“আর বিশ্বাস প্রত্যাশিত বিষয়ের নিশ্চয় জ্ঞান।”
“বিশ্বাস করি যে, তাহা পাইয়াছ তাহাতে তোমাদের জন্য তাহাই হইবে।”
ঈশ্বরে নির্ভরই বিশ্বাস-- বিশ্বাস করতে হবে যে, তিনি আমাদের প্রেম করেন এবং আমাদের মঙ্গলের জন্য সর্বাপেক্ষা উত্তম কি, তিনি তা জানেন। এভাবে, আমাদের মনােনয়ন অনুসারে নয় বরং তা আমাদের তাঁর পথ মনােনয়নে পরিচালনা দান করবে। আমাদের মুখতার স্থানে বিশ্বাস তাঁর জ্ঞান; আমাদের দুর্বলতার স্থানে, তার শক্তি আমাদের পাপ পূর্ণতার স্থানে, তার ধার্মিকতা গ্রহণ করবে। আমাদের জীবন, আমরা নিজেরা তারই; বিশ্বাস তার মালিকানা স্বীকার করে, এবং এর আশীর্বাদ গ্রহণ করে। সত্য, ধার্মিকতা, পবিত্রতা জীবনের কৃতকার্যতার রহস্যরূপে দেখিয়ে দেয়া হয়েছে। বিশ্বাস যা আমাদের এই সব নীতিমালার অধিকারে স্থাপন করে। EdBen 235.1
প্রত্যেক উত্তম উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও ব্যাকুল বাসনা ঈশ্বরের দান; বিশ্বাস ঈশ্বরের কাছ থেকে জীবন লাভ করে যা প্রকৃত ক্রমঃবর্ধন এবং দক্ষতা উৎপাদন করতে পারে। EdBen 235.2
বিশ্বাসের অনুশীলন হবে অত্যন্ত সরল ও সহজ। ঈশ্বরের প্রতিটি প্রতিজ্ঞায় শর্তাবলী রয়েছে। যদি আমরা স্বেচ্ছায় তার ইচ্ছা পালন করি, তাহলে তার সমস্ত শক্তি আমাদেরই। তিনি যে কোন বরের প্রতিজ্ঞা করেন, তা ঐ প্রতিজ্ঞার মধ্যেই বিদ্যমান। “বীজ ঈশ্বরের বাক্য”। যদি আমরা প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করি, তবে আমরা দানও গ্রহণ করলাম। EdBen 235.3
যে বিশ্বাস আমাদেরকে ঈশ্বরের দান সকল গ্রহণে সমর্থ করে, তাই-ই সেই দান; যার কিছু পরিমাণ প্রত্যেকটি মানব সত্ত্বাকে দেয়া হয়েছে। ঈশ্বরের বাক্য বিশেষ কাজে প্রয়ােগ করার মাধ্যমে তা বাড়ে। বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে হলে, তা অহরহ আমাদের বাক্যের সংস্পর্শে আনতে হবে। EdBen 235.4
বাইবেল অধ্যয়নে ছাত্র-ছাত্রীকে ঈশ্বরের বাক্যের ক্ষমতা বুঝতে পরিচালনা দান করতে হবে। সৃষ্টি কাজে, “তিনি কথা কহিলেন, আর উৎপত্তি হইল, তিনি আজ্ঞা করিলেন, আর স্থিতি হইল।” তিনি “যাহা নাই, তাহা আছে বলেন” (গীতসংহিতা ৩৩:৯; রােমীয় ৪:১৭); কেননা তিনি যখন ঐ সব আহ্বান করেন, তখন তা উৎপত্তি হয়। EdBen 236.1
কতবারই না যারা ঈশ্বরের বাক্যে নির্ভর করেছে, যদিও তারা সম্পূর্ণরূপে অসহায় ছিল, তবুও তারা সমগ্র বিশ্বের শক্তির মােকাবিলা করেছে—বিশুদ্ধ চিত্ত, পবিত্র জীবনের অধিকারী হনােক, একটি ভ্রষ্ট এবং উপহাসকারী বংশের বিরুদ্ধে ধার্মিকতার বিজয় যুদ্ধে তার বিশ্বাসে অটল ছিলেন; নােহ ও তার পরিজনবর্গ, তার সময়ের লােকদের বিরুদ্ধে যারা শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ, এবং নৈতিক অধপতনের মধ্যে বসবাস করেছে, লােহিত সাগরের তীরে, অসহায়, অসংখ্য ভীত সন্ত্রস্ত ক্রীতদাস, ইস্রায়েল সন্তানগণ, বিশ্বের সর্বক্ষমতাশীল জাতির মধ্যে সর্বক্ষমতা সম্পন্ন সৈন্যদের বিরুদ্ধে; একজন বালক মেষপালক দায়ূদ, ঈশ্বরের সিংহাসনের প্রতিজ্ঞা সহ, প্রতিষ্ঠিত সম্রাট, শৌলের বিরুদ্ধে, তাঁর শক্তিতে অটল ছিলেন; অগ্নির মধ্যে দ্রক ও তার বন্ধুগণ, ও সিংহাসনে নৰূখদনিৎসর, সিংহের খাদে দানিয়েল, তার শত্রুরা রাজ্যের উচ্চস্থানে; ক্রুশের উপরে যীশু, এবং যিহূদী যাজকগােষ্ঠী এবং শাসকবৃন্দ রােমীয় শাসনকর্তাকে ইচ্ছা পূর্ণ করতে বল প্রয়ােগ করেছিলেন; অপরাধীর মৃত্যুর পথযাত্রী , (ভয়ানক অপরাধীর মৃত্যুর দিকে পরিচালিত হয়েছিলেন) শৃঙ্খলাবদ্ধ পৌল বিশ্বের স্বেচ্ছাচারী উৎপীড়ক-সমগ্র বিশ্বের শক্তির মােকাবিলা করেছেন। EdBen 236.2
এমন দৃষ্টান্ত যে কেবল বাইবেলে পাওয়া যায় তা নয়। মানব ইতিহাসের প্রতিটি নথিপত্রে এমন দৃষ্টান্ত অগণিত রয়েছে। ভাউডােইস ও হিউগেনট, উইকলিফ ও হাস, যিরােম ও লুথার, টিন্ডেল ও নক্স, ডিনজেনডর ও ওয়েসলি, অন্যান্য অগণিত লােক, মন্দের পক্ষে মানবশক্তির বিরুদ্ধে ঈশ্বরের বাক্যের শক্তির পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তারা বিশ্বের প্রকৃত মহত্ব এবং শ্রেষ্ঠত্বের আদর্শ। তারা রাজকীয় বংশ এবং । শ্ৰেণী। এই যুগের যুবক-যুবতিদের এভাবে একই সারিতে তাদের অবস্থান গ্রহণ করার জন্য আহ্বান করা হয়েছে। EdBen 236.3
জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যেমন, একইভাবে ছােট ছােট বিষয়ের প্রতিও বিশ্বাস রক্ষা প্রয়ােজন। আমাদের প্রাত্যহিক আকর্ষণ এবং পেশা। সমূহের মধ্যে ঈশ্বরের ধারণ শক্তি একটি স্থায়ী বিশ্বাসের মাধ্যমে আমাদের নিকটে বাস্তবাকারে দেখা দেয়। EdBen 237.1
মানব দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে, সকলের কাছে জীবন একটি অপরীক্ষিত পথ । এটি এমন একটি পথ, যে পথে, আমাদের গভীর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে, আমরা প্রত্যেকে একাকীই চলাচল করছি। আমাদের অভ্যন্তরীণ জীবনে অন্য কোন মানবসত্তা সম্পূর্ণরূপে প্রবেশ করতে পারে EdBen 237.2
। ছােট শিশু যখন হাঁটা শুরু করে তখন আজ হােক বা কাল হােক তার নিজের ভাগ্য অবশ্যই তাকে মনােনয়ন করতে হবে, তার নিজেরই অনন্তকালের জন্য জীবনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে, অতএব নিশ্চিত পরিচালক এবং সাহায্যকারীর প্রতি তার বিশ্বাস পরিচালিত করার চেষ্টা কতই না একান্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। EdBen 237.3
প্রলােভনের একটি ঢাল এবং পবিত্রতা এবং সত্যের প্রতি একটি অনুপ্রেরণারূপে, অন্য কোন প্রভাব ঈশ্বরের সান্নিধ্যের অনুভূতির সমকক্ষ হতে পারে না। “আর তাঁহার সাক্ষাতে কোন সৃষ্ট বস্তু অপ্রকাশিত নয়, কিন্তু তাহার চক্ষু গােচরে সকলই নগ্ন ও অনাবৃত রহিয়াছে।” তিনি এমন নির্মল চক্ষু যে, মন্দ দেখিতে পারে না এবং দুষ্কর্যের প্রতি ...দৃষ্টিপাত করিতে পারে “না”। ইব্রীয় ৪:১৩; হবককূক ১:১৩। মিসরের ভ্রষ্টতার। মধ্যে এই চিন্তাই ছিল যােষেফের চালা। এই সব প্রলােভনের প্রতি তার উত্তর ছিল অটল: “অতএব আমি কিরূপে এই মহাদুষ্কর্ম করিতে ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করিতে পারি?” আদিপুস্তক ৩৯:৯। প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রত্যেকের জীবনে এমন একটি রক্ষণােপায় ও বিশ্বাস আনবে EdBen 237.4
কেবল ঈশ্বরের সান্নিধ্যের অনুভূতি, ভয় দূর করে দিতে পারে যা দুর্বল শিশুর জীবনকে একটি বােঝা স্বরূপ করে তুলতে পারে। তার স্মৃতিপটে এই প্রতিজ্ঞা বদ্ধমূল রাখতে হবে, “সদাপ্রভুর দূত, যাহারা তাহাকে ভয় করে, তাহাদের চারিদিকে শিবির স্থাপন করেন, আর তাহাদিগকে উদ্ধার করেন।” পাহাড়ে বসবাসকারী ইলীশায়ের চমৎকার কাহিনী ও তার এবং শত্রুপক্ষের বাহিনীর মধ্যে স্বর্গীয় দূতবাহিনীর এক শক্তিশালী আবেষ্টনকারী দলের কথা পড়ুন। কারাগারে কিভাবে পিতরকে মৃত্যুর আদেশ দেয়া হয়েছিল, এবং ঈশ্বরের দূত দেখা দিলেন; কিভাবে অস্ত্রসজ্জিত সৈন্যদলকে অতিক্রম করলেন, কতগুলাে দরজা এবং মস্তবড় লােহার দরজা খুলে গেল, এবং দূত ঈশ্বরের দাসকে নিরাপদে বের করে আনলেন- সে বিষয়ে পাঠ করুন। সেই সমুদ্রের দৃশ্য পাঠ করুন, যখন ঝড়ের কবলে সৈনিকগণ এবং জাহাজের চালকগণ, পরিশ্রান্ত, ক্লান্ত, অনাহারে রয়েছে, তার মধ্যে বন্দী পৌল বিচারিত হয়ে মৃত্যু দণ্ডে দণ্ডিত হবার যাত্রা পথে রয়েছেন, তখন তিনি মহা উৎসাহ ও আশার বাণী উচ্চারণ করলেন: “আপনারা সাহস করুন, কেননা আপনাদের কাহারও প্রাণের হানি হইবে না।...কারণ আমি যে ঈশ্বরের লােক এবং যাহার সেবা করি, তাহার এক দূত গত রাত্রিতে আমার নিকটে দাঁড়াইয়া কহিলেন, পৌল ভয় করিও EdBen 237.5
, কৈসরের সম্মুখে তােমাকে দাড়াইতে হইবে। আর দেখ, যাহারা তােমার সঙ্গে যাইতেছে, ঈশ্বর তাহাদের সকলকেই তােমায় দান করিয়াছেন।” এই প্রতিজ্ঞার বিশ্বাসে পৌল তার সঙ্গীদের নিশ্চয়তা দিলেন, “আপনাদের কাহারও মস্তকের এক গাছি কেশও নষ্ট হইবে না।” আর ঘটলও তাই। কারণ জাহাজে এমন এক ব্যক্তি ছিলেন যার মাধ্যমে ঈশ্বর কাজ করলেন, জাহাজ ভর্তি পৌত্তলিক সৈনিক এবং নাবিকগণ রক্ষা পেলেন। “এইরূপে সকলে ডাঙ্গায় উঠিয়া রক্ষা পাইল।” প্রেরিত ২৭:২২-২৪, ৩৪, ৪৪। EdBen 238.1
আমরা এ সব পাঠ করে আশ্চর্যান্বিত হব, কেবল এই কারণে এটি লেখা হয় নি, কিন্তু একই বিশ্বাস যা ঈশ্বরের দাসের মধ্যে কাজ সাধন। করেছিল তা যেন আমাদের মধ্যে কাজ করতে পারে। বিশ্বাসের হৃদয় তাঁর শক্তির পথ সমূহ, যার মাধ্যমে, তিনি পৌলের সময় যে অলৌকিক কাজ করেছিলেন, তার চেয়ে এখন যে কাজ করতে পারেন, তা কোন মতেই কম নয়। EdBen 238.2
আত্ম-অবিশ্বাসপূর্ণ ব্যক্তিগণ- যাদের আত্মনির্ভরশীলতার অভাব তাদের সতর্কতা অবলম্বন এবং দায়িত্ব হতে চাপমুক্ত করে, তাদের ঈশ্বরে নির্ভরশীল হতে শিক্ষা লাভ করবে। অন্যথায় এভাবে অনেকে পৃথিবীতে তুচ্ছ ব্যক্তি হিসেবে হয়ত একটি অসহায় বােঝা স্বরূপ গণ্য হবে, তারা পৌলের সঙ্গে এ কথা বলতে সমর্থ হবে, “যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁহাতে আমি সকলই করিতে পারি।” ফিলিপীয় ৪:১৩। EdBen 238.3
যে শিশু আহত হয়ে অতি সত্বর অত্যন্ত বিরক্ত হয়, তার জন্য বিশ্বাসের অমূল্য শিক্ষা রয়েছে। মন্দতার প্রতিরােধ করার প্রবণতা অথবা অন্যায়ের প্রতিশােধ নেয়া প্রায়ই ন্যায় বিচার এবং একটি সক্রিয় শক্তিশালী মনােভাবের একটি গভীর অনুভূতি জাগিয়ে তােলে। এভাবে একজন শিশুকে শিক্ষা দিতে হবে যে, ঈশ্বর ন্যায়ের চিরন্তর পরিচালক রক্ষক। যাদের মুক্তির জন্য তিনি তাঁর প্রিয়তম পুত্রকে দান করেছেন তাদের জন্য তাঁর সুকোমল প্রেম ও দরদ রয়েছে EdBen 239.1
“কেননা যে ব্যক্তি তােমাদিগকে স্পর্শ করে, সে তাঁহার চক্ষুর তারা স্পর্শ করে।” সখরিয় ২:৮। EdBen 239.2
“তােমার গতি সদাপ্রভুতে অর্পণ কর, তাহাতে নির্ভর কর, তিনিই কার্য সাধন করিবেন। তিনি দীপ্তির ন্যায় তােমার ধর্ম, মধ্যাহ্নের ন্যায় তােমার বিচার প্রকাশ করিবেন।” গীতসংহিতা ৩৭:৫, ৬। EdBen 239.3
“আর সদাপ্রভু হইবেন ক্লিষ্টের জন্য উচ্চ দুর্গ, সঙ্কটের সময়ে উচ্চ দুর্গ। যাহারা তােমার নাম জানে, তাহারা তােমাকে বিশ্বাস রাখিবে; কেননা, হে সদাপ্রভু তুমি তােমার অন্বেষণকারীদিগকে পরিত্যাগ কর নাই।” গীতসংহিতা ৯:৯, ১০। EdBen 239.4
ঈশ্বর আমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন, অন্যের প্রতিও আমরা একই ভাবে তা দেখাতে পারি। প্রেরণাদায়ক, স্বয়ংসম্পূর্ণতা, প্রতিহিংসাপরায়ণ ব্যক্তি মৃদুশীল ও নম্রব্যক্তির প্রতি দৃষ্টিপাত করুক, যাকে একটি মেষরূপে হত্যাকারীর কাছে পরিচালিত করা হয়েছিল, যিনি, “মেষী যেমন লােমচ্ছেদকের সম্মুখে নীরব থাকে তদ্রপ তিনি নীরব ছিলেন। তারা তাঁর প্রতি কষ্টিপাত করুক যাকে আমাদের পাপ সকল বিদ্ধ করেছিল এবং আমাদের দুঃখ সকল ভারাক্রান্ত করেছিল, তাতে তারা সহ্যশক্তি, ধৈর্য, এবং ক্ষমা শিক্ষা লাভ করবে। EdBen 239.5
খ্রীষ্টে বিশ্বাসের মাধ্যমে, চরিত্রের প্রতিটি খুঁৎ বা অভাব পূর্ণ করা। হবে, প্রতিটি কলঙ্ক পরিষ্কার করা হবে, প্রতিটি দোষ সংশােধিত হবে, প্রতিটি উল্কর্ষের পূর্ণতা লাভ হবে। EdBen 239.6
“তােমরা তাহাতে পূর্ণীকৃত হইয়াছ”। কলসীয় ২:১০। EdBen 239.7
প্রার্থনা বিশ্বাস ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কযুক্ত, এবং ঐ সব বিষয় এক সঙ্গে অধ্যয়ন করতে হবে। বিশ্বাসের প্রার্থনায় একটি স্বর্গীয় বিজ্ঞান নিহিত রয়েছে; এটি এমন একটি বিজ্ঞান যা জীবনে কৃতকার্যতা লাভকারী ব্যক্তিকে অবশ্যই বুঝতে হবে। খ্রীষ্ট বলেন, “যাহা কিছু তােমরা প্রার্থনা ও যাচা কর, বিশ্বাস করিও যে তাহা পাইয়াছ, তাহাতে তােমাদের জন্য তাহাই হইবে।” মার্ক ১১:২৪। তিনি এটি পরিষ্কারভাবে বলে দেন যে, আমাদের যাচঞা ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারে হতে হবে। আমরা এমন কিছু যাচঞা করব যার বিষয় তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন, এবং আমরা যা কিছু গ্রহণ করি, তার ইচ্ছা অনুসারে ব্যবহার করতে হবে। শর্ত পূর্ণ হলে প্রতিজ্ঞার পূর্ণতা লাভ হবে। EdBen 240.1
পাপের ক্ষমা, পবিত্র আত্মা, একটি খ্ৰীষ্টিয় মেজাজ, তার কাজের জন্য জ্ঞান ও শক্তিলাভের জন্য, তার প্রতিজ্ঞাত যে কোন দানের জন্য আমরা যাচা করতে পারি; তবে আমাদের বিশ্বাস করতে হবে যে, আমরা তা পেয়েছি এবং বিনিময়ে আমরা ঈশ্বরের ধন্যবাদ করব । EdBen 240.2
আমরা আশীর্বাদের বাহ্যিক কোন প্রমাণের আশা করব না। দান প্রতিজ্ঞার মধ্যেই রয়েছে, এবং এই বিশ্বাসে আমরা নিশ্চিত মনে আমাদের কাজে চলে যেতে পারি যে, তিনি যা কিছু প্রতিজ্ঞা করেছেন, তিনি তা পূর্ণ করতে সমর্থ, এবং ইতােমধ্যে আমাদের কাছে যে দান রয়েছে, তা আমাদের একান্ত প্রয়ােজনে বিবেচনা করা হবে। EdBen 240.3
এভাবে ঈশ্বরের বাক্যে জীবন ধারণ করার অর্থ আমাদের সমগ্র জীবন তার কাছে সমর্পণ করা। ঈশ্বরের প্রতি এক বিরামহীন অভাব এবং নির্ভরশীলতা অনুভূত হবে। প্রার্থনা একটি অপরিহার্য বিষয়, কেননা তা আত্মার জীবন। পারিবারিক প্রার্থনা, গণপ্রার্থনা, এ সবের স্থান রয়েছে; তা ঈশ্বরের সঙ্গে নিভূত সম্পর্ক ও যােগাযােগ যা আত্মার জীবনকে ধারণ করে। EdBen 240.4
মােশিকে পর্বতে ঈশ্বরের প্রতাপের চমৎকার গৃহ বা মন্দিরের নমুনা দেখান হয়েছিল। আর পর্বতে ঈশ্বরের সঙ্গে যােগাযােগ সম্পর্কের নির্ভূত স্থান- যেখানে মানব জাতির জন্য আমাদিগকে তাঁর গৌরবময় আদর্শ ধ্যান করতে হবে। এভাবে আমরা আমাদের চরিত্র গঠনে সমর্থ হব যেন আমাদের মাঝে তার প্রতিজ্ঞার পূর্ণতা লাভ হয়, “আমি তাহাদের মধ্যে বসতি করিব ও গমনাগমন করিব; এবং আমি তাহাদের ঈশ্বর হইব, ও তাহারা আমার প্রজা হইবে।” ২ করিন্থীয় ৬:১৬। EdBen 240.5
যীশু তাঁর পার্থিব জীবনে নির্জন প্রার্থনার মাধ্যমে জ্ঞান শক্তি লাভ করেছিলেন। যুবক-যুবতিরা খুব ভােরে এবং গোধূলি ও সন্ধ্যালােকে তাদের অন্তঃকরণ ঈশ্বরের দিকে তুলে ধরবে। আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি বলেন, “কেননা আমি সদাপ্রভু তােমার ঈশ্বর তােমার দক্ষিণ হস্ত ধারণ করিব...ভয় করিও না; আমি তােমার সাহায্য করিব।” যিশাইয় ৪১:১৩। আমাদের ছেলে-মেয়েরা তাদের জীবনের প্রভাতে এই সব শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, এটি তাদের জীবনে কতই না সজীবতা-শক্তি-আনন্দ এবং মধুরতা বয়ে আনবে! এই পাঠ্যগুলাে সম্পর্কে যে শিক্ষালাভ করেছে কেবল সেই পারে তা শিক্ষা দিতে। যেহেতু অনেক বাবা-মা এবং শিক্ষক-শিক্ষয়ীত্রী নামেমাত্র ঈশ্বরের বাক্য বিশ্বাস করেন, একই সময় তাদের জীবনে এর শক্তি অস্বীকার। করেন, তারা এ কথাও বলেন যে, যুবক-যুবতিদের ওপরে শাস্ত্র বড় রকমের কোন প্রভাব ফেলে না। কখনাে কখনাে যুবক-যুবতিদের বাক্যের শক্তি অনুভব করতে আহ্বান করা হয়। তারা খ্রীষ্টের প্রেমের মহা কার্যকারীতা লক্ষ করে। তারা তার চরিত্রের মাধুর্য, তার সেবায় উৎসর্গীকৃত একটি জীবনের সম্ভাবনা বুঝতে পারে। কিন্তু পক্ষান্তরে তারা, সেই সকল লােকদের জীবনীও লক্ষ করে যারা নামে মাত্র ঈশ্বরের ব্যবস্থামালার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে। ভাববাদী যিহিষ্কেলের কাছে কথিত বাণী সমূহের কতগুলােই না সত্য: “প্রত্যেকে আপন আপন প্রতিবাসীকে ও ভ্রাতাকে বলে, চল, আমরা গিয়া শুনি, সদাপ্রভু হইতে যে বাক্য বাহির হয়, তাহা কি। আর প্রজালােক যেমন আইসে, তেমনি তাহারা তােমার কাছে আইসে, আমার প্রজা বলিয়া তােমার সম্মুখে বসে, ও তােমার বাক্য সকল শুনে, কিন্তু তাহা পালন করে না; কেননা মুখে তাহারা বিলক্ষণ প্রেম দেখায়, কিন্তু তাহাদের চিত্ত তাহাদের লাভের দিকে যায়। আর দেখ, তাহাদের নিকটে তুমি মধুর স্বর বিশিষ্ট নিপুণ বাদ্যকারের সুচারু সঙ্গীতস্বরূপ; তাহারা তােমার বাক্য শুনে, কিন্তু পালন করে না।” যিহিষ্কেল ৩৩:৩০-৩২। EdBen 241.1
বাইবেল উত্তম, নৈতিক নির্দেশমালার একটি বই জ্ঞান করা একটি বিষয়, অবিরত কালের মনােভাব এবং পৃথিবীতে আমাদের অবস্থার কথা এতে বর্ণিত রয়েছে; এর আরও একটি দিক হল এই যে, জীবন্ত ঈশ্বরের বাক্য, যে বাক্য আমাদের জীবন, যে বাক্য আমাদের কাজ, আমাদের কথাবার্তা এবং আমাদের চিন্তারাশিকে রূপ দেবে। এর চেয়ে অবহেলার সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য ধরে রাখার অর্থ এটি পরিত্যাগ করা, বিশ্বাসীদের দ্বারা এর নাম মাত্র প্রত্যাখ্যান যুবক-যুবতিদের মধ্যে সন্দেহ বাদ, এবং ধর্মে অবিশ্বাসের সর্ব প্রথম কারণ EdBen 241.2
পৃথিবীতে এত গভীর আবেগপ্রবণতা আগে কখনাে দেখা যায় নি। আমােদ-প্রমােদ, অর্থোপার্জন, ক্ষমতার লড়াই, টিকে থাকার সংগ্রাম, ইত্যাদির মধ্যে এক মহা শক্তি পরিলক্ষিত হয় যা দেহ মন ও আত্মাকে সম্পূর্ণরূপে কিনে ফেলে। এই সব মত্ততার মধ্যেও ঈশ্বর কথা বলেন। তিনি আমাদের তা হতে সরে এসে তাঁর সঙ্গে সম্মিলিত হবার আবেদন জানাচ্ছেন। “তােমরা ক্ষান্ত হও, জানিও, আমিই ঈশ্বর।” গীতসংহিতা ৪৬:১০। EdBen 242.1
অনেকে এমন কি তাদের আরাধনার সময়, ঈশ্বরের সঙ্গে অকপট যােগাযোগের আশীর্বাদ লাভ থেকে বঞ্চিত হয়। তারা অত্যন্ত তাড়াহুড়াে করে। তারা দ্রুততার সঙ্গে খ্রীষ্টের প্রেমের সান্নিধ্যের পরিকেন্দ্রের মধ্য দিয়ে চলে যায়, হয়ত এক মুহূর্তের জন্য পবিত্র স্থানে থেমে দাঁড়ায়, কিন্তু কোন পরামর্শ গ্রহণের অপেক্ষা করে না। স্বর্গীয় গুরুর সঙ্গে এক মুহূর্ত যাপন করার অবকাশ তাদের নেই। তাদের বােঝা নিয়ে তারা তাদের কাজে চলে যায়। EdBen 242.2
এই কার্যকারীগণ, যাবৎ না তারা শক্তির রহস্য জানতে পারে, সে পর্যন্ত তারা কখনাে সর্বোচ্চ কৃতকার্যতার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে না। তাদের চিন্তা করার, প্রার্থনা করার, দৈহিক, মানসিক, এবং আধ্যাত্মিক শক্তি লাভের জন্য ঈশ্বরের উপর নির্ভর করা উচিৎ। তাঁর আত্মার নৈতিক উন্নতিসাধনের প্রভাব আবশ্যক। এটি লাভ করে, তারা নতুন জীবন দ্বারা শক্তিমন্ত হবে । ক্লান্ত কাঠামাে, পরিশ্রান্ত মগজ সজীবতা লাভ করবে, ভারাক্রান্ত হৃদয় হালকা হবে। EdBen 242.3
তাঁর সান্নিধ্যে এক মুহূর্তে থেমে আমাদের খ্রীষ্টের সঙ্গে ব্যক্তিগত সাক্ষাতের জন্য, তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব লাভের জন্য অপেক্ষা করা উচিৎ। আমাদের ঘরে সন্তান-সন্ততি এবং আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে খুব সুখেরই হবে যখন বাবা-মা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ তাদের জীবনে পরমগীতের এই বাক্যগুলির মধ্যে চিত্রিত অমূল্য অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন: EdBen 242.4
“যেমন বনতরুগণের মধ্যে নাগরঙ্গবৃক্ষ, তেমনি যুবকগণের মধ্যে আমার প্রিয়; আমি পরমহর্ষে তাঁহার ছায়াতে বসিলাম, তাহার ফল আমার মুখে সুস্বাদু লাগিল। তিনি আমাকে পানশালাতে লইয়া গেলেন আমার উপরে প্রেমই তাঁহার পতাকা হইল।” পরমগীত- ২:৩,৪। EdBen 243.1