Loading...
Larger font
Smaller font
Copy
Print
Contents

ত্রাণার্থীর আশাপূরণ ।

 - Contents
  • Results
  • Related
  • Featured
No results found for: "".
  • Weighted Relevancy
  • Content Sequence
  • Relevancy
  • Earliest First
  • Latest First

    নবম অধ্যয়

    কার্য্য ও জীবন । (THE WORK AND LIFE)

    ঈশ্বর সমগ্র বিশ্বের জীবন ,আলোক ও আনন্দের মূল কারন । সূর্য্য হইতে আলোক রেখার ন্যায় , জীবন্ত উৎস হইতে জলধারার ন্যায়,তাঁহার সমুদয় সৃষ্ট জীবের উপরে ,তাঁহার নিকট হইতে আশীর্ব্বাদের ধারা নামিয়া আসে । আর যেখানেই মানবগনের হৃদয়ে ঈশ্বরের জীবন রহিয়াছে, সেখান হইতেই উহা প্রেম ও আশীর্ব্বাদ স্বরূপ হইয়া অপর সকলের নিকট প্রবাহিত হইবে । SC 80.1

    পতিত মানবকে উন্নত ও উদ্ধার করাতেই আমাদের ত্রাণকর্ত্তার আনন্দ ছিল । এই নিমিও তিনি নিজ জীবনকে প্রিয় বলিয়া গণনা করিলেন না ,কিন্তু লজ্জা ত্যাগ করিয়া ক্রুশের যন্ত্রণা সহ্য করিলেন । এইরূপে দূতগণও অপরের সুখ বিধানের জন্য সর্ব্বদা নিযুক্ত রহিয়াছেন ।ইহাতেই তাহাদের আনন্দ । স্বার্থপর হৃদয় যাহা দীনতার কার্য্য বলিয়া মনে করে, নিস্পাপ দূতগণ হতভাগ্য এবং চরিত্র ও পদে নিকৃষ্ট বাক্তি গনের নিমিও সেই সেবা কার্য্য করিয়া থাকেন ।খ্রীষ্টের আত্নদানকারী প্রেমের আত্নাদ্বারা স্বর্গ —ভূমি পরিবাক্ত এবং ইহাতেই সমুদয় আনন্দের সারাংশ রহিয়াছে ।খ্রীষ্টের অনুসরণ কারীদের এরূপ আত্না রাখিতে হইবে এবং এরূপ কার্য্য করিতে হইবে। SC 80.2

    খ্রীষ্টের প্রেম হৃদয়ে সঞ্চিত থাকিলে , মধুর সৌরভের ন্যায় কখন তাহ লুকায়িত থাকিতে পারে না।আমরা যাহাদের সংস্পর্শে আসিব তাঁহারা সকলেই উহার পবিত্র প্রভাব অনুভব করিতে পারিবে । উষর মরুভুমিতে শীতল ঝরনার ন্যায় হৃদয়ে খ্রীষ্টের আত্মার সকলকে শান্তি দান করিবার নিমিও বহিয়া চলিয়াছে এবং যাহারা মৃতপ্রায় তাহাদিগকে জীবন জল পান করাইবার নিমিও ব্যাকুল করিতেছে SC 80.3

    মানবজাতির সুখ ও উন্নতি বিধানের জন্য যীশু যেরূপ কার্য্য করিয়াছিলেন, যীশুর প্রতি প্রেম, সেইরূপ কার্য্য করিবার বাসনা জাগাইয়া দিবে । উহা আমাদের স্বর্গস্থ পিতার অধিনস্থ যাবতীয় সৃষ্ট জীবের প্রতি প্রেম, কোমলতা ও সহানুভতি দেখাইবার জন্য চালিত করিবে। SC 81.1

    ত্রাণকর্ত্তা পৃথিবীতে আরাম বা আত্মসুখের নিমিত্ত জীবন যাপন করেন নাই, কিন্তু তিনি পতিত মানব পরিত্রানের জন্য অবিরত অক্লান্ত ও ব্যাকুল ভাবে পরিশ্রম করিয়াছিলেন । যাবপাত্র হইতে আরম্ভ করিয়া কালভেরি পর্য্যন্ত তিনি আত্মদানের পথে চলিয়াছিলেন এবং কখনও শ্রম সার্ধ্য কার্য্য, দুস্কর পথ ভ্রমন ও কঠোর পরিশ্রম করিতে বিমুখ হন নাই । তিনি বলিয়াছিলেন, “মানুষ্যপুত্র পরিচর্য্যা পাইতে আইসেন নাই, কিন্তু পরিচর্য্যা করিতে এবং অনেকের পরিবর্ত্তে আপন প্রান মুক্তির মূল্যরূপে দিতে আসিয়াছেন” (মথি ২০:১৮)। তাঁহার জীবনে উহাই প্রধান উদ্দেশ্য ছিল । ইহা ব্যতীত অপর যাহা কিছু তাঁহা সকলেই দ্বিতীয় স্থানীয়। ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন ও তাঁহার কার্য্য সমাপন করা, তাঁহার নিকটে খুব আনন্দের বিষয় ছিল ।তাঁহার কার্য্যের মধ্যে স্বার্থের কোন লেশ ছিল না।SC 81.2

    সুতরাং যাহারা খীষ্টের করুণার ভাগী হইয়াছে , তাঁহারা যে কোন ত্যাগের নিমিত্ত প্রস্তুত থাকিবে, যেন অপর যাহাদের জন্য তিনি মরিয়াছেন তাহারাও স্বর্গীয় দান লাভ করিতে পারে । এই পৃথিবীকে উত্তম বাসস্থানে পরিনত করিবার জন্য তাঁহারা যথাসাধ্য চেষ্টা করিবে। যে আত্মার সত্য সত্যই খ্রীষ্টে পরিবর্ত্তিত হইয়াছে সেই আত্নায় এরূপভাব অবশ্যই দেখা যাইবে । খ্রীষ্টকে যে পাইয়াছে , খ্রীষ্ট যে তাঁহার নিকট কি আমূল্য নিধি, তাহা অপরকে জানাইবার জন্য অমনি তাঁহার হৃদয়ে আকুল বাসনা হইবে; পবিত্রতা ও পরিত্রান বিধানকারী সত্য কখনও তাঁহার অন্তঃকরন রুদ্ধ থাকিতে পারে না। যদি আমরা খীষ্টের ধার্ম্মিকতা বসন পরিহিত এবং তাঁহার অন্তর নিবাসী আত্মার আনন্দে পরিপূর্ণ হই, তবে আমরা কখনও নিরবে থাকিতে পারিব না । সদাপ্রভু মঙ্গলময়, ইহা একবার অনুভুত করিয়া থাকিলে, আমাদের অবশ্যই কিছু বলিবার থাকিবে । ফিলিপের ন্যায় আমরাও ত্রানকর্ত্তাকে দেখিতে পাইয়া অপর সকলকে তাহার সম্মুখে আসিবার জন্য আহ্বান করিব । আমরা তাহাদের নিকটে খীষ্টের চিত্তহারী গুনরাজি এবং ভবিষ্যৎ জগতের অপুর্ব্ব বিষয়সমুহ উপস্থিত করিতে চেষ্টা করিব । যীশু যে পথে চলিয়াছেন সেই পথে চলিবার জন্য প্রানে গভীর আকাঙ্খা হইবা যাহারা আমাদের আশেপাশে রহিয়াছেন তাহারাও যেন ,” যিনি জগতের পাপভার লইয়া যান”সেই “ঈশ্বরের মেষশাবক”কে দেখিতে পাই,-এই জন্য প্রানে অকুল বাসনা হইবে।SC 81.3

    অপরকে আশীর্ব্বাদ করিবার প্রবৃওি আমাদের উপর ঘুরিয়া আশীর্ব্বাদ বর্ষণ করিবে। পরিত্রাণ কার্য্য পরিকল্পনা আমাদের এই অংশ অভিনয় করিতে হইবে, ইহাই ঈশ্বরের উদ্দেশ্য । তিনি মানব জাতিকে তাঁহার ঐশ্বরিক স্বভাবের সহভাগি হইবে এবং তাহাদিগকে পুনরায় আপর সকলের নিকটে আশীর্ব্বাদসমূহ বিস্তার করিবার সুযোগ দান করিয়াছেন ।মানব জাতিকে এরূপ উচ্চতর সম্মান ও মহওর আনন্দ দান করা ঈশ্বরের পক্ষেই সম্ভব হইয়াছে । যাহারা এই রূপে প্রেমের কার্য্য ঈশ্বরের সহিত অংশভাগী হই তাঁহারা সৃষ্টিকর্ত্তার অতি নিকটে উপস্থিত হইতে পারে।SC 82.1

    ঈশ্বর সুসমাচার বার্ত্তা এবং প্রেম পূর্ণ পরিচর্য্যাকার্য্যের ভার স্বর্গীয় দূতগণের উপরে অর্পণ করিতে পারিতেন ।তাঁহার উদ্দাশ্যে সাধনের নিমিত্ত তিনি অন্যান্য উপায় অবলম্বন করিতে পারিতেন অপার প্রেমে তিনি আমাদিগকে তাঁহার সহিত খ্রীষ্টের ও দূতগণের সহিত সহকর্ম্মী করিয়া লইয়াছেন, যেন আমরা নিঃস্বার্থ পরিচর্য্যা কার্য্যের ফলস্বরুপ আশীর্ব্বাদ,অনন্দ ও আধ্যাত্নিক উন্নতির সহভাগী হইতে পারি।SC 82.2

    খ্রীষ্টের দুঃখভোগের সহভাগিতার মধ্য দিয়া আমরা তাঁহার সহানুভুতি লাভ করিতে পারি । অপরের মঙ্গলের নিমিও আত্ন-দানে প্রত্যেক কার্য্য দাতার হৃদয়ে দানের প্রবৃওি দৃঢ় করিয়া তোলে এবং যিনি ” ধনবান্ হইলেও তোমার নিমিও দরিদ্র হইলেন ,যেন তোমারা তাঁহার দরিদ্রতায় ধনবান্ হও”-জগতের সেই ত্রাণকর্ত্তা সহিত আর নিবিড়ভাবে সংযুক্ত করিয়া দেয় । আমাদের সৃষ্টির ব্যাপারে এই স্বর্গীয় উর্দ্দেশ্য সফল করিতে পারিলেই জীবন আমাদের নিকট আশীর্ব্বাদ স্বরূপ হইতে পারে। SC 83.1

    খ্রীষ্ট তাঁহার শিষ্যদের নিমিও যেরূপ সঙ্কল্প করিয়া রাখিয়াছেন যদি তুমি তদনুযায়ী কার্য্য কর এবং তাঁহার নিমিও আত্নসমুহ জয় করিয়া আন তবে তুমি ঐশ্বরিক বিষয় সমুহে আরও গভীর অভিজ্ঞতা এবং আরও অধিক জ্ঞানের আবশ্যকতা রোধ করিবে এবং ধার্ম্মিকতা নিমিত্ত ক্ষুধিত ও তৃষ্ণাও হইবে । তুমি ঈশ্বরের নিকটে সবিনয় প্রার্থনা করিবে তোমার বিশ্বাস দৃঢ়তর হইবে এবং তোমার আত্মা মুক্তি-সরোবর হইতে আরও স্নিগ্ধকর পানীয় পান করিবে । আসন্ন বিপদ ও পরীক্ষা সমূহ তোমাকে বাইবেল পাঠ ও প্রার্থনার দিকে চালিত করিবে। তুমি করুনায় ও খ্রীষ্টীয় জ্ঞানে বৃদ্ধি পাইতে থাকিবে এবং বহুমূল্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করিতে পারিবে । SC 83.2

    অপরের নিমিত্ত নিঃস্বার্থ পরিশ্রমের আত্মা চরিএে গাম্ভির্য্য দৃঢ়তা ও খীষ্টীয় মাধুরী দান করে এবং এই সমস্ত গুনের অধিকারিকে সুখ ও শন্তি আনিয়া দেয়। উচ্চভিলাষগুলি উন্নত হইয়া থাকে ।স্বার্থপরতা ও জড়তার কোন স্থান থাকে না । যাহারা এইরূপ খীষ্টীয় গুণরাজির চালনা করে তাঁহারা শ্রীবৃদ্ধি লাভ করিবে এবং ঈশ্বরের নিমিত্ত কার্য্য করিতে অধিক শক্তি সম্পন্ন হইবে। তাহাদের আধ্যাত্মিক অনুভতি প্রখর ও বিশ্বাস দৃঢ় হইবে এবং প্রর্থনার শক্তি ক্রমসঃ বৃদ্ধি পাইতে থাকিবে । তাহাদের আত্মায় ঈশ্বরের আত্মা সঞ্চারিত হইয়া , ঐশ্বরিক স্পর্শ অন্তরের পবিত্র সঙ্গিতধ্বনি উথিত হইবে। যাহারা এইরূপে অপরের মঙ্গলের জন্য নিঃস্বার্থভাবে আত্মসমর্পণ করে তাঁহারা পরোক্ষভাবে আপনাদের পরিত্রানের কার্য্য করিতেছে ।SC 83.3

    খীষ্ট আমাদিগকে যে কার্য্য করিতে আদেশ দিয়াছেন নিঃস্বার্থ ভাবে সেই কার্য্য করা অর্থাৎ যাহাদের সাহায্য লাভের প্রয়োজন তাঁহারা আমাদের সাধ্যানুযায়ি তাহাদিগকে সাহায্য ও আশির্ব্বাদ করিতে ব্রতী হওয়া- অনুগ্রহে বৃদ্ধি পাইবার ইহাই একমাত্র পন্থা । ব্যায়াম দ্বারা শক্তি আসিয়া থাকে; কার্য তৎপরতাই জীবনের মূল। করুণার বলে যে সকল আশির্ব্বাদ আশিয়া থাকে ;নিস্ক্রিয় ভাবে তাহা গ্রহন করিয়া যাহারা খ্রীষ্টিও জীবন যাপন করিতে চাহে তাঁহারা খ্রীষ্টের নিমিও কিছুই করিতাছে না পরিশ্রম বাদ দিয়া শুধু আহারের বলে বাঁচিয়া থাকিতে চেষ্টা করিতেছে । প্রকৃতিরSC 84.1

    জগতের ন্যায় আধ্যাত্নিক জগতেও, এই প্রকার কার্য্য দ্বারা সর্ব্বদা অবনতি ও অধঃপতন আসিয়া থাকে । যে বাক্তি তাঁহার শারীরিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গের চালনা করে না, শীঘ্রই সে সমুদয় ব্যাবহার করিতে শক্তিহীন হইয়া পড়িবে । এই প্রকারে যে খ্রীষ্টীয়ান,তাঁহার ঈশ্বর দও শক্তি সমুহের চালনা করিতে বিরত হন ,তিনি শুধু যে খ্রীষ্টে বৃদ্ধি পাইবেন না তাহাই নহে ,কিন্যু তাঁহার যে পরিমান শক্তি পুর্ব্বে ছিল তাহাও একেবারে বিনষ্ট হইবে ।SC 84.2

    খ্রীষ্টের মণ্ডলী মানবজাতির পরিত্রাণ কল্পে, ঈশ্বর নিদিষ্ট পন্থা জগতে সুস্মাচার প্রচার কারাই উহার কার্য্য । আর সমুদয় খ্রীষ্টীয়ানের উপরেই এই ভার অর্পিত হইয়াছে ।প্রত্যেক খ্রীষ্টীয়ানেরই নিজ নিজ শক্তি ও সুযোগ মত ত্রানকর্ত্তার এই কার্য্য ভারটি সম্পূর্ণ করিতে হইবে। আমাদের নিকটে প্রকাশিত খ্রীষ্টীয় প্রেম আমাদিগকে যাহাদের নিকটে উহা প্রকাশিত হয় নাই, তাহাদের কাছে ঋনী করিয়া রাখিয়াছে। ঈশ্বর আমাদিগকে শুধু আমাদের জন্যই অলোক প্রদান করেন নাই , কিন্তু অপর সকলের উপরেও উহা বিকীর্ন করিতে হইবে ।SC 84.3

    খ্রীষ্টের অনুসরণকারীদের কর্ত্তব্যবৃদ্ধি জাগ্রৎ হইলে ন-খ্রীষ্টিয়ান দেশ সমূহে শু সমাচার ঘোষণা করিবার জন্য, বর্তমানে যে স্থানে মাত্র একজন রহিয়াছে সেই স্থানে হাজার হাজার জন দেখা যাইবে । যাহারা বাক্তিগতভাবে এই কার্য্যে নিযুক্ত হইতে পারেন না, তাহারা নিজ নিজ অর্থ ও সহানুভুতিও প্রার্থনা দ্বারা এই কার্য্যের পোষকতা করিবেন । আর খ্রীষ্টিয়ান দেশ সমুহে আত্ন জয় করিবার জন্য আর অধিক উৎসাহে কার্য্য চলিতে থাকিবে।SC 85.1

    নিজ গৃহের সঙ্কীর্ন সীমার মধ্যে যদি আমাদের কর্ত্তব্য সাধন করিবার থাকে, তবে কখন খ্রীষ্টের নিমিও কার্য্য করিবার জন্য উহা ত্যাগ করিয়া ন-খ্রীষ্টিয়ান দেশে যাইবার প্রয়োজন নাই আমাদের গৃহ মধ্যে, মণ্ডলিতে, সঙ্গীদের ও যাহাদের সহিত বৈসয়িক কর্মে জড়িত আছি, তাহাদের মধ্যে এই কার্য্য করিতে পারি ।SC 85.2

    পৃথিবীতে আমাদের ত্রাণকর্ত্তার জীবনের অধিকাংশ সময় নাসারতে সুত্রধরের কারখানায় ধীর ও কঠোর পরিশ্রমে ব্যেয়িত হইয়াছিল। অজ্ঞাত ও অখ্যাত ভাবে যখন জীবন প্রভু কৃষক ও মজুরগনের সহিত সমান ভাবে চলিয়াছেন, তখন পরিচর্যাকারী দূতগণ তাহার সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন। পীড়িত বাক্তিকে সুস্থ করিবার অথবা ঝড়ের মধ্যে গালীল সাগরের উপর দিয়া হাটিয়া য়াইবার সময়, তিনি যে রূপ বিশ্বস্ত ভাবে তাঁহার উদ্দেশ্য সাধন করিয়াছেন ঐরূপ সাধারণ কার্য্যের সময়েও ঠিক সেইরূপ করিয়াছেন ;যেন আমরাও আমাদের জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কার্য্যে ও সাধারণ অবস্থায় যীশুর সহিত একসঙ্গে চলিতে ও কার্য্য করিতে পারি SC 85.3

    প্রেরিত পৌল বলিয়াছেন , “প্রত্যেক জন যে অবস্থায় আহুত হইয়াছেন সেই অবস্থায় ঈশ্বরের কাছে থাকুক” (১ করি ৭:২৪)। ব্যবসায়ী এরূপ ভাবে ব্যবসা চালাইবে,যেন তাঁহার বিশ্বস্ততার জন্য তাঁহার প্রভু মহমান্বিত হন । খ্রীষ্টের প্রকৃত অনুসরনকারী হইলে , সে তাঁহার সকল কার্য্যে ধর্ম্মের ভাব দেখাইবে এবং লোকদিকের নিকটে “খ্রীষ্টের আত্না প্রকাশিত করিবে । শিল্পিগন, তাহারই প্রতিনিধি স্বরূপ বিস্বস্তভাবে ও পরিশ্রম সহকারে কার্য্য করিবে —যিনি গালীলের পর্ব্বতশ্রেনীর মধ্যে সাধারণ কার্য্য পরিশ্রম করিয়াছিলেন । যাহারা খ্রীষ্টের নাম উচ্চারন করে তাঁহারা এরূপ কার্য্য করিবে যেন অপর সকলে তাঁহার সাধু কার্য্য দেখিয়া তাহাদের সৃষ্টিকর্ত্তা ও ত্রানকর্ত্তাকে মহিমান্বিত করিতে চালিত হয় ।SC 85.4

    অনেকে খ্রীষ্টিয় কার্য্যে যোগ দান না করিবার পক্ষে এই অজুহাত দেখাইয়া থাকে যে তাহাদের অপেক্ষা অধিক গুনসম্পন্ন ও অর্থসম্পন্ন বাক্তি গন রহিয়াছে । সুতরাং এই রূপ অভিমত প্রচারিত হইয়াছে যে যাহারা বিশেষ রূপে গুনসম্পন্ন একমাত্র তাহারাই ঈশ্বরের কার্য্যে তাহাদের শক্তি ও সামর্থ্য (তালন্ত) নিয়োজিত করিবে। অনেকে এইরূপ বুঝিয়া থাকেন যে শুধু অনুগ্রহও প্রাপ্ত একদল কেই শক্তি ও সামর্থ্য দান করিয়া অপর সকলকে বাদ দেওয়া হইয়াছে, তাই শেষোক্ত দল কার্য্য বা পূরস্কার , কিছুই দাবী করিতে পারে না । কিন্তু তালন্তের দৃষ্টান্তে কখন ও এইপ্রকার ভাব প্রকাশ করা হয় নাই । গৃহস্বামী দাসগনকে ডাকিয়া প্রত্যেক কে তাঁহার উপযুক্ত কার্য্যে ঠিক করিয়া দিলেন । ঈশ্বর নানা উপায়ে আমাদের নিকটে স্ব -প্রকাশ করিতে এবং আমাদিগকে তাঁহার সহভাগিতা অনয়ায়ন করিতে চেষ্টা করিতে-ছেন। প্রকৃতি অনবরত আমাদের ইন্দ্রিয়সমুহের নিকট কথা বলিতেছেন । ঈশ্বর স্বহস্ত নিম্মিত বিষয়সমুহ প্রকাশিত তাঁহার প্রেম ও প্রতাপ দ্বারা মুক্ত হৃদয় ভাবাবিষ্ট হইবে । মনোযোগ প্রদান করিলে, প্রকৃতির বিভিন্ন বিষয়ের মধ্য দিয়া ঈশ্বর যে কথা বার্ত্তা বলিতেছেন, তাহা শুনিতে ও বুঝিতে পারা যায় । সবুজ ক্ষেএ, উচ্চ বৃক্ষ, মুকুল ও ফুল, ভাসমান মেঘ ধারাবাহী বরষা, কলনাদিনী তটিনী , আকাশের মহিমা প্রভৃতি সকলেই আমাদের হৃদয়ে সাড়া দিতাছে এবং যিনি এই সমুদয় সৃষ্টি করিয়াছেন তাঁহার সহিত পরিচিত হইবার নিমিও আমাদিকে আহবান করিতেছে ।SC 86.1

    আমাদের ত্রাণকর্ত্তা ,তাঁহার অমূল্য উপদেশ প্রকৃতির বস্তুনিচয়ের সহিত জড়িত করিয়া রাখিতেন । লতাপাতা, ফুল ,ফল পক্ষী, পর্ব্বত ,জলাশয়, সুন্দর গগণমন্ডল এবং দৈনিক জীবনের ঘটনা ও অবস্থাসমুহ ঈশ্বরের সত্য বানীর সহিত এরুপভাবে গ্রথিত রহিয়াছে যে এমন কি মানবজীবনের কঠোর পরিশ্রমের মধ্যেও যেন তাঁহার শিক্ষাসমূহ স্মৃতিপথে জাগ্রত হয় ।SC 86.2

    ঈশ্বরের ইচ্ছা এই যে তাঁহার সন্তানগণ যেন তাঁহার কার্য্য সমুহের যথাযথ গুন গ্রহন করে এবং যাহা দ্বারা আমাদের এই পৃথীবির গৃহ সাজাইয়া রাখিয়াছেন সেই শান্ত ও সরল সৌন্দর্য্য উপভোগ করে । তিনি অতিশয় সৌন্দর্য প্রিয় এবং বাহ্যিক সৌন্দর্য অপেক্ষা তিনি সর্ব্বোপরি চরিত্রের সৌন্দর্য্য অধিক পছন্দ করেন; তাঁহার ইচ্ছা এই যে আমাদের মধ্যে যেন ফুলের শান্ত মাধুরী,-পবিত্রতা ও সরলতা ফুটিয়া উঠে।SC 86.3

    জীবনের অতি সাধারণ কর্ম্মগুলিও আমরা “প্রভুর কর্ম্ম বলিয়া ” (কল ৩:২৩)প্রেম পূর্ণ আত্না লইয়া সম্পর্ন্ন করিব । অন্তরে ঈশ্বরের প্রেম থাকিলে জীবনে তাহা প্রকাশিত হইবে । খ্রীষ্টের সৌরভ আমাদিগকে ঘিরিয়া রহিবে এবং আমদের প্রভাব অপরকে সমুন্নত ও আশীর্ব্বাদ দান করিবে । SC 86.4

    ঈশ্বরের নিমিও কার্য্য করিতে যাইবার পুর্ব্বে মহা ব্যাপার বা অসাধারন শক্তির নিমিও অপেক্ষা করিবার কোনই প্রয়োজন নাই । জগতের অন্যন্য সকলে তোমার সমন্ধে কি ভাবিবে ,তাহাও তোমার চিন্তা করিবার দরকার নাই । যদি তোমার দৈনিক জীবন তোমার বিশ্বাসের পবিত্রতা ও সরলতা সাক্ষ্যস্বরূপ হয় এবং তুমি অপর সকলের উপকার সাধনে ব্রতী হইয়াছ, এই বিষয়ে যদি তাহারা নিশ্চিত হয় তবে তোমরা চেষ্টা সমূহ একবারে ব্যর্থ হইবে না।SC 86.5

    যীশুর দীন ও ক্ষুদ্রতম শিষ্যও অপরের নিকটে আশীর্বাদ সরূপ হইতে পারে । তাহারা যে বিশেষ কোন মঙ্গল কার্য্য করিতেছে , তাহাদের হয়তো এরূপ কোন ধারনা জন্মিতে না পারে কিন্তু তাহাদের অজ্ঞাত প্রভাব দ্বারা তাহারা এরূপ আশীর্ব্বাদের স্রোত প্রবাহিত করিতে পারে, যাহা ক্রমশঃ প্রসারিত ও গভীরতর হইবে এবং উহা হইতে যে সুফল ফলিবে সেই বিষয় হয়ত তাহারা শেষ পুরস্কারের দিন পর্য্যন্ত কিছুই না জানিতে পারে । তাহারা যে মহৎ কার্য্য সাধন করিতেছে এসমন্ধে অনুভব ও করেনা বা জানেও না । সফলতা সমন্ধে তাহাদের ব্যস্ত বা চিন্তিত হইবার কোন প্রয়োজন নাই। ঈশ্বরের নিদ্দিষ্ট বিধান অনুযায়ী বিশ্বস্তভাবে কার্য্য করিয়া তাহাদের শুধু ধীর ভাবে ভবিষ্যতের পানে অগ্রসর হইতে হইবে তাহা হইলে তাহা জীবন কখন ব্যর্থ যাইবে না। তাহাদের আত্মা, খীষ্টের সাদৃশ্য ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাইতে থাকিবে; এই জীবনে তাঁহারা ঈশ্বরের সহকর্মী থাকিয়া, ভবিষ্যৎ জীবনের উচ্চতর কার্যের ও ক্লেশবিহী্ন আনন্দের নিমিও ও আপনাদিগকে প্রস্তুত করিতেছে।SC 87.1