শূন্য পৃথিবীকে মানুষ দ্বারা পূর্ণ করার জন্য ঈশ্বর মাত্র একটি পরিবারকে রক্ষা করেন, নোহের পরিবার। তার নিকট ঘোষণা করেন “এই কালের লোকদের মধ্যে আমার সাক্ষাতে তোমাকেই ধাৰ্ম্মিক দেখিয়াছি।” আদিপুস্তক ৭:১ পদ। তথাপি নোহের তিন ছেলের মধ্যে শেম, হাম ও যেফতের মধ্যে...তাদের পরবর্তী বংশধরদের চরিত্র নিহীত ছিল । PPBeng 71.1
নোহ ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে মানব জাতির এই তিন পূর্বপুরুষ হতে নির্গত জাতিগুলির ইতিহাস বর্ণনা করেন। হামের বংশধরদের পিতার মাধ্যমে চিহ্নিত না করে পুত্রের মাধ্যমে চিহ্নিত করে, তিনি ঘোষণা করেন, কনান অভিশপ্ত হউক, সে নিজ ভাইদের দাসানুদাস হইবে। হামের অস্বাভাবিক দুষ্কর্ম তার চরিত্রের জঘন্যতা প্রকাশ করে। এই জঘন্য চরিত্র কনান ও তার বংশধরদের মাধ্যমে স্থায়ীত্ব লাভ করেছিল। PPBeng 71.2
পক্ষান্তরে, স্বর্গীয় প্রেরণার প্রতি শেম ও যেফতের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ দেখা যায় তাদের বংশধরদের জন্য এক উজ্জল ভবিষ্যতের প্রতিজ্ঞা করে । এই ছেলেদের সম্বন্ধে ঘোষণা দেয়া হয়, “শেমের ঈশ্বর সদাপ্রভু ধন্য; কনান তাহার দাস হউক । ঈশ্বর যেফৎকে বিস্তীর্ণ করুন; সে শেমের তাঁবুতে বাস করুক, আর কনান তাহার দাস হউক।” শেমের বংশধরগণ মনোনীত লোকদের বংশ হবে। তার বংশে আব্রাহামের জন্ম হবে ও যিহুদী জাতির সৃষ্টি হবে, খ্রীষ্ট যে জাতির মাধ্যমে আসবেন এবং যেফৎ “শেমের তাঁবুতে বাস করুক”। খ্রীষ্টের আনন্দ সংবাদ যেফতের বংশধরদের বিশেষ অধিকার থাকবে। PPBeng 71.3
কনানের বংশধরেরা পৌত্তলিকতার জঘন্যতম পর্যায়ে নেমে গিয়েছিল। যদিও ভাববাদীর ভবিষ্যদ্বাণী তাদের দাসত্বে পরিণত করেছিল, ঈশ্বর তাদের দুষ্কর্ম অনেক দিন পর্যন্ত সহ্য করলেন যতক্ষণ না তারা স্বর্গীয় ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে গেল । তখন তারা শেম ও যেফতের বংশধরদের দাসে পরিণত হল। PPBeng 71.4
নোহের ভবিষ্যদ্বাণী তার ছেলেদের চরিত্র ও ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করেনি। এটা শুধু দেখিয়েছিল যে যে পথ তারা অবলম্বন করছে এবং যে চরিত্র তারা গড়ছে তার পরিণতি কি হবে। সাধারণ নিয়মে সন্তানেরা তাদের পিতামাতার চরিত্র ও প্রবণতা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করে এবং তাদের দৃষ্টান্ত অনুকরণ করে। এই জন্য হামের জঘন্যতা ও অশ্রদ্ধা তার পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে ফুটে উঠে এবং বংশ পরম্পরায় অভিশাপ বয়ে আনে। PPBeng 71.5
পক্ষান্তরে পিতার প্রতি শেমের শ্রদ্ধা কত প্রচুররূপেই না পুরস্কৃত হয়েছিল, আর তার বংশে কত বিখ্যাত পবিত্র লোকদের আবির্ভাব হয়েছিল! PPBeng 72.1
কিছু কালের জন্য নোহের বংশধরেরা যেখানে জাহাজ থেমেছিল সেই পর্বত অঞ্চলে বাস করতে থাকল। যখন তাদের সংখ্যা বাড়তে লাগল তখন পৌত্তলিকতার জন্য তাদের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি হয়। যারা তাদের স্রষ্টাকে ভুলতে এবং তার আজ্ঞার বাধা-নিষেধ ভেঙ্গে ফেলতে চাইত তারা সর্বদাই তাদের ঈশ্বরকে ভয়কারী সাথীদের শিক্ষা ও দৃষ্টান্তের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করত । কিছু কাল পরে তারা পৃথক হওয়ার সিদ্ধান্ত নিল । এই সিদ্ধান্ত অনুসারে তারা ইউফ্রেটিস নদীর তীরে শিনিয়র দেশের অবস্থানের সৌন্দর্য ও ভূমির উর্বরতার দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে সেখানে যাত্রা করল । PPBeng 72.2
এখানে তারা একটি শহর ও তার মধ্যে একটি খুব উঁচু চূড়া নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিল যে চূড়ার উচ্চতা পৃথিবীর একটি অত্যাশ্চর্য জিনিসে পরিণত করবে। ঈশ্বর মানুষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে তারা যেন সমস্ত পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু এই বাবিল নির্মাণকারীরা তাদের জাতিকে একত্রিত রাখার সঙ্কল্প করল এবং এমন এক রাজত্ব তৈরীর চিন্তা করল যা সমস্ত পৃথিবীকে আলিঙ্গন করবে। এই ভাবে তাদের শহর সমগ্র বিশ্ব সাম্রাজ্যের প্রধান নগরে পরিণত হবে। এর গৌরব সমস্ত পৃথিবীর বিস্ময় ও সম্মান হরণ করবে। জাঁকজমক পূর্ণ এই দালান, যা স্বর্গ পর্যন্ত পৌছাবে, এর নির্মাতাদের ক্ষমতা ও বুদ্ধির স্মৃতিশৌধরূপে অবস্থান করবে বলে ধারণা করা হল । PPBeng 72.3
ঈশ্বর যে চুক্তি করেছিলেন যে তিনি আর পৃথিবীতে কোন প্লাবন আনবেন না, শিনিয়র সমভূমির অধিবাসীরা তা অবিশ্বাস করল। চূড়া নির্মাণের একটি লক্ষ্য ছিল যে আরেকবার বন্যা হলে যেন নিরাপত্তা বিধান করা সম্ভব হয়। আর যখন তারা মেঘমালার দেশে পৌছাবে, তখন তাদের ইচ্ছা ছিল যে বন্যার কারণ নিরুপণ করবে। পুরো প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল প্রণেতাদের গৌরব বৃদ্ধি করা ও ভবিষ্যৎ বংশধরদের ঈশ্বর হতে দূরে সরিয়ে রাখা । PPBeng 72.4
যখন দালানের চূড়া আংশিক তৈরী হয়েছে, তখন যে কাজ এত উন্নতির সহিত এগিয়ে চলছিল তা সহসাই বাধাগ্রস্ত হল। নির্মাতাদের লক্ষ্যকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করার জন্য দূতগণকে পাঠানো হল। দালানের চূড়া এমন উঁচু হয়ে গিয়েছিল যে বিভিন্ন অবস্থানে মানুষকে দাঁড় করানো হয়েছিল যেন তারা পর্যায়ক্রমে উপরে কি প্রয়োজন তার হুকুম একে একে নীচ পর্যন্ত পৌছিয়ে দিতে পারে। যখন এই ভাবে নির্দেশ উপর থেকে নীচে যাচ্ছিল তখন সহসা ভাষা তালগোল পাকিয়ে গেল এবং যে নির্দেশ দেয়া হচ্ছিল তার বিপরীত কাজ হতে লাগল । সমস্ত কাজ থেমে পড়ল। নির্মাতারা তাদের মধ্যের অদ্ভূত ভুল বুঝাবুঝির কারণ বুঝতে সম্পূর্ণ অক্ষম হল, এবং ক্রোধে ও হতাশায় একে অন্যকে দোষী করতে লাগল। ঈশ্বরের অসন্তুষ্টির চিহ্ন স্বরূপ আকাশ থেকে বজ্র-পাত হয়ে চূড়ার উপরের অংশটুকু ভেঙ্গে নীচে ফেলে দিল । PPBeng 72.5