Go to full page →

৪৯ অধ্যায়—পৌলের শেষ পত্র AABen 418

কৈসরের বিচার কক্ষ থেকে পৌল কারাগারে তার ক্ষুদ্র প্রকষ্ঠে ফিরে এসে বুঝতে পারলেন যে তিনি তার নিজের জন্য খুব অল্প সময় লাভ করেছেন। তিনি এ কথা জানতেন যে তার শত্রুরা তার মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কোন অবস্থাতেই বিশ্রাম গ্রহণ করবে না। কিন্তু তিনি একথাও জানতেন যে একটা সময় আসবে যখন সত্য বিজয় লাভ করবে। বিশাল জনতার সামনে ত্রানকর্তার ক্রুশীয় মৃত্যু এবং পুনরুত্থানের কথা প্রচার করার সময় তারা মন দিয়ে তার কথা শুনছিল, আর এটি ছিল একটি বিজয়। ঐ দিন একটি কাজ আরম্ভ হয়েছিল, যা বর্ধিত এবং শক্তিশালী হচ্ছিল এবং যা নীরো এবং খ্রীষ্টের অন্য সমস্ত শত্রুরা ব্যাহত অথবা ধ্বংশ করতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিল। AABen 418.1

দিনের পর দিন কারাগারে তার ক্ষুদ্র স্যাতস্যাতে প্রকষ্ঠে অবস্থান করতে করতে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে নীরোর একটি কথায় কিংবা সামান্য মাথা নোয়ানোর ফলে তার জীবন উৎসর্গ হয়ে যেতে পারে, পৌল তার পক্ষে তীমথিয়কে পাঠাবার জন্য সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি তীমথিয়র উপর ইফিস মন্ডলীর পরিচর্যার ভার অর্পন করলেন আর এই কারনে পৌল যখন রোমের উদ্দেশ্যে তার শেষ যাত্রা করেছিলেন তখন তাকে পেছনে রেখে গিয়েছিলেন। পৌল এবং তীমথিয় পরস্পর অত্যন্ত গভীর এবং শক্তিশালী ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। খ্রীষ্ট ধর্মে দিক্ষীত হবার পর থেকে তীমথিয় কার্যে এবং কষ্টভোগের অংশী হয়েছিলেন। এবং এই দুই জনের মধ্যে বন্ধুত্ব সুদৃঢ়, গভীর এবং আরো পবিত্র হয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছিল, একজন এই সব কিছু যা একজন ছেলে তার পিতার কাছে প্রিয় এবং সম্মানীত হতে পারে, তীমথিয় বৃদ্ধ এবং কঠোর পরিশ্রমী প্রেরিতের কাছে তেমনই ছিলেন। এটি কিঞ্চিৎ আশ্চর্যের বিষয় যে, তার একাকিত্ব এবং নিঃসংগতায় তাকে দেখার জন্য আকাঙ্খী হলেন। AABen 418.2

এশিয়া মাইনর থেকে তীমথিয় রোমে উপস্থিত হবার পূর্বে অত্যন্ত অনুক’ল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কয়েক মাস অতিক্রান্ত হওয়া আবশ্যক ছিল। পৌল জানতেন যে তার জীবন সম্পূর্ণ অনিশ্চিত এবং তার এই আশংঙ্কা হল যে, তীমথিয় যখন তাকে দেখার জন্য আসবেন তখন অনেক দেরী হয়ে যাবে। এই যুবককে দেওয়ার জন্য তার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ এবং উপদেশ ছিল, যার উপর মহা দায়িত্ব অর্পিত ছিল; তিনি তাড়া দিয়েছিলেন যেন তীমথিয় অনতিবিলম্বে চলে আসেন যাতে তিনি তার মৃত্যুকালীন সময়ের সাক্ষ্য বলে যেতে পারেন, যা পরবর্তী সময়ে বলা সম্ভব হবে না। তার অন্তর তার সন্তানের জন্য ভালবাসায় ব্যাকুল হয়েছিল, যিনি সুসমাচার প্রচার এবং মন্ডলীর তত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন, পৌল তার পবিত্র দায়িত্বের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার গুরুত্ব সম্পর্কে তীমথিয়কে অনুপ্রণীত করতে চাইলেন। AABen 418.3

পৌল সম্ভাষন দিয়ে তার চিঠি শুরু করেন, “আমার প্রিয় বৎস তীমথিয়ের সমীপে, পিতা ঈশ্বর ও আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশু হইতে অনুগ্রহ দয়া ও শান্তি বর্তুক। ঈশ্বর যাহার আরাধনা আমি পিতৃপুরুষাবধি শুচি সংবেদে করিয়া থাকি, তাহার ধন্যবাদ করি যে, আমার বিনতীতে সতত তোমাকে স্মরণ করিতেছি।” AABen 419.1

এরপর প্রেরিত বিশ্বাসে অটল থাকার আবশ্যকতা সম্পর্কে তীমথিয়কে অনুপ্রাণিত করলেন, “এই কারণ তোমাকে স্মরণ করাইয়া দিতেছি যে, ” তিনি লিখেছেন, “আমার হস্তারর্পণ দ্বারা ঈশ্বরের যে অনুগ্রহ দান তোমাতে আছে তাহা উদ্দীপিত কর। কেননা ঈশ্বর আমাদিগকে ভীরুতার আত্মা দেন নাই, কিন্তু শক্তির, প্রেমের ও সুবুদ্ধির আত্মা দিয়েছেন। অতএব আমাদের প্রভুর সাক্ষ্যের বিষয়ে এবং তাহার বন্দী যে আমি, আমার বিষয়ে তুমি লজ্জিত হইও না, কিন্তু ঈশ্বরের শক্তি অনুসারে সুসমাচারের সহিত ক্লেশভোগ স্বীকার কর।।” পৌল তীমথিয়কে অনুনয় করে বলেছেন যেন তিনি যে “পবিত্র আহবানে আহব্বান” পেয়েছে তা স্বরণ করেন যাতে তিনি তার ক্ষমতা ঘোষনা করতে পারেন যিনি, “সুসমাচারের দ্বারা জীবন ও অক্ষয়তাকে দ্বিপ্তীত আনিয়েছেন,” তিনি উল্লেখ করেছেন “সেই সুসমাচারের সম্বন্ধে আমি প্রচারক, প্রেরিত ও গুরু বলিয়া নিযুক্ত হইয়াছি। এই কারণ এত দুঃখ ভোগও করিতেছি, তথাপি লজ্জিত হইও না: কেননা যাহাকে বিশ্বাস করিয়াছি, তাহাকে জানি, ও দৃঢ়রূপে প্রত্যয় করিতেছি যে, আমি তাহার কাছে যাহা গচ্ছিত রাখিয়াছি, তিনি সেই দিনের জন্য তাহা রক্ষা করিতে সমর্থ।” AABen 419.2

তার পরিচর্যা কার্যের দীর্ঘ সময়ের মধ্য দিয়ে পৌল কখনোই তার মুক্তিদাতার প্রতি তার আনুগত্যতা থেকে স্থলিত হননি। যে কোন স্থানে তিনি ছিলেন, ফরীসীদের ক্রুদ্ধ দৃষ্টির সামনে হোক কিংবা রোমীয় কতৃত্বকারীদের সামনেই হোক; লুস্তার ক্রোধোন্মত্ত জনতার সামনে অথবা ম্যাসিডোনিয়ার আবূকার কারাকুপে হোক; অথবা প্রায় ভেঙ্গে পরার উপক্রম হয়েছে এমন জাহাজের নাবিকদের সঙ্গে বাকবিতন্ডার সময় হোক কিংবা নীরোর সামনে একাকী দাড়িয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় হোক — কখনোই, কোন কারনেই তিনি লজ্জিত হন নি। তার খ্রীষ্টিয় জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য হল তিনি যার সেবা করেছেন, সেই নামের জন্য দুর্নাম বহন করা, আর এই কারনে কোন বাধা বা কোন অত্যাচার ও বষ্টভোগ তাকে এই অবস্থা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে সক্ষম হয় নি। AABen 419.3

“অতএব হে আমার বৎস,” পৌল আরও লিখেছেন, “তুমি খ্রীষ্ট যীশুতে স্থিত অনুগ্রহে বলবান হও। আর অনেক সাক্ষীর মধ্যে যে সকল বাক্য আমার কাছে শুনিয়াছ, সে সকল এমন বিশ্বস্ত লোকদেরকে সমর্পন কর, যাহারা অন্য অন্য লোকদেরও শিক্ষা দিতে সক্ষম হইবে। তুমি খ্রীষ্ট যীশুর উত্তম যোদ্ধার মত আমার সহিত ক্লেশভোগ স্বীকার কর।” AABen 420.1

একজন প্রকৃত সুসমাচার প্রচারক কঠোর পরিশ্রম কিংবা দায়িত্ব এড়িয়ে যাবে না। যে উৎস কখনো অকৃতকার্য হয় না, সেই উৎস থেকে যারা আন্তরিক ভাবে ঐশ্বরিক শক্তি লাভে আকাঙ্খী হয় তারা এমন শক্তি লাভ করে যা, পরীক্ষার সম্মুখিন হলে তার উপর জয় লাভ করার সামর্থ দান করতে সক্ষম এবং যে দায়িত্ব ঈশ্বর তার উপর অর্পন করেছে তা সম্পনড়ব করতে সক্ষম করে। অনুগ্রহের প্রকৃতি যা তিনি গ্রহণ করেছেন তা ঈশ্বরকে ও তার পুত্রকে জানার জন্য তার সামর্থকে বর্ধিত করে। তার অন্তর প্রভুর জন্য গ্রহনযোগ্য কাজ করার জন্য তীব্রভাবে আকাঙ্খীত হবে। এইভাবে খ্রীষ্টিয় পথে অগ্রসর হয়ে তিনি “খ্রীষ্ট যীশুতে স্থিত অনুগ্রহে বলবান হবেন।” এই অনুগ্রহ তিনি যা শুনেছেন সেই সকল বিষয়ের বিশ্বস্ত সাক্ষী হবার জন্য তাকে সমর্থ করবে। ঈশ্বরের কছ থেকে তিনি যে জ্ঞান লাভ করেছেন তিনি তা অবজ্ঞা করবেন না কিংবা অবহেলা করবেন না। কিন্তু সেই জ্ঞান এমন বিশ্বস্ত লোকের কাছে অর্পন করবেন, অন্যদেরকেও সেই জ্ঞান দিতে সক্ষম হবে। AABen 420.2

তীমথিয়র কাছে লেখা তার এই শেষ চিঠিতে পৌল যুবক পরিচর্যাকারীর সামনে একটি মহৎ আদর্শ তুলে ধরেছেন খ্রীষ্টের একজন পরিচর্যাকারী হিসাবে তাকে তার দায়িত্ব আরও উনড়বতি করার জন্য তিনি দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। “তুমি আপনাকে ঈশ্বরের কছে পরীক্ষাসিদ্ধ লোক দেখাইতে যত্ন কর,” প্রেরিত লিখেছেন, “এমন কার্যকারী হও, যাহার লজ্জা করিবার প্রয়োজন নাই, যে সত্যের বাক্য যথার্থ রূপে ব্যবহার করতে জানে।” “কিন্তু তুমি যৌবনকালের অভিলাষ হইতে পলায়ন কর এবং যাহারা সূচি হৃদয়ে ডাকে, তাহাদের সহিত ধার্মিকতা, বিশ্বাস প্রেম ও শান্তির অনুধাবন কর। কিন্তু মূঢ় ও অজ্ঞান বিতন্ডা সকল অস্বীকার কর; তুমি যান এ সকল যুদ্ধ উৎপনড়ব করে। আর যুদ্ধ করা প্রভুর দাসের উপযুক্ত নহে; কিন্তু সকলের প্রতি কোমল, শিক্ষাদানে নিপুন, সহনশীল হওয়া এবং মৃদুভাবে বিরোধীগনকে শাসন করা তাহার উচিত; হয়তো ঈশ্বর তাহাদিগকে মন পরিবর্তন দান করবেন, যেন তাহারা সত্যের তত্বজ্ঞান প্রাপ্ত হয়।” AABen 420.3

প্রেরিত তীমথিয়কে ভন্ড শিক্ষকদের বিষয়ে সতর্ক করেছেন যাহারা মন্ডলীতে প্রবেশ করবার চেষ্টা করছে। “কিন্তু ইহা জানিও,” তিনি উল্লেখ করেছেন “শেষ কালে বিষম সময় উপস্থিত হইবে। কেননা মনুষ্যরা আত্মপ্রিয়, আত্মশ্লাঘী, অভিমানী, ধর্মনিন্দক, পিতামাতার অবাধ্য, অকৃতজ্ঞ, অসাধু, লোকে ভক্তির অবয়বধারী, কিন্তু তাহার শক্তি অস্বীকারকালী হইবে: তুমি এই রূপে লোকদের হইতে সরিয়া যাও।” AABen 421.1

“দুষ্ট লোকেরা ও বঞ্চকেরা পরের ভ্রান্তি জন্মাইয়া ও আপনার ভ্রান্তি লইয়া,” তিনি এর পর আরও লিখেছেন, “উত্তর উত্তর কুপথে অগ্রসর হইবে। কিন্তু তুমি যাহা যাহা শিখিয়াছ ও যাহার যাহার প্রমান জ্ঞাত হইয়াছ, তাহাতেই স্থির থাক; তুমি তো জান যে, কাহাদের কাছে শিখিয়াছ। আরও জান, তুমি শিশুকাল অবধি তুমি পবিত্র শাস্ত্রকলাপ জ্ঞাত আছ, সে সকল খ্রীষ্ট যীশু সম্বন্ধীয় বিশ্বাস দ্বারা তোমাকে পরিত্রানের নিমিত্ত জ্ঞানবান করতে পারে। ঈশ্বর নিশ্বাসিত প্রত্যেক শাস্ত্রলিপি আবার শিক্ষার, অনুযোগের, সংশোধনের, ধার্মিকতা সম্বন্ধীয় শাসনের নিমিত্ত উপকারী যেন ঈশ্বরের লোক পরিপক্ক, সমস্ত সৎকর্মের জন্য সুসজ্জীভূত হয়।” পৃথিবীতে যে মন্দতা আছে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়লাভ করার জন্য ঈশ্বর অনেক উপায় আমাদের সামনে রেখেছেন। পবিত্র বাইবেল হল অ¯্রাগার যেখানে আমরা যুদ্ধের জন্য সজ্জিত হতে পারি। আমাদের অবশ্যই সত্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যুদ্ধের জন্য এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের বুকপাটা অবশ্যই ধার্মিকতার হতে হবে। আমাদের হাতে থাকবে বিশ্বাসের ঢাল; পরিত্রানের শিরস্ত্রাণ থাকবে আমাদের মাথার উপরে; এছাড়া সঙ্গে থাকবে আত্মার খড়গ অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্য, এভাবেই আমরা বাধা এবং পাপের জাল ছিনড়ব করে এর মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাবার জন্য পথ করে নিতে পারব। AABen 421.2

পৌল জানতেন যে মন্ডলী এখন ভয়ানক বিপদের সময় অতিবাহিত করছে, তিনি জানতেন যে যাদের উপর মন্ডলী পরীচালনার দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে তাদের বিশ্বস্ত এবং আন্তরিক ভাবে কাজ করতে হবে। তিনি তীমথিয়র কাছে লিখেছেন, “আমি ঈশ্বরের সাক্ষাতে এবং যিনি জীবিত ও মৃতগনের বিচার করিবেন, সেই খ্রীষ্ট যীশুর সাক্ষাতে, তাহার প্রকাশ প্রাপ্তি ও তাহার রাজ্যের দোহাই দিয়া, তোমাকে এই দৃঢ় আজ্ঞা দিতেছি, তুমি বাক্য প্রচার কর, সময়ে অসময়ে কার্যে অনুরক্ত হও, সম্পূর্ণ সহিষ্ণুতা ও শিক্ষাদান পূর্বক অনুযোগ কর, র্ভৎসনা কর, চেতনা দেও।” AABen 422.1

তীমথিয় যেমন সুসমাচার প্রচারকের প্রচার কার্যে গুরুত্ব দেবার এবং দায়িত্বশীলতার শক্তিশালী সাক্ষ্য রেখেছিলেন তেমনি এই পবিত্র দায়িত্ব যার উপর অর্পিত হবে তাকে প্রবল উৎসাহে এবং বিশ্বস্তভাবে কাজ করতে হবে। ঈশ্বরের আদালতের সামনে তীমথিয়ের উপস্থিতিতে পৌল তাকে বাক্য প্রচার করতে আদেশ দিলেন, তা যেন গল্পকথা এবং মানুষের প্রথা না হয়। যখনই তিনি সুযোগ পাবেন তখনই তিনি ঈশ্বরের পক্ষে সাক্ষ্য তুলে ধরেন — তা বিশাল জনতার সামনে বা অল্প সংখ্যাক জনতার সামনেই হউক, রাস্তায় এবং গৃহে, বন্ধুদের কাছে এবং শত্রুদের কাছে, নিরাপত্তার মধ্যে হউক কিংবা প্রচার করা খুব কঠিন এবং বিপদজনক হক, নিন্দা বা ক্ষতির মাঝেও প্রচার করতে হবে। তীমথিয়র শান্ত প্রকৃতি এবং কোমল স্বভাবের ফলে আশংকা ছিল তীমথিয় হয়তো তার কাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো পরিহার করতে পারেন। এই কারনে পৌল তাকে উপদেশ দিয়েছিলেন যেন পাপের জন্য বিশ্বস্তভাবে তিরস্কার করেন এমনকি যারা মারাত্মক মন্দ কাজ করে দোষী হয়েছে তাদের তীক্ষ্ণভাবে তিরস্কার করে। তবুও এই কাজটি তাকে “সহিষ্ণুতা ও শিক্ষাদানপূর্বক” করতে হবে। তিনি যেন ধৈর্য এবং খ্রীষ্টের ভালোবাসা প্রকাশ করেন এবং সত্যের বাক্য দ্বারা তার তিরস্কার তার কাছে ব্যাখ্যা করেন এবং কার্যকর করেন। AABen 422.2

পাপকে ঘৃণা ও তিরস্কার করা এবং একই সময়ে দয়া এবং করুনার মনোভাব প্রকাশ করা খুব কঠিন। অন্তর এবং জীবনের পবিত্রতা অর্জন করতে আমাদের গভীর আন্তরিকতা প্রয়োজন, আমাদের চেতনা তীব্র হলে আমরা পাপ সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারব এবং আমরা যদি ভাল সিদ্ধান্ত গ্রহন করি তাহলে সত্য থেকে যে কোন বিচ্যুতি থেকে মুক্ত থাকব। যারা অন্যায় কাজ করে তাদের অন্যায্যভাবে কথা বলা থেকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। কিন্তু যারা পাপ করে সীমা অতিক্রম করেছে তাদের যেন আমরা চোখের আড়াল না করি। তাদের খ্রীষ্টের মত ধৈর্য দেখাতে হবে অন্যায়কারীদের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে হবে যাতে তাদের যে তিরস্কার করা হয়েছে এতে তারা যেন নিজের দিকে তাকাতে পারে এবং অনুচিত এবং অন্যায় ভাবে যে তারা এটি অগ্রাহ্য করে তা বুঝতে পারে। AABen 422.3

অনেক সময় সুসমাচার প্রচারকের যারা অন্যায় করে তাদের অন্যায় কাজে বাধা না দিয়ে তাদের ধৈর্যশীলতাকে প্রাধান্য দেওয়ার দ্বারা এমনকি তাতে অংশী হওয়ার দ্বারা মারাত্মক ক্ষতি করে। এভাবে তারা ঈশ্বর যাকে দোষী করেন তাদের ক্ষমা করে এবং অপরাধ লঘু হিসাবে দেখে এবং পরে এমন একটা সময় আসে যখন তারা এমনই বিচারবুদ্ধিহীন হয়ে যান যে ঈশ্বর যাদের তিরস্কার করে দোষী করেন তাদের একবারের জন্য দোষী বলে গন্য করে না। ঈশ্বর যাদের দোষী করেন, তাদের পাপাচারকে ক্ষমা করার দ্বারা যে তার আত্মিক উপলব্ধিকে স্থুল করে, সে ঈশ্বর যাদের ভাল বলে অনুমোদন করেন, তাদের প্রতি কঠোর এবং রূঢ় আচরণ করে। AABen 423.1

মানবীয় জ্ঞানের অহংকার দ্বারা, পবিত্র আত্মার প্রভাবের জন্য অবজ্ঞা এবং ঈশ্বরের বাক্যের সত্যের জন্য অপছন্দের দ্বারা, যারা খ্রীষ্টিয়ান বলে দাবী করে তাদের মধ্যে অনেকে এবং যারা অন্যদের শিক্ষা দেবার জন্য নিজেদের উপযুক্ত বলে মনে করে তারা ঈশ্বরের আবশ্যকতা থেকে অন্য দিকে সরে যায়। পৌল তিমথীয়কে দৃঢ়ভাবে বলেছেন, “কেননা এমন সময় আসিবে যখন লোকেরা নিরাময় শিক্ষা সহ্য করিবে না, কিন্তু কান চুলকানি— বিশিষ্ট্য হইয়া আপন আপন অভিলাষ অনুসারে আপনাদের জন্য রাশি রাশি গুরু ধরিবে এবং সত্য হইতে কান ফিরাইয়া গল্পের দিকে বিপথে যাইবে।” AABen 423.2

প্রেরিত এখানে স্পষ্টভাবে ধর্মহীনতা সম্পর্কে উল্লেখ করেন নি, কিন্তু সেই সকল খ্রীষ্টিয়ানদের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন যারা তাদের শিক্ষাদাতাদের শিক্ষার দিকে ঝুঁকেছেন। আর এই ভাবেই তারা নিজেদের ক্রিতদাসে পরিনত করে। এই সমস্ত শিক্ষার প্রতি তারা মনোযোগ দেয় কেবল মাত্র তাদের পাপের জন্য তিরস্কার করতে নয় বা তাদের ভোগবিলাশের প্রতি ভালোবাসার কাজকে দোষারোপ করতে নয়। তারা খ্রীষ্টের বিশ্বস্ত দাসের অকপট বাক্যের দ্বারা অসন্তুষ্ট হয় এবং তারা সেই সকল শিক্ষকদের বেছে নেয় যে তাদের প্রশংসা করে এবং তোষামত করে। যারা মন্ডলীর নেতা ছিলেন তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন তারা ঈশ্বরের বাক্যের পরিবর্তে মানুষের মতবাদকে প্রচার করতেন। তাদের দায়িত্বের প্রতি অবিশ্বস্ততার ফলে যারা তাদের কাছ থেকে আত্মিক শিক্ষা এবং আত্মিক নির্দেশনা লাভ করতে চাইত তাদের তারা বিপথে চালিত করতেন। AABen 423.3

ঈশ্বর তার পবিত্র ব্যবস্থার শিক্ষার মধ্যে জীবনে প্রকৃত নিয়ম প্রদান করেছেন এবং এই ব্যবস্থা লুপ্ত হওয়ার সময় পর্যন্ত এর একটি বর্ণ বা একটি শব্দ পরিবর্তীত হবে না, এর অর্থ হল মানব জাতির উপর এর দাবী বজায় থাকবে। খ্রীষ্ট এসেছিলেন ব্যবস্থাকে মহত্বর করতে এবং আরো মর্জাদাদান করতে। তিনি দেখিয়েছেন ঈশ্বরের প্রতি ও মানুষের প্রতি সুদুর প্রসারী ভালোবাসার উপর রয়েছে এর ভিত্তি এবং এটি এর শিক্ষা সমূহের প্রতি বাধ্যতা মানুষের সকল কার্যকে অন্তর্ভুক্ত করে। পর্বতে দত্ত উপদেশ তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে বাহ্যিক কার্যের বাইরেও এর বিস্তৃত আবশ্যকতা রয়েছে এবং এর চিন্তাকে স্বীকার করে নেবার এবং হৃদয়ের অভিপ্রায়কে ব্যক্ত করা হয়েছে। AABen 424.1

আজ্ঞা পালন করার মধ্য দিয়ে মানুষ “ভক্তিহীনতা ও সাংসারিক অভিলাষ সকল” প্রত্যাখ্যান করতে হবে এবং “সংযত; ধার্মিক ও ভক্তিভাবে এই বর্তমান যুগে জীবন যাপন” করতে সক্ষম হয়। তীত ২:১২। AABen 424.2

কিন্তু সমস্ত ধার্মিকতার শত্রু জগতকে বন্দী করে ফেলেছে এবং পুরুষ এবং স্ত্রীলোকদের ব্যবস্থা অমান্য করার জন্য চালিত করেছে। পৌল এভাবে আগাম দেখতে পেলেন যে অসংখ্য লোক ঈশ্বরের সরল এবং অনুসন্ধানী সত্যের বাক্য থেকে সরে গেছে এবং তারা এমন শিক্ষকদের বেছে নিয়েছেন যারা তাদের আকাঙ্খা অনুযায়ী গল্পকথা বলতে পারবে। এই সব শিক্ষাদাতা এবং লোকদের মধ্যে অনেকে ঈশ্বরের আদেশ তাদের পদতলে দলিত করেছে। এইভাবে জগতের সৃষ্টিকর্তা অসম্মানিত হন এবং শয়তান তার পরিকল্পনা সফল হওয়ার জন্য বিজয়য়োল্লাসে হেসে উঠে। ঈশ্বরের ব্যবস্থার প্রতি অবজ্ঞা সৃষ্টি হওয়ার ফলে ধর্মকে অপছন্দ করার মনোভাব বৃদ্ধি পাবে, অহংকারের বৃদ্ধি পাবে, বিলাসপ্রিয়, পিতামাতার অবাধ্য এবং আত্মপ্রশ্রয়ী হবে। এবং চিন্তাশীল মন উদ্বিঘড়ব হয়ে সর্বত্র এই প্রশেড়বর উত্তর খুঁজে বেড়ায়, এই সমস্ত বিপদজনক দুষ্টদের সংশোধন করার জন্য কি করা যেতে পারে? এর উত্তর পাওয়া যায় তীমথিকে দেওয়া পৌলের উপদেশের মধ্যে “বাক্য প্রচার কর।” AABen 424.3

বাইবেলে কেবলমাত্র কাজের নিরাপদ নীতি পাওয়া যায়। এটি ঈশ্বরের ইচ্ছার একটি প্রতিলিপি, ঐশ্বরীক জ্ঞানের প্রকাশ। এটি জীবনের মহা সমস্যার মানুষের জ্ঞানকে উন্মুক্ত করে এবং যারা এর উপদেশের প্রতি মনোযোগ দেয় এটি অভ্রান্ত নির্দেশনাকে প্রমান করবে। বিপথে চালিত করায় তাদের জীবন অপব্যয় হওয়া থেকে রক্ষা করবে। AABen 425.1

ঈশ্বর তার ইচ্ছা জ্ঞাত করেছেন এবং তার মুখ থেকে যা বের হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্নব তোলা মানুষের জন্য নির্বুদ্ধিতার কাজ হবে। অসীম জ্ঞানপূর্ণ কথা বলার পর, মানুষ সন্দেহমূলক কোন প্রশ্নব তুলতে পারে না, তার পক্ষে মানিয়ে নেওয়ার দোদুল্ল্যমান কোন সম্ভাবনা নেই। এই সব কিছুতে তার আবশ্যক হল অকপট, ঈশ্বরের ইচ্ছা প্রকাশের সাথে আন্তরিক ঐক্যমত। AABen 425.2

পৌল তার নির্দেশ বহাল রেখে লিখেছেন, “তুমি সর্ব বিষয়ে মিতাচারী হও, দুঃখভোগ স্বীকার কর, সুসমাচার প্রচারকের কার্যকর, তোমার পরিচর্যা সম্পনড়ব কর।” পৌল তার কার্য শেষ করেছেন এবং চেয়েছেন যেন তীমথিয় তার স্থান গ্রহন করে, যাতে মন্ডলীকে গল্পকতা এবং ভ্রান্তমত থেকে রক্ষা করেন, যার দ্বারা শত্রুরা বিভিনড়ব উপায়ে তাদের সুসমাচারের সরলতা থেকে দূরে সড়িয়ে নেবার চেষ্টা করেছে। তিনি তাকে সমস্ত পার্থিব বিষয়ের পশ্চাৎধাবণ করা থেকে এবং এর মধ্যে জরিয়ে পড়া থেকে দূরে থাকার জন্য সতর্ক করেছেন যা ঈশ্বরের কাজ করার জন্য তাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা থেকে সম্পূর্ণভাবে দূরে সরিয়ে রাখো থেকে রক্ষা করবে, বিরোধীদের সমস্ত দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে পারবে; নিন্দা এবং অত্যাচার যা তার বিশ্বস্ততা তাকে আলো প্রদান করবে; যাদের জন্য খ্রীষ্ট মৃত্যুবরণ করেছেন তারা আয়ত্বের মধ্যে সমস্ত উপায়ের সদ্বব্যবহার করে তাদের জন্য মঙ্গলজনক কাজ করার দ্বারা তার পরিচর্যার কাজ সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত করতে পারবে। AABen 425.3

পৌল যে শিক্ষা দিয়েছেন তার জীবন ছিল সেই শিক্ষার দৃষ্টান্ত স্বরূপ এবং এখানে তার শক্তি স্থাপিত হয়ে আছে। তার হৃদয় তার দায়িত্বের গভীর এবং চিরস্থায়ী চেতনায় পূর্ণ ছিল এবং যিনি ন্যায়ে দয়ায় এবং সত্যের উৎস, তার গভীর যোগাযোগ সম্বন্ধে রেখে কাজ করেছেন। তার সফলতার একমাত্র ভিত্তি হিসাবে তিনি খ্রীষ্টের ক্রুশকে দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরে রেখেছিলেন। ত্রানকর্তার ভালোবাসা ছিল তার কাছে চিরন্তন পেরণা, যা তাকে নিজের সংগে সংগ্রামে প্রেরণা যুগিয়েছিলেন। খ্রীষ্টের পক্ষে সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিলেন, তিনি জগতের সমস্ত প্রতিক’লতা এবং তার শত্রুদের বিরোধীতার মধ্য দিয়ে দৃঢ় পদক্ষেপে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন। AABen 425.4

মন্ডলীর ভয়ানক বিপদের সময়ে কর্মীর সৈনিক প্রয়োজন, যারা পৌলের মত কার্যকরভাবে নিজেদেরকে প্রশিক্ষিত করেছেন, ঈশ্বরের বিষয়ে যাদের গভীর ধারণা আছে এবং যারা আন্তরিকতা এবং অগ্রাহ্যে পূর্ণ। পবিত্রিকৃত স্বার্থত্যাগী মানুষের প্রয়োজন, যে মানুষেরা দুঃখ, কষ্ট এবং দায়িত্ব এড়িয়ে যায় না; তারা হবেন সাহসী এবং প্রকৃত মানুষ, যে মনিুষের হৃদয়ে খ্রীষ্ট হলেন, AABen 426.1

“বাক্য প্রচার” করছে পবিত্র আগুনের দ্বারা স্পর্ষিত হয়ে। ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে কাজ করার জন্য এই রকমের কর্মীর অভাবের কারণে ভয়ঙ্কর এবং মারাত্মক বিষের মতন মানবজাতির বিশাল অংশের নৈতিকতা কলংকযুক্ত এবং আশা ধ্বংশ হয়েছে। AABen 426.2

বিশ্বস্ত পরি¯্রমে ক্লান্ত পতাকা বহনকারী সত্যের পক্ষে কাজ করার জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের মত কাজ করতে তাদের স্থান গ্রহন করার জন্য কে সামনে এগিয়ে আসবে? আমাদের যুবকেরা কি তাদের পিতার কাছ থেকে পবিত্র দায়িত্ব গ্রহন করবেন? তারা কি বিশ্বস্ততার মৃত্যুর দ্বারা কি ঐ শূন্যস্থান পূরনের জন্য তারা প্রস্তুতি গ্রহন করছে? প্রেরিতের দায়িত্ব কি দেখাশুনা করবে দায়িত্ব পালন করার জন্য কি আহব্বান শুনবে, স্বার্থপরতা এবং উচ্চভিলাসকে কি উত্তেজিত করবে যা যুবকদের প্রলুব্ধ করে? AABen 426.3

পৌল তার পত্র শেষ করেছেন ভিনড়ব একটি সংবাদ দিয়ে এবং পূর্ণবার তিনি সর্নিবদ্ধ অনুরোধ করেছেন যেন, তীমথিয় খুব শীঘ্র তার কাছে আসেন , যদি সম্ভব হয় তা হলে তা যেন শীতকালের পূর্বে আসেন তার বন্ধুদের মধ্যে অনেকে তাকে ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্য এবং তার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মুহুর্তে অন্যদের অনুপস্থিতির জন্য তার নিঃসঙ্গতা সম্পর্কে তিনি লিখেছেন এবং পাছে তীমথিয় দ্বিধাগ্রহ্য এবং ভীত হন যে ইফিষ মন্ডলীতে তার কাজ করার আবশ্যকতা রয়েছে, তিনি লিখেছেন যে ইতিমধ্যে তিনি খালি জায়গা পূরণ করার জন্য তুখিককে পাঠিয়েছেন। AABen 426.4

নীরোর সামনে তার বিচারের ঘটনা সম্পর্কে বলবার পর তার ভ্রাতৃবর্গ তাকে ছেড়ে চলে যান এবং ব্যবস্থা রক্ষাকারী ঈশ্বরের চিরস্থায়ী অনুগ্রহ এই সব বিষয়ের উল্লেখ করার পর পৌল তার পত্রের সমাপ্তি টেনেছেন প্রধান পালকের শেষ তত্বাবধানকারী হিসাবে তীমথিয়ে প্রসংশা করে যিনি যদিও মেষপালক হিসাবে দূর্বল হতে পারেন তথাপি তিনি তার মেষপালের যত্ন নিতে সক্ষম। AABen 427.1