Loading...
Larger font
Smaller font
Copy
Print
Contents

ত্রাণার্থীর আশাপূরণ ।

 - Contents
  • Results
  • Related
  • Featured
No results found for: "".
  • Weighted Relevancy
  • Content Sequence
  • Relevancy
  • Earliest First
  • Latest First

    সপ্তম অধ্যায়

    শিষ্যত্বের লক্ষন |(THE TEST OF DISCIPLESHIP)

    “ফলতঃ কেহ যদি খ্রীষ্টে থাকে, তবে নূতন সৃষ্টি হইল; পুরাতন বিষয়গুলি অতীত হইয়াছে ,দেখ, সেগুলি নূতন হইয়া উঠিয়াছে “(২ করি ৫:১৭)।SC 58.1

    কোন ব্যক্তি হয়ত তাহার মন পরিবর্ত্তনের ঠিক সময় ,বা স্থান, অথবা পরিবর্ত্তনের সমুদয় ঘটনা একটীর পর একটী বলিতে পারিবে না ; কিন্তু ইহা দ্বারা , তাহার যে মনের পরিবর্ত্তন হয় নাই, এরূপ কথা বলা যায় না ।খ্রীষ্ট নীকদীমকে বলিয়াছিলেন, “বায়ু যে দিকে ইচ্ছা করে, সে দিকে বহে ,এবং তাহার শব্দ শুনিতে পাও; কিন্তু কোথা হইতে আইসে, আর কোথায় চলিয়া যায়, তাহা জান না ; আত্না হইতে জাত প্রত্যেক জন সেইরূপ ” (যোহন ৩:৮)। বাতাস অদৃশ্য বটে, তথাপি উহার ক্রিয়াদি বেশ দৃষ্ট হয় ও অনুভব করা যায়; সেইরূপ মানব হৃদয়ে ঈশ্বরের আত্মার কার্য্য ও বুঝিবার ও অনুভব করিবার বিষয় । সেই নব জীবনদায়ক শক্তি, মানব চক্ষু যাহা দেখিতে পারে না, তাহাই আত্মার নূতন জীবন দান করে; উহা ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তিতে এক নতুন জীবের সৃষ্টি করে। আত্মার কার্য্য নীরবে ও অজ্ঞাতসারে হইলেও উহার কার্য্যফল সমূহ স্পষ্টই প্রত্যক্ষ করা যায় । ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা হৃদয় পুনরুজ্জীবিত হইলে, জীবন তাঁহার সাক্ষ্য বহন করিবে ।আমরা নিজের চেষ্টায় আমাদের হৃদয়ের পরিবর্ত্তন সাধন ,অথবা ঈশ্বরের সহিত সঙ্গতি স্থাপন করিতে পারি না;আমরা নিজেদের অথবা আমাদের সৎ কার্য্যর উপরে কখনও নির্ভর করিব না বটে, তথাপি ঈশ্বরের করুনা আমাদের জীবনে বাস করিতেছে কিনা তাহা আমাদের জীবনই প্রকাশ করিবে । আমাদের চরিত্র, অভ্যাস ও কার্য্যসমূহে পরিবর্ত্তন দেখা যাইবে । ঐ সমস্ত পূর্ব্বে কিরূপ ছিল এখন কিরূপ হইয়াছে, এই দুই বিভিন্ন অবস্থা দ্বারা, উভয়ের পার্থক্য স্পষ্টরূপে প্রতিভাত হইবে । সাময়িক সৎ বা অসৎ কার্য্যে দ্বারা নহে, কিন্তু প্রতিক্ষণের অভ্যাসগত বাক্য ও কার্য্যের প্রতি আগ্রহ দ্বারাই চরিত্র প্রকাশিত হইয়া থাকে ।SC 58.2

    অবশ্য এ কথাও সত্য যে খীষ্টের পুনরুজ্জীবনি শক্তি ব্যতিত অনেক সময়ে বাহ্যিক ব্যবহার বিশুদ্ধ হইতে পারে। প্রভুত্বের ও অপরের শ্রদ্ধালাভের বাসনায় জীবন হয়তো বেশ নিয়মিত হইতে পারে । আত্ন সন্মান হয়তো আমাদিগকে বাহিরের মন্দ আচরণ ত্যাগ করিবার পথে চালিত করিতে পারে ।অনেক সময়ে স্বার্থপর হৃদয়ও উদারতার বা পরার্থপতার কার্য্য করিতে পারে। তবে আমরা কি উপায়ে খুঁজিয়া বাহির করিব যে আমরা কোন্ পক্ষে রহিয়াছি?SC 59.1

    এই হৃদয় কাঁহার অধীনে আছে ? আমাদের চিন্তারাশি কাঁহার সহিত জড়িত ? আমারা কাঁহার বিষয়ে আলোচনা ও আলাপাদি করিতে ভালবাসি ? কে আমাদের প্রানের গভীরতম প্রেম ও সর্ব্বোৎকৃষ্ট উদ্যমসমূহ দাবি করিতে পারেন ? যদি আমরা খ্রীষ্টের হই, তবে আমাদের চিন্তারাশি তাহারই সহিত জড়িত এবং আমাদের মধুরতম চিন্তারাশি তাহারই । আমাদের যাহা কিছু তাহা সমুদয় তাহাতেই নিবেদিত । আমারা তাঁহার প্রতিমূর্ত্তি বহন , তাহার আত্না গ্রহন , তাঁহার ইচ্ছা সাধন এবং সর্ব্ববিষয়ে তাঁহর তুষ্টি বিধান করিতে চাহি ।SC 59.2

    যাহারা খ্রীষ্ট যীশুতে নতুন জীবন লাভ করিয়া নূতন মানুষ হইবে তাহারা ,” প্রেম, আনন্দ , শান্তি , দীর্ঘসহিষ্ণুতা , মাধুর্য্য , মঙ্গল-ভাব , বিশ্বস্ততা , মৃদুতা , ইন্দ্রিয়দমন ” এই সমুদয় আত্নার ফল উৎপন্ন করিতে পারিবে (গোলা ৫:২২,২৩ । তাহারা আর পুর্ব্বের কু-প্রবৃওি অনুযায়ী নিজ নিজ জীবন গড়িয়া তুলিবে না ,কিন্তু ঈশ্বর পুত্রে বিশ্বাসের বলে তাহারা তাঁহার পদাঙ্ক অনুসরণ ও তাঁহার চরিত্র প্রতি-বিন্বিত করিবে এবং তিনি যেরূপ পবিত্র , আপনাদিগকেও সেইরূপ পবিত্র করিয়া তুলিবে । এক সময় তাঁহারা যাহা যাহা ঘৃনা করিত এইক্ষনে তাহাই ভালবাসে এবং যাহা যাহা ভালবাসিত এইক্ষণে তাহাই ঘৃনা করে । দম্ভপূর্ণ ও অহঙ্কারী ব্যক্তিরা বিনীত ও মৃদুশীল হইয়া যায় । আড়ম্বরপূর্ণ ও উদ্ধত ব্যক্তি গম্ভীর ও বিনয়ী হইয়া পড়ে। মদ্যপায়ী সংযমী এবং ইন্দ্রিয়সেবী পবিত্র হইয়া থাকে । পৃথিবীর অসার আচার ব্যবহার ও আদবকায়দা, তাহারা দূরে নিক্ষেপ করে। প্রকৃত খীষ্টিয়ানেরা “বাহ্যভূষন” চাহে না , কিন্ত হৃদয়ের গুপ্ত মনুষ্য, মৃদু ও প্রশান্ত আত্মার অক্ষয় শোভায়, তাহাদের ভূষণ” করিয়া থাকে ১ পিতর ৩:৩,৪।SC 59.3

    স্বভাবের পরিবর্ত্তন সাধিত না হইলে ,অকৃত্রিম অনুতাপের কোনই চিহ্ন পরিলক্ষিত হয় না । যদি পাপী বন্ধক (বা মানত) ফিরাইয়া দেয়, অপহৃত দ্রব্য পরিশোধ ও পাপসমুহ স্বীকার করে এবং ঈশ্বর ও অন্যান্য মানবগনকে প্রেম করে , তবে সে যে মৃত্যু হইতে জীবনে পৌছিয়াছে এ বিষয়ে কোনই সন্ধেহ নাই ।SC 60.1

    ভ্রান্ত ও পাপপূর্ন, আমরা এই মানবকুল যখন খ্রীষ্টের নিকটে পৌছিয়া তাঁহার ক্ষমাশীল করুণার অংশী হই , তখন আমাদের হৃদয়ে প্রেম জাগিয়া উঠে । প্রত্যেক বোঝা তখন লঘু হইয়া যায়; কারন খ্রীষ্ট যে যোঁয়ালি অর্পন করেন ,তাহা সহজ ।কর্ত্তব্য তখন আনন্দময় এবং স্বার্থত্যাগ শান্তিময় বলিয়া বোধ হয় ।পুর্ব্বে যে পথ অন্ধকারাচ্ছন্ন বোধ হইত, এইক্ষনে তাহা ধার্ম্মিকতা-সূর্য্যের কিরন রেখায় সমুজ্জল হইয়াছে ।SC 60.2

    খ্রীষ্ট-চরিত্রের মাধুরতা তাঁহার শিষ্যগণে দৃষ্ট হইবে। তিনি ঈশ্বরের ইচ্ছা সাধন করিয়া আনন্দ পাইতেন । আমাদের ত্রানকর্ত্তার জীবনে ঈশ্বরের প্রতি প্রেম ও তাঁহার গৌরবের নিমিও আগ্রহ , নিয়ামক শক্তিস্বরূপ ছিল । প্রেম তাহাঁর সমুদয় কার্য্য সুন্দর ও মহৎ করিয়া তুলিত। প্রেম ঈশ্বরের সম্পদ । যে হৃদয় নিবেদিত হয় নাই, তাঁহাতে কখনও উহা উৎপন্ন হইতে পারে না। যে হৃদয়ে যীশু রাজত্ব করেন, একমাত্র সেই হৃদয়েই প্রেম থাকিতে পারে । “আমারা প্রেম করি, কারন তিনিই প্রথমে আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন ” (১যোহন ৪:১৯) । ঐশ্বরিক করুণা দ্বারা পুনরুজ্জী- বিত হৃদয়ে , প্রেম সমুদয় কার্য্যের মূলনীতি । উহা চরিত্র সংগঠিত, মনোভাবসমূহ নিয়ন্ত্রিত , ইন্দ্রিয়নিচয় সংযত , শত্রুভাব প্রশমিত, এবং হৃদয়ের কোমল বৃত্তিগুলি উন্নীত করে। অন্তরে এইরূপ প্রেম পোষণ করিলে জীবন মধুময় হয় এবং উহা চতুর্দ্দিকে এক উজ্জল প্রভাব বিস্তার করে।SC 60.3

    ঈশ্বরের সন্তানগণের বিশেষতঃ যাহারা কেবল সম্প্রতি তাঁহার করুণায় বিশ্বাস করিতে আরম্ভ করিয়াছে তাহাদের দুইটি বিষয়ে সতর্ক থাকিতে হইবে । প্রথম বিষয়টির সম্পর্কে পুর্ব্বেই বলা হইয়াছে তাহা এই ঈশ্বরের সহিত ঐক্য স্থাপনের নিমিত্ত আপন আপন শক্তি ও কার্য্যাবলির উপরে নির্ভর করিলে ছলিবে না। যে বাক্তি বাবস্থা পালন করিয়া আপনার কার্য্যবেলে পবিত্র হইতে চাহে , সে অসম্ভব প্রয়াস করিতেছে । খ্রীষ্টকে বাদ দিয়া মানুষ যাহা করিতে চায়, তাহা পাপ ও স্বার্থপরতা দ্বারা কলুষিত। বিশ্বাসের মধ্য দিয়া খ্রীষ্টের করুনাই আমাদিগকে পবিত্র করিতে পারে।SC 61.1

    খ্রীষ্টে বিশ্বাস মানুষকে ঈশ্বরের ব্যবস্থা হইতে মুক্তি দেয় এবং যখন শুধু বিশ্বাসের বলেই আমরা খ্রীষ্টের অনুগ্রহের অংশী হইতে পারি , তখন আমাদের কার্য্যবলির সহিত আমাদের মুক্তির কোন সম্পর্ক নাই এইরূপ ধরনা প্রথম বিষয়টির সম্পূর্ণ বিপরীত এবং ইহারই ন্যায় বিপজ্জনক ভ্রমপূর্ণ ।SC 61.2

    আজ্ঞাবহতা বলিতে শুধু বাহ্যিক বশ্যতা (অর্থাৎ বাহিরের ব্যবহারের বাধ তা) নহে, কিন্তু প্রেমের পরিচর্য্যা বুঝাইয়া থাকে । ঈশ্বরের ব্যবস্থা তাঁহার আপন স্বভাব প্রকাশক ; উহাই মুর্ত্তিমান মহান্ প্রেমের নীতি এবং স্বর্গে ও পৃথীবিতে তাঁহার শাসনপ্রনালীর ভিওি ।যদি আমাদের অন্তঃকরন ঈশ্বরের সাদৃশ্যে পুনরায় উদিপ্ত হইয়া উঠে ,যদি আত্মার ঐশ্বরিক প্রেম মুদ্রিত হয় , তবে কি জীবনে ঈশ্বরের ব্যবস্থা পালিত হইবে না ? যখন প্রেমের মূল নীতি হৃদয়ে অঙ্কিত হইয়া যায় ।যখন মানুষ তাঁহার সৃষ্টিকর্তার প্রতিমূওি পুনরায় লাভ করে,তখন নূতন নিয়মে এই অঙ্গিকার সম্পূর্ণ হইয়া উঠে —“আমি তাহাদের হৃদয়ে আমার ব্যবস্থা দিব আর তাহাদের চিওে তাহা লিখিব” (ইব্রীয় ১০:১৬) । হৃদয়ে যদি ব্যবস্থা লিখিত থাকে , উহা কি তবে জীবন গঠন করিবে না ? আজ্ঞাবহতা-প্রেমের সেবা ও বশ্যতা —শিষ্যত্বের প্রকৃত চিহ্ন । শাস্ত্রে লিখিত আছে , “কেননা ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি ।” যে ব্যক্তি বলে আমি তাঁহাকে জানি , তথাপি তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন না করে , সে মিথ্যাবাদী এবং তাঁহার অন্তরে সত্য নাই ” (১ যোহন ৫:৩,২:৪)। আজ্ঞাবহতা হইতে মানুষকে রেহাই না দিয়া শুধু বিশ্বাসের বলেই আমরা খ্রীষ্টের করুণার অংশ হইতে পারি উহাই আমাদেগকে আজ্ঞাবহ করিয়া দেয় । SC 61.3

    আমারা আজ্ঞাবহতা দ্বারা পরিত্রান অর্জন করি না ; কারন পরিত্রাণ ঈশ্বরের মুক্ত দান এবং উহা বিশ্বাস বলে লাভ করিতে হয় । কিন্তু আজ্ঞাবহতা বিশ্বাসের ফল । “আর তোমার জান পাপভার লইয়া যাইবার নিমিও তিনি প্রকাশিত হইলেন এবং তাঁহাতে পাপ নাই । যে কেহ তাঁহাতে থাকে সে পাপ করেন না । যে কেহ পাপ করে সে তাহাকে দেখে নাই এবং জানেও নাই ” (১যোহন৩:৫,৬)।শিষ্যত্বের ইহাই প্রকৃত লক্ষণ। যদি আমারা খ্রীষ্টে থাকি যদি ঈশ্বর প্রেম আমাদের মধ্যে বাস করে তবে আমাদের অনুভুতি চিন্তা ও কার্য্যসমূহ পবিত্র ব্যবস্থার ব্যাক্ত নীতি অনুযায়ী ঈশ্বরের ইচ্ছার সহিত সুসঙ্গত হইবে । ” বৎসেরা কেহ যেন তোমাদিগকে ভ্রান্ত না করে যে ধর্ম্ম চারণ করে সে ধার্ম্মিক যেমন তিনি ধার্ম্মিক ” (১যোহন ৩:৭)।সীনয়ে প্রদও দশটি নীতি অনুযায়ী ঈশ্বরের পবিত্র ব্যবস্থার আদর্শে ধার্ম্মিকতার প্রকৃত অর্থ নির্নয় করতে হইবে।SC 62.1

    খ্রীষ্টে যে তথা-কথিত বিশ্বাস মানুসকে ঈশ্বরের প্রতি আজ্ঞাবহতা বন্ধন হইতে মুক্ত করিয়া দিতে চাহেন তাহা কখন বিশ্বাস নহে দৃষ্টতা মাত্র । কেনানা অনুগ্রহেই তোমরা পরিত্রাণ পাইয়াছ, বিশ্বাস দ্বারা ” (ইফি ২:৮)। কিন্তু ” বিশ্বাস ও কর্ম বিহীন হইলে আপনি একা বলিয়া তাহা মৃত ” (যাকব ২:১৭)। পৃথিবীতে আসিবার পুর্ব্বে যীশু আপনার সমন্ধে বলিয়াছিলেন “হে আমার ঈশ্বর তোমার অভীষ্ট সাধনে আমি প্রীত,আর তোমার ব্যবস্থা আমার অন্তরে আছে (গীত ৪০:৮)। তারপর পুনরায় স্বর্গারোহণ করিবার পুর্ব্বে তিনি ঘোষনা করিয়াছিলেন “আমিও আমার পিতার আজ্ঞা সকল পালন করিয়াছি এবং তাঁহার প্রেমে অবস্থিতি করিতেছি (যোহন ১৫:১০) । শাস্ত্রে লিখিত আছে আর আমরা ইহাতেই জানিতে পারি যে তাহাকে জানি, যদি তাঁহার আজ্ঞাসকল পালন করি । ............ যে বলে আমি তাঁহাতে থাকি তাঁহার উচিত যে তিনি যেরূপ চলিতেন সেও তদ্রুপ চলে (১যোহন ২:৩৬)। “কেনানা খ্রীষ্ট তোমাদের নিমিও দুঃখ ভোগ করিলেন এই বিষয় তোমাদের জন্য এক আর্দশ রাখিয়া গিয়াছেন যেন তোমরা তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন কর “(১পিতর২:২১)।SC 62.2

    যে সর্ত্তে অনন্ত জীবন লাভ করিতে হইবে তাহা পুর্ব্বের ন্যায় এখন একই রহিয়াছে আমাদের আদি মাতা পিতার পতনের পুর্ব্বে পরমদেশে যে রূপ ছিল এখন সেই রূপই আছে ;- ঈশ্বরের ব্যবস্থায় প্রতি আজ্ঞাবহ থাকিয়া ধর্ম্মজীবন গড়িয়া তোলা, পতনের পুর্ব্বে আদমের পক্ষে সম্ভব ছিল কিন্তু তিনি সেই রূপ করেন নাই তাই তাঁহার পাপের ফলে আমাদের চরিত্রের পতন সংঘটিত হইয়াছে এবং আমরা আমাদিগকে ধার্ম্মিক করিয়া তুলিতে পারি না। মারা পাপপূর্ণ ও আপবিত্র বলিয়া সিদ্ধ ভাবে পবিত্র ব্যবস্থা পালন করিতে পারি না । আমাদের নিজেদের এমন কোন ধার্ম্মিকতা নাই যাহা দ্বারা আমরা ঈশ্বরের ব্যবস্থা দাবী পূর্ণ করিতে পারি কিন্তু খ্রীষ্ট আমাদের উপায়ের এক পথ করিয়া দিয়াছেন ।আমাদের এই পৃথিবীতে যেরূপ পরীক্ষা ও প্রলোভনের সম্মুখীন হইতে হইবে, তিনিও পৃথিবীতে সেইরূপ পরীক্ষা ও প্রলোভনের মধ্যে বাস করিয়াছিলেন । তথাপি তিনি নিষ্পাপ জীবন যাপন করিলেন । তিনি আমাদের জন্য মৃত্যু বরন করিয়া এইক্ষনে আমাদের পাপভার বহন এবং তাঁহার ধার্ম্মিকতা দান করিতে চাহিতেছেন ।যদি তুমি তাঁহার নিকটে আত্ন —সমর্পণ কর এবং তাঁহাকে তোমার ত্রানকর্ত্তা বলিয়া স্বীকার করিয়া লও, তবে যদিও তোমার জীবন পাপপূর্ণ ছিল তথাপি বর্তমানে তুমি তাহারিই জন্য ধার্ম্মিকরূপে গনিত হইবে ।তোমার স্বভাবের পরিবর্ত্তে খ্রীষ্টের স্বভাব রহিবে এবং তুমি যেন পাপ কর নাই এইরূপ বাক্তির ন্যায় ঈশ্বরের সম্মুখে গৃহীত হইবে।SC 63.1

    কিন্তু ইহা অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ সিদয় এই যে খ্রীষ্ট হৃদয়ের পরিবরর্ত্তন করিয়া থাকেন,তিনি বিশ্বাস দ্বারা তোমার হৃদয়ে বাস করেন । বিশ্বাস দ্বারা এবং তাঁহার প্রতি তোমার ইচ্ছার নিয়ত সমর্পণ দ্বারা খ্রীষ্টের সহিত তোমার এই সম্পর্ক বজায় রাখিবে হইবে এবং যতদিন তুমি এইরূপ করিবে , ততদিন তিনিও তাঁহার শুভ বাসনা অনুযায়ী তোমাকে ইচ্ছা ও কার্য্য করিবার প্রবৃওি দান করিয়া তোমাতে কার্য্য করিতে থাকিবেন । তখন তুমিও বলিতে পারিবে , ” আর এখন মাংসে থাকিতে আমার যে জীবন আছে , তাহা আমি বিশ্বাসে , ঈশ্বরের পুত্রে বিশ্বাসেই যাপন করিতেছি ; তিনিই আমাকে প্রেম করিলেন এবং আমার নিমিওে আপনাকে প্রদান করিলেন ” (গালা ২:২)।এইরূপে যীশু তাঁহার শিষ্যদিগকে বলিয়াছিলেন , “কেনানা তোমার কথা বলিবে , এমন নয় , কিন্তু তোমাদের পিতার যে আত্না তোমাদের অন্তরে কথা কহেন , তিনিই বলিবেন ” (মথি ১০:২০) । তারপর খ্রীষ্ট তোমার মধ্যে কার্য্য করিতে থাকিলে , তুমিও একই আত্না প্রকাশ করিবে এবং একিই ধার্ম্মিকতা ও আজ্ঞাবহতার কার্য্য সম্পন্ন করিবে । সুতরাং আমাদের নিজেদের এমন কিছুই নাই , যাহা নিয়া আমরা অহঙ্কার করিতে পারি । আমাদের আত্ন গৌরব করিবার কোনই ভিওি নাই । খ্রীষ্টের যে ধার্ম্মিকতা আমাদিগেতে আরোপিত হইয়াছে এবং তাহার আত্মা দ্বারা আমাদের মধ্যে ও আমাদের দ্বারা সাধিত হইয়া থাকে —একমাত্র তাহাই আমাদের ভরাসাস্থল ।SC 64.1

    বিশ্বাসের কথা বলিবার সময়ে আমাদের আর একটি বিষয় মনে রাখিতে হইবে । দৃঢ় বিশ্বাস এবং আস্থা স্থাপন —এই উভয় সম্পূর্ণ বিভিন্ন । ঈশ্বরের অস্তিত্ব ও শক্তি ,তাঁহার বাক্যের সত্যতা প্রভৃতি বিষয় এমন কি শয়তান ও অনুচরগন কেহই আন্তরিক অস্বীকার করিতে পারে না। বাইবেলে লিখিত আছে যে ” ভূতেরাও তাহা বিশ্বাস করে এবং ভয়ে কাঁপে ” (যাকোব ২:১৯), কিন্তু ইহা বাস্তবিক বিশ্বাস নহে। যেখানে ঈশ্বরের বাক্য শুধু আস্থা স্থাপন নহে , কিন্তু তাঁহার ইচ্ছার নিকটে আত্ম-সমর্পণ রহিয়াছে , যেখানে অন্তকরন তাঁহাতে নিবেদিত , প্রানের ভাবসমূহ তাঁহাতে নিবন্ধ , সেখানেই বিশ্বাস রহিয়াছে ,-যে বিশ্বাস প্রেম দ্বারা কায্য করে এবং আত্মাকে শুচি করে । এই বিশ্বাস দ্বারাই হৃদয় ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তিতে পুনরুজ্জীবিত হয় । যে হৃদয় পুনরায় জন্মলাভের পূর্ব্বে ঈশ্বরের ব্যবস্থার অধীনে ছিল না , অবশ্য তখন অধীনে হওয়া সম্ভবও নহে সেই হৃদয় তখন ব্যবস্থার পবিত্র নীতিসমূহে আনন্দ প্রকাশ করিয়া গীত-সংহিতাকারের সহিত বলিতেছে , ” আমি তোমার ব্যবস্থা কেমন ভালোবাসি ! তাহা সমস্ত দিন আমার ধ্যানের বিষয় (গীত ১১৯:১৭) আর ব্যবস্থার ধাম্মিকতা আমাদিগকে পূর্ণ হইয়াছে কারন আমরা আর মাংসের পথে না চলিয়া আত্মার অনুসরণ করিয়া থাকি ।SC 65.1

    এরূপ অনেক লোক আছে ,যাহারা খ্রীষ্টের ক্ষমাশীল প্রেমের বিষয়ে জানে এবং ঈশ্বর -সন্তান হইবার নিমিও সত্য সত্যই বাসনা করে , তথাপি তাহারা এইরূপ ধারনা করে যে তাহাদের চরিত্র অসম্পুরর্ন ও জীবন দোষপূর্ণ এবং পবিত্র আত্মা দ্বারা তাহাদের হৃদয় নবীনীকৃত হইয়াছে কিনা মনে মনে এইরূপ সন্দহ করিয়া থাকে । এই প্রকার লোকদিগকে আমি বলিতেছি ,-হতাশে হাইল ছাড়িয়া দিও না ।আমাদের ত্রুটী ও ভুলভ্রান্তির জন্য অনেক সময়ে আমা-দিগকে য়ীশুর পায়ের কাছে অবনত হইয়া কাঁদিতে হইবে ; কিন্তু আমাদের নিরুৎসাহ হইবার কোনই কারন নাই । এমন এই শত্রু কওৃক পরাভূত হইলেও আমরা ঈশ্বর কওৃক ত্যাজ্য, পরিত্যক্ত ও অবজ্ঞাত হই না । কখনও নহে ; খ্রীষ্ট ঈশ্বরের দক্ষিনে থাকিয়া সর্ব্বদা আমাদের জন্য অনুরোধ করিতেছেন ।প্রিয়তম যোহন বলিয়াছিলেন ,“তোমাগদিকে এই সকল লিখিতেছি,যেন তোমরা পাপ না কর । আর যদি কেহ পাপ করে , তবে পিতার কাছে আমাদের এক সহায় আছেন , তিনি ধাম্মিক যীশু খ্রীষ্ট ” (১ যোহন ২:১)। আর খ্রীষ্টের এই কথা কখনও ভুলিও না ” কারন পিতা আপনি তোমাদিগকে ভালোবাসেন ” (যোহন ১৬:২৭ )। তিনি পুনরায় তোমাদিগকে লাভ করিতে এবং তোমাদির মধ্যে তাঁহার আপন পবিত্রতা ও শুচিতা প্রতিফলিত দেখিতে ইচ্ছা করেন। তুমি যদি শুধু তাঁহার কাছে আত্ম-সমর্পণ কর , তবে তিনি তোমার মধ্যে সৎকার্য্য আরম্ভ করিয়াছেন , তিনিই যীশু খ্রীষ্টের রাজত্বকাল পর্যন্ত উহা চালাইয়া নিবেন । আরও অধিক আগ্রসহকারে প্রার্থনা কর , আরও দৃঢ় বিশ্বাস করিতে থাক । আমাদের নিজ নিজ শক্তির উপরে অবিশ্বাস জন্মিলে, আমরা অমাদের ত্রাণকর্ত্তার শক্তিতে বিশ্বাস করিতে থাকিব এবং যিনি আমাদের বদনের স্বাস্থ্য তাহারই স্থুতি করিব । SC 65.2

    খ্রীষ্টের যত নিকটে অগসর হইবে ,ততই তুমি তোমার নিজের দৃষ্টিতে অধিকরত অপরাধী বলিয়া প্রকাশিত হইতে থাকিবে; কারন তোমার দৃষ্টিশক্তি ক্রমশই স্পষ্টতর হইবে এবং তোমার অসম্পুর্নতা বা ত্রুটি সমূহ তাঁহার বিশুদ্ধ স্বভাবের সহিত তুলনায় স্পষ্টরূপে দৃষ্টিগোচর হইবে । শয়তানের ছলনাজাল শক্তিহীন হইয়া পড়িয়াছে এবং ঈশ্বরের আত্মার জলন্ত প্রভাব তোমার অন্তরে জাগ্রত হইয়া উঠিয়াছে —ইহা তাহারই সাক্ষ্য । যে হৃদয়ে আপন পাপাশয়তা সমন্ধে সম্যক ধারনা জন্মে নাই সেই হৃদয়ে কখনও যীশুর নিমিও গভীর প্রেম থাকিতে পারে না। খীষ্টের করুনা দ্বারা যে আত্মা রুপান্তরিত হইয়াছে তাহাই তাঁহার স্বর্গীয় চরিএের শ্রদ্ধা করিবে ; কিন্তু যদি আমারা আমাদের নৈতিক অবনতি লক্ষ্য করিতে না পারি তবে নিঃসন্দেহে ইহাই বুঝিতে হইবে যে আমরা খ্রীষ্টের সৌন্দর্য ও মহও্ব উপলব্ধি করিতে পারি না । আমাদের আত্মা-শ্রদ্ধআর ভাব যতই কমিতে থাকিবে, আমাদের ত্রানকর্ত্তার অতুল মাধুরী ও পবিত্রতার প্রতি শ্রদ্ধা ততই বদ্ধিত হইবে ।আমাদের পাপপূর্ণ স্বভাবের প্রতি দৃষ্টিপাত করিতে পারিলে, উহা আমাদিগকে যিনি ক্ষমা করিতে পারেন ,তাহারই দিকে চালিত করে ; এবং আপন নিঃস্বহায় অবস্থা বুঝিয়া আত্মা যখন খীষ্টের দিকে ধাবিত হয় , তখন তিনি (খীষ্ট) আপন গৌরবে প্রকাশিত হইয়া থাকেন । যত আধিক প্রয়োজন বোধ করিয়া আমরা ঈশ্বরের ও তাহার বাক্যের দিকে চালিত হইব , তত অধিক রূপে আমরা তাঁহার সভাব সম্বন্ধে উচ্চ ধারনা পোষন করিব , তত অধিক সম্পূর্ণরূপে আমরা তাঁহার প্রতিমূর্ত্তির প্রতিচ্ছবি গ্রহন করিতে পারিব।SC 66.1

    ____________________SC 67.1

    তোমারেই শুধু মোর প্রয়োজন,
    -এঁকে দাও প্রানে করুণাময় ;
    ফেলে দিতে পারি যা কিছু সকলি, হে প্রভো , তোমারে কখনো নয়।
    SC 67.2