Go to full page →

২৯শ অধ্যায়—সতর্ক হওয়ার জন্য অনুনয় AABen 249

ইফিষে দ্বিতীয়বার অবস্থানকালে পৌল করিন্থীয় মন্ডলীর প্রতি তাঁরপ্রথম পত্রটি রচনা করেন। করিন্থীয় মন্ডলীর বিশ্বাসীদের মত আর কারও জন্যতিনি এতটা গভীর আকুলতা ও মমতা প্রকাশ করেননি। প্রায় দেড় বছর ধরেতিনি তাদের মধ্যে পরিচর্যা কাজ করেছেন, ক্রূশবিদ্ধ ও পুনরুত্থিত ত্রাণকর্তাকেতাদের পরিত্রাণ লাভের একমাত্র পথ হিসেবে শিক্ষা দিয়েছেন এবং তাঁরঅনুগ্রহের রূপান্তরকারী শক্তির উপরে পরিপূর্ণভাবে নির্ভর করার জন্যবিশেষভাবে অনুনয় করেছেন। যারা নিজেদেরকে খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হিসেবে পরিচয়দিয়েছেন তাদেরকে মন্ডলীর সহভাগিতায় গ্রহণ করার আগে তিনি তাদেরকেএকজন খ্রীষ্টিয়ান বিশ্বাসী হিসেবে সমস্ত অধিকার ও দায়িত্বের বিষয়েবিশেষভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন এবং তাদের বাপ্তিস্মের প্রতিজ্ঞার প্রতি বিশ্বস্তথাকার জন্য আন্তরিকভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন। AABen 249.1

পৌল খুব ভাল করেই জানতেন প্রতিটি আত্মাকে মন্দতার শক্তিরসাথে লড়াই করতেই হবে, যা সব সময় মানুষকে প্রলোভিত ও পথচ্যুত করারচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে যারা নতুন বিশ্বাসী তাদেরকে তিনি প্রতিনিয়তআরও শক্তিশালী করে তোলার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তিনিতাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন যেন তারা ঈশ্বরের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে;কারণ তিনি জানতেন যখন আত্মায় নিজেকে সমর্পণ করা সম্ভব হয় না তখনপাপ সেই আত্মাকে ত্যাগ করে না, জৈবিক প্রবৃত্তি আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেএবং প্রলোভনের কারণে বিবেক দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। AABen 249.2

আত্মসমর্পণ অবশ্যই পরিপূর্ণ হতে হবে। প্রত্যেকটি দুর্বল, সন্দেহগ্রস্তও বিরোধিতার মুখোমুখি আত্মা যখন প্রভুর কাছে নিজেকে সম্পূর্ণ সমর্পণ করেতখন প্রভু তাকে এমন এক সহায় দেন যার সাহায্যে সেই আত্মা সমস্ত বাধাঅতিক্রম করতে সক্ষম হয়। স্বর্গ তার নিকটবর্তী এবং প্রত্যেকটি পরীক্ষায় ওপ্রয়োজনের সময় স্বর্গদূতদের সহায় ও দয়া তার সাথে রয়েছে। AABen 249.3

করিন্থ মন্ডলীর সদস্যরা অত্যন্ত সম্মোহনী পৌত্তলিকতা ও ইন্দ্রিয়পরায়ণতায় বেষ্টিত একটি পরিবেশে বাস করত। প্রেরিত পৌল যখন তাদের সাথে ছিলেন সে সময় এই পার্থিব প্রভাবগুলো তাদের উপরে খুব একটা বিস্তৃতি লাভ করতে পারেনি। পৌলের দৃঢ় বিশ্বাস, তাঁর ঐকান্তিক প্রার্থনা এবং সুস্পষ্ট নির্দেশনা, সর্বোপরি তাঁর ঈশ্বরভক্তির জীবন যাপন তাদেরকে পাপময় লালসায় ডুবে না গিয়ে খ্রীষ্টের জন্য নিজেকে নিজেকে অস্বীকার করতে সমর্থ করে তুলেছে। AABen 250.1

অবশ্য পৌলের প্রস্থানের পর এক প্রতিক‚ল অবস্থার উদ্ভব ঘটে। গমের ভেতরে শত্রুরা যে শ্যামাঘাসের বীজ বপন করে দিয়েছিল সেটি এখন তার মন্দ ফল ধরতে শুরু করেছে। এই সময়টি ছিল করিন্থীয় মন্ডলীর জন্য অত্যন্ত গুরুতর এক পরীক্ষার সময়। প্রেরিত পৌল আর তাদেরকে ঈশ্বরের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলার জন্য উৎসাহ উদ্দীপনা দিতে এবং তাদেরকে পার্থিব ভোগ লালসার আস্বাদ গ্রহণ করা থেকে দূরে রাখতে পারছিলেন না। যিনি তাদেরকে সব সময় খাঁটি ও নিষ্কলঙ্ক জীবন যাপনের জন্য পরামর্শ দিতেন তিনিই তখন আর তাদের সাথে ছিলেন না। যারা মন পরিবর্তন করে ও মন্দ স্বভাব ত্যাগ করে বিশ্বাসী হয়েছিল তাদের অনেকেই এই সুযোগে আবারও তাদের নোংরা পৌত্তলিক আচার অনুষ্ঠানে ফিরে গিয়েছিল। AABen 250.2

পরবর্তীতে পৌল সংক্ষেপে এই মন্ডলীর কাছে লিখেছিলেন যেন তারা “এমন সঙ্গ না নেয়” যারা তাদেরকে অনৈতিকতার পথে ঠেলে দেয়; কিন্তু অনেক বিশ্বাসীই প্রেরিতদের এই কথার ভুল ব্যাখ্যা করেছিল এবং তাঁর কথা ঘুরিয়ে ভিনড়বভাবে প্রকাশ করে তাঁর নির্দেশ অমান্য করার ব্যাপারে অজুহাত দাঁড় করিয়েছিল। AABen 250.3

মন্ডলী থেকে পৌলের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে বিভিন্ন ব্যাপারে তাঁর কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে যে গুরুতর পাপের উপস্থিতি বিরাজ করছিল সে ব্যাপারে চিঠিতে কিছুই বলা হয়নি। তবে প্রেরিত পৌল পবিত্র আত্মা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে অনুভব করতে পেরেছিলেন যে, মন্ডলীর প্রকৃত অবস্থা এখানে গোপন করা হয়েছে এবং এই চিঠিটি যারা লিখেছে যারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য তাঁর মুখ থেকে তাদের মনমত বক্তব্য শুনতে চাইছে। AABen 250.4

এমন সময় ইফিষীয় মন্ডলী থেকে কয়েকজন ব্যক্তি এলেন যারা ছিলেন করিন্থের একজন সম্ভ্রান্ত খ্রীষ্টবিশ্বাসী ক্লোয়ীর আত্মীয়। পৌল যখন তাদের কাছে কুশল জানতে চাইলেন তখন তারা বললেন করিন্থীয় মন্ডলীতে দলভেদ চলছে। আপল্লো সেখানে পরিদর্শনে থাকাকালীন যে মতদ্বৈততার সৃষ্টি হয়েছিল এখন তা অনেক গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভ্রান্ত শিক্ষকেরা মন্ডলীর সদস্যদেরকে পৌলের শিক্ষা ত্যাগ করার জন্য ভুল দিক নির্দেশনা দিচ্ছিল। সুসমাচারের মতবাদ ও শিক্ষাকে সম্পূর্ণ ভুল ও বিকৃত ব্যাখ্যা করা হচ্ছিল। গর্ব, পৌত্তলিকতা এবং ইন্দ্রিয়পরায়ণতা সেই সব মানুষের মধ্যে অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছিল যারা এক সময় ভক্তিপূর্ণ খ্রীষ্টিয় জীবন যাপন করেছেন। AABen 251.1

এই চিত্রটি উপস্থাপন করা হলে পর পৌল দেখতে পেলেন তাঁর ভয়টাই সত্যি হয়ে উঠেছে। কিন্তু তাই বলে তিনি একবারও এটা ভাবলেন না যে, করিন্থে তাঁর পরিচর্যা কাজ ব্যর্থ হয়েছে। “অনেক ক্লেশ ও মনোবেদনা” নিয়ে এবং “অনেক অশ্রæপাত করিতে করিতে” তিনি ঈশ্বরের কাছে পরামর্শ যাচ্ঞা করেছেন। তিনি তখনই করিন্থ মন্ডলী পরিদর্শন করতে পারলে খুব খুশি হতেন এবং সেটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হত। কিন্তু তিনি জানতেন যে, বিশ্বাসীরা এখন যে পর্যায়ে আছে তাতে করে তিনি নিজে সেখানে পরিচর্যা লিপ্ত হলে খুব একটা কাজে আসবে না। এ কারণে তিনি তীতকে পাঠালেন যেন তিনি সেখানে গিয়ে পরিচর্যা কাজের মধ্য দিয়ে পৌলের আগমনের জন্য প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পনড়ব করেন। এরপর সেখানে যারা নিজেদের অপূর্ব দীর্ঘসহিষ্ণু আত্মার পরিচয় দিয়েছেন তাদের প্রতি তাঁর আবেগঘন অনুভ‚তি পাশে সরিয়ে এবং ঈশ্বরের প্রতি নিজ আত্মা সমর্পণ করে প্রেরিত পৌল করিন্থ মন্ডলীকে তাঁর সমস্ত পত্রের মধ্যে অন্যতম সমৃদ্ধ, অনুপম শিক্ষামূলক ও শক্তিশালী একটি চিঠি লিখলেন। AABen 251.2

লক্ষ্যণীয় সুস্পষ্টতা সহকারে তিনি মন্ডলীকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রশেড়বর জবাব অনুসন্ধান করেছেন এবং বেশ কিছু মৌলিক নীতি বর্ণনা করেছেন, যা অনুসরণ করলে মন্ডলী আত্মিকভাবে আরও উচ্চতর পর্যায়ে উপনীত হতে সক্ষম হবে। তারা এক বিপর্যয়ের মধ্যে অবস্থান করছিল এবং এই গুরুতর সময়ে তাদের অন্তরকে স্পর্শ না করে তিনি থাকতে পারছিলেন না। বিশ্বস্ততার সাথে তিনি তাদের সমস্ত পাপের জন্য সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন ও অনুযোগ করেছেন। তিনি তাদেরকে আবারও খ্রীষ্টের প্রতি স্থির থাকার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাদের পূর্বে যে ভক্তি ছিল তা আবারও জাগিয়ে তোলার জন্য চেষ্টা করেছেন। AABen 251.3

করিন্থীয় বিশ্বাসীদের প্রতি প্রেরিত পৌলের অনুপম ভালবাসা প্রকাশ পায় মন্ডলীর প্রতি তাঁর আন্তরিক অভিবাদনের মধ্য দিয়ে। প্রতিমাপূজা থেকে মন ফিরিয়ে একমাত্র সত্য ঈশ্বরের আরাধনা ও সেবা করতে শুরু করার পর তাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল সে কথা তিনি তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। পবিত্র আত্মার যে দান তারা গ্রহণ করেছিল সে কথাও তিনি তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন এবং দেখিয়েছেন যে, খ্রীষ্টের খাঁটিত্ব ও পবিত্রতা অর্জন করা অবধি তাদের খ্রীষ্টিয় জীবনে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ ছিল। “কেননা তাঁহাতেই তোমরা সর্ববিষয়ে, সর্ববিধ বাক্যে ও সর্ববিধ জ্ঞানে ধনবান হইয়াছ,” তিনি লিখেছেন, “এইরূপে খ্রীষ্টের সাক্ষ্য তোমাদের মধ্যে স্থিরীকৃত হইয়াছে। এই জন্য তোমরা কোন বরে পিছাইয়া পড় নাই; আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের প্রকাশের অপেক্ষা করিতেছ; আর তিনি তোমাদিগকে শেষ পর্যন্ত স্থির রাখিবেন, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দিনে অনিন্দনীয় রাখিবেন।” AABen 252.1

পৌল খুব পরিষ্কারভাবে করিন্থ মন্ডলীতে উদ্ভূত হওয়া মতবিরোধের কথা বলেছেন এবং মন্ডলীর সমস্ত সদস্যকে বিবাদে লিপ্ত না হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। “হে ভ্রাতৃগণ,” তিনি লিখেছেন, “আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে আমি তোমাদিগকে বিনয় করিয়া বলি, তোমরা সকলে একই কথা বল, তোমাদের মধ্যে দলাদলি না হউক, কিন্তু এক মনে ও এক বিচারে পরিপক্ক হও।” AABen 252.2

প্রেরিত পৌল তাদেরকে বলেছেন কীভাবে এবং কার মাধ্যমে তিনি মন্ডলীতে দলভেদের কথা জানতে পারলেন। “হে আমার ভ্রাতৃগণ, আমি ক্লোয়ীর পরিজনের দ্বারা তোমাদের বিষয়ে সংবাদ পাইয়াছি যে, তোমাদের মধ্যে বিবাদ আছে।” AABen 252.3

পৌল ছিলেন পবিত্র আত্মায় অনুপ্রাণিত একজন প্রেরিত। তিনি অন্যদেরকে যে সত্য শিক্ষা দিয়েছেন তা তিনি “প্রত্যাদেশের” মধ্য দিয়ে পেয়েছেন; তথাপি প্রভু সব সময় যে তাঁর লোকদের অবস্থার কথা সরাসরি তাঁর কাছে প্রকাশ করেছেন তা নয়। এই ঘটনায় যারা করিন্থীয় মন্ডলীর উনড়বতির ব্যাপারে চিন্তা করতেন এবং যারা সেখানে মন্দতার বিচরণ দেখেছেন তারাই প্রেরিতের সামনে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন এবং তিনি যে স্বর্গীয় প্রত্যাদেশ আগেই লাভ করেছিলেন তাতে আরও বলীয়ান হয়ে এখন তিনি এই উনড়বতির মূল অবস্থা যাচাই করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রভু তাঁকে এই বিশেষ সময়ের ব্যাপারে প্রত্যক্ষ প্রত্যাদেশ না দেওয়া সত্তে¡ও যারা সে সময় প্রকৃত আলোর খোঁজ করছিল তারা তাঁর বক্তব্যকে খ্রীষ্টের ইচ্ছা বলে মেনে নিয়েছিলেন। প্রভু তাঁকে সেই সকল প্রতিবন্ধকতা ও বিপদগুলো দেখিয়েছিলেন যা মন্ডলীতে উদ্ভূত হতে পারে এবং মন্দতার উত্তরণের পাশাপাশি প্রেরিতও সেগুলোর তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তিনি মন্ডলীর সুরক্ষা বিধানের জন্য অবস্থান নিলেন। যে সকল আত্মা একতায় ঈশ্বরের কাছে সমর্পিত হওয়ার কথা তাদের উপরে তিনি লক্ষ্য রাখতে শুরু করলেন। কাজেই তাদের মধ্যে যে বিবাদ ও বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে সে ব্যাপারে আসা সংবাদে গুরুত্ব দেওয়াটা কি তার জন্য অস্বাভাবিক কিছু? নিঃসন্দেহে তিনি মন্ডলীর প্রতি লিখতে গিয়ে যেভাবে তাদেরকে সংশোধন ও শাসন করতে চেয়েছেন তা অবশ্যই তিনি পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণাতেই করেছেন, যা তিনি অন্য যে কোন পত্র লেখার ক্ষেত্রেও করেছেন। AABen 252.4

প্রেরিত পৌল সেই সব ভ্রান্ত শিক্ষকদের ব্যাপারে কোন কথা বলেননি, যারা তাঁর পরিশ্রমের ফল বিনষ্ট করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল। মন্ডলীতে অন্ধকারাচ্ছনড়বতা ও বিভেদের কারণে তিনি তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে তিরস্কার করলেন, পাছে সকলেই না সত্য থেকে সম্পূর্ণ দূরে সরে যায়। তিনি তাঁর নিজের কাজের কথা বলতে গিয়ে শুরুতে বলেছেন সেই “বিজ্ঞ নির্মাতার” কথা, যার নির্মিত ভিত্তির উপরে অন্যরা নির্মাণ করেছে। কিন্তু তিনি সরাসরি নিজের জ্ঞানের কথা বলেননি, বরং স্বীকার করেছেন কেবলামাত্র ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞাই তাঁকে ঈশ্বরের কাছে সন্তোষজনক উপায়ে সত্যকে প্রকাশ করার জন্য সমর্থ করে তুলেছে। খ্রীষ্টের সাথে যুক্ত হয়ে সকল শিক্ষকের মহান শিক্ষক পৌল মানুষকে ঈশ্বরীয় জ্ঞানের পাঠ শিক্ষা দিয়েছেন, যা সকল শ্রেণীর, সকল যুগের, সকল স্থানের ও সকল অবস্থায় থাকা মানুষের জন্য অপরিহার্য। AABen 253.1

করিন্থীয় বিশ্বাসীদের মধ্যে যে সকল মন্দতা উদ্ভূত হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর মন্দতা ছিল চরম নিকৃষ্ট কিছু পৌত্তলিক আচার অনুষ্ঠান মন্ডলীতে ফিরিয়ে আনা। তাদের মধ্যে একজন ধর্মান্তরিত বিশ্বাসী এতটাই অধঃপতিত হয়েছিল যে, পরজাতীয় বিশ্বের সবচেয়ে লঘু নৈতিকতা মানদন্ডকেও তার অপকর্ম লঙ্ঘন করে। প্রেরিত পৌল মন্ডলীকে অনুনয় করেছেন যেন তারা তাদের মধ্য থেকে “সেই দুষ্টকে” বের করে দেয়। “তোমরা কি জান না যে,” তিনি তাদেরকে তিরস্কার করে বলেছেন, “অল্প তাড়ী সুজির সমস্ত তাল তাড়ীময় করিয়া ফেলে। পুরাতন তাড়ী বাহির করিয়া দেও; যেন তোমরা নূতন তাল হইতে পার— তোমরা ত তাড়ীশূন্য।” AABen 253.2

মন্ডলীতে উদ্ভূত হওয়া আরেকটি গুরুতর মন্দতা ছিল বিশ্বাসী ভাইদের একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে মামলা করা। বিশ্বাসীদের মধ্যে যেন বিবাদ নিরসন করা যায় সেজন্য আগে থেকেই প্রচুর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। খ্রীষ্ট স্বয়ং বিভিন্নভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, কীভাবে এ ধরনের পরিস্থিতি সমাধান করতে হবে। “আর যদি তোমার ভ্রাতা তোমার নিকটে কোন অপরাধ করে,” ত্রাণকর্তা আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, “তবে যাও, যখন কেবল তোমাতে ও তাহাতে থাক, তখন সেই দোষ তাহাকে বুঝাইয়া দেও। যদি সে তোমার কথা শুনে, তুমি আপন ভ্রাতাকে লাভ করিলে। কিন্তু যদি সে না শুনে, তবে আর দুই এক ব্যক্তিকে সঙ্গে লইয়া যাও, যেন ‘‘দুই কিংবা তিন জন সাক্ষীর মুখে সমস্ত কথা নিষ্পন্ন হয়।” আর যদি সে তাহাদের কথা অমান্য করে, মন্ডলীকে বল; আর যদি মন্ডলীর কথাও অমান্য করে, সে তোমার নিকটে পরজাতীয় লোকের ও করগ্রাহীর তুল্য হউক। আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, তোমরা পৃথিবীতে যাহা কিছু বদ্ধ করিবে, তাহা স¦র্গে বদ্ধ হইবে; এবং পৃথিবীতে যাহা কিছু মুক্ত করিবে, তাহা স¦র্গে মুক্ত হইবে।” মথি ১৮:১৫—১৮। AABen 254.1

করিন্থীয় যে সকল বিশ্বাসী এই সরল নির্দেশনা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছিল তাদেরকে পৌল স্পষ্ট ভাষায় ভর্ৎসনা করেছেন। “তোমাদের মধ্যে কি কাহারও সাহস হয় যে,” তিনি জিজ্ঞেস করেছেন, “আর এক জনের বিরুদ্ধে কোন কথা থাকিলে তাহার বিচার পবিত্রগণের কাছে লইয়া না গিয়া অধার্মিকদের কাছে লইয়া যায়? অথবা তোমরা কি জান না যে, পবিত্রগণ জগতের বিচার করিবেন? আর জগতের বিচার যদি তোমাদের দ্বারা হয়, তবে তোমরা কি যৎসামান্য বিষয়ের বিচার করিবার অযোগ্য? তোমরা কি জান না যে, আমরা দূতগণের বিচার করিব? ইহজীবন সংক্রান্ত বিষয় ত সামান্য কথা। অতএব তোমাদের দ্বারা যদি ইহজীবন সংক্রান্ত বিষয়ের বিচার হয়, তবে মন্ডলীতে যাহারা কিছুরই মধ্যে গণ্য নয়, তাহাদিগকেই কি বিচারে বসাইয়া থাক? আমি তোমাদের লজ্জার নিমিত্ত এই কথা কহিতেছি। এ কেমন? তোমাদের মধ্যে কি এমন জ্ঞানবান এক জনও নাই যে, ভ্রাতায় ভ্রাতায় বিবাদ হইলে তাহার নি®পত্তি করিয়া দিতে পারে? কিন্তু ভ্রাতার সহিত ভ্রাতা বিচার—স্থানে বিবাদ করে, তাহা আবার অবিশ্বাসীদের কাছে। তোমরা যে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিচার চাও, ইহাতে তোমাদের বিশেষ ক্ষতি হইতেছে। বরং অন্যায় সহ্য কর না কেন? . . . কিন্তু তোমরাই অন্যায় করিতেছ, বঞ্চনা করিতেছ, আর তাহা ভ্রাতৃগণের প্রতিই করিতেছ। অথবা তোমরা কি জান না যে, অধার্মিকেরা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না?” AABen 254.2

শয়তান সব সময় ঈশ্বরের লোকদের মধ্যে অবিশ্বাস, দূরত্ব ও ক্রোধ তৈরি করতে চায়। অনেক সময় আমরা এই ভেবে প্রবঞ্চিত হই যে, আমাদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, এমনকি এ ধরনের কোন অনুভ‚তির পেছনে যুক্তি না থাকলেও। যারা খ্রীষ্ট ও তাঁর ইচ্ছার চেয়েও নিজেকে বেশি ভালবাসে তারা নিজেদের স্বার্থকে সবার আগে প্রাধান্য দেয় এবং সেই স্বার্থসিদ্ধির জন্য তারা যে কোন পদক্ষেপ নিতেও পিছপা হয় না। এমনকি যারা বিবেকবান খ্রীষ্টিয়ান হিসেবে পরিচিত তারাও নিজেদের গর্ব ও আমিত্বের কারণে যারা ভুল পথে চলছে তাদের কাছে গিয়ে সরাসরি কথা বলেন না, যেন খ্রীষ্টের আত্মায় পূর্ণ হয়ে তাদের সাথে কথা বলা যায় এবং তাদের সাথে একত্রে পরস্পরের জন্য প্রার্থনা করা যায়। যখন তারা নিজেদেরকে বিশ্বাসী ভাইদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত বলে ভাবেন তখন তারা ত্রাণকর্তার নির্দেশিত পথ অনুসরণ না করে আইনের আশ্রয় নেওয়ার চিন্তা করেন। AABen 255.1

খ্রীষ্টিয়ানদের কখনোই মন্ডলীর সদস্যের সাথে তৈরি হওয়া কোন জটিলতা বা বিবাদ নিরসনের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের শরণাপনড়ব হওয়া উচিত নয়। এ ধরনের বিবাদ খ্রীষ্টের নির্দেশনা অনুসারে নিজেদের মধ্যে বা মন্ডলীর হস্তক্ষেপে মিটিয়ে ফেলাই ভাল। যদিও অনেকের প্রতি অবিচার করা হতে পারে, তথাপি নম্র ও বিনয়ী যীশুর অনুসারীরা “বঞ্চিত” হবেন, তথাপি তার মন্ডলীর বিশ্বাসী ভাইয়ের পাপ সারা পৃথিবীর সামনে প্রকাশ করবেন না। AABen 255.2

বিশ্বাসী ভাইদের মধ্যে আইনি সংঘাত খ্রীষ্টিয় সত্যকে অবমাননা করে। যে সকল খ্রীষ্টিয়ান একে অপরের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেন তারা মন্ডলীকে বিপক্ষের কাছে হাসির পাত্র করে তোলেন এবং অন্ধকারের শক্তিকে বিজয়ী করে তোলেন। তারা খ্রীষ্টের ক্ষতকে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করেন এবং তাঁকে লাঞ্ছিত করেন। মন্ডলীর কর্তৃত্ব অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে তারা ঈশ্বরের প্রতি তাদের অবজ্ঞা প্রদর্শন করেন, যিনি মন্ডলীকে শাসনের কর্তৃত্ব দান করেছেন। AABen 255.3

করিন্থীয়দের কাছে লেখা এই পত্রে পৌল দেখাতে চেয়েছেন যে, খ্রীষ্টের শক্তি তাদেরকে মন্দতা থেকে দূরে রাখে। তিনি জানতেন যে, তারা যদি এই পরিস্থিতি সমাধানের জন্য চেষ্টা করেন তাহলে সর্বশক্তিমানই তাদেরকে শক্তি যোগাবেন। তাদেরকে পাপের শৃঙ্খল ছিড়ে বেরিয়ে আসার জন্য এবং প্রভুর প্রতি ভয় রেখে পবিত্রতা ও শুদ্ধতায় জীবন যাপন করার জন্য পৌল তাদের জীবনে তাঁর দাবীর কথা স্মরণ করেছেন, যাঁর কাছে তারা মন পরিবর্তনের সময় নিজেদেরকে সম্পূর্ণভাবে সমর্পণ করেছিলেন। “তোমরা খ্রীষ্টের,” তিনি বলেছেন, “তোমরা নিজের নও, কারণ মূল্য দ্বারা ক্রীত হইয়াছ। অতএব তোমাদের দেহে ঈশ্বরের গৌরব কর।” AABen 256.1

প্রেরিত পৌল স্পষ্টভাবে দেখিয়েছেন পবিত্রতা ও শুদ্ধতায় পূর্ণ একটি জীবন থেকে পৌত্তলিকতায় পূর্ণ একটি জীবনে প্রবেশ করার ফল কেমন হতে পারে। “ভ্রান্ত হইও না,” তিনি লিকেছেন; “যাহারা ব্যভিচারী কি প্রতিমাপূজক কি পারদারিক কি স্ত্রীবৎ আচারী কি পুঙ্গামী, কি চোর কি লোভী কি মাতাল কি কট‚ভাষী কি পরধনগ্রাহী, তাহারা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না।” তিনি তাদেরকে অনুনয় জানিয়েছেন যেন তারা তাদের নীচ বাসনা ও কুরুচি ত্যাগ করে। “তোমরা কি জান যে,” তিনি জিজ্ঞেস করেছেন, “তোমাদের দেহ পবিত্র আত্মার মন্দির, যিনি তোমাদের অন্তরে থাকেন, যাঁহাকে তোমরা ঈশ্বর হইতে প্রাপ্ত হইয়াছ?” AABen 256.2

পৌল প্রভুর কাছ থেকে অত্যন্ত জ্ঞানগর্ভ প্রজ্ঞা লাভ করেছিলেন এবং তাঁর জীবনের মধ্য দিয়ে এক দুর্লভ জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়, যা তাঁর অন্তর্দৃষ্টিকে করেছিল তীক্ষ্ণ এবং হৃদয়কে করেছিল সমবেদনায় পূর্ণ। উপরন্তু অন্যদের সংস্পর্শে গিয়ে তিনি তাদেরকেও এক উচ্চতর জীবনের জন্য আকাঙ্খী হতে উৎসাহিত করে তুলতেন। করিন্থীয় বিশ্বাসীদের জন্য তাঁর ভালবাসা ছিল অতুলনীয়। তিনি চেয়েছিলেন তাদের ভেতরে যেন এক খাঁটি পবিত্রতা ও ভক্তির চিহ্ন দেখা যায় যার মধ্য দিয়ে তারা নিজেদেরকে সমস্ত প্রলোভন থেকে রক্ষা করবে। তিনি জানতেন যে, খ্রীষ্টিয় যাত্রাপথের প্রত্যেকটি পদক্ষেপ শয়তানের সমাজগৃহ দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হবে এবং তাদেরকে প্রতিদিনই নিত্যনতুন বিঘেড়বর সাথে লড়াই করতে হবে। তাদেরকে ছদ্মবেশী শত্রুর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে, পুরাতন ও মানবীয় স্বভাবজাত অভ্যাসকে দূরে সরিয়ে দিতে হবে এবং সব সময় প্রার্থনায় জাগ্রত থাকতে হবে। পৌল জানতেন যে, শুধুমাত্র আরও বেশি করে প্রার্থনা ও সব সময় সতর্ক থাকার মধ্য দিয়ে উচ্চতর খ্রীষ্টিয় জীবনে প্রবেশ করা সম্ভব এবং এই শিক্ষাটিই তিনি তাদের অন্তরে গেঁথে দিতে চেয়েছেন। কিন্তু তিনি এও জানতেন যে, খ্রীষ্টের ক্রুশারোপণের কারণে প্রত্যেক বিশ্বাসীই আত্মা জয়ের ক্ষমতা লাভ করেছেন এবং ঈশ্বর তাদেরকে এই শক্তি দিয়েছেন যেন তারা শয়তানের সমস্ত প্রলোভন প্রতিহত করতে পারেন। ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসকে বর্ম হিসেবে পরিধান করে এবং তাঁর বাক্যকে হাতিয়ার হিসেবে ধরে তারা এমন এক শক্তিতে পূর্ণ হবেন যা তাদেরকে শত্রুর প্রত্যেকটি আক্রমণ নিমিষে প্রতিহত করার জন্য সক্ষম করে তুলবে। AABen 256.3

করিন্থীয় বিশ্বাসীদের ঈশ্বরীয় জ্ঞানের এক নিগূঢ় অভিজ্ঞতা লাভের প্রয়োজন ছিল। তাঁর গৌরব দর্শন করা এবং পুরাতন স্বভাব সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করা বলতে কী বোঝায় সেটা তারা পুরোপুরি জানতেন না। তারা কেবল প্রত্যুষের প্রথম কিরণের মত করে এই মহিমাকে দেখেছেন। পৌলের আকাঙ্ক্ষা ছিল তাদেরকে ঈশ্বরের পূর্ণ মহিমা দেখানো, যেন তারা বুঝতে পারে কাকে অনুসরণ করে তারা পথ চলছে এবং এতে করে তারা যেন প্রত্যুষেই যথাযথভাবে প্রস্তুত হয়ে মধ্যাহ্নে সুসমাচারীয় বিশ্বাসের পরিপূর্ণতা অর্জনে একনিষ্ঠভাবে অগ্রসর হয়। AABen 257.1

দ্রুফ খ্রীষ্ট ও শুভ্র থেকে শুভ্রতর পরিচ্ছদ পরিধান পূর্বক দ্বিতীয়বার আগমন করবেন, যেমন লেখা আছে, “আর তাঁহার বস্ত্র উজ্জ্বল, এবং অতিশয় শুভ্রবর্ণ হইল, পৃথিবীস্থ কোন রজক সেইরূপ শুভ্রবর্ণ করিতে পারে না।” মার্ক ৯ঃ৩। তিনি নিজ মহিমায় আসবেন, এবং তাঁর পিতার গৌরবে এবং সমস্ত স্বর্গীয় বাহিনী বা দূতগণ তাঁর আগমনের সঙ্গী হবেন, যখন তিনি দ্বিতীয়বার আসবেন। AABen 257.2

তাঁর শিষ্যদের কাছে খ্রীষ্টের প্রতিজ্ঞা এভাবেই পূর্ণতা লাভ করবে, “তখন পুনর্বার আসিব, এবং আমার নিকটে তোমাদিগকে লইয়া যাইব।” যোহন ১৪ঃ৩। যারা তাঁকে প্রেম করেছেন ও তাঁর জন্য অপেক্ষা করেছেন, তিনি তাদের মস্তকে মহিমা ও সম্মান ও অমরতার মুকুট পড়াবেন। যারা খ্রীষ্টে মরেছে অর্থাৎ মৃত ধার্মিকরা প্রথমে কবর হতে উঠে আসবেন, আর জীবিত ধার্মিকরা রূপান্তরিত হয়ে তাদের সঙ্গে একত্রে আকাশে প্রভুর সহিত মিলিত হওয়ার জন্য নীত হবেন। তারা যীশুর কণ্ঠস্বর শুনতে পাবেন, এ কণ্ঠস্বরটি এতই মধুর যে কোন মরণশীল কর্ণ কোন দিন শুনেন নি, তিনি বলবেন, তোমাদের সংগ্রাম সমাপ্ত হর। “আইস, আমার পিতার আশীর্বাদ—পাত্রেরা, জগতের পত্তনাধি যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করা গিয়াছে, তাহার অধিকারী হও।” মথি ২৫ঃ৩৪ AABen 257.3

ভালই, শিষ্যরা তাদের প্রভুর প্রত্যাবর্তনের আশায় উল্লাসিত হওক। AABen 258.1