হিস্কিয়ের সময়ে উন্নত যিহূদা রাজ্য, আরও একবার মনঃশির দীর্ঘ দুষ্টতার শাসন কালব্যাপী পতিত হল; যখন পৌত্তলিকতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল, এবং অনেকে প্রতিমা পূজার দিকে ধাবিত হয়েছিল। “মনঃশি যিহুদাকে ও যিরূশালেম নিবাসীদিগকে বিপথগামী করিলেন।” ২ বংশাবলি ৩৩:৯। ভূতপূর্ব বংশধরগণের গৌরবময় জ্যোতির পরে এল কুসংস্কার এবং ভ্রান্তির অন্ধকার। অশ্লীল দুষ্টতা আবির্ভূত হয়ে উন্নতি লাভ করল- নিষ্ঠুরতা, অত্যাচার, সর্বপ্রকার উত্তমের প্রতি ঘৃণা প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেল । ন্যায়বিচার বিকৃত হল; প্রচণ্ডতা টিকে রইল । PKBeng 322.1
তথাপি ঐ মন্দকাল সমূহ ঈশ্বর এবং ন্যায়ের পক্ষে সাক্ষ্য বিহীন ছিল না। হিষ্কিয়ের রাজত্বের সময় উদ্ভুত চরম পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যিহদা নিরাপদে অতিক্রান্ত হল, অনেকের হৃদয়ে চরিত্রের একটি দৃঢ়তা যা এখন বিরাজিত পাপের বিরুদ্ধে একটি প্রকাররূপে কাজ করল । সত্য এবং ধার্মিকতার পক্ষে তাদের সাক্ষ্য মনঃশি এবং তার সহ-ক্ষমতাসীনদের ক্রোধের উদ্রেক করেছিল, যারা, অননুমোদনের প্রতিটি স্বর দ্বারা মন্দ কার্যে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছিল। “মনঃশি আবার অনেক নির্দোষের রক্তপাতও করিয়াছিলেন, এমনকি, যিরূশালেমকে এক সীমা অবধি অন্য সীমা পর্যন্ত রক্তে পরিপূর্ণ করিয়াছিলেন।” ২ রাজাবলি ২১:১৬। PKBeng 322.2
সর্বপ্রথম যিহূদারই পতন ঘটল, যিনি অর্ধশতাব্দির বেশি যিহুদার সামনে যিহোবার একজন নিয়োজিত বার্তাবাহকরূপে দণ্ডায়মান রইলেন। “আর অন্যেরা বিদ্রূপের ও কশাঘাতের অধিকন্তু বন্ধনের ও কারাগারের পরীক্ষা ভোগ করিলেন; তাহারা প্রস্তরাঘাতে হত, পরীক্ষিত, করাত দ্বারা বিদীর্ণ; খড়গ দ্বারা নিহত হইলেন; তাহারা মেষের ও ছাগের চর্ম পরিয়া বেড়াইতেন, দীনহীন, ক্লিষ্ট, উপদ্রুত হইতেন; এই জগৎ যাহাদের যোগ্য ছিল না, তাহারা প্রান্তরে প্রান্তরে, পাহাড়ে পাহাড়ে গুহায় গুহায় ও পৃথিবীর গহ্বরে গহ্বরে ভ্রমণ করিতেন।” ইব্রীয় ১১:৩৬-৩৮। PKBeng 322.3
মনঃশির রাজত্বকালে তাড়না ভোগকারীদের কোন কোন লোককে অনুযোগ এবং বিশেষ বার্তা বহন করার বিশেষ আদেশ করা হয়েছিল। যিহূদার রাজা, ভাববাদীগণ বললেন, “তাহাদের কৃত সমস্ত কাজ হইতেও সে অধিক দুষ্কার্য করিয়াছে।” এই দুষ্কর্ম হেতু, তার রাজ্য একটি সঙ্কটের সম্মুখীন হচ্ছিল; অতি সত্ত্বর দেশব্যাপী বাবিলের বন্দীত্বে নীত হল, “আপনাদের সমস্ত শত্রুর মৃগয়ার দ্রব্য ও লুটবস্তু স্বরূপ হইবে।” ২ রাজাবলি ২১:১১, ১৪। কিন্তু সদাপ্রভু একটি অপরিচিত দেশের অধিবাসীদের সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করবেন না যদি তারা তাকে তাদের শাসকর্তারূপে স্বীকার করে; তারা মহা দুর্দশা ভোগ করবে হয়তো, তথাপি তিনি তাদের কাছে তাঁর নিজস্ব সময়ে এবং নিজস্ব উপায়ে মুক্তি আনয়ন করবেন। তারা সম্পূর্ণরূপে তাঁতে নির্ভর করবে, তারা নিশ্চিত রূপে একটি আশ্রয় খুঁজে পাবে। PKBeng 323.1
ভাববাদীগণ বিশ্বস্তভাবে তাদের সতর্কবাণী এবং সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাতে ক্ষান্ত হলেন না; তারা নির্ভয়ে মনঃশি এবং তার লোকদের বললেন; কিন্তু তারা বার্তা অবজ্ঞা করল; বিপথগামী যিহুদা মনোযোগ করল না । লোকদের ওপরে যে বিপদ এসে পড়বে সে সম্পর্কে তাদের একান্তভাবে বুঝানো সত্ত্বেও তারা অননুতপ্ত রয়ে গেল, আর প্রভু, একদল অশ্বরীয় সৈন্য কর্তৃক তাদের রাজা বন্দী হল, যারা “তাহাকে শৃঙ্খলে বদ্ধ করিয়া বাবিলে তাহাদের অস্থায়ী রাজধানীতে লইয়া গেল।” এই দুঃখ ভোগ হেতু রাজার জ্ঞান ফিরল; “তিনি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিকট বিনতি করিলেন, ও আপন পিতৃপুরুষদের ঈশ্বরের সামনে আপনাকে অতিশয় অবনত করিলেন । এই রূপে তাঁহার কাছে প্রার্থনা করিলে তিনি তাহার প্রার্থনা গ্রাহ্য করিলেন, তাঁহার বিনতি শুনিয়া তাঁহাকে পুনর্বার যিরূশালেমে তাঁহার রাজ্যে আনিলেন। তখন মনঃশি জানিতে পারিলেন যে, সদাপ্রভুই ঈশ্বর।” ২ বংশাবলি ৩৩:১১-১৩। কিন্তু এই অনুতাপ, যদিওবা অসাধারণ ছিল, তথাপি তা খুবই বিলম্বে হয়েছিল, এবং রাজ্যটিকে বহু বছরের প্রতিমা পূজার ভ্রষ্ট প্রভাব থেকে রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। অনেকে হোছট খেয়ে পড়ে গেল, আর কখনও ওঠেনি। PKBeng 323.2
যাদের জীবনের অভিজ্ঞতা মনঃশির সর্বনাশা ভ্রষ্টতা দ্বারা রচিত হয়েছিল তাদের মধ্যে ছিল, তার নিজের পুত্র, যে বাইশ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করেছিল। রাজা আমোনের সম্পর্কে লেখা আছে: “তাহার পিতা যে পথে চলিয়াছিলেন, তিনিও সেই সমস্ত পথে চলিতেন, এবং তাহার পিতা যে সকল পুত্তলির সেবা করিয়াছিলেন, তিনিও সেই সকলের সেবা করিতেন ও তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিতেন।” (২ রাজাবলি ২১:২১, ২২); তিনি “সদাপ্রভুর সাক্ষাতে আপনাকে তেমন অবনত করিলেন না; কিন্তু এই আমোন উত্তর উত্তর অধিক দোষ করিলেন।” দুষ্ট রাজাকে দীর্ঘকাল শাসন করার অনুমতি দেয়া হয়নি। তার দুঃসাহসিক অধার্মিকতার মধ্যে, তার সিংহাসনে আরোহণের মাত্র দুই বছরের মধ্যে, তিনি তার আপন ভৃত্য কর্তৃক প্রাসাদের মধ্যে হত হলেন এবং “দেশের লোকেরা তাঁহার পুত্র যোশিয়কে তাঁহার পদে রাজা করিল।” ২ বংশাবলি ৩৩:২৩,২৫ । PKBeng 323.3
যোশিয়ের সিংহাসনে আরোহণের পর, তিনি একত্রিশ বছর রাজত্ব করেন, যারা তাদের বিশ্বাসের পবিত্রতা রক্ষা করেছিল, তারা এই প্রত্যাশা করতে লাগল যে, রাজ্যের নিম্নাভিমুখী পথ পরীক্ষা করা হয়েছে; কেননা নূতন রাজা, যদিওবা তার বয়স ছিল আট বছর, তিনি ঈশ্বরকে ভয় করতেন; এবং সূচনাতে, “সদাপ্রভুর সাক্ষাতে যাহা ন্যায্য, তাহাই করিতেন, ও আপন পিতৃপুরুষ দায়ূদের সমস্ত পথে চলিতেন, তাহার দক্ষিণে কি বামে ফিরিতেন না।” ২ রাজাবলি ২২:২। একজন দুষ্ট রাজা কর্তৃক জাত পুত্র তার পিতার পথে চলতে সর্বপ্রকার প্রলোভন দ্বারা বেষ্টিত; এবং তাকে সঠিক পথে চলবার জন্য পরামর্শদাতাও ছিল অতি নগন্য; পূর্বপুরুষদের ভূলগুলি দ্বারা সতর্কতা লাভ করে তিনি সঠিক কাজটি করার পথ এতদ্সত্ত্বেও যোশিয় ইস্রায়েলের ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। অতীত মনোনয়ন করলেন; যে পাপে এবং চরিত্রের অধঃপতনে, যেখানে তার পিতা এবং তার ঠাকুর দাদা নেমে গিয়েছিল, সেখানে গেলেন না। তিনি “দক্ষিণে কি বামে ফিরিলেন না।” দায়িত্ব ভার গ্রহণ করে, ইস্রায়েলের পরিচালনার জন্য তাকে যে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছিল, তা পালন করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হলেন, এবং তার আজ্ঞাবহতা হেতু ঈশ্বর তাকে তাঁর একটি পাত্ররূপে ব্যবহার করতে পারলেন। PKBeng 324.1
যোশিয়ের রাজত্বকাল আরম্ভের সময়ে, এবং অনেক বছর পূর্বে, যিহুদার আন্তরিকতাপূর্ণ এবং বিশ্বস্ত লোকেরা প্রশ্ন করেছিল, পুরাকালিন ইস্রায়েলের কাছে কৃত ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞামালা পরিপূর্ণ হবে কি-না। মানব দৃষ্টিকোন থেকে মনোনীত জাতির জন্য ঐশ্বরিক উদ্দেশ্য, সাধিত হওয়া প্রায় অসম্ভব বলে মনে হল । অতীত শতাব্দিসমূহের ধর্মভ্রষ্টতা অতীত বছরসমূহ শক্তি সঞ্চয় করেছিল; দশ বংশ পৌত্তলিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল; কেবলমাত্র যিহুদা এবং বিন্যামীন অবশিষ্ট ছিল, এবং এমনকি এরা নৈতিক এবং জাতীয় ধ্বংসের মুখে এসে পড়েছিল, ভাববাদীগণ তাদের সুন্দর নগরীর নিশ্চিত বিনাশ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে আরম্ভ করেছিলেন, যেখানে শলোমন কর্তৃক নির্মিত মন্দিরটি দাঁড়িয়ে ছিল, এবং যেখানে তাদের জাতীয় মহত্বের সকল পার্থিব প্রত্যাশা কেন্দ্রীভূত ছিল। এমন হতে পারে কি যে, যারা তাদের আস্থা তাঁতে রাখবে তাদের প্রতি মুক্তি আনয়নের শপথ করা উদ্দেশ্য হতে ঈশ্বর সরে যাবেন? ধার্মিকদের দীর্ঘস্থায়ী তাড়নার এবং দুষ্টদের প্রতীয়মান উন্নতির মুখে, যারা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত ছিল তারা কি সামনে সুদিনের আশা করবে? PKBeng 324.2
এসকল উদ্বিগ্নতার প্রশ্নগুলো ভাববাদী হবক্কুকের দ্বারা উচ্চারিত হয়েছিল। তার দিনে বিশ্বস্তদের অবস্থা লক্ষ্য করে, তিনি তার অন্তরের বোঝা ব্যক্ত করে জিজ্ঞেস করলেন: “হে সদাপ্রভু, কতকাল আমি আর্তনাদ করিব, আর তুমি শুনিবে না? আমি দৌরাত্মের বিষয়ে তোমার কাছে কাঁদিতেছি, আর তুমি নিস্তার করিতেছ না। তুমি কেন আমাকে অধর্ম দেখাইতেছ, কেন দুষ্কার্যের প্রতি দৃষ্টিপাত করিতেছ? লুটপাট ও দৌরাত্ম্য আমার সামনে হইতেছে, বিরোধ উপস্থিত, বিসংবাদ বাড়িয়া উঠিতেছে। তাই ব্যবস্থা নিস্তেজ হইতেছে, বিচার কোন মতে নিষ্পন্ন হইতেছে না; কারণ দুর্জনেরা ধার্মিককে, ঘেরিয়া থাকে, তজ্জন্য বিচার বিপরীত হইয়া পড়ে।” হক্ক ১:২-৪ । PKBeng 325.1
ঈশ্বর তাঁর বিশ্বস্ত সন্তানদের ক্রন্দনের উত্তর দিলেন। তাঁর মুখপাত্রের মাধ্যমে তিনি জাতির ওপরে শাস্তি আনয়নের দৃঢ় সংকল্পটি ব্যক্ত করলেন, যে জাতি পৌত্তলিক দেবতাগণের সেবা করার জন্য তাঁর কাছ থেকে দূরে চলে গিয়েছে। কেউ কেউ সারা জীবন ব্যাপী ভবিষ্যতের অনুসন্ধান করেছে, তিনি অলৌকিক উপায়ে পৃথিবীর জাতিগণের শাসন-কলাপ গঠন করলেন এবং বাবিলের লোকদের কর্তৃত্বে আনয়ন করলেন। এই কলদিয়েরা “ত্রাসজনক ও ভয়ঙ্কর,”- হঠাৎ এটি ঈশ্বর নিযুক্ত একটি চাবুক রূপে তাদের ওপরে পড়ল। ৭ পদ । যিহুদার অধ্যক্ষগণ এবং সুস্থ ও সুঠাম দেহের লোকদের বাবিলে নিয়ে যাওয়া হল; যিহুদীয়ার নগর ও গ্রামসমূহ এবং চাষাবাদের জমি শস্য উৎপন্ন স্থানরূপে পড়ে রইল, কিছুই অবশিষ্ট রইল না । PKBeng 325.2
এই বিশ্বাস আছে যে, এই ভয়াবহ বিচারের মধ্যে ঈশ্বরের লোকদের জন্য তার উদ্দেশ্য কোনভাবে পরিপূর্ণ হবে; হবক্, যিহোবার প্রকাশিত ইচ্ছার প্রতি বশ্যতা স্বীকার পূর্বক নত হলেন। “হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, আমার পবিত্রতম, তুমি কি অনাদিকাল হইতে নহ?” তিনি বললেন, আর অতঃপর তার বিশ্বাস, তাক্ষণিক ভবিষ্যতের নিষিদ্ধ দৃষ্টিরও বাইরে পৌঁছিল, এবং অমূল্য প্রতিজ্ঞার ধারণ করল, যা ঈশ্বরের বিশ্বাসী সন্তানদের জন্য তার প্রেম ব্যক্ত করে, ভাববাদী আরও বলেছিলেন, “আমরা মারা পড়িব না।” ১২ পদ। বিশ্বাসের এই ঘোষণাসহ তিনি, তার সমস্যা এবং প্রত্যেক বিশ্বাসী ইস্রায়েল সন্তানকে করুণাময় ঈশ্বরের হাতে সমর্পণ করলেন । PKBeng 325.3
দৃঢ় বিশ্বাস অনুশীলনে কেবলমাত্র এটাই হবক্কুকের অভিজ্ঞতা ছিল না। একটি ঘটনায়, “ভবিষ্যৎ সম্পর্কে প্রহরী কার্য্যের স্থানে দাড়াইব, দূর্গের উপরে অবস্থিত থাকিব; আমার আবেদনের বিষয়ে তিনি আমাকে কি বলিবেন, এবং আমি কি উত্তর দিব, তাহা দেখিয়া বুঝিব।” সদাপ্রভু সদয়ভাবে তাকে উত্তর দিলেন “এই দর্শনের কথা লিখ, সুস্পষ্ট করিয়া ফলকে খুদ, যে পাঠ করে; সে যেন দৌড়াইতে পারে। কেননা এই দর্শন এখনও নিরূপিত কালের জন্য, ও তাহা পরিণামের আকাঙ্ক্ষা করিতেছে, আর মিথ্যা হইবে না, তাহা বিলম্ব হইলেও তাহার অপেক্ষা কর, কেননা তাহা অবশ্য উপস্থিত হইবে, যথাকালে বিলম্ব করিবে না। দেখ, তাহার প্রাণ দর্পে স্ফীত তাহার অন্তর সবল না, কিন্তু ধার্মিক ব্যক্তি আপন বিশ্বাস দ্বারা বাচিবে।” হবক্তৃক ২:১-৪। PKBeng 326.1
যে বিশ্বাস গভীর পরীক্ষার ঐ সকল দিনগুলোতে হবক্কুককে এবং সমুদয় পবিত্র এবং সাধুগণকে শক্তিশালী করেছিল, ঐ একই বিশ্বাস যা অদ্য ঈশ্বরের লোকদের ধরে রাখছে। গভীর অন্ধকারময় মুহূর্তে, অতীব অনাকর্ষণীয় পরিস্থিতির মধ্যে, খ্রীষ্টিয় বিশ্বাসী তার আত্মা সমুদয় জ্যোতি এবং শক্তির উৎসের ওপরে টিকে ছিল । দিনের পর দিন, ঈশ্বরে বিশ্বাসের মাধ্যমে, তার প্রত্যাশা উৎসাহ নবায়িত করতে পারে। “ধার্মিক ব্যক্তি আপন বিশ্বাস হেতু বাচিবে।” ঈশ্বরের সেবায় কোন হতাশা, কোন দোদুল্যমান অবস্থা, কোন ভয়ের কারণ থাকবে না। যারা তাতে আস্থা রাখে, প্রভু তাদের আশাতীত, সর্বোচ্চ প্রত্যাশাসমূহ পূর্ণ করবেন। তাদের বিভিন্ন অপরিহার্য বিষয়সমূহে তাদের জ্ঞান দান করবেন । PKBeng 326.2
প্রত্যেকে প্রলোভিত আত্মার জন্য প্রচুর সরবরাহ সম্পর্কে প্রেরিত পৌল বাক্পটুতার সাথে বলছেন। তার কাছে ঐশ্বরিক নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছিল, “আমার অনুগ্রহ তোমার পক্ষে যথেষ্ট; কেননা আমার শক্তি দুর্বলতায় সিদ্ধি পায়। কৃতজ্ঞতা এবং প্রত্যাশা নিয়ে ঈশ্বরের বিচারিত দাস উত্তর প্রদান করলেন, “এই হেতু খ্রীষ্টের জন্য নানা দুর্বলতা, অপমান, অনাটন, তাড়না, সঙ্কট, ঘটিলে আমি প্রীত হই, কেননা যখন আমি দুর্বল, তখনই বলবান।” ২ করিন্থীয় ১২:৯, ১০। PKBeng 326.3
আমাদের বিশ্বাসের লালন এবং অনুশীলন করতে হবে, যার বিষয়ে ভাববাদী সাক্ষ্য দিয়েছেন- যে বিশ্বাস ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা ধরে রাখে এবং তাঁর সময় এবং উপায়ে মুক্তির অপেক্ষা করে। ভাববাণীর নিশ্চয় বাণী, আমাদের প্রভু এবং রাজাদের রাজা এবং প্রভুদের প্রভুরূপে ত্রাণকর্তা যীশু খ্রীষ্টের গৌরবময় আগমনের চূড়ান্ত পূর্ণতার সম্মুখীন হবে। হয়তো দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে, নিরুৎসাহজনক পরিস্থিতি দ্বারা হয়তো আত্মা উৎপীড়িত হতে পারে, অনেকের হয়তো চলার পথে বিশ্বাসের পতনও ঘটতে পারে; কিন্তু ভাববাদীর সাথে যিনি তুলনাহীন ধর্মভ্রষ্টতার একটি সময়ে উৎসাহ প্রদান করেছেন, আমরা এই বিশ্বাসে ঘোষণা করি, “কিন্তু সদাপ্রভু আপন পবিত্র মন্দিরে আছেন; সমস্ত পৃথিবী তাঁহার সামনে নীরব থাকুক।” হবকক্ক ২:২০। আমরা আনন্দের বার্তা স্মরণে রাখি, “কেননা এই দর্শন এখনও নিরূপিত কালের জন্য, ও তাহা পরিণামের আকাঙ্ক্ষা করিতেছে, আর মিথ্যা হইবে না; তাহার বিলম্ব হইলেও তাহার অপেক্ষা কর, ...কিন্তু ধার্মিক ব্যক্তি আপন বিশ্বাস দ্বারা বাঁচিবে।” ৩, ৪ পদ। PKBeng 327.1
“হে সদাপ্রভু, বছর সমূহের মধ্যে তোমার কর্ম সজীব কর
বছর সমূহের মধ্যে জ্ঞাত কর;
কোপের সময়ে করুণা স্মরণ কর।
“ঈশ্বর তৈমন হইতে আসিতেছেন
পারণ পর্বত হইতে পবিত্রতম আসিতেছেন ।
আকাশ মণ্ডল তাঁহার প্রভায় সমাচ্ছন্ন,
পৃথিবী তাঁহার প্রশংসায় পরিপূর্ণ ।
তাহার তেজ দীপ্তির তুল্য,
তাঁহার হাত হইতে কিরণ নির্গত হয়;
ঐ স্থান তাঁহার পরাক্রমের অন্তরাল ।
তাঁহার অগ্রে অগ্রে মহামারী চলে,
তাঁহার পদচিহ্ন দিয়া জ্বলদঙ্গার গমন করে ।
তিনি দাঁড়াইয়া পৃথিবীকে পরিমাণ করিলেন,
তিনি দৃপাত করিয়া জাতিগণকে ত্রাস তাড়িত করিলেন;
সনাতন পর্বত সকল খণ্ডবিখণ্ড হইল,
চিরন্তন গিরিমালা নত হইল;
অনাদিকাল অবধি তাঁহার .... ।”
“তুমি যাত্রা করিলে আপন প্রজাগণের পরিত্রাণার্থে,
আপন অভিষিক্ত লোকের পরিত্রাণার্থে ।”
“যদিও ডুমুর বৃক্ষ পুষ্পিত হইবে না,
দ্রাক্ষালতার ফল ধরিবে না,
জিতবৃক্ষ ফলদানে বঞ্চনা করিবে,
ও ক্ষেত্রে খাদ্য দ্রব্য উৎপন্ন হইবে না,
খোঁয়াড় হইতে মেষপাল উচ্ছিন্ন হইবে,
গোষ্ঠে গরু থাকিবে না;
তথাপি আমি সদাপ্রভুতে আনন্দ করিব;
আমার ত্রাণেশ্বরে উল্লাসিত হইব।
সদাপ্রভুই আমার বল।” PKBeng 327.2
হবক ৩:২-৬, ২৩, ২৭-১৯।
হবক্কৃক একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন না, যার মাধ্যমে একটি উজ্জ্বল প্রত্যাশাঁ এবং ভাবী বিজয় এবং বর্তমান বিচার বিষয়ক বার্তা প্রদত্ত হয়েছিল। যোশিয়ের শাসনকাল ব্যাপী, সহজ সরল ভাবে অবিরত ধর্ম ভ্রষ্টতার পরিণাম সতন্ত্রভাবে উল্লেখ করতঃ, এবং বোধাতিত গৌরবময় দৃশ্যের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করতঃ সদাপ্রভুর বাক্য সফনিয়ের কাছে এসেছিল। যিহুদার ওপরে আসন্ন বিচার বিষয়ক ভবিষ্যদ্বাণী, বিচারের প্রতি সম ক্ষমতার সাথে প্রয়োগ করে, যা, খ্রীষ্টের দ্বিতীয় আগমনে একটি অননুতপ্ত বিশ্বের ওপরে এসে পড়বে: PKBeng 328.1
“হে লজ্জাহীন জাতি, তোমরা একত্র হও, হাঁ,
একত্র হও, হাঁ, কেননা, দণ্ডাজ্ঞা সফল হইবার সময়
হইল, দিন ত তুষের ন্যায় উড়িয়া যাইতেছে; সদাপ্রভুর
ক্রোধাগ্নি তোমাদের উপরে আসিয়া পড়িল
সদাপ্রভুর ক্রোধের দিন তোমাদের উপরে আসিয়া
পড়িল । হে দেশের সমস্ত নম্র লোক, তাঁহার
শাসন পালন করিতেছ যে তোমরা, তোমরা সদাপ্রভুর অন্বেষণ কর, ধর্মের অনুশীলন কর; হয়তো
সদাপ্রভুর ক্রোধের দিনে তোমরা গুপ্ত
স্থানে রক্ষা পাইবে।” PKBeng 328.2
সফনিয় ২:১-৩।
“দেখ, যে সকল লোক তোমাকে দুঃখ দেয়, সেই সময়ে আমি তাহাদের প্রতি যাহা করার, তাহা করিব; আর আমি খঞ্জকে পরিত্রাণ করিব, ও দূরীকৃতকে সংগ্রহ করিব; এবং যাহাদের লজ্জা সমস্ত পৃথিবীতে ব্যাপিয়াছে, আমি তাহাদিগকে প্রশংসার ও কীর্তির পাত্র করিব। সেই সময়ে আমি তোমাদিগকে আনিব, সেই সময়ে তোমাদিগকে সংগ্রহ করিব; কারণ আমি পৃথিবীস্থ সমস্ত জাতির মধ্যে তোমাদিগকে কীর্তির ও প্রশংসার পাত্র করিব; কেননা তখন আমি তোমাদের দৃষ্টিগোচরে তোমাদিগকে বন্দিদশা হইতে ফিরাইয়া আনিব; ইহা সদাপ্রভু কহেন । সফনিয় ৩:১৯, ২০। PKBeng 329.1
“হে সিয়োন কন্যা, আনন্দগান কর জয়ধ্বনি কর
হে ইস্রায়েল, আনন্দ কর সর্বান্তকরণে উল্লাস কর,
হে যিরূশালেম কন্যা ।
সদাপ্রভু তোমার দণ্ড সকল দূর করিয়াছেন,
তোমার শত্রুকে সরাইয়া দিয়াছেন;
ইস্রায়েলের রাজা, সদাপ্রভু
তোমার মধবর্তী
তুমি অমঙ্গলের ভয় করিবে না ।
“সেই দিন যিরূশালেমকে এই কথা বলা
যাইবে, ভয় করিও না;
হে সিয়োন, তোমার হস্ত শিথিল না হউক ।
তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সহবর্তী;
সেই বীর পরিত্রাণ করিবেন।
তিনি তোমার বিষয় পরম আনন্দ করিবেন;
তিনি প্রেম ভরে মৌন হইবেন,
আনন্দ গান দ্বারা তোমার বিষয়ে উল্লাস করিবেন।” PKBeng 329.2