প্রকৃতির সমস্ত কিছুই মানুষকে তার স্রষ্টার প্রেমের কথা স্মরণ করায়। এই পৃথিবী শুধু দুঃখ ও যাতনাতে পূর্ণ নয়। প্রত্যেক ফুটন্ত পুষ্পে, বাগানের প্রত্যেক ফুলে, মাঠের প্রত্যেক ঘাসের পাতায় লিখিত রয়েছে, “ঈশ্বর প্রেম।” কাটাগাছেও ফুল হয়, আর গোলাপ ফুল কাঁটাকে আড়াল করে রাখে । প্রকৃতির সমস্ত কিছুই সাক্ষ্য দেয় যে ঈশ্বর তার সন্তানদের সুখী রাখতে চান। তাঁর নিষেধাবলী শুধু তাঁর কর্তৃত্ব প্রকাশের উদ্দেশে নয়; বরং এগুলি তাঁর সন্তানদের উপকারের জন্যই প্রকাশ করা হয়েছে। যা কিছু থাকলে তাদের প্রকৃত উপকার হবে তার কোনটিই পরিত্যাগ করতে তিনি তাদের বলেন না । PPBeng 435.1
ধর্ম, স্বাস্থ্য ও সুখের অনুকূলে নয়, এরূপ ধারণা হল সব চেয়ে ক্ষতিকর একটি ভ্রান্তি। বাইবেলে বলা হয়েছে, “সদাপ্রভুর ভয় জীবনে লইয়া যায়, যাহার তাহা আছে, সে তৃপ্ত হইয়া বসতি করে।” হিতোপদেশ ১৯:২৩। জ্ঞানের কথা “তাহাদের পক্ষে তাহা...জীবন, তাহা তাহাদের সর্বাঙ্গের স্বাস্থ্যস্বরূপ।” হিতোপদেশ 4:22। প্রকৃত ধার্মিক মানুষকে ঈশ্বরের সাথে একাত্ম করে, দৈহিক মানসিক ও নৈতিক ব্যবস্থা সমূহের প্রতি বাধ্য করে। এটি আত্ম-নিয়ন্ত্রণ, শান্তি, ও মিতাচার শিক্ষা দেয়। ধর্ম মনকে সাহায্য দান করে, আমোদ-উপভোগকে খাঁটি করে, এবং বিচার বুদ্ধিকে পবিত্র করে। ঈশ্বরের প্রেমের প্রতি বিশ্বাস দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনার বোঝাকে লাঘব করে। সর্ব-উচ্চ অথবা সর্বনীচ সকলের হৃদয়কেই আনন্দ ও তৃপ্তি দান করে। ধর্ম স্বাস্থ্যের উন্নতি করে, আয়ূ বৃদ্ধি করে, ও সকল প্রকার আশীর্বাদ উপভোগ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যিনি সব কিছু উপভোগ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন। যিনি সব চাইতে ভাল কি তা জানেন, তিনি যে পথে চলতে মানা করেছেন, সে পথে চলায় কোন প্রকৃত আনন্দ নাই । PPBeng 435.2
যিহূদীদের বিদ্যালয়ে যে দৈহিক ও ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হত তার বিশ্লেষণ যথেষ্ট লাভজনক হবে। মন ও দেহের মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। নৈতিক ও জ্ঞানের উচ্চ মানে পৌঁছানোর জন্য যে নিয়মকানুন আমাদের দেহ নিয়ন্ত্রণ করে তা শিক্ষা করা প্রয়োজন । PPBeng 436.1
অতীত কালের ইস্রায়েলদের মত এখনো যুবক-যুবতীদের কোন না কোন দৈহিক কাজে দক্ষতা অর্জন প্রয়োজন। এমন কি যদি নিশ্চিত ভাবে জানা যায় যে কোন এক জনকে কোন দিনই দৈহিক শ্রম করতে হবে না, তথাপি তারও দৈহিক কাজ শিক্ষা করা প্রয়োজন। শারীরিক ব্যায়ম ছাড়া কোন মানুষই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারে না। একটি শক্তিশালী ও কার্যরত মন ও উন্নত চরিত্রের জন্য সুনিয়ন্ত্রিত দৈহিক পরিশ্রমের প্রয়োজন । PPBeng 436.2
প্রত্যেক ছাত্রকে দিনের একটি বিশেষ অংশ কার্যকরী দৈহিক পরিশ্রমে যাপন করা উচিত। তাতে যুবক-যুবতীরা সেই সকল মন্দ ও অবক্ষয়ী জিনিস হতে রক্ষা পাবে যেগুলি আলস্যের কারণে তাদের জীবনে এসে থাকে। এই সকলই শিক্ষার মুখ্য উদ্দেশের সহিত সম্পর্কিত। PPBeng 436.3
যুবক-যুবতীরা যদি তাদের প্রতি স্বর্গীয় পিতার গভীর প্রেম উপলব্ধি করতে পারে, যে তাদের কি মহান আহবান দেয়া হয়েছে, ঈশ্বরের সন্তানে পরিণত হওয়ার আহবান তাহলে যে আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর আনন্দে তারা এতদিন লিপ্ত ছিল, তা হতে হাজার হাজার যুবক-যুবতী ফিরে আসবে । তা হলে শাস্তি বা পুরস্কারের লোভেই শুধু তারা পাপ পরিত্যাগ করবে না, বরং পাপের নিকৃষ্টতার জন্যই তারা তা পরিত্যাগ করবে। PPBeng 436.4
ঈশ্বর যুবক-যুবতীদের উচ্চাভিলাষী হতে নিষেধ করেন নি। কিন্তু তাদের শুধু স্বার্থপূর্ণ পৃথিবীর লোভে পরিচালিত না হয়ে, ঈশ্বরের আশীর্বাদে, পৃথিবী হতে স্বর্গ যত উঁচু তত উঁচু লক্ষ্যের দিকে ধাবিত হতে নির্দেশ দেয়া উচিত। তখন যে শিক্ষা এই পৃথিবীতে শুরু হয়েছে তা পরকালেও চালু থাকবে। “চক্ষু যাহা দেখে নাই, কর্ণ যাহা শুনে নাই, এবং মনুষ্যের হৃদয়াকাশে যাহা উঠে নাই, যাহা ঈশ্বর, যাহারা তাঁহাকে প্রেম করে, তাহাদের জন্য প্রস্তুত করিয়াছেন।” ১ করিন্থীয় ২৪৯। পরবর্ত্তী পৃথিবীতেই আনন্দ ও আশীর্বাদের পরিপূর্ণতা আসবে। ঈশ্বরের রূপ পুনঃ স্থাপিত হবার পর মানুষ যে মহিমান্বিত লক্ষ্যে পৌঁছাবে তা শুধু অনন্তকালই জানে । PPBeng 436.5