মানুষের প্রতি ঈশ্বরের প্রেম । ( GOD’S LOVE FOR MAN )
ত্রাণার্থীর আশাপূরণ ।
- Contents- সূচীপত্র।
-
- মানুষের প্রতি ঈশ্বরের প্রেম । ( GOD’S LOVE FOR MAN )
- দ্বিতীয় অধ্যায়
- পাপীর খ্রীষ্টে প্রয়োজন । (The SINNER’S NEED OF CHRIST)
- তৃতীয় অধ্যায়
- অনুতাপ । (REPENTANCE)
- চতুর্থ অধ্যায়
- পাপ স্বীকার । (CONFESSION)
- পঞ্চম অধ্যায়
- আত্ন-সমর্পণ |(CONSERATION)
- ষষ্ঠ অধ্যায়
- বিশ্বাস ও পরিগ্রহন |(FAITH AND ACCEPTANCE)
- সপ্তম অধ্যায়
- শিষ্যত্বের লক্ষন |(THE TEST OF DISCIPLESHIP)
- অষ্টম অধ্যায়
- খ্রীষ্টে শ্রীবৃদ্ধি লাভ |(GROWING UP INTO CHIRST)
- নবম অধ্যয়
- কার্য্য ও জীবন । (THE WORK AND LIFE)
- দশম অধ্যায়
- ঈশ্বর সন্মন্ধে জ্ঞান|(A KNOWLEDGE OF GOD)
- একাদশ অধ্যায়
- প্রার্থনা করিবার অধিকার। (THE PRIVILIEGE OF PRAYER)
- দ্বাদশ অধ্যায়
- সন্দেহ ভঞ্জন। (WHAT TO DO WITH DOUBT)
- ত্রয়োদশ অধ্যায়
- আনন্দ সাধনা । (REJOICING IN THE LORD)
Search Results
- Results
- Related
- Featured
- Weighted Relevancy
- Content Sequence
- Relevancy
- Earliest First
- Latest First
- Exact Match First, Root Words Second
- Exact word match
- Root word match
- EGW Collections
- All collections
- Lifetime Works (1845-1917)
- Compilations (1918-present)
- Adventist Pioneer Library
- My Bible
- Dictionary
- Reference
- Short
- Long
- Paragraph
No results.
EGW Extras
Directory
প্রথম অধায়
মানুষের প্রতি ঈশ্বরের প্রেম । ( GOD’S LOVE FOR MAN )
প্রকৃতি ও প্রত্যাদেশ উভয়েই সমানভাবে ঈশ্বরের প্রেম ঘোষণা করিতেছে।আমাদের স্বর্গস্থ পিতা প্রজ্ঞা, জীবন ও আনন্দের মূল কারন। একবার প্রকৃতির সুন্দর ও অপূর্ব্ব বস্তু গুলির পানে চাহিয়া দেখ । শুধু মানুষে জন্য নহে ,সমগ্র প্রানী —জগতের সুখ ও প্রয়োজনীয়তার নিমিও কেমন অপূর্ব উপায়ে উহারা আপনা —দিগকে উপযোগী করিয়া রাখিয়াছে ! এই পথিবী যাহারা শ্যামল —শ্রী দান করিয়াছে সেই সূর্য্যা কিরন ও বরষা ধারা এবং সাগর ,পাহার ও বিস্তীর্ণ প্রান্তরসমূহ —সকলেই একস্বরে সৃষ্টিকর্ত্তার প্রেম ঘোষণা করিতেছে । ঈশ্বরই তাহার সমুদয় জীবের প্রতিদিনের অভাব অনুযায়ী বিবিধ দ্রব্য যোগাইতেছেন। গীত-সংহিতার রাজ- কবি গাহিয়াছেনঃ- SC 5.1
“সকলের চক্ষু তোমার অপেক্ষা করে ,
তুমিই যথাসময়ে তাহাদিগকে ভক্ষ্য দিতেছ ।
তুমিই আপন হস্ত মুক্ত করিয়া থাক ,
সমুদয় প্রানীর বাঞ্ছা পূর্ণ করিয়া থাক।” (গীত ১৪৫ ঃ ১৫, ১৬) ।SC 5.2
ঈশ্বর মানুষকে সম্পূর্ণ সুখী ও পবিত্র করিয়াই সৃষ্টি করিয়াই-ছিলেন ; এবং সৃষ্টিকর্ত্তার সুন্দর পথিবীতে সর্বপ্রথম ধ্বংসের কোন চিহ্ন, অথবা অভিশাপের কোন ছায়া পতিত হয় নাই ঈশ্বরের ব্যবস্থা , অর্থাৎ প্রেমের ব্যবস্থা লঙ্ঘনের ফলেই পৃথিবীতে শোক ও মৃ্ত্যু আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে । তথাপি পাপের পরিণামস্বরূপ যন্ত্রনার মধ্যেও ঈশ্বরের প্রেম প্রকাশিত রহিয়াছে । শাস্ত্রে লিখিত আছে যে , ঈশ্বরে মানুষের নিমিও ভূমিকে অভিশাপ দিয়াছিলেন (আদি ৩:৭) । মানুষের মঙ্গলের জন্যই ঈশ্বর কণ্টক ও শেয়াল কাঁটা-অথাৎ ক্লেশপূর্ণ মানব জীবনের বাধাবিপওি ও পরীক্ষাসমুহ নির্দ্ধারিত করিয়াছিলেন ; তাহা হইতে মানুষকে উদ্ধার করিবার জন্য ঈশ্বরের এইরূপ শিক্ষার ব্যবস্থা।জগৎ পতিত হইলেও শুধু দুঃখ ও বেদনাতেই পরিপূর্ন নহে কণ্টকেও ফুলরাশি শোভিত রহিয়াছে । এইরূপে প্রকৃতিই আশা ও সান্ত্বনার বার্ত্তা ঘোষণা করিতেছে SC 5.3
প্রত্যেক ফুটন্ত কলিতে ও প্রত্যেক তৃণ- শীর্ষে, ” ঈশ্বর প্রেমময় ‘‘ এই কথাটি লিখিত রহিয়াছে । মধুর কলকণ্ঠে আকাশ ও বাতাস মুখরিত করিয়া যে সুন্দর পাখির দল আনন্দে গান গাহিতে গাহিতে ছুটিয়া চলিতেছে , বিচিএবর্ণে রঞ্জিত যে সকল ফুলরাশি বাতাসে সৌরভ বিতরন করিতেছে ,বনে বনে উচ্চশির তুলিয়া যে সমুদয় বৃক্ষ সবুজ পত্ররাজি বিস্তার করিয়া অরণ্য শোভিত করিয়া রহিয়াছে তাহারা সকলেই । আমাদের নিমিও পরমেশ্বরের সকরুন যত্ন এবং তাহার সন্তানদিগকে সুখে রাখিবার জন্য তাহার বিপুল বাসনা প্রকাশ করিতেছে ।SC 6.1
ঈশ্বরের বাক্যে তাহার আপন স্বভাব প্রকাশ পাইয়াছে । তিনি স্বয়ং তাহার অনন্ত প্রেম ও করুনা ব্যক্ত করিয়াছেন । মোশি যখন “আমাকে তোমার প্রতাপ দেখিতে দেও ” —এই বলিয়া প্রার্থনা জানাইলেন ,তখন সদাপ্রভু উওর করিয়া কহিলেন , “আমি তোমার সম্মুখ দিয়া আপনার সমস্ত উওমতা গমন করাইব”(যাএা ৩৩:১৮,১৯) । ইহাই ঈশ্বরের মহিমা । সদাপ্রভু মোশির সম্মুক দিয়া গমন করিয়া এই ঘোষণা করিলেন , “সদাপ্রভু সদাপ্রভু স্নেহশীল ও কৃপাময় ঈশ্বর ; ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে ও সত্যে দয়ারক্ষক,অপরাধের,অধর্ম্মের ও পাপের ক্ষমাকারী (যাএা ৩৪:৬,৭)। “তিনি ক্রোধে ধীর ও দয়াতে মহান “(যোনা ৪:২)। “কারন তিনি দয়ায় প্রীত” (মীখা ৭:১৮) ।SC 6.2
স্বর্গে ও পৃথিবীতে অগনিত চিহ্ন দ্বারা ঈশ্বর তাহার সহিত আমাদের হৃদয় বাধিয়া রাখিয়াছেন । প্রকৃতির বিভিন্ন ব্যাপারের এবং মানবহৃদয়ের এই পৃথিবীতে যে সমুদয় অতি গভীর অতি কোমল বন্ধন রহিয়াছে সেই সমুদয়ের মধ্য দিয়া, তিনি আপনাকে আমদের নিকট প্রকাশ করিতে চেষ্টা পাইয়াছেন ।তথাপি এই সমুদয় তাহার প্রেম অসর্ম্পূন ভাবে প্রকাশ করিতেছে মাত্র ।এই সকল প্রমান সত্বেও সত্যের শত্রু এরূপভাবে মানুষের মনকে অন্ধ করিয়া তুলিয়াছে যে তাহারা ঈশ্বরকে ভয়ের চক্ষে দেখিয়া থাকে তাহারা ঈশ্বরকে কঠোর ও ক্ষমাবিমুখ বলিয়া মনে করে । শয়তান মানুষের হৃদয়ে ঈশ্বর সমন্ধে এইরূপ ধারনা জন্মাইতে চেষ্টা করিয়াছে যে তিনি অতি কঠিন বিচারক এবং অতি রুঢ়-প্রকৃতির মহাজন । সৃষ্টিকওা যেন মানুষের ভূল ভ্রান্তি খুজিয়া বা হর করিবার জন্য সর্ব্বদা সাবধানে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিতেছেন,যেন তাহাদের উপরে তিনি তাহার বিচার-দণ্ড প্রয়োগ করিতে পারেন।শয়তান ঈশ্বরের চিএিত করিয়াছে ।জগতের সম্মুখে ঈশ্বরের অনন্ত প্রেম প্রকাশ করত; এই অন্ধকার ছায়া দূর করিবার জন্য যীশু মানবজাতির মধ্যে বাস করিতে আসিয়াছিলেন। SC 7.1
ঈশ্বর-পুত্র পিতাকে প্রকাশ করিবার নিমিও স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিয়াছিলেন। ঈশ্বরকে কেহ কখন দেখে নাই; একজাত পুত্র যিনি পিতার ক্রোড়ে থাকেন,তিনিই(তাঁহাকে) প্রকাশ করিয়াছেন (যোহন ১:১৮)। “পিতাকে কেহ জানে না, কেবল পুত্র জানেন এবং পুত্র যাহার নিকটে তাঁহাকে প্রকাশ করিতে ইচ্ছা করেন সে জানে ” (মথি১১:১৭)।“পিতাকে আমাদের দেখাউন”-যখন জনৈক শিষ্য এইরূপ অনুরোধ করিলেন, তখন যীশু উওরে বলিয়াছিলেন “ফিলিপ, এতদিন আমি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি তথাপি তুমি আমাকে কি জান না ? যে আমাকে দেখিয়াছে সে পিতাকে দেখিয়াছে তুমি কেমন করিয়া বলিতেছে, পিতাকে আমাদের দেখাউন ?(যোহন ১৪:৮,৯)।SC 7.2
যীশু, তাহার এই পৃথিবীর কার্য্য বর্ণনা করিয়া বলিয়াছেন যে সদা প্রভু “আমাকে অভিষিক্ত করিয়াছেন, দরিদ্রদের কাছে সুসমাচার প্রচার করিবার জন্য ,তিনি আমাকে প্রেরন করিয়াছেন, বন্দিগণের মুক্তি প্রচার করিবার জন্য , অন্ধদের কাছে চক্ষুর্দান প্রচার করিবার জন্য ; উপদ্রুতদিগকে নিস্তার করিয়া বিদায় করিবার জন্য (লূক ৪:১৮ )। ইহা তাহার কার্য্য ছিল । তিনি মানুষের মঙ্গল করিয়া এবং যাহারা শয়তান দ্বারা উৎপীড়িত তাহাদিগকে সুস্থ করিয়া ইতস্ততঃ পরিভ্রমন করিতেন। গ্রামের পর গ্রাম চলিয়াছে , অথচ উহাদের একখানি গৃহেও ব্যাধির আর্ত্তনাদ শোনা যাইত না , কারন তিনি ঐ সকল গ্রাম অতিক্রম করিবার সময় সমুদই ব্যাধি-প্রপীড়িত বাক্তিকে সুস্থ করিয়া গিয়াছেন ।তাহার কার্য্যকলাপই তাহার স্বর্গীয় অভিষেকের সাক্ষ্য বহন করিয়াছে ; তাহার জীবনের প্রত্যেক কার্য্যে প্রেম, করুনা ও পরদুঃখকাতরতা প্রকাশ পাইয়াছে ; মানব সন্তানগনের নিমিও করুন সমব্যথার তাঁহার প্রান ধাবিত হইয়াছিল। তাই তিনি মানুষের স্বভাব গ্রহন করিলেন , যেন তিনি মানুষের অভাবসমূহ মর্ম্মে মর্ম্মে উপলব্ধি করিতে পারেন ।অতিশয় দীন দরিদ্রগনও তাঁহার সম্মুখে অগ্ররসর হইতে ভয় পাইত না। এমন কি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিশুগণও তাহার প্রতি আকৃষ্ট হইত ।তাহারা তাঁহার ক্রোড়ে উঠিতে এবং প্রেমের আলোকে উজ্জল তাহার চিন্তামগ্ন মুখখানির পানে চাহিয়া থাকিতে ভাল বাসিত।SC 8.1
যীশু কখনও একটী সত্য বাক্যও চাপিয়া রাখেন নাই, কিন্তু সর্ব্বদা প্রেমে ভরপুর হইয়া উহা প্রকাশ করিয়াছেন। লোকদের সহিত কথাবার্ত্তা বলিবার সময়ে তিনি অতিশয় বিবেচনা সহকারে , ধীর ও সদয়ভাবে কথা বলিয়াছেন । কখনও তিনি রূঢ় ব্যবহার করেন নাই অযথা কঠিন বাক্য প্রয়োগ করেন নাই এবং অনায়াসে বিচলিত কোন হৃদয়ে অযথা আঘাত দেন নাই। তিনি মানুষের স্বাভাবিক দুর্ব্বলতার প্রতি তিরস্কার করেন নাই । সর্ব্বদা প্রেমে পূর্ণ হইয়া সত্য বলিয়াছেন অবিশ্বাস অধর্ম্ম ও কপটতার নিমিও ভর্ৎসনা করিয়াছেন বটে, কিন্তু কঠোর তিরস্কার বাক্য উচ্চারন করিবার কালে তাহার অশ্রু পূর্ণ চক্ষু ব্যথিত কঠোর কণ্ঠের সহিত অনুযোগ করিত । যে নগরীকে তিনি ভালবাসিতেন ,অথচ যাহা তাহাকে এবং তাহার পন্থা,সত্য ও জীবন প্রত্যাখ্যান করিল,সেই যিরূশালেম নগরীর উপরে তিনি অশ্রুপাত করিলেন ।তাহারা ত্রাণকর্ত্তাকে ঠেলিয়া ফেলিতে চাহিল অথচ ত্রাণকর্ত্তা করুন ও কমল ভাবে তাহাদিগকে দেখইতে লাগিলেন ।তাহাঁর জীবন আত্ন-ত্যাগের এবং অপরের নিমিও সদয় ব্যবহারে পূর্ণ ছিলো ।তাহার দৃষ্টিতে প্রত্যেকটি আত্নাই বহু মূল্যবান ছিল তিনি স্বয়ং ঐশ্বরিক মর্য্যাদায় পরিপূর্ণ থাকিয়াও ঈশ্বরের পরিবারস্থ প্রত্যেক মানুষের প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত ছিলেন সমগ্র মনবজাতিই পতিতাবস্থায় বিবেচনা করিয়া তিনি তাহাদিগকে উদ্ধার করাই তাহার জীবনের কার্য্য করিয়াছিলেন ।SC 8.2
খ্রীষ্টের এইরূপ স্বভাব তাঁহার জীবনে প্রকাশ পাইয়াছে । ঈশ্বরের স্বভাবও এইরূপ। খ্রীষ্টে প্রকাশিত ঐশ্বরিক অন্নুকম্পার স্রোত পিতার হৃদয় হইতেই মানব সন্তানে প্রবাহিত হইয়াছে । অতি করুন ও সমব্যাথী ত্রানকর্ত্তাই যীশুই , মাংসে প্রকাশিত ঈশ্বর। ১ তীম ৩:১৬ ।SC 9.1
আমাদিগকে পরিত্রাণ করিবার জন্যই যীশু জীবন ধারন, যন্ত্রণা ভোগ ও মৃত্যু বরন করিয়াছিলেন । আমরা যেন চিরস্থায়ী আনন্দের আংশী হইতে পারি এই জন্য তিনি “ব্যথার পাত্র” হইলেন। ঈশ্বর সত্য ও মাধুর্য্যে প্রিয়তম পুত্রকে বর্ণনাতীত মহিমাময় এক জগৎ ছাড়িয়া পাপের আঘাতে বিনষ্ট ও শ্রীহীন এবং মৃত্যু ও অভিশাপের ছায়ায় অন্ধকারাচ্ছন্ন অপর এক জগতে আসিবার অনুমতি দিয়াছিলেন। তিনিই তাহাকে তাহার স্নেহ পূর্ণ বক্ষ ও দুতগনের শ্রদ্ধা ত্যাগ করিয়া ঘৃনা লজ্জা অপমান ও মৃত্যু সহ্য করিবার জন্য এই পৃথিবীতে আসিবার অনুমতি দিলেন “আমাদের শান্তিজনক শাস্তি তাহার উপর বর্ত্তিল এবং তাহার ক্ষত সকল দ্বারা আমাদের আরোগ্য হইলো”(যিশা ৫৩:৫)। একবার প্রান্তরে গেৎশিমানা উদ্যানে ও ক্রুশের উপরে তাহাকে চাহিয়া দেখ ! কালিমা বিহীন ঈশ্বর পুত্র আপনা উপরে পাপের ভার বহন করিলেন । তিনি ঈশ্বরের সহিত এক ছিলেন ,তাই পাপের কারন ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে যে বিশাল ব্যবধান সৃষ্টি করিয়াছিল ,তাহাতে তিনি মর্ম্মে ব্যথা অনুভব করিলেন। ইহাতেই তাহার কণ্ঠ হইতে সেই যাতনাসূচক চীৎকার বাহির হইয়াছিল —“ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিতাগ করিয়াছ?(মথি ২৭:৪৬)। এই পাপের বোঝা ,উহার গুরুত্ব সম্বন্ধিও জ্ঞান এবং ঈশ্বর ও মনুষের মধ্যে পাপাকৃত ব্যবধানের বোধ —ইহাই ঈশ্বর পুত্র হৃদয় ভাঙ্গিয়া দিয়াছিল ।SC 9.2
কিন্তু পিতার হৃদয়ে মানুষের নিমিওে প্রেম সৃষ্টি করিবার জন্য তাহাঁর ভিতর ত্রান করিবার ইচ্ছা জন্মাইবার জন্য এই মহান আত্ন-ত্যাগ সাধিত হয় নাই । সেরুপ কখনই হইতে পারে না !“কারন ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম দান করিলেন যে আপনার একজাত পুত্রকে দান করিলেন”(যোহন ৩:১৬)। এই মহান (পাপার্থক) প্রায়শ্চিওের নিমিও যে ঈশ্বর আমাদিগকে ভালবাসেন তাহা নহে ,কিন্তু তিনি আমাদিগকে ভালবাসেন বলিয়াই এইরূপ প্রায়শ্চিওের ব্যবস্থা করিয়া দিয়াছেন। খ্রীষ্টের মধ্যবর্ত্তিতার ভেতর দিয়া ঈশ্বর এই পতিত জগতের উপরে তাহার অনন্ত প্রেম বর্ষণ করিয়াছিলেন।”(২ করি ৫:১৯)। ঈশ্বর তাহার পুত্রের সঙ্গে সঙ্গে যতনা ভোগ করিয়াছিলেন । গেৎশিমানীর মর্ম্মভেদী যন্ত্রণায়, কালভেরীর মৃত্যু দৃশ্যে ঈশ্বরের অনন্ত প্রেমপূর্ণ হৃদয় আমাদের মুক্তির মূল্য প্রদান করিয়াছেন ।SC 10.1
যীশু কহিয়াছেন “পিতা আমাকে এই জন্য প্রেম করেন, কারন আমি প্রাণসমর্পন করি, যেন পুনরায় তাহা গ্রহন করি” (যোজন ১০:১৭)। অথাৎ “আমার পিতা তোমাদিগকে এত ভালোবাসেন যে আমি তোমাদের পরিত্রানের জন্য আমার জীবন দান করিয়াছি বলিয়াই আমাকে অধিক ভালবাসেন।আমার জীবন সমর্পণ এবং তোমাদের পাপ ও দায়িত্ব গ্রহন করিয়া তোমাদের প্রতিনিধি ও প্রতিভূ (জামিন) হইয়াছি বলিয়াই ,আমি পিতার নিকটে প্রিয়তম হইয়াছি ; কারন আমার বলি দ্বারাই ঈশ্বর ন্যায়পরায়ণ হইতে এবং যে যীশুতে বিশ্বাস করে তাহাকে ধাম্মিক বলিয়া গননা করিতে পারেন ।”SC 11.1
ঈশ্বর-পুত্র ব্যতিত অপর কেহই আমাদের পরিত্রাণ করিতে পারেন না । কারন যিনি পিতার বক্ষে ছিলেন একমাত্র তিনি তাহাকে প্রকাশ করিতে পারেন।যিনি ঈশ্বর প্রেমের উচ্চতা ও বিশালতা উপলব্ধি করিতে পারিয়াছেন একমাত্র তিনিই উহা প্রকাশ করিতে পারেন। পতিত মানবের নিমিও খ্রীষ্টের অনন্ত বলি অপেক্ষা ন্যূন অপর কিছুই ভ্রষ্ট মানবজাতির জন্য পিতার প্রেম ব্যক্ত করিতে পারে না। SC 11.2
“কারন ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে একজাত পুত্রকে দান করিলেন।” তিনি শুধু তাহাকে মানুষের মধ্যে বাস করিতে, তাহাদের পাপ বহন এবং তাহাদের নিমিও বলিরূপে জীবন উৎসগ করিতে দান করেন নাই , তিনি পতিত জাতির নিকটে তাহাকে একেবারে সমর্পণ করিয়াছিলেন ।মানব-জাতির স্বার্থ ও অভাবসমূহের সহিত খ্রীষ্ট আপনাকে অভিন্ন করিয়া নিয়াছিলেন। যিনি ঈশ্বরের সহিত এক ছিলেন তিনি মানবসন্তানের সহিত বন্ধনে আপনাকে জড়িত করিয়া নিলেন যে বন্ধন কখন ছিন্ন হইতে পারে না। যীশু কখন “তাহাদিগকে ভ্রাতা বলিতে লজ্জিত নহেন”(ইব্রীয় ২:১২)। তিনি আমাদের বলি, আমাদের সহায়, পিতার সিংহাসনের সম্মুখে মানবীয় রূপধারী আমাদের ভ্রাতা এবং যে জাতির পরিত্রাণ করিয়াছেন অনন্ত যুগধরিয়া মানুষ্যপুত্ররূপে তিনি সেই জাতির সহিত এক হইয়া থাকিবেন । মানুষ যেন পাপের ফলস্বরূপ অবনতি ও ধ্বংস হইতে উন্নীত হইতে পারে, যেন সে ঈশ্বরের প্রেম প্রতিফলিত করিতে এবং পবিত্রতার আনন্দের অংশী হইতে পারে তজ্জন্য তাঁহার এই সমুদয় কার্য্য।SC 11.3
আমাদের পরিত্রানের মূল্যস্বরূপ যাহা প্রদত্ত হইয়াছে এবং আমাদের নিমিও মরিবার জন্য আমাদের স্বর্গস্ত পিতা তাহার পুত্রকে দান করিয়া যে অসীম ত্যাগ দেখাইয়াছেন ,এই উভয়ই আমরা খ্রীষ্টের সাহায্যে কি হইতে পারি, সেই সম্বন্ধে আমাদিগকে উচ্চ ধারনা দান করিবে । প্রত্যাদিষ্ট ধর্ম্ম প্রনিধি প্রেরিত যোহন যখন পতনোম্মুখ মানবজাতির প্রতি পরমপিতার প্রেমের উচ্চতা, বিশালতা ও ব্যাপকতা উপলদ্ধি করিতে পারিলেন, তখন তিনি শ্রদ্ধা ও ভক্তিতে পূর্ণ হইয়া গেলেন ; এবং এই প্রেমের বিশালতা ও কারুণ্যভাব ব্যক্ত করিবার উপযুক্ত ভাষা না পাইয়া তিনি জগৎবাসিকে উহা প্রতক্ষ্য করিবার নিমিও আহাবান করিলেন।“দেখো, পিতা আমাদিগকে কেমন প্রেম দান করিয়াছেন যে আমরা ঈশ্বরের সন্তান বলিয়া আখ্যাত হই। “(১যোহন ৩:১) মানবজাতির উপরে কি মহা মূল্য স্থাপন করা হইয়াছে ! ব্যবস্থা লঙ্ঘনের ফলে মানবসন্তানগন শয়তানের অধীন হইয়া পরে। খীষ্টে প্রায়শ্চিওকর বলিদানে বিশ্বাস করিয়া আদমের সন্তানগণ পুনরায় ঈশ্বরের সন্তান হইতে পারে । মানবীয় প্রকৃতি ধারন করিয়া খ্রীষ্ট মানবকে উন্নীত করিলেন । পতিত মানবকূল এরূপ স্থানে রক্ষিত হইয়াছে , যে স্থানে খ্রীষ্টের সর্ম্পকের মধ্যে দিয়া তাহারা সত্য সত্যই “ঈশ্বরের সন্তান “নামের উপযুক্ত হইতে পারে। এরূপ প্রেমের আর কোন তুলনা নাই । সকলেই স্বর্গস্থ রাজার সন্তান ! কিরূপ অমূল্য এই অঙ্গীকার ! ইহা অতি গভীর ধ্যানের বিষয় বটে ! যে পৃথিবী ঈশ্বরকে ভালবাসিতে চাহিল না সেই পৃথিবীর জন্য তাহার কিরূপ অতুলন প্রেম ! এরূপ চিন্তা আত্মাকে বশীভূত করিয়া ফেলে এবং ঈশ্বরের ইচ্ছার সম্মুখে মনকে বন্দী করিয়া রাখে । ক্রুশের আলোতে আমরা এই ঐশী স্বভাবের বিষয়ে যতই অনুধ্যান(গভীরভাবে আলোচনা) করি ততই আমরা তাহার সমদৃষ্টি ও ন্যায়পরতা —মিশ্রিত ক্ষমা, করুনা, ও কোমলতা লক্ষ্য করিতে পারি-এবং আরও অধিক সুস্পষ্টভাবে এরূপ এক প্রেমের অসংখ্য প্রমান পাই, যে প্রেম অসীম ,- এরূপ এক কোমলতা —মিশ্রিত করুনার পরিচয় পাই, যাহা অবাধ্য সন্তানের নিমিও মায়ের ব্যাকুলতাপূর্ণ সমবেদনাকেও অতিক্রম করে ।SC 12.1
যে ক্রুশে নিহত মহিমা-কুমার,
চেয়ে দেখি যবে সে ক্রুস পানে,
সম্পদ যত ক্ষতি বলে গনি
দম্ভ সকলি
বেদনা হানে ।
(তাঁরা) সারা দেহ হতে পড়িছে ঝরিয়া
প্রেম-বেদনায় অতুল মণি
কেহ কি কখনো দেখেছে এমন ?
কাঁটার মুকুটে হীরকখনি ?
পথ হারা মোর পতিত জীবন
পেয়েছে করুণা তাঁহারি নামে;
সাজে কি কখনো গর্ব্ব আমার-
গর্ব্ব,প্রভুর সে ক্রুশ বিনে ?
সম্ভব যদি দিতে তার পায়
পৃথিবীর ধন নহে তো ভারি,
তুলনা-বিহীন এতো প্রেম যার , দেহ প্রান ধন সকলি তাঁরি। SC 13.1