাপুস্তক ৩১:১-৬। EdBen 32.3
প্রান্তরে কি চমৎকারই না একটি শ্রমশীলতার বিদ্যালয় ছিল, যার শিক্ষক ছিলেন খ্রীষ্ট স্বয়ং এবং দূতগণ! সব লােকই ধর্মধাম এবং এর আসবাব-পত্র তৈরির কাজে সাহায্য করেছিল। বুদ্ধির নৈপুণ্য ও হস্ত সমানভাবে পরিশ্রমে লিপ্ত ছিল। বহুবিধ জিনিসপত্রের আবশ্যক ছিল, এবং সবাইকে তাদের মনােবাসনা অনুসারে দান করার জন্য আহ্বান করা হয়েছিল। EdBen 32.4
কেউ পরিশ্রম এবং কেউ-বা দান করে মন্দির নির্মাণ কাজে সাহায্য করেছিলেন, এভাবে তাদেরকে ঈশ্বর এবং একে অন্যের সঙ্গে সহযোগিতা করার শিক্ষা দিলেন। আত্মিক মন্দির নির্মাণ কাজেও তাদের সহযােগিতা প্রদর্শন করতে হবে—তা আমাদের হৃদয়ে ঈশ্বরের মন্দির। EdBen 32.5
মিসর থেকে যাত্রার শুরু থেকেই তাদের প্রশিক্ষণ এবং শৃঙ্খলার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এমন কি তাদের মিসর ত্যাগের আগে থেকেও একটি অস্থায়ী প্রতিষ্ঠানও চালু করা হয়েছিল, এবং লােকদের এক এক জন নেতার কর্তৃত্বাধীন দলে দলে ভাগ করা হয়েছিল। সীনয়ে একটি সুপরিচালিত দল বা মণ্ডলী গঠনের কাজ শেষ হল। ঈশ্বরের সব কাজে ইব্রীয় অর্থনীতিতে সুশৃঙ্খলা বজায় রাখা প্রকাশ পেয়েছে। ঈশ্বর ছিলেন অধিকার, ক্ষমতা এবং শাসন কাজের কেন্দ্র-ব্যক্তি। ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে মােশি ঈশ্বরের নামে ব্যবস্থা পরিচালনা করছিলেন। পরবর্তীতে, সত্তর জনের মন্ত্রণা সভা, পুরােহিত, এবং এই রূপে “সহস্রপতি, শতপতি, পঞ্চাশৎপতি, দশপতি নিযুক্ত করা হল (গণনা ১১:১৬, ১৭; দ্বিতীয় বিবরণ ১:১৫), এবং সব শেষে, বিশেষ বিশেষ কাজের জন্য বিশেষ কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হল। অতঃপর যথাযথ শৃঙখলার সঙ্গে শিবির, সমাগম তাম্বু, মধ্যস্থানে ঈশ্বরের আবাস স্থান, এবং তার চারপাশে পুরােহিত ও লেবীয়দের শিবির স্থাপন করা হল। EdBen 33.1
বাধ্যতামূলক ভাবে ময়লা, আবর্জনা নিষ্কাষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। লােকেরা এটি উপভােগ করত। এটি যে কেবল তাদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য তাই নয়, কিন্তু তাদের মধ্যে পবিত্রতমের উপস্থিতির বিরাজ করার জন্যও অত্যাবশ্যকীয় ছিল। ঐশ্বরিক ক্ষমতা বলে মােশি তাদের নিকটে ঘােষণা করলেন, “তােমাকে রক্ষা করিতে...ঈশ্বর সদাপ্রভু তােমার শিবিরের মধ্যে গমনাগমন করেন...অতএব তােমার শিবির পবিত্র হউক।” দ্বিতীয় বিবরণ ২৩:১৪। EdBen 33.2
ইস্রায়েলীয়দের শিক্ষার মধ্যে তাদের জীবনের সর্ববিধ অভ্যাস অন্তভুক্ত ছিল। তাদের সার্বিক মঙ্গল বিধান ছিল ঐশ্বরিক চিন্তা-ভাবনার আওতাভক্ত। এমন কি তাদের খাদ্য সম্পর্কে ঈশ্বর অত্যন্ত মঙ্গল চিন্তা করতেন। তিনি প্রান্তরে তাদের জন্য যে মান্না দিতেন, তা তাদের দৈহিক, মানসিক, এবং নৈতিক শক্তির যােগান দিত। যদিও তারা তাদের খাদ্য সম্পর্কিত বাধ্যবাধকতার জন্য বিদ্রোহ করেছিল, এবং তারা আগের জায়গায় ফিরে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করে এই কথা বলেছিল, “আমরা মাংসের হাঁড়ির কাছে বসিতাম, তৃপ্তি পর্যন্ত রুটি ভােজন করিতাম” (যাত্রাপুস্তক ১৬:৩), তথাপি ঈশ্বর এমনভাবে তাদের অন্যায় আচরণের সত্যতা দাবি করলেন, যে তারা এর কোন প্রতিবাদ করতে পারল না। সে যা-ই হােক, প্রান্তরে তাদের কষ্ট হবার পরও তারা দুর্বল হয় নি। EdBen 33.3
তাদের সমগ্র যাত্রা পথে ঈশ্বরের নিয়মসিন্দুক তাদের পরিচালনা করেছিল। মেঘস্তম্ভ যেখানে দাঁড়াত, সেখানে তারা তাদের তাবু খাটাত। যতদিন পর্যন্ত মেঘস্তম্ভ থাকত, ইস্রায়েল সন্তানগণও ততদিন সেখানে থাকত। মেঘস্তম্ভ যখন উপরে উঠে চলতে থাকত, তখন তারাও যাত্রা শুরু করত। এক সশ্রদ্ধ ঈঙ্গিত তাদের যাবার পথের বিশ্রাম এবং পথ চলার নির্দেশ দিত। “আর উহার বিশ্রামকালে তিনি বলিতেন, হে সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের সহস্র সহস্রের অযুত অযুতের কাছে ফিরিয়া আইস।” গণনা ১০:৩৫, ৩৬। EdBen 34.1
প্রান্তরের মধ্য দিয়ে যাবার সময় লােকেরা গানের মাধ্যমে অনেক মূল্যবান শিক্ষা গ্রহণ করেছিল। ফরৌণের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে সমস্ত ইস্রায়েল বিজয়সঙ্গীতে যােগদান করেছিল। সুদূর মরুভূমি ও সমুদ্রের উপর দিয়ে আনন্দ সঙ্গীত, এবং পর্বতমালায় প্রশংসা ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হতে লাগল, “তােমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে গান কর; কেননা তিনি মহামহিমান্বিত হইলেন।” যাত্রাপুস্তক ১৫:২১। যাত্রা পথে প্রায়ই এই সংঙ্গীত পুনরাবৃত্তি করা হত, তাদের হৃদয় উদ্বেলিত হত এবং যাত্রীদের হৃদয়ে বিশ্বাস উদ্দীপ্ত হত। সীনয় পর্বতে দেয়া দশ আজ্ঞা, ঈশ্বরের অনুগ্রহের প্রতিজ্ঞা এবং তাদের মুক্তির জন্য ঈশ্বরের আশ্চর্য কাজগুলাে, ঐশ্বরিক নির্দেশ ক্রমে গানের মাধ্যমে প্রকাশ করা হত; এবং বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে সঙ্গে সুর করে তা আবৃত্তি করা হত। লােকেরা প্রশংসা রবের তালে তালে পা ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যেত। EdBen 34.2
এভাবে পথিমধ্যে তাদের দুঃখকষ্ট ও সংকটের চিন্তারাশি ভুলে যেত, এবং তাদের যাত্রাপথের দুঃখ-কষ্ট-ক্লান্তি, এবং প্রচণ্ড আলােড়নের মনােভাব উপশম হত; সত্যের নীতিমালা তাদের স্মৃতিপটে রােপিত হত, এবং তাদের বিশ্বাস দৃঢ় হত। তাদের কাজের সুর-সঙ্গীত একতা, এবং শৃঙ্খলা শিক্ষা দিয়েছিল এবং লােকদের ঈশ্বরের এবং একে অন্যের কাছাকাছি এনেছিল। EdBen 34.3
প্রান্তরে ভ্রমণের চল্লিশ বছর ব্যাপি ইস্রায়েলের সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণে বিনয়ী মােশি বলেছিলেন, “মনুষ্য যেমন আপন পুত্রকে শাসন করে, তােমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তােমাকে ক্রপ শাসন করেন, “তােমার পরীক্ষা করিবার নিমিত্তে, অর্থাৎ তুমি তাঁহার আজ্ঞা পালন করিবে কি-না, এই বিষয়ে তােমার মনে কি আছে জানিবার নিমিত্তে তােমাকে নত করেন।” দ্বিতীয় বিবরণ ৮:৫,২। EdBen 34.4
“তিনি তাহাকে পাইলেন প্রান্তর-দেশে, পশু গর্জনময় ঘাের মরুভূমিতে; তিনি তাহাকে বেষ্টন করিলেন, তাহার তত্ত্ব লইলেন, নয়ন তারার ন্যায় তাহাকে রক্ষা করিলেন। ঈগল যেমন আপন বাসা জাগাইয়া তুলে, আপন শাবকগণের উপরে পাখা দোলায়, পক্ষ বিস্তার করিয়া তাহাদিগকে তুলে, পালখের উপরে তাহাদিগকে বহন করে; ড্রপ সদাপ্রভু একাকী তাহাকে লইয়া গেলেন; তাঁহার সহিত কোন বিজাতীয় দেবতা ছিল। ।” দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:১০-১২। EdBen 35.1
“তিনি আপন পবিত্র বাক্য স্মরণ করিলেন, আপন দাস অব্রাহামকে স্মরণ করিলেন। তিনি আপন প্রজাদিগকে আনন্দ সহ, নিজ মনােনীত - লােকদিগকে সঙ্গীতের সহিত বাহির করিয়া আনিলেন। তিনি তাহাদিগকে জাতিগণের দেশ দিলেন, তাহারা লােকবৃন্দের শ্রমের ফলাধিকারী হইল, যেন তাহারা তাহার বিধিসকল পালন করে, তাহার ব্যবস্থা রক্ষা করে। তােমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর।” গীতসংহিতা ১০৫:৪২-৪৫। EdBen 35.2
ঈশ্বর ইস্রায়েলকে সব ধরণের সুযােগ-সুবিধা দিয়ে ঘিরে রেখেছিলেন যেন তাদের মাধ্যমে তাঁর নামের সমাদর হয়, এবং চারপাশের জাতির কাছে আশীর্বাদ স্বরূপ হয়। যদি তারা বাধ্যতার পথে চলে, তবে ঈশ্বর তাদের সমস্ত জাতি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ করিয়া প্রশংসা, কীর্তি ও মর্যাদাস্বরূপ” করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করলেন। “আর পৃথিবীস্থ সমস্ত জাতি দেখতে পাবে যে, তােমার উপরে সদাপ্রভুর নাম কীর্তিত হয়েছে, এবং তারা তােমা হতে ভীত হবে।” যে সকল জাতি এই সব বিধিবদ্ধ আইন শুনবে, তারা এই কথা বলবে, “সত্যই, এই মহা জাতি জ্ঞানবান ও বুদ্ধিমান লােক।” দ্বিতীয় বিবরণ ২৬:১৯; ২৮:১০; ৪:৬। EdBen 35.3
ইস্রায়েলের প্রতি দেয়া ব্যবস্থার মধ্যে তাদের শিক্ষা সম্পর্কে পরিষ্কার নির্দেশ দেয়া ছিল । ঈশ্বর সীনয়ে মােশির কাছে আপনাকে এভাবে প্রকাশ করেছিলেন, “সদাপ্রভু, সদাপ্রভু, স্নেহশীল ও কৃপাময় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর, দয়াতে ও সত্যে মহা” যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬। তাঁর ব্যবস্থার সঙ্গে অঙ্গিভূত এই নীতিমালা বাবা-মায়েরা তাদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা দেবে। মােশি ঐশ্বরিক নির্দেশক্রমে তাদের কাছে ঘােষণা করলেন,- “আর এই সকল কথা আমি অদ্য তােমাকে আজ্ঞা করি, তাহা তােমার হৃদয়ে থাকুক। আর তােমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এ সকল যত্নপূর্বক শিক্ষা দিবে, এবং গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে এবং শয়ন কিম্বা গাত্রোত্থান কালে ঐ সমস্তের কথােপথন করিবে।” দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬,৭। EdBen 35.4
এগুলাে একটি অবাস্তব নিরস ধারণা মনে করে শিক্ষা দিতে হবে । যারা অন্যদের কাছে এসব সত্য তুলে ধরবে, তারা নিজেরাও এই নীতিমালা অভ্যাস করবে। একমাত্র তাদের নিজেদের জীবনের সাধুতা, শ্রেষ্ঠত্ব, নিঃস্বার্থপরতার মাধ্যমে ঈশ্বরের চরিত্র প্রতিফলনের মাধ্যমে তারা অপরকে অনুপ্রাণিত করতে পারবে। EdBen 36.1
যে মন অপ্রস্তুত এবং গ্রহণ করতে অপারগ তার উপর বল প্রয়ােগ পূর্বক প্রকৃত শিক্ষা দেয়া যাবে না। মানসিক শক্তি জাগিয়ে তুলতে হবে এবং তার আগ্রহ বাড়িয়ে তুলতে হবে। এ জন্য ঈশ্বরের শিক্ষা-পদ্ধতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। যিনি মন সৃষ্টি করেছেন এবং এর নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তিনি এর বিকাশ লাভের জন্য এ ব্যবস্থা করে রেখেছেন। গৃহে এবং ধর্মধামে, প্রকৃতি এবং চারু শিল্পের মাধ্যমে, শ্রম এবং আমােদপ্রমােদ, উৎসর্গীকৃত গৃহ এবং স্মারক প্রস্তর, বিবিধ পদ্ধতি এবং অধিকার এবং অগণিত চিহ্নের মাধ্যমে ঈশ্বর ইস্রায়েল সন্তানদের নিকটে তার নীতিমালা দেখিয়ে দিয়েছেন, এবং তার আশ্চর্য কাজগুলাে সংরক্ষণ করে রেখেছেন। অতঃপর অনুসন্ধান করে দেখা গেছে যে, শিক্ষা দেয়ার পর তা মনে এবং হৃদয়ে ছাপ এঁকে দিয়েছে। EdBen 36.2
মনােনীত লােকদের শিক্ষাদান ব্যবস্থায় দেখা গেছে যে, ঈশ্বরকেন্দ্রিক একটি জীবন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন। প্রতিটি চাহিদায় তিনি অভাব মিটাবার ব্যবস্থা করেছেন এবং প্রতিটি কর্মশক্তির বিকাশ সাধনও করেছেন। EdBen 36.3
সকল সৌন্দর্যের আদিকর্তা, ঈশ্বর নিজেও সৌন্দর্য প্রেমিক এবং তিনি স্বয়ং তাঁর সন্তানদের সৌন্দর্যে তৃপ্ত হবার ব্যবস্থা করেছেন। তাদের সামাজিক চাহিদা পূরণ, দয়া সহানুভূতি লাভের উপায় করেছেন; যা সমবেদনা সৃষ্টি করবে এবং জীবনকে উজ্জ্বল ও মধুময় করে তুলবে EdBen 36.4
শিক্ষার একটি মাধ্যম হিসেবে, ইস্রায়েল সন্তানদের ভােজ পর্বের দ্বারা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান পূরণ করা হয়েছিল। সাধারণ জীবনে পরিবারই ছিল একটি বিদ্যালয় এবং একটি মণ্ডলী, বাবা-মা ছিলেন সামাজিক এবং ধর্মীয় ব্যাপারে শিক্ষাগুরু। বছরে তিন বার সম্মিলিতভাবে সামাজিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপভােগের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। প্রথম শীলােহােতে এবং পরে যিরূশালেমে এই সম্মিলন অনুষ্ঠিত হত। এই স্থানে কেবল বাবা তাদের ছেলেদের নিয়ে আসতে পারতেন, অন্য আর কারও এই পর্বে যােগ দেয়ার সুযােগ ছিল না, তবে, সম্ভাব্য সব পরিবার থেকেই কেউ-না-কেউ উপস্থিত হতে পারত, এবং সঙ্গে তাদের সহভাগি আগন্তুক, লেবীয়, এবং দরিদ্রেরাও আসত। EdBen 36.5
বসন্তের শােভা, মধ্য গ্রীষ্মের প্রাচুর্য, শরতের পূর্ণবর্ধিত মাধুর্য, এই সকলের মধ্য দিয়ে পিতৃকুলপতিগণের সাদাসিধে এবং অনাড়ম্বরভাবে যিরূশালেমে যাবার বিষয়টি অত্যন্ত আনন্দেরই ছিল। ঈশ্বরের পবিত্র আবাসে, তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য বৃদ্ধ লােক থেকে শিশুগণ পর্যন্ত তাদের হৃদয়ের কৃতজ্ঞতার দান নিয়ে উপস্থিত হত। তাদের যাত্রা পথে তাদের অতীতের অভিজ্ঞতা, এবং কাহিনী যুব ও বৃদ্ধ সবাই ভালােবাসত, এবং এ সব কাহিনী ইব্রীয় শিশু সন্তানদের কাছে বার বার বলা হত । প্রান্তরের মধ্য দিয়ে যাবার সময় তারা আনন্দের সাথে গান করত। তারা ঈশ্বরের আদেশমালা সুরে সুরে আবৃত্তি করত, এবং তা প্রকৃতির পরম ধন্য প্রভাব এবং সদয় মানব সমাজের সঙ্গে সংবদ্ধ ছিল। এগুলাে অনেক শিশু, বালক-বালিকা এবং যুবক-যুবতিদের স্মৃতিপটে চিরস্থায়িভাবে বদ্ধমূল হয়েছিল । EdBen 37.1
ভােজপর্ব সংক্রান্ত যিরূশালেমের এই অনুষ্ঠানসূচি- রাত্রিকালীন জনতা, কোমর বদ্ধ যাত্রা, পায়ে জুতা, হাতে লাঠি, চটু- জলদি আহার গ্রহণ, মেষশাবক, তাড়িতশূন্য রুটি, এবং তিক্ত ও গভীর নীরবতায় ছিটিয়ে দেয়া রক্তের কাহিনীর মহড়া, সংহারক দূত, এবং দাসত্বের দেশ হতে বিশাল যাত্রাপথ- এর সবই তাদের ধ্যান ধারণাকে জাগ্রত করেছিল, এবং তাদের মনে হুপি অঙ্কন করেছিল। EdBen 37.2
মন্দিরের ভােজ উৎসব, শস্য কাটার উৎসব, ফলবাগিচা ও ক্ষেত্র থেকে আনা উপহার, কুঞ্জ লতাপাতার মধ্যে সপ্তাহকালীন শিবির সভা, সামাজিক পুনর্মিলন, পবিত্র স্মৃতি উৎসব, ঈশ্বরের কার্যকারী মন্দিরের লেবীয় যাজকবর্গ, এবং তাদের সন্তান-সন্ততি, আগন্তুক ও দরিদ্রদের প্রতি উদারতার সেবা দেখানাে, এ সবের মাধ্যমে সব লােকের মন তার দিকে। উত্তোলিত হল, যিনি বছরটিকে তাঁর দয়ায় পূর্ণ করেছেন। EdBen 37.3
প্রতি বছরে ইস্রায়েলরা এ ধরণের ধর্মীয় মনােভাব, আগ্রহ এবং ভক্তি সহকারে পূর্ণ একটি মাস কাটাত। ভাবনা-চিন্তা এবং শ্রম মুক্ত একটি সময়, এবং পূর্ণ আত্মোৎসর্গের মাধ্যমে শিক্ষালাভ- এটাই ছিল উদ্দেশ্য। EdBen 38.1
তার লােকদের অংশ ভাগ করে দেওয়ায়, ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ছিল। তাদের শিক্ষা দেয়া, এবং তাদের মাধ্যমে পরবর্তী বংশধরদের তাদের ভূসম্পদের মালিকানার বিষয় নির্ভুল নিয়মাবলি দান করা। সমগ্র লােকের মধ্যে কনান দেশ ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু ধর্মধামের সেবাকারীরূপে একমাত্র লেবীয়দের নির্দিষ্ট কোন স্থান দেওয়া হয় নি। যদিও কেউ কিছু দিনের জন্য হস্তান্তর করতে পারত, কিন্তু সে তার সন্তানদের অধিকার কিছুর সঙ্গে বিনিময় করতে পারত না। যখন ওরকম করার তার সামর্থ্য থাকত, তখন যে কোন সময়ে সে তা মুক্ত করতে পারত; প্রতি সপ্তম বছরে ঋণ ক্ষমা করে দেয়া হত, পঞ্চাশ বছরে কাল পূর্ণ হলে অথবা জুবিলি বছরে, সমস্ত ভূ-সম্পদ আসল মালিককে ফিরিয়ে দেয়া হত। এভাবে প্রত্যেক পরিবারের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল; এবং এতে করে কেউ বিশাল সম্পত্তির মালিক হবে আর কেউ দরিদ্র থাকবে- তা হতে পারবে না। EdBen 38.2
এদনে বসবাসকারীদের জন্য যেমন করেছিলেন ঠিক তেমন ঈশ্বর লােকদের মধ্যে ভূমি বিভাগের দ্বারা অনুকূল পেশার ব্যবস্থা করলেন, তার উদ্দেশ্য তারা গাছপালা এবং জীবজন্তুর দেখাশুনা করবে। তাদের জন্য আরও একটি অতিরিক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল এই, প্রতি সপ্তম বছর তারা জমি চাষ থেকে বিরত থাকবে এবং এই সপ্তম বছরের জমির স্বজাত শস্য দরিদ্রেরা উপভােগ করবে। এভাবে সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির বিষয়ে আরও বেশি শিক্ষা লাভের জন্য তাদের সুযােগ প্রদান করা হত এবং স্বেচ্ছা। দানের সুযােগ প্রদান করা হত। EdBen 38.3
সম্পদ বন্টনে যদি আজ বিশ্বে ঈশ্বরের নীতিমালা অনুসরণ করা হত তবে লােকদের অবস্থা কতই না ভিন্নতর দেখা যেত! এই নীতি পালন সর্বযুগের ভয়াবহ মন্দতা দমনে সহায়ক হত, কেননা দেখা যাচ্ছে যে, ধনীরা গরীবদের কিভাবে নিষ্পেষণ করছে, যাতে গরীবেরা ধনীদের প্রতি নিদারুণ ঘৃণা পােষণ করছে। এতে বিশাল সম্পদের মালিক হওনে বাধা সৃষ্টি করত, এতে হাজার হাজার শ্রমিক এবং ক্রীতদাসদের সামান্য বেতন দিয়ে অবশিষ্ট অর্থ বাঁচিয়ে মালিকদের অট্টালিকা তৈরির এবং ঘরে রাজকীয় আসবাবপত্র তৈরির পথ বন্ধ হত। অরাজকতা এবং মানসিক শ্রম দ্বারা অর্জিত অর্থ থেকে দরিদ্রদের দুঃখকষ্ট দূর করার জন্য দ্বিতীয় দশমাংশ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এতে তারা বুঝতে পারত যে, ঈশ্বর সব কিছুর মালিক এবং এর মাধ্যমে তারা ঈশ্বরের আশীর্বাদও লাভ করতে পারত। তা তাদের সংকীর্ণতা এবং স্বার্থপরতা দূর করার জন্য ছিল একটি আশীর্বাদস্বরূপ, একটি প্রশিক্ষণ ও তাতে তাদের চরিত্রের প্রসারতা এবং মহত্ব বৃদ্ধি পেত। EdBen 38.4
ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞান, অধ্যয়ন, এবং শ্রমে তার সঙ্গে সহভাগিতা, চরিত্রগত ভাবে তাঁর মত হওয়া ছিল ইস্রায়েলের শিক্ষার উৎস, পন্থা, এবং লক্ষ্য- যে শিক্ষা ঈশ্বর কর্তৃক বাবা-মাদের দেয়া হয়েছে এবং তা বাবামায়ের মাধ্যমে তাদের সন্তানদের দেয়া হবে । EdBen 39.1