Go to full page →

২ - এদনের বিদ্যালয় EdBen 17

“ধন্য সেই ব্যক্তি যে প্রজ্ঞা পায়” হিতোপদেশ ৩:১৩ পদ

জগৎ সৃষ্টির পর প্রবর্তিত শিক্ষা পদ্ধতি ছিল পরবর্তী কালের মানুষের জন্য একটি আদর্শস্বরূপ। এই শিক্ষার নীতিমালার দৃষ্টান্তরূপে এদনে একটি আদর্শ বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছিল, আর এই এদনই ছিল। আমাদের আদি পিতা-মাতার বাসস্থান। এদন বাগানটি ছিল বিদ্যালয় কক্ষ, প্রকৃতি ছিল পাঠ্যপুস্তক, সৃষ্টিকর্তা নিজেই ছিলেন শিক্ষক, মানব পরিবারের পিতা-মাতা ছিলেন ছাত্র-ছাত্রী। EdBen 17.1

“ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি এবং গৌরবে” (১ করিন্থীয় ১১:৭) সৃষ্ট আদম ও হবা যে সহজাত প্রতিভা লাভ করেছিলেন, তা ছিল তাদের উচ্চ মর্যাদা লাভের যােগ্য। স্বাভাবিক সৌষ্ঠব, এবং মাধুর্যে পূর্ণ ও সাম্যমূর্তি, সুদর্শন অবয়ব, তাদের স্বাস্থ্যের উজ্জ্বল আভা এবং আনন্দ ও আশার দীপ্ত প্রদীপ, এই সব কিছুতে তাদের স্রষ্টার প্রতিমূর্তির বাহ্যিক সাদৃশ্য শােভা পাচ্ছিল । এই প্রতিমূর্তি যে কেবল দৈহিক প্রকৃতিতে প্রকাশিত হয়েছিল তা নয়, মন ও আত্মার প্রতিটি কর্মশক্তি স্রষ্টার মহিমা প্রতিবিম্বিত করেছে। মানসিক এবং আধ্যাত্মিক দানসমূহ দ্বারা সমৃদ্ধ আদম ও হবাকে “দূতগণ অপেক্ষা অল্পই নন করিয়া সৃষ্টি করা হইয়াছিল; (ইব্রীয় ২:৭), যেন তারা কেবল দৃশ্যমান বিস্ময়কর বস্তু সমূহ দর্শন করেন না, কিন্তু তারা যেন নৈতিক দায়িত্ব এবং কর্তব্য কি, তাও উপলব্ধি করতে পারেন। EdBen 17.2

“আর সদাপ্রভু ঈশ্বর পূর্বদিকে, এদনে, এক উদ্যান প্রস্তুত করিলেন, এবং সেই স্থানে আপনার নির্মিত ঐ মনুষ্যকে রাখিলেন। আর সদাপ্রভু ঈশ্বর ভূমি হইতে সর্বজাতীয় সুদৃশ্য ও সুখাদ্য-দায়ক বৃক্ষ, এবং সেই উদ্যানের মধ্যস্থানে জীবনবৃক্ষ ও সদস-জ্ঞানদায়ক বৃক্ষ, উৎপন্ন করিলেন।” আদিপুস্তক ২:৮, ৯। পাপের কলুষ দ্বারা অক্ষত ও অস্পৃষ্ট এই সৌন্দর্যের মধ্যে, আমাদের প্রথম পিতামাতা শিক্ষা অর্জন করেছিলেন। EdBen 17.3

তাঁর সন্তানদের জন্য তাঁর আগ্রহের কারণে, আমাদের স্বর্গস্থ পিতা স্বয়ং তাদের শিক্ষা পরিচালনা করেন। প্রায়ই তার বার্তাবাহক, একমাত্র দূতগণ তাদের সঙ্গে দেখা করতেন, আর তাদের কাছ থকে তারা পরামর্শ ও শিক্ষা গ্রহণ করতেন। প্রায়ই যখন তারা দিনের শান্ত ও শীতল পরিবেশে উদ্যানের মধ্য দিয়ে ঘুরে বেড়াতেন, তখন তারা ঈশ্বরের স্বর শুনতেন, এবং তারা নিত্যজীবি ঈশ্বরের সঙ্গে সামনা-সামনিভাবে কথা বলতেন। তাদের জন্য তার সংকল্প ছিল “মঙ্গলের সংকল্প, অমঙ্গলের নয়।” যিরমিয় ২৯:১১। তাঁর প্রতিটি উদ্দেশ্য ছিল তাদের সর্বোচ্চ মঙ্গল সাধন করা। EdBen 18.1

আদম ও হবাকে উদ্যানের তত্ত্বাবধায়ক, “কৃষিকর্ম ও রক্ষার্থে সেখানে রাখা হয়েছিল। আদিপুস্তক ২:১৫। যদিও বিশ্বের মালিক তাদের প্রচুর ধন-সম্পদ দিয়েছিলেন, তবুও তারা অলস হয়ে বসে থাকতে পারতেন না। আশীর্বাদস্বরূপ তাদের জন্য কার্যকর পেশার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যেন তাদের দেহ শক্তিশালী হতে পারে, তারা মনের প্রসারতা লাভ করতে পারেন, এবং তাদের চরিত্রের বিকাশ লাভ হতে পারে। EdBen 18.2

প্রকৃতিরূপ পুস্তকখানি তাদের সামনে জীবন্ত শিক্ষামালা ছড়িয়ে রেখেছিল, এবং তা তাদের জন্য শিক্ষা ও আনন্দের এক অফুরন্ত এবং শ্রান্তিহীন উৎসের জোগান দিয়েছিল। গাছ-পালার প্রতিটি পাতায়, পাহাড়ের প্রতিটি পাথর টুকরােয়, প্রতিটি উজ্জ্বল তারায়, পৃথিবী ও সুমদ্রে এবং আকাশে ঈশ্বরের নাম লেখা ছিল। প্রাণবিশিষ্ট এবং প্রাণহীন দৃষ্টবস্তু পাতা, ফুল ও গাছ, এবং প্রতিটি জীবন্ত সরীসৃপ, কুমির ও হাঙ্গর হতে। আরম্ভ করে সূর্যের রশ্মিমালার মধ্যে ধূলিকণা--এদনে বসবাসকারীগণ সকলে প্রত্যেকটির নিকট হতে জীবনের রহস্য সংগ্রহ করছে। স্বর্গে ঈশ্বরের গৌরব, অগণিত পৃথিবীর সুনিয়ন্ত্রিত ভাবে ঘুর্ণায়মান অবস্থা, “মেঘমালার দোলন” (ইয়ােব ৩৭:১৬), আলাে এবং শব্দের রহস্য, দিন ও রাত--এর সবই ছিল পৃথিবীর প্রথম বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি EdBen 18.3

প্রকৃতির নিয়ম এবং ক্রিয়াপ্রণালী এবং সত্যের মহান নীতিমালা, যা আত্মিক বিশ্বকে শাসন করে, তা সমগ্র বিশ্বের অসীম স্রষ্টার মাধ্যমে তাদের মনের দুয়ারে উন্মুক্ত করা হয়েছিল। “ঈশ্বরের গৌরবের জ্ঞান-দীপ্তিতে” (২ করিন্থীয় ৪:৬), তাদের মানসিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি সমূহের ক্রমঃবিকাশ ঘটল, এবং তারা তাদের পবিত্র অস্তিত্বের পরম আনন্দ উপভােগ করল। EdBen 18.4

ঈশ্বরের হাত দ্বারা সৃষ্ট কেবল এদন বাগানই নয়, কিন্তু সব সৃষ্টিই ছিল চমৎকার। পাপের কলঙ্ক, মৃত্যুর ছায়া সৃষ্টির সৌন্দর্যকে বিকৃত করে নি। “আকাশমণ্ডল তার প্রভায় সমাচ্ছন্ন, সমস্ত পৃথিবী তাহার প্রশংসায় পরিপূর্ণ ছিল। “তকালে প্রভাতীয় নক্ষত্রগণ একসঙ্গে আনন্দরব করিল, ঈশ্বরের পুত্রগণ সকলে জয়ধ্বনি করিল।” হবককুক ৩:৩; ইয়ােব ৩৮:৭। এভাবে পৃথিবী তাঁর একটি উপযুক্ত প্রতীকচিহ্ন, যিনি “দয়াতে ও সত্যে মহান্‌” (যাত্রা ৩৪:৬); যারা তার প্রতিমূর্তিতে নির্মিত তাদের জন্য অধ্যয়নের উপযুক্ত বিষয়। ঈশ্বর সমুদয় জগতের জন্য যে বাসনা করেছিলেন, এদন উদ্যানটি তারই প্রতিনিধিত্ব করেছিল, এবং এটিই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য, যেন মানব পরিবারে সংখ্যা যখন বাড়বে, তারা তাদের জন্য ঘর, এবং বিদ্যালয় তৈরি করবে যেখানে ঈশ্বরের বাক্য এবং কাজ পর্যালােচনা করা হবে, এবং যেখানে শিক্ষার্থীগণ যুগ যুগ ব্যাপী ঈশ্বরের মহিমার জ্ঞান প্রতিফলিত করবে। EdBen 19.1