“তাঁহার মুখ দর্শন করিবে, এবং তাঁহার নাম তাহাদের ললাটে থাকিবে।”
স্বর্গ একটি বিদ্যালয়; বিশ্বজগৎ অধ্যয়নের ক্ষেত্র; অসীম এক ব্যক্তি এর শিক্ষক । এই বিদ্যালয়ের একটি শাখা এদনে স্থাপন করা হয়েছিল; এবং, পরিত্রাণ পরিকল্পনা করা হল এবং এই শিক্ষা পুনরায় এদন-বিদ্যালয়ে চালু করা হবে। EdBen 279.1
“চক্ষু যাহা দেখে নাই, কর্ণ যাহা শুনে নাই, এবং মনুষ্যের হৃদয়াকাশে যাহা উঠে নাই, যাহা ঈশ্বর, যাহারা তাহাকে প্রেম করে, তাহাদের জন্য প্রস্তুত করিয়াছেন।” ১ করিন্থীয় ২:৯। কেবল তাঁর বাক্যের মাধ্যমে, এই সব বিষয়ের জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব; এবং এমন কি এটি কেবল আংশিক প্রকাশ প্রাপ্তির মাধ্যমে অর্জন সম্ভব। EdBen 279.2
পাটম দ্বীপে ভাববাদী ভবিষ্যতের বিদ্যালয়টির এভাবে বর্ণনা প্রদান করেন: EdBen 279.3
“পরে আমি এক নূতন আকাশ ও এক নূতন পৃথিবী দেখিলাম; কেননা প্রথম আকাশ ও প্রথম পৃথিবী লুপ্ত হইয়াছে ...আর আমি দেখিলাম, পবিত্র নগরী নূতন যিরূশালেম, স্বর্গ হইতে ঈশ্বরের নিকট হইতে নামিয়া আসিতেছে; সে আপন বরের ন্যায় প্রস্তুত হইয়াছিল।” প্রকাশিত বাক্য ২১:১,২ । EdBen 279.4
“আর সেই নগরে দীপ্তিদানার্থে সূর্য্যের বা চন্দ্রের কিছু প্রয়ােজন। নাই; কারণ ঈশ্বরের প্রতাপ তাহা আলােকময় করে, এবং মেষশাবক তাহার প্রদীপস্বরূপ।” প্রকাশিত বাক্য ২১:২৩। EdBen 279.5
এদনে স্থাপিত বিদ্যালয় এবং ভবিষ্যতের বিদ্যালয়টির মধ্যে বিশ্বের ইতিহাস সমগ্র পরিধি বিদ্যমান—মানব জাতির আজ্ঞা লঙ্ঘন এবং , দুঃখভােগ, ঐশ্বরিক বলি, এবং মৃত্যু ও পাপের ওপরে বিজয় লাভ । এদনের প্রথম বিদ্যালয়টির সব শর্তাবলী ভবিষ্যতের বিদ্যালয়ে পাওয়া যাবে না। EdBen 279.6
প্রলােভনের সুযােগ করে দেবার জন্য কোনাে সদসদ্ জ্ঞান দায়ক বৃক্ষ সেখানে থাকবে না। কোনাে প্রলােভনকারী সেখানে থাকবে না, কোন ভুল বা অন্যায়ের সম্ভবনা সেখানে থাকবে না। প্রতিটি চরিত্র মতো সিদ্ধ এবং কেউই এর ক্ষমতার দ্বারা আর ছাপ গ্রহণ করবে না। EdBen 280.1
খ্রীষ্ট বলেন, “যে কেহ জয় করে” “তাহাকে আমি ঈশ্বরের পরম দেশস্থ জীবনবৃক্ষের ফল ভােজন করিতে দিব।” প্রকাশিত বাক্য ২:৭। এদনে রাখা জীবন বৃক্ষটি ছিল শর্তসাপেক্ষ, এবং পরে তা তুলে নেয়া হল। কিন্তু ভবিষ্যৎ জীবনের দান সমূহ সুনিশ্চিৎ এবং চিরস্থায়ি । EdBen 280.2
ভাববাদী বলেন, “তিনি আমাকে জীবন-জলের নদী” দেখাইলেন তাহা স্ফটিক জলের তুল্য, তাহা ঈশ্বরের সিংহাসন হইতে নির্গত হইয়া তথাকার চকের মধ্যস্থানে বহিতেছে; “নদীর এপারে ওপারে জীবন-বৃক্ষ আছে, তাহা দ্বাদশ বার ফল উৎপন্ন করে।” “এবং মৃত্যু আর হইবে না; শােক বা আর্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।” প্রকাশিত বাক্য ২২:১; ২২:২, ২১:৪ । EdBen 280.3
“আর তােমার প্রজারা সকলে ধার্মিক হইবে,
তাহারা চিরকাল তরে দেশ অধিকার করিবে,
তাহারা আমার রােপিত তরুর শাখা,
আমার হস্তের কার্য,
যেন আমি বিভূষিত হই।” EdBen 280.4
যিশাইয় ৬০:২১।
তাঁর কাছে ফিরে এসে, মানুষ আবার, প্রথম বারের মত ঈশ্বরের কাছে শিক্ষা লাভ করবে; “আমার প্রজাগণ আমার নাম জানিবে: ...তাহারা সেই দিন [জানিবে] যে, আমিই কথা কহিতেছি; দেখ, এই আমি।” যিশাইয় ৫২:৬। EdBen 280.5
“দেখ, মনুষ্যদের সহিত ঈশ্বরের আবাস; তিনি তাহাদের সহিত বাস করিবেন, এবং তাহারা তাহার প্রজা হইবে; এবং ঈশ্বর আপনি তাহাদের সঙ্গে থাকিবেন, ও তাহাদের ঈশ্বর হইবেন। ” প্রকাশিত বাক্য। ২১:৩। EdBen 280.6
“ইহারা সেই লােক, যাহারা সেই মহা ক্লেশের মধ্য হইতে আসিয়াছে, এবং মেষ শাবকের রক্তে আপন আপন বস্ত্র ধৌত করিয়াছে ও শুক্লবর্ণ করিয়াছে। এই জন্য ইহারা ঈশ্বরের সিংহাসনের সম্মুখে আছে; এবং তাহারা দিবারাত্র তাহার মন্দিরে তাহার আরাধনা করে। ... ইহারা আর কখনও ক্ষুধিত হইবে না, আর কখনও তৃষ্ণার্তও হইবে না, এবং ইহাদের কোন রৌদ্র বা কোন উত্তাপ লাগিবে না; কারণ সিংহাসনের মধ্যস্থিত মেষশাবক ইহাদিগকে পালন করিবেন, এবং জীবন জলের উনুইয়ের নিকটে গমন করাইবেন।” প্রকাশিত বাক্য ৭:১৪-১৭ । EdBen 281.1
“কারণ এখন আমরা দর্পণে অস্পষ্ট দেখিতেছি, কিন্তু তক্কালে সম্মখাসম্মুখি হইয়া দেখিব; এখন আমি কতক অংশে জানিতে পাই, কিন্তু তৎকালে আমি আপনি যেমন পরিচিত হইয়াছি, তেমনি পরিচয় পাইব।” ১ করিন্থীয় ১৩:১২ । EdBen 281.2
তারা “তাঁহার মুখ দর্শন করিবে; এবং তাহার নাম তাহাদের ললাটে থাকিবে।” প্রকাশিত বাক্য ২২:৪ । EdBen 281.3
সেখানে, যে পর্দা আমাদের দৃষ্টি আড়াল করে দেয়, তা দূর হবে, এবং আমাদের চোখ সেই মনােরম বিশ্ব দেখবে যা আমরা এখন অনুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে তার ক্ষীণ রশাি অনুভব করছি; যখন আমরা আকাশমণ্ডলের সৌন্দর্য এবং জ্যোতি লক্ষ করি যা এখন দূরবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়; যখন, পাপের কলঙ্ক দূর করা হবে, তখন সমগ্র বিশ্ব “আমাদের ঈশ্বর প্রভুর সৌন্দর্যে” প্রকাশিত হবে, আমাদের অধ্যয়নের জন্য তখন কত চমৎকারই না ক্ষেত্র উন্মুক্ত থাকবে। সেখানে বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীরা সৃষ্টির বিবরণ পাঠ করতে পারবে এবং তারা সেখানে মন্দতার কোন ব্যবস্থাই দেখবে না। সে প্রকৃতির রব শুনবে এবং সেখানে ক্রন্দন ও দুঃখের আর্তনাদ শুনতে পাবে না। সমস্ত সৃষ্ট বস্তুর মধ্যে সে একটি হাতের ক্ষমতা লক্ষ করবে—বিশাল বিশ্বে দেখুন “ঈশ্বরের নামটি বড় অক্ষরে লিখিত”, পৃথিবীতে এবং সমুদ্রে, অথবা আকাশে দুর্বলতার কোন চিহ্নই দেখা যাবে না। EdBen 281.4
সেখানে লােকেরা এদন উদ্যানের জীবন যাপন করবে, উদ্যানে এবং মাঠে প্রান্তরের এক জীবন। “আর লােকেরা গৃহ নির্মাণ করিয়া তাহার মধ্যে বসতি করিবে, দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়া তাহার ফল ভােগ করিবে। তাহারা গৃহ নির্মাণ করিলে অন্যে বাস করিবে না, তাহারা রােপণ করিলে অন্যে ভােগ করিবে না; বস্তুতঃ আমার প্রজাদের আয়ু বৃক্ষের তুল্য হবে, এবং আমার মনােনীত লোকেরা দীর্ঘকাল আপন আপন হস্তের শ্রমফল ভােগ করিবে।” যিশাইয় ৬৫:২১, ২২ EdBen 282.1
সেখানে কিছুই আমার পবিত্র পর্বতের কোন স্থানে হিংসা কিম্বা বিনাশ করিবে না, ইহা সদাপ্রভু কহেন।” যিশাইয় ৬৫:২৫। সেখানে তার রাজপদ অথবা বিশিষ্ট পদ ফিরে পাবে, এবং নিম্ন শ্রেণীর জীব পুনরায় তার প্রভাব লাভ করবে; ভয়ঙ্কর জীব পুনরায় শান্ত প্রকৃতির হবে, এবং দুর্বল নির্ভরযােগ্য হবে। EdBen 282.2
ছাত্রদের সামনে অসীম এলাকা এবং বর্ণনাতীত সম্পদের ইতিহাস খােলা থাকবে। এখানে, ঈশ্বরের বাক্যের অনুকুল স্থানে, ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে ইতিহাসের এক বিশাল ক্ষেত্র থাকবে, এবং তা থেকে সে এমন কিছু নীতিমালা সম্পর্কিত জ্ঞান লাভ করবে যা মানব ঘটনাবলী নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু তার দৃষ্টি তখনও অস্পষ্ট; এবং তার জ্ঞান ও অসম্পূর্ণ। সে চিরস্থায়ী আলােকে দাঁড়িয়ে সব কিছু পরিষ্কারভাবে দেখতে পারবে। EdBen 282.3
এরপর তার সামনে মহা সংগ্রামের ঘটনাবলী তুলে ধরা হবে যা কালের আগে শুরু হয়েছিল, এবং একমাত্র কাল সম্পূর্ণ হলে তার পরিসমাপ্তি ঘটেছে। পাপের সূচনার ইতিহাস; এর চাতুর্যপূর্ণ কাজে নিদারুণ প্রতারণা; সত্য, যা, এর নিজের সরল রেখা হতে সরে যায় না, তা ভুলের মুকাবিলা করে তা জয় করল- সকলই প্রকাশিত হবে। দৃশ্য এবং অদৃশ্য বিশ্বের মধ্যে অবস্থিত পর্দা একপাশে সরিয়ে রাখা হবে, চমৎকার বিষয়গুলাে প্রকাশিত হবে। EdBen 282.4
চিরন্তর আলােকে ঈশ্বরের বিচক্ষণ পরিচালনায় আমরা দূতগণের অধীনে স্থিত বিষয়গুলাে দেখতে পারব। স্বর্গীয় স্বত্ত্বাগণ মানুষদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছেন। তারা বিদ্যুত্বস্ত্রে দেখা দিয়ছেন এবং তারা মানুষদের মত পথচারীদের পােশাকে আসছেন। তারা মানব পরিবারের সেবা পরিচর্যা গ্রহণ করছেন; তারা অজ্ঞান তিমিরে আচ্ছন্ন ভ্রমণকারীদের পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করছেন। তারা লুটকারীদের উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে দিয়ে। বিনাশকারীদের হটিয়ে দিয়েছেন। EdBen 282.5
যদিও পৃথিবীর শাসনকর্তাগণ এটি জানেন না, তথাপি, তাদের পরামর্শ সভায় দূতগণ মুখপাত্র হয়েছেন। মানব চোখগুলাে তাদের দিকে তাকিয়েছে। মানব কানগুলাে তাদের আবেদন শুনছে। মন্ত্রণা সভায় এবং বিচারালয়ে, স্বর্গীয় বার্তাবাহকগণ তাড়িত এবং নিপীড়িতদের জন্য আবেদন জানিয়েছেন। তারা উদ্দেশ্য সমূহ পরাজিত করেছেন এবং মন্দতা বন্দী করেছেন যা ঈশ্বরের সন্তানদের কাছে অন্যায় এবং দুঃখকষ্ট বয়ে এনেছে। স্বর্গীয় বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে এর সবই তুলে ধরা হবে। EdBen 283.1
প্রত্যেক মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি তার নিজের জীবনে কৃত দূতগণের পরিচর্যা কাজ উপলব্ধি করতে পারবে। যে দূত প্রথম জীবন হতে তার রক্ষক হয়েছিলেন, যে দূত তার পদবিক্ষেপগুলাের প্রতি দৃষ্টি রেখেছিলেন, বিপদের সময়ে তার মাথা ঢেকে রেখেছিলেন, যে দূত মৃত্যুচ্ছায়ার উপত্যকায় তার সঙ্গে ছিলেন, যিনি তার বিশ্রামের স্থান চিহ্নিত করে রেখেছিলেন, যিনি তাকে পুনরুত্থানের ভাের বেলায় সর্ব প্রথম দেখা দিয়েছিলেন—তার সঙ্গে কথা বলা, এবং ব্যক্তিগত জীবনে ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপের ইতিহাস শিক্ষা করা, মানব জাতির প্রতিটি কাজে স্বর্গীয় সহযােগিতা লাভ কতই না আশ্চর্যের বিষয় হবে! EdBen 283.2
জীবনের অভিজ্ঞতায় সকল জটিলতা তখন সহজ হয়ে যাবে । যে স্থানে আমাদের কাছে কেবল বিভ্রান্তি এবং নিরুৎসাহ, ভগ্ন উদ্দেশ্য এবং ব্যর্থ পরিকল্পনা দেখা গেছে সেখানে একটি বিশাল, উচচতর ক্ষমতা, বিজয়ের উদ্দেশ্য, একটি স্বর্গীয় ঐক্য দেখা যাবে। EdBen 283.3
যারা নিঃস্বার্থ মনােভাব নিয়ে কাজ করেছিলেন, তারা তাদের শ্রমের ফল ভােগ করবেন। প্রতিটি সঠিক নীতি এবং মহৎ কাজ সেখানে তুলে ধরা হবে। এ সবের কিছু কিছু আমরা এখানে দেখতে পাই। কিন্তু এই পৃথিবীতে সেই কার্যকারী লােকের ফলাফল কত অল্পই না দেখা যায়! EdBen 283.4
কত জন তাদের জন্য নিঃস্বার্থ এবং অক্লান্ত পরিশ্রম করেন, যারা তাদের নাগাল এবং জ্ঞানের বাইরে। শিক্ষক এবং বাবা-মায়েরা তাদের শেষ ঘুমের সময়টা বিছানায় কাটান, মনে হয় তাদের জীবনের কাজ ব্যর্থ হয়েছে; তারা জানেন না যে, তাদের বিশ্বস্ততার কাজ আশীর্বাদের খােলা ঝর্ণাধারার মত হয়েছে যার প্রবাহ কখনাে বন্ধ হতে পারে না; কেবল বিশ্বাসে তারা শিশুদের দেখতে পাচেছন, তাদের তারা শিক্ষা দিয়েছেন, তারা একটি আশীর্বাদস্বরূপ, অন্য মানুষের কাছে একটি অনুপ্রেরণা দায়ক হয়েছেন, এবং তাদের প্রভাব হাজার বার আবৃত্তি করা হয়েছে। অনেক কার্যকারী পৃখিবীতে শক্তি এবং আশা এবং উৎসাহের বার্তা পাঠান, যা প্রতিটি দেশের লােকদের অন্তরে আশীর্বাদ বয়ে নিয়ে যায়; কিন্তু সে একাকী এবং অজ্ঞাতসারে যে পরিশ্রম করেছেন সে বিষয়ে সে সামান্য অবগত রয়েছে। সুতরাং বরসমূহ প্রদান করা হয়েছে, বােঝা এবং দায়িত্ব সমূহ বহন করা হয়েছে, শ্রম দেয়া হয়েছে। মানুষ তাদের কবরের উপরে বীজ বপন করে, অন্য লােকে আশীর্বাদরূপ শষ্য চয়ন করে। তারা গাছ লাগায় যেন অন্য লােক তার ফল খেতে পারে। তারা এটি জানতে পেরে সুখি যে, তারা চিরকালের জন্য গতিপথের মাধ্যম স্থাপন করতে পেরেছেন। ভবিষ্যতে এর ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে । EdBen 283.5
ঈশ্বরের দেয়া প্রতিটি আশির্বাদ এবং তালন্ত যা মানুষকে নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টার দিকে পরিচালিত করেছে, তা স্বর্গীয় নথিপত্রে লিখে রাখা হয়েছে। যখন এর প্রতি ভালােভাবে নজর দেয়া হবে এবং দেখা যাবে যে, যারা আমাদের কাজের প্রচেষ্টার ফলে উত্তোলিত এবং শক্তি প্রাপ্ত হয়েছে, তাদের, ইতিহাস সত্য নীতিমালার কাজের প্রতি দৃষ্টিপাত করবে আর এটি হবে স্বর্গীয় বিদ্যালয়ের একটি অধ্যয়ন এবং পুরস্কার। EdBen 284.1
আর আমরা এখন যেমন, তখনও একইভাবে জানতে পারব। ঈশ্বর হৃদয়ে প্রেম এবং সম্প্রীতি রােপণ করেছেন, সেখানে তার প্রকৃত মধুরতম অনুশীলন দেখা যাবে। পবিত্র সত্ত্বাগণের সঙ্গে বিশুদ্ধ মেলামেশা, পবিত্র দূতগণ এবং সর্ব যুগের বিশ্বতদের সঙ্গে ঐক্যপূর্ণ সামাজিক জীবন পবিত্র সহভাগিতা “স্বর্গে ও মর্ত্যে সমগ্র পরিবার একসঙ্গে বেঁধে রাখে, - সকলেই ভবিষ্যতের অভিজ্ঞতার মধ্যে রয়েছে EdBen 284.2
সেখানে ঈশ্বরের সামনে একটি গীতবাদ্য এবং কণ্ঠসংগীত শােনা হবে যা ইতােপূর্বে কোন মানুষের কান শােনে নি অথবা মনে উদয় হয় নি। EdBen 284.3
“গায়কগণ ও নর্তকগণ [বলিবে] আমার সমস্ত উনুই তােমার মধ্যে।” গীতসংহিতা ৮৭:৭। “ইহারা উচ্চরব করিবে, আনন্দগান করিবে, সদাপ্রভুর মহিমা প্রযুক্ত ইহারা সমুদ্র হইতে উচ্চধ্বনি শুনাইবে।” যিশাইয় ২৪:১৪। EdBen 284.4
“বস্তুতঃ সদাপ্রভু সিয়ােনকে সান্তনা করিয়াছেন, তিনি তাহার সমস্ত উৎসন্ন স্থানকে সান্তনা করিয়াছেন, এবং তাহার প্রান্তরকে এদনের ন্যায়; ও তাহার শুষ্ক ভূমিকে সদাপ্রভুর উদ্যানের ন্যায় করিয়াছেন, তাহার মধ্যে আমােদ ও আনন্দ, স্তবগান ও সঙ্গীতের ধ্বনি পাওয়া যাইবে।” যিশাইয় ৫১:৩। EdBen 285.1
সেখানে প্রতিটি শক্তির উন্নয়ন হবে, প্রতিটি সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে । সর্বশ্রেষ্ঠ কর্মপ্রচেষ্টার অগ্রগতি হবে, অতি উন্নততর উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলাে পূর্ণ হবে, সর্বোচ্চ বাসনা বাস্তবে পরিণত হবে। তবুও নতুন নতুন উচচ স্থানগুলােতে আরােহণ করা যাবে, নতুন আশ্চর্য বস্তুর প্রতি লােকেরা অবাক চোখে চেয়ে থাকবে, লােকেরা নতুন নতুন সত্য উপলব্ধি করবে, দেহ মন এবং আত্মায় শক্তির বিকাশ ঘটবে। EdBen 285.2
ঈশ্বরের সন্তানদের অধ্যয়নের জন্য লিখিত বিশ্বের সমস্ত ধনাগার খুলে দেয়া হবে। বর্ণনাতীত আনন্দের সঙ্গে আমরা নিস্পাপ মানব সত্ত্বা আনন্দ এবং জ্ঞানের সঙ্গে যােগ দেব। আমরা যুগ-যুগ ব্যাপী যে সম্পদ অর্জন করেছি তা ঈশ্বরের হাতের কারুকার্য ধ্যান করার জন্য ব্যয় করব। চিরন্তন বৎসরগুলাে গৌরব প্রকাশ করবে। “আমাদের যাচার ও চিন্তার নিতান্ত অতিরিক্ত কর্ম” (ইফিষীয় ৩:২০) চিরকাল চলতে থাকবে, তা ঈশ্বরের আশির্বাদগুলােরই অংশ। EdBen 285.3
“তাহার দাসেরা তাঁহার আরাধনা করিবে।” প্রকাশিত বাক্য ২২:৩। পার্থিব জীবন স্বর্গীয় জীবনের সূচনা; পার্থিব শিক্ষা স্বর্গের নীতিমালার মধ্যে একটি প্রবর্তক বা ভূমিকা স্বরূপ; এখানের জীবন, কাজ সেখানের জীবন, কাজের একটি প্রশিক্ষণ। আমরা, এখন চরিত্র এবং পবিত্র সেবা কাজে যেমন, তা স্বর্গে যেমন হব তার একটি পূর্ব ছায়া মাত্র। EdBen 285.4
“মনুষ্যপুত্র পরিচর্যা পাইতে আইসেন নাই, কিন্তু পরিচর্যা করিতে...আসিয়াছেন।” মথি ২০:২৮। পৃথিবীতে খ্রীষ্টের কাজ, তার স্বর্গের কাজ, এবং এই পৃথিবীতে তাঁর সঙ্গে আমাদের কাজের পুরস্কার হবে ভাবী বিশ্বে তাঁর সঙ্গে কাজ করার মহত্তর শক্তি এবং প্রসারিত সুযােগ। EdBen 285.5
“অতএব তােমরা আমার সাক্ষী, ইহা সদাপ্রভু কহেন, আর আমিই ঈশ্বর।” যিশাইয় ৪৩:৩২। আমরা যুগ যুগ ব্যাপী তাইই হব। EdBen 286.1
কি কারণে যুগ যুগ ব্যাপী মহান সংঘর্ষ চলার অনুমতি দেয়া হয়েছিল? শয়তানকে কেন তার বিদ্রোহের কারণে তার অস্তিত্বের কাল কমিয়ে দেয়া হল না? এই কারণে, যেন নিখিল বিশ্ব মন্দের সঙ্গে আচরণে ন্যায় বিচার উপলব্ধি করতে পারে, যেন পাপ চিরন্তন সাজা পেতে পারে। পরিত্রাণ কল্পনায় উচ্চতা এবং প্রশস্ততা রয়েছে যা কেবল অনন্তকাল শেষ। করতে পারে না, কিন্তু যা দেখার জন্য দূতগণ বিস্ময়ে অবাক চোখে চেয়ে থাকে। কেবল সমস্ত সৃষ্ট সত্ত্বার মুক্তিপ্রাপ্তগণ, পাপের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানে; তারা, খ্রীষ্টের কাজ করেছে, এবং যা দূতগণ করতে পারেন নি, তারা খ্রীষ্টের দুঃখভােগের সহভাগী হয়েছে; তাদের কি পরিত্রাণ বিজ্ঞান সম্পর্কে সাক্ষ্য বহনের কিছুই থাকবে না—নিস্পাপ মানবগণের কাছে কি এর কোন মূল্যই হবে না? EdBen 286.2
আর এখন, “স্বর্গীয় স্থানস্থ আধিপত্য ও কর্তৃত্ব সকলকে ঈশ্বরের বহুবিধ প্রতা জ্ঞাত করা যায়। আর তিনি “আমাদিগকে তাঁহার সহিত স্বর্গীয় স্থানে বসাইলেন...যেন তিনি আগামী যুগ পর্যায়ে আপনার অনুপম অনুগ্রহ ধন প্রকাশ করেন।” ইফিষীয় ৩:১০; ২:৬,৭। EdBen 286.3
“আর তাঁহার মন্দিরে সকলই বলিতেছে, গৌরব” (গীতসংহিতা ২৯:৯) এবং পরিত্রাণ প্রাপ্তগণ যে গীত গান করবে তাদের অভিজ্ঞতার গীত-যা ঈশ্বরের মহিমা ঘােষণা করবে: “মহৎ ও আশ্চর্য তােমার ক্রিয়াসকল, হে প্রভু ঈশ্বর, সর্বশক্তিমান, ন্যায্য ও সত্য তােমার মার্গ সকল। হে জাতিগণের রাজন। হে প্রভু, কে না ভীত হইবে? তােমার নামের গৌরব কে না করিবে? কেননা একমাত্র তুমিই সাধু।” প্রকাশিত বাক্য ১৫:৩, ৪ । EdBen 286.4
এই স্থানে আমাদের পার্থিব জীবন যদিও পাপের ফলে সীমাবদ্ধ, তবুও সেবায় সর্বশ্রেষ্ঠ আনন্দ এবং সর্বোচ্চ শিক্ষা রয়েছে। আর ভবিষ্যৎ, পাপপূর্ণ মানবগােষ্ঠীর সীমিতাবস্থা দ্বারা বাধাহীন, তা একটি সেবা কাজ যেখানে আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ আনন্দ এবং সর্বোচ্চ শিক্ষা পাওয়া যাবে—সাক্ষ্য দান, এবং সাক্ষ্যদানে আমরা নতুন কিছু শিক্ষা অর্জন করি, “সেই নিগূঢ়তত্ত্বের গৌরব ধন কি...তাহা তােমাদের মধ্যবর্তী খ্রীষ্ট গৌরবের আশা।” কলসীয় ১:২৭। EdBen 286.5
“আমরা...কি হইব; তাহা এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয় নাই। আমরা জানি, তিনি যখন প্রকাশিত হইবেন, তখন আমরা তাঁহার সমরূপ হইব; কারণ তিনি যেমন আছেন, তাঁহাকে তেমনি দেখিতে পাইব।” ১ যােহন ৩:২। EdBen 287.1
অতঃপর তাঁর কাজের ফলে, খ্রীষ্ট এর ক্ষতিপূরণ লক্ষ্য করবেন। সেই মহা জনতা যা কেউই গণনা করতে পারে না, তাদেরকে আপন প্রতাপের সাক্ষাতে “নির্দোষ অবস্থায় সানন্দে উপস্থিত করা হবে (যিহূদা ২৪)- যার রক্ত আমাদিগকে মুক্ত করেছে এবং শিক্ষা প্রদান করেছে, তিনি “আপন প্রাণের শ্রম ফল দেখিবেন, তৃপ্ত হইবে।” যিশাইয় ৫৩:১১। EdBen 287.2