Go to full page →

রাখাল বালককে নিমন্ত্রণ করা হল PPBeng 463

শমূয়েল ইলীয়াবের পরীক্ষা শেষ করলেন, আর তার পর ছয় ভাই, যারা নিমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেন, একে একে ভাববাদীর চোখের সামনে দিয়া গেলেন। কিন্তু সদাপ্রভু তাদের কাউকেই মনোনয়ন করেছেন বলে কোন ইঙ্গিত দিলেন না। ভীষন দুর্ভাবনায় শয়েল শেষ যুবকের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিলেন। আশ্চর্যান্বিত ও হতবম্ভ হয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “এই কি তোমার সমস্ত সন্তান?” পিতা উত্তর করলেন, “কেবল কনিষ্ঠ অবশিষ্ট আছে, দেখুন, সে মেষ চরাইতেছে।” শমূয়েল নির্দেশ দিলেন যে তাকেও আনা হোক্ । “সে না আসিলে আমরা ভোজনে বসিব না ।” PPBeng 463.1

ভাববাদী বেলেহমে এসে তার অনুসন্ধানে লোক পাঠিয়েছেন এই অপ্রত্যাশিত খবর শুনে নিঃসঙ্গ রাখাল চমকে উঠলেন। ইস্রায়েলদের বিচারক ও ভাববাদী তার সাক্ষা কামনা করবেন ? কিন্তু অনতিবিলম্বে তিনি তার আহবানে সাড়া দিলেন । PPBeng 463.2

“তিনি ঈষৎ রক্তবর্ণ, সুনয়ন ও দেখিতে সুন্দর ছিলেন।” আর যখন শমূয়েল সুন্দর, পুরুষ সুলভ, নম্র রাখাল ছেলের দিকে তাকালেন, তখন ঈশ্বরের বাণী তার কাণে আসল, “উঠ, ইহাকে অভিষেক কর, কেননা এ সেই ব্যক্তি।” রাখালের অতি সাধারণ দায়িত্বে দায়ূদ নিজকে সাহসী ও বিশ্বস্ত বলে প্রমাণ করেছিলেন, আর এখন ঈশ্বর তাকে তাঁর লোকদের অধিপতির পদে আহবান জানাচ্ছিলেন। “অতএব শমূয়েল তৈলশৃঙ্গ লইয়া তাঁহার ভ্রাতৃগণের মধ্যে তাঁহাকে অভিষেক করিলেন। আর সেই দিন হইতে সদাপ্রভুর আত্মা দায়ূদের উপরে আসিলেন।” একটি তৃপ্ত হৃদয় নিয়ে ভাববাদী রামায় ফিরে গেলেন । PPBeng 463.3

দায়ূদকে অভিষিক্ত করার কাজটি গোপনে সম্পন্ন করা হয়। যে উচ্চ দায়ূদকে গন্তব্য তার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে, এটি দ্বারা যুবককে তা অবহিত করা হল যেন তার আগামী জীবনের সমস্ত বিপদের মধ্যেও তার জীবন দ্বারা ঈশ্বর যে লক্ষ্য হাছিল করতে চাচ্ছেন এই জ্ঞান তাকে সেই লক্ষ্যে, অনঢ় রাখে। PPBeng 464.1

যে মহা সম্মান দায়ূদকে দেখানো হল, তা তাকে গর্বিত করে তুলে নি তার অভিষেকের আগেও যেমন সে নম্র ও সরল ছিল, অভিষেকের পরও সেই একই নম্রতা ও সরলতা সহকারে সে পাহাড়ে মেষ চরাতে চলে গেল। কিন্তু এখন সে নতুন উদ্দীপনায় গান রচনা করতে ও বীণা বাঁজাতে লাগল । PPBeng 464.2

তার সামনে প্রসারিত ছিল বিভিন্ন সৌন্দর্যে মন্ডিত প্রাকৃতিক দৃশ্য। সে দেখত উদীয়মান সূর্য পূব আকাশ রাঙায়ে দিয়ে একজন বরের মত আপন আবাস হতে বেরিয়ে আসত, আবার কখনো কখনো “বীরের ন্যায় স্বীয় পথে দৌড়াবার জন্য” যেন সে বেরিয়ে আসত। পাহাড়ের উঁচু উঁচু চুড়াসমূহ আকাশ ছুই ছুই করত । আর এর পেছনে ছিলেন ঈশ্বর । দিনের আলো, অবারিত বন ও পাহাড়, মাঠ ও নদী, সমস্ত কিছুই মনকে সেই স্রষ্টার দিকে ধাবিত করত যিনি সকল উত্তম দানের উৎস। স্রষ্টার চরিত্রের দৈনিক প্রকাশ কিশোর কবির মন আনন্দ ও ভক্তিতে পরিপূর্ণ করত। দায়ূদের হৃদয়ের ও মনের সকল ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছিল এবং ঈশ্বরের সাথে তার যোগাযোগ গভীরতর হচ্ছিল। তার মন সর্বদাই নতুন নতুন গভীরতায় ডুবে তার বীণায় নতুন সুর জাগানোর জন্য নতুন নতুন বিষয় বস্তুর সন্ধান করত। তার কন্ঠের উদ্ধত্ত সুর বাতাসের সাথে এমন ভাবে মিশে যেত যে মনে হত বুঝি স্বর্গীয় দূতগণের সুরের সাথে নিজ সুর মিলিয়ে দিয়েছে। PPBeng 464.3

নির্জন পাহাড়ে পরিশ্রম ও পরিভ্রমণ করার ঐ বৎসরগুলির ফলাফল কে নিরূপণ করতে পারে? ইস্রায়েলদের এই মধুর স্বরে গায়কের সুরসমূহ যুগে যুগে ঈশ্বরের লোকদের হৃদয়ে প্রেম ও বিশ্বাসের বৃদ্ধি করেছে, আর তাদের তাঁর অতি নিকটে নিয়ে এসেছে যার মধ্যে সকল প্রাণীর প্রাণ বেঁচে থাকে । PPBeng 464.4

পৃথিবীর সম্ভ্রান্ততমের সহিত একটি উচ্চ মর্যাদাপূর্ণ আসন পাবার জন্য দায়ূদ প্রস্তুত হচ্ছিলেন। তার আত্মার কাছে ঈশ্বর সম্বন্ধে আরো পরিষ্কার ধারনা প্রকাশ পাচ্ছিল । কঠিন বিষয় দিনে দিনে সহজতর হয়ে উঠেছিল । জটিল বিষয় সকল সরল হয়ে যাচ্ছিল। বেমিল বিষয় মিল পাচ্ছিল। প্রতি নতুন জ্ঞান রশ্মির প্রকাশ ঈশ্বরের ও মুক্তিদাতার গৌরব প্রকাশের জন্য মধুরতর সুর ও গানের জন্ম দিচ্ছিল। তার জীবন দানে ঈশ্বরের যে প্রেম অনুভব করতে পারল তাতে তার হৃদয় ভক্তিতে ও কৃতজ্ঞতায় উদ্বেলিত হয়ে উঠল। তার কন্ঠ আরো সুন্দর সুন্দর সুর সৃষ্টি করল, আর তার বীণা আনন্দের নতুন ধ্বনি প্রকাশ করল । আর রাখাল বালক আরো শক্তিশালী, ও আরো জ্ঞানী হয়ে উঠল, এবং ঈশ্বরের আত্মা তার উপর অধিষ্ঠান করলেন। PPBeng 465.1