অনুতাপ । (REPENTANCE)
ত্রাণার্থীর আশাপূরণ ।
- Contents- সূচীপত্র।
-
- মানুষের প্রতি ঈশ্বরের প্রেম । ( GOD’S LOVE FOR MAN )
- দ্বিতীয় অধ্যায়
- পাপীর খ্রীষ্টে প্রয়োজন । (The SINNER’S NEED OF CHRIST)
- তৃতীয় অধ্যায়
- অনুতাপ । (REPENTANCE)
- চতুর্থ অধ্যায়
- পাপ স্বীকার । (CONFESSION)
- পঞ্চম অধ্যায়
- আত্ন-সমর্পণ |(CONSERATION)
- ষষ্ঠ অধ্যায়
- বিশ্বাস ও পরিগ্রহন |(FAITH AND ACCEPTANCE)
- সপ্তম অধ্যায়
- শিষ্যত্বের লক্ষন |(THE TEST OF DISCIPLESHIP)
- অষ্টম অধ্যায়
- খ্রীষ্টে শ্রীবৃদ্ধি লাভ |(GROWING UP INTO CHIRST)
- নবম অধ্যয়
- কার্য্য ও জীবন । (THE WORK AND LIFE)
- দশম অধ্যায়
- ঈশ্বর সন্মন্ধে জ্ঞান|(A KNOWLEDGE OF GOD)
- একাদশ অধ্যায়
- প্রার্থনা করিবার অধিকার। (THE PRIVILIEGE OF PRAYER)
- দ্বাদশ অধ্যায়
- সন্দেহ ভঞ্জন। (WHAT TO DO WITH DOUBT)
- ত্রয়োদশ অধ্যায়
- আনন্দ সাধনা । (REJOICING IN THE LORD)
Search Results
- Results
- Related
- Featured
- Weighted Relevancy
- Content Sequence
- Relevancy
- Earliest First
- Latest First
- Exact Match First, Root Words Second
- Exact word match
- Root word match
- EGW Collections
- All collections
- Lifetime Works (1845-1917)
- Compilations (1918-present)
- Adventist Pioneer Library
- My Bible
- Dictionary
- Reference
- Short
- Long
- Paragraph
No results.
EGW Extras
Directory
তৃতীয় অধ্যায়
অনুতাপ । (REPENTANCE)
মানুষ কিরূপে ঈশ্বরের কাছে খাঁটি হইবে ? পাপী কিরূপে ধাম্মিক বলিয়া গণিত হইবে ? একমাত্র খ্রীষ্টের সহিত ঐক্য স্থাপন করিতে পারি ; কিন্তু কিরূপভাবে আমাদিগকে খ্রীষ্টের নিকট পৌছিতে হইবে ? পঞ্চাশওমীর দিনে যেরূপ সমবেত জনসঙ্ঘ আমাদের পাপ সম্পর্কে বুঝিতে পারিয়া উচ্চৈঃস্বরে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন , “আমরা কি করিব ? ” সেইরূপ এখনও অনেকে সেই একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতেছে । ” মন ফিরাও ” —পিতার উওর প্রদানকালে সর্ব্বপ্রথমে এই কথাটি কহিলেন ।অল্প কিছুকাল পরে আবার তিনি বলিয়া —ছিলেন , ” মন ফিরাও ,ও যেন তোমাদের পাপ মুছিয়া ফেলা হয় “(প্রেরিত ৩ ১৯) SC 21.1
অনুতাপ বলিতে পাপের নিমিও দুঃখ এবং পাপা পরিহার করা বুঝাইয়া থাকে। পাপের প্রকৃতি না বুঝাইয়া থাকে । পাপের প্রকৃতি না বুঝিইয়া আমরা পাপ ত্যাগ করিব না ; প্রান হইতে যদি উহা ত্যাগ না করি তবে জীবনে প্রকৃত কোন পরিবর্ত্তন হইবে না।SC 21.2
অনেকে অনুতাপের প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করিতে সমর্থ নহেন। অনেকে নিজ নিজ পাপের জন্য দুঃখ করিয়া থাকে,এমন কি বাহিরেও সংশোধনের ভাব দেখাইয়া থাকে,কারন তাহাদের এই ভয় হয় যে অন্যায় কার্য্য করিলে তাহাদের যন্তনা ভোগ করিতে হইবে । কিন্তু ইহাকে বাইবেলোক্ত অনুতাপ (বা মনঃপরিবর্ত্তন) বলা যায় না। তাঁহারা যন্ত্রণা ভোগের জন্য শোক করিয়া থাকে পাপের জন্য নহে ।এষৌ যখন দেখিতে পাইয়াছিলেন যে তাঁহার জ্যেষ্ঠাধিকার চিরদিনের জন্য শেষ হইল, তখন তাঁহারও এইরূপ শোক হইয়াছিল । বিলিয়ন পথের মধ্যে নিস্কোষ খড়গ হস্তে স্বর্গীয় দুতকে দেখিতে পাইয়া প্রান নাশের ভয়ে আপন অপরাধ স্বীকার করিলেন; কিন্তু পাপের নিমিও আন্তরিক কোনো অনুতাপ উদ্দেশ্যর কোনো পরিবর্তন মন্দ কায্যের প্রতি- ঘৃনা কিছুই ছিল না। ইস্করিয়োতীর যিহুদা আপন প্রভুকে শত্রুহস্তে সমর্পণ করিবার পরে কহিয়াছিল, ” নির্দ্দোষ রক্ত সমর্পণ করিয়া আমি পাপ করিয়াছি” ( মথি ২৭ ৪)।SC 21.3
ভীষণ ধিক্কারের ভাবে এবং বিকট বিচারের প্রতীক্ষায় তাঁহার অপরাধী আত্না হইতে এইরূপ স্বীকারোক্তি জোর করিয়া বাহির হইয়াছিল । সে পরিনাম ফলের আশঙ্কায় ভয়ে আড়ষ্ট হইয়া গেল কিন্তু সে কালিমাবিহীন ঈশ্বর-পুত্রকে সমর্পণ এবং ইস্রায়েলের পবিএতমকে অস্বীকার করিয়াছে বলিয়া তাঁহার অন্তরে কোনো গভীর শোক প্রকাশ পায় নাই। ফরৌন ঈশ্বরের মহশাসনের ফলে যন্তনাগ্রস্ত হইয়া, আরও অধিক শাস্তি এড়াইবার জন্য তাঁহার পাপ স্বীকার করিলেন, আঘাতগুলি নিবৃও হওয়ামাত্র অমনি পুনরায় ঈশ্বরের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করিতে লাগিলেন। এইরূপ সকলেই শুধু পাপের পরিনামের নিমিও শোক করিয়াছিল, কিন্তু কেহই পাপের নিমিও দুঃখ করে নাই।SC 22.1
কিন্তু হৃদয় ঈশ্বরের আত্মার প্রভাবে সম্মুখে অবনত হইলেই, বিবেক উদ্দীপিত হইবে এবং পাপী ঈশ্বরের স্বর্গ ও মত্ত্যব্যাপি তাঁহার রাজ্য শাসনের ভিওিরুপ পবিএ ব্যবস্থার শ্রেষ্ঠতা ও গভীরতা সমন্ধে কথঞ্চিং ধারনা করিতে সমর্থ হইবে। “যে প্রকৃত জ্যোতি মানুষকে আলোকিত করেন, তিনি জগতে আসিতেছিলেন ‘’’( যোহন ১ ৯- রমওয়েচ কৃত অনুবাদ), এবং সেই জ্যোতি ;আত্মার গোপন কক্ষগুলি আলোকময় করিয়া তুলেন, আর অন্ধকারের সমুদয় গুপ্ত বিষয় প্রকাশিত হইয়া যায়। মনে ও হৃদয় স্বকৃত পাপের বোধ জাগ্রত হয়। সদাপ্রভু যিহোবার ন্যায়বিচার সমন্ধে পাপীর ধারনা জম্মে এবং হৃদয়ের অনুসন্ধান- কারীর সম্মুখে সে তাঁহার আপন কালিমা ও অশুচিটা লইয়া উপ-স্থিত হইতে ভয় -বিহব্বল হইয়া যায় । এতকাল পরে সে ঈশ্বরের প্রেম শুচিটা সৌন্দয্য ও পবিত্রতার আনন্দ হৃদয়ঙ্গম করিতে পারে ; তাই সে শুচি হইবার জন্য এবং ঈশ্বরের সহিত সহভাগিতা ফিরিয়া পাইবার জন্য ব্যাকুল হইয়া থাকে ।SC 22.2
দায়ূদ পতনের পরে যে প্রার্থনা করিয়া ছিলেন তাহাতে পাপের নিমিও প্রকৃত শোকের প্রকৃতি চিএিত হইয়াছে ।তাঁহার অনুতাপ আকপট ও গভীর ছিল তিনি তাঁহার অপরাধ লাঘব করিবার নিমিও কোন চেষ্টা করেন নাই ; তাঁহার প্রার্থনা প্রত্যাসন্ন বিচার এড়াইবার বাসনায় নহে । দায়ুদ তাঁহার পাপের বিকটতা ও আত্নার কলুষতা বুঝিতে পারিলেন ; পাপের প্রতি তাঁহার ঘৃনা জন্মিল। শুধু ক্ষমা লাভের জন্য নহে কিন্তু হৃদয়ের শুচিতার জন্য তিনি প্রাথনা করিলেন ।তিনি শুচিতার আনন্দ এবং ঈশ্বরের সহিত ঐক্য ও সহভাগিতা ফিরিয়া পাইবার জন্য ব্যাকুল হইলেন। তাঁহার প্রানের ভাষা নিন্মে উদ্ধিত হইলঃSC 23.1
“ধন্য সেই যাহার অধর্ম্ম ক্ষমা হইয়াছে ,যাহার পাপ আচ্ছা-দিত হইয়াছে
ধন্য সেই ব্যক্তি ,যাহার পক্ষে সদাপ্রভু অপরাধ গণনা করেনা না,
ও যাহার আত্মার প্রবঞ্চনা নাই ” (গীত ৩২:১,২)।
“হে ঈশ্বর তোমার দয়া অনুসারে আমার প্রতি কৃপা কর;
তোমার করুনার বাহুল্য অনুসারে আমার অধর্ম্ম সকল মার্জ্জনা কর । .........
কেননা আমার পাপ সতত আমার সম্মুখে আছে ।.......
এসোব দ্বারা আমাকে মুক্ত পাপ কর, তাহাতে আমি শুচি হইব;
আমাকে ধৌত কর,তাহাতে হিম অপেক্ষা শুক্ল হইব । ...
হে ঈশ্বর , আমাকে বিশুদ্ধ অন্তঃকরন সৃষ্টি কর , আমার অন্তরে সুস্থির আত্মাকে নূতন করিয়া দেও ।
তোমার সম্মুখ হইতে আমাকে দূর করিও না,
তোমার পবিত্র আত্মাকে আমা হইতে হরণ করিও না ।
তোমার পরিত্রাণের আনন্দ আমাকে পুনরায় দেও,
ইচ্ছুক (উদার) আত্মা দ্বারা আমাকে ধরিয়া রাখ।
হে ঈশ্বর,হে আমার পরিত্রাণের ঈশ্বর,
রক্তপাতের দোষ হইতে আমাকে উদ্ধার কর,
আমার জিহ্বা তোমার ধর্ম্মশীলতার বিষয় গান করিবে।” (গীত ৫১:১-১৪)।SC 23.2
এই প্রকার অনুতপ্ত হওয়া আমাদের শক্তির বাহিরে; যিনি উর্দ্ধে আরোহন করিয়াছেন এবং মানুষ্যদিগকে নানা প্রকার বর দান করিয়াছেন একমাত্র সেই খ্রীষ্ট হইতেই উহা পাওয়া যাইতে পারে।SC 24.1
একটি বিষয় বুঝিতে অনেকেরেই ভ্রম হইয়া থাকে, তাই খ্রীষ্ট তাহাদিগকে যে সাহায্য চাহেণ তাহা তাহারা গ্রহণ করিতে পারে না।এইরূপ লোকে মনে করে যে, অনুতাপ পাপ ক্ষমার জন্য প্রস্তুত করিয়া দেয় এবং প্রথমেই অনুতাপ না করিলে তাহারা খ্রীষ্টের নিকটে আসিতে পারে না। এ কথা সত্য পাপ-ক্ষমার পূর্বে অনুতাপ আসিয়া থাকে; কারণ শুধু ভগ্ন ও অনুতপ্ত অন্তকরণই আবশ্যকতা বোধ করিবে । কিন্তু কি যীশুর নিকটে আসিবার পূর্বে পাপীর অনুতাপ কালের নিমিও অপেক্ষা করিতে হইবে? তবে কি পাপী ও ত্রানকর্ত্তার মধ্যে অনুতাপ একটা প্রতিবন্ধক স্বরূপ হইবে ?SC 24.2
খ্রীষ্টের আহাবানে কর্ণপাত করিবার পূর্ব্বে পাপীর অবশ্যই অনুতাপ করিতে হইবে, —বাইবেল কখনও এরূপ কথা শিক্ষা দেয় নাই ।“হে পরিশ্রান্ত ও ভরাক্রান্ত লোকসকল আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব “(মথি ১১:২৮) খ্রীষ্ট হইতে নির্গত তাঁহার গুন খাঁটি অনুতাপের পথে চালিত করে । “আর তাহাকেই ঈশ্বর অধিপতি ও ত্রাণকর্ত্তা করিয়া আপন দক্ষিণ হস্ত দ্বারা উন্নত করিয়াছেন ,যেন ইস্রয়েলেকে মনঃপরিবর্ত্তণ ও পাপামোচন দান করেন”(প্রেরিত ৫:৩১) —ইস্রয়েলদের নিকটে এই কথাটি বলিয়া পিতর উক্ত বিষয় পরিস্কাররূপে বুঝাইয়া দিয়াছেন । খ্রীষ্ট ব্যতীত যেরূপ আমারা ক্ষমা লাভ করিতে পারি না ,সেইরূপ বিবেককে জাগাইয়া তুলিবার নিমিও খ্রীষ্টের আত্মা ব্যতীত আমা-দের অনুতাপ করা সম্ভব নহে।SC 24.3
খ্রীষ্টই প্রত্যেক যথার্থ প্রেরণার মূল ।একমাত্র তিনিই হৃদয়ে পাপের প্রতি বিরুদ্ধভাব সঞ্চার করিয়া দিতে পারেন সত্য ও পবিত্রতার নিমিও প্রত্যেক বাসনা, আমাদের পাপপূর্ণ স্বভাব সম্পর্কীয় প্রত্যেক ধারনা ইহাই প্রমান করিতেছে যে তাঁহার আত্মা আমাদের হৃদয়ে সঞ্চারণ করিতেছে ।SC 25.1
যীশু কহিতেছেন, “আর আমি ভূতল হইতে উচ্চীকৃত হইলে সকলকে আমার নিকটে আকর্ষণ করিব” (যোহন১২:৩২)। খ্রীষ্ট জগতের পাপের নিমিও মৃত্যুবরণকারী ত্রাণকর্ত্তারূপে অবশ্যই পাপীর নিকটে প্রকাশিত হইবেন ; এবং সেই কালভেরির ক্রুশের উপরে ঈশ্বরের মেষ-শাবকে দেখিতে দেখিতে , পুনরুদ্ধারের নিগূঢ় রহস্য আমাদের মানস-পটে প্রকাশিত হইতে থাকিবে ও ঈশ্বরের মধুরভাব আমাদিগকে অনুতাপের নিমিও চালিত করিবে ।পাপী-দের জন্য প্রান দান করিয়া খ্রীষ্ট এক অব্যক্ত প্রেম প্রদর্শন করিয়া ছিলেন ; এই প্রেম উপলব্ধি করিতে পারিলে উহা পাপীর হৃদয় কোমল করে , মনে গভীর ছাপ রাখিয়া দেয়, এবং আত্মার আনুতাপের বাসনা জাগাইয়া তুলে।SC 25.2
খ্রীষ্টের দিকে চালিত হইতেছে এইরূপ কোন ধারনা জন্মিবার পুর্ব্বে অনেক লোক কখনও কখনও নিজ নিজ পাপপূর্ণ আচরনের নিমিও লজ্জিত হইয়া তাহাদের কতিপয় কু-অভ্যাস ত্যাগ করিয়া থাকে, এই কথা সত্য । কিন্তু যখনই তাহারা সংশোধনের চেষ্টা করে তখনই বুঝিতে হইবে যে,তাঁহাদিগকে আকর্ষণ করিতেছে, তাহা খ্রীষ্টেরই শক্তি । তাহাদের অজ্ঞাতসারে এক শক্তি তাহাদের আত্মার কার্য্য করিতেছে , তাঁহাতে বিবেক সজীব হইয়া উঠিয়াছে এবং বাহ্যিক জীবন সংশোধিত হইয়াছে । তারপর খ্রীষ্ট যখন তাহাদিগকে তাঁহার ক্রুশের দিকে তাকাইবার জন্য এবং তাহাদের পাপের নিমিও বিদ্ধ,-তাঁহাতে দেখিবার জন্য টানিয়া আনেন, তখন ঈশ্বরের আজ্ঞা বিবেকে উদিত হয় । তাহাদের জীবনের দুষ্ট ক্রিয়া, আত্মার বদ্ধমূল পাপ- সকলই তাহাদের নিকটে প্রকাশিত হইয়া পরে ।তখন তাহারা খ্রীষ্টের ধাম্মিকতা সম্বন্ধে কিছু কিছু বুঝিতে আরম্ভ করে এবং উচ্চকণ্ঠে বলিয়া উঠেঃ-“যে পাপের কবল হইতে পাপিকে মুক্তি প্রদান করিবার জন্য এইরূপ মহান্ আত্ম-ত্যাগের প্রয়োজন হইয়াছে , সেই পাপ কি ? আমরা যেন বিনাশ প্রাপ্তনা হইয়া অনন্ত জীবন ভোগ করিতে পারি, সেই জন্যই কি এত প্রেম ,এত যন্ত্রণা ও অপমান সহ্য করিবার আবশ্যক হইয়াছিল ? SC 25.3
পাপী হয়তো এই প্রেম, পরিহার করিতে পারে ,এবং খ্রীষ্টের দিকে আকর্ষিত হইতে না চাহিতে পারে ; কিন্তু প্রতিরোধ না করিলে সে অবশ্যই যীশুর দিকে ধাবিত হইবে ; যে পাপের নিমিও ঈশ্বরের প্রিয়তম পুত্রকে যাতনা ভোগ করিতে হইয়াছে সেই পাপের অনুতাপ করিবার জন্য পরিত্রাণ-কল্পনা সম্পর্কীয় জ্ঞান তাহাকে ক্রুশের পদতলে চালিত করিবে ।SC 26.1
প্রকৃতির বিভিন্ন বিষয়ে যে ঐশ্বরিক মন কার্য্য করিতেছেন, তাহাই মানব হৃদয়েও চেতনা দিতেছেন এবং মানবের যাহা নাই এমন কোন বিষয়ের জন্য এক অব্যক্ত বাসনার সৃষ্টি করিতেছেন । জগতের বস্তুনিচয় তাহাদের বাসনা তৃপ্ত করিতে পারে না এক-মাত্র যে সকল বস্তু শান্তি ও বিশ্রাম দিতে পারে, ঈশ্বরের আত্মা তাহাদিগকে সেই খ্রীষ্টের করুনা এবং পবিত্রতার আনন্দ সন্ধান করিবার জন্য অনুরোধ করিতেছেন। প্রত্যক্ষ ও অদৃশ্য প্রভাব দ্বারা আমাদের ত্রাণকর্ত্তা মানুষের পাপের অতৃপ্ত সুখভোগ হইতে টানিয়া আনিয়া, শুধু তাঁহাতেই নিহিত অনন্ত আশীর্ব্বাদ সমুহের দিকে চালিত করিবার নিমিও সর্ব্বদা কার্য্য করিতেছেন। এইরূপ যে সকল আত্মা জগতের ভগ্ন জলাশয় হইতে পান করিবার জন্য ব্যর্থ চেষ্টা করিতেছে ,তাহাদের প্রতি এই ঐশ্বরিক বার্ত্তা প্রদান করা হইয়াছেঃ “আর যে পিপাসিত সে আইসুক; যে ইচ্ছা করে সে বিনা মূল্যেই জীবন-জল গ্রহন করুক”(প্রকা ২২:১৭)।SC 26.2
এই পৃথিবী যাহা দিতে পারে তাহা অপেক্ষা উত্তম কিছু পাইবার বাসনা তোমার জাগে তবে ঐ বাসনাকে তোমার আত্মার প্রতি ঈশ্বরের রব বলিয়া স্বীকার করিও। তাঁহার নিকটে অনুতাপ পাইবার জন্য প্রার্থনা কর, অনন্ত প্রেম ও সিদ্ধ প্রবিত্রতা লইয়া খীষ্টকে তোমার সম্মুখে দেখিবার জন্য প্রার্থনা কর। ত্রাণকর্ত্তার জীবনে মানুষের প্রতি প্রেম, ঈশ্বরের ব্যবস্থার এই মূল নীতি সম্পূর্ণভাবে দৃষ্টান্তস্বরূপ দেখান হইয়াছে। পরপকার ও নিঃস্বার্থ প্রেমই তাঁহার আত্মার জীবন ছিল। ত্রাণকর্তার পানে যখনই আমরা চাহিয়া, তখনই তাহা হইতে আলোক-রাশি আসিয়া আমাদের হৃদয়ের পাপ কালিমা প্রকাশ করিয়া দেয়। SC 27.1
নীকদীমের মত আমরাও হয়তো এইরূপ চিন্তা করিয়া নিজেকে ভুলাইয়া রাখিতে পারি যে আমাদের জীবন ন্যায় পথে চলিয়াছে, নৈতিক চরিত্র খাঁটি রহিয়াছে এবং সাধারন পাপীর মত ঈশ্বরের সম্মুখে আমাদের হৃদয় অবনত করিবার প্রয়োজন নাই; কিন্তু খ্রীষ্টের আলোকে আমাদের অন্তারাত্না উদ্ভাশিতো হইলেও দেখিতে পাইব ,আমরা কিরূপ অপবিত্র ;তখন স্বার্থপরতার ভাব এবং জীবনের প্রত্যেক কার্য্য যাহা দ্বারা কলুষিত হইয়াছে ঈশ্বরের প্রতি সেই শত্রুতার প্রবৃত্তি নির্নয় করিতে পারিব। তখন আমরা বুঝিতে পারিব যে, আমাদের ধার্ম্মিকতা শুধু মলিন ছিন্ন কন্থার মত এবং একমাত্র খ্রীষ্টের রক্ত দ্বারাই আমরা পাপ-কালিমা হইতে শুচিকৃত হইতে পারি একমাত্র খ্রীষ্টের রক্তদ্বারাই আমাদের জীবন তাহারই সাদৃশ্যে নবীনীকৃত হইতে পারে।SC 27.2
ঈশ্বর মহিমার একটি কিরন খ্রীষ্টের পবিত্রতার একটি আলোক রেখা হৃদয়ে প্রবেশ করিলে প্রত্যেক কালিমা-চিহ্ন অতিসুস্পষ্টভাবে জাগিয়া উঠে এবং মানব —চরিএের যাবতীয় ত্রুটি ও বিকৃতি একেবারে অনাবৃত হইয়া যায়। উহা সমুদয় অপ্রবিএ বাসনা, হৃদয়ের কালিমা এবং ওষ্ঠাধরের অশুচিতা প্রকাশ করিয়া দেয় । ঈশ্বরের ব্যবস্থা বিফল করিবার জন্য পাপী যে সকল অবিশ্বাসের কার্য্য করিয়াছে, সেই সমুদয় তাঁহার দৃষ্টির সম্মুখে প্রকাশিত হইয়া পড়ে এবং ঈশ্বরের আত্মার তীক্ষ্ন প্রভাবের ফলে তাঁহার আত্মা আহত ও সন্তপ্ত হইয়া পড়ে। খ্রীষ্টের পবিএ ও নির্ম্মল চরিতের দিকে তাঁহার আপনার প্রতি ঘৃনা জন্মে।SC 28.1
আত্মসংস্থ পুরুষ(ভাববাদী) দানিয়েল যখন তাঁহার নিকটে প্রেরিত , মহিমার দীপ্তিতে আচ্ছন্ন স্বর্গীয় দুতকে দেখিলেন ,তখন তিনি তাঁহার আপন দুর্ব্বলতা ও অসম্পূর্ণতার রোধে একবারে অভিভূত হইলেন। সেই অপূর্ব্ব দৃশ্যের বর্ণনায় তিনি বলিছিলেন, “আর আমাতে বল রহিল না; আমার তেজ ক্ষয়ে পরিনিত হইল, আমি কিছু মাত্র বল রক্ষা করিতে পারিলাম না’’ (দানি ১০:৮)। যে হৃদয় এইরূপে ভাবাবিষ্ট হইয়াছে, সেই হৃদয় অবশ্যই স্বার্থপরতা ও আত্মপ্রীতি ঘৃনা করিবে এবং হৃদয়ের যে পবিত্রতা ঈশ্বরের ব্যবস্থা ও খ্রীষ্টের চরিএের সহিত সুসঙ্গত খ্রীষ্টের ধার্ম্মিকতার সাহায্যে তাহাই অনুসন্ধান করিবে।SC 28.2
পৌল বলিয়াছেন যে তিনি “ব্যবস্থাগত ধার্ম্মিকতা সম্বন্ধে” অথাৎ বাহ্যিক ব্যাপার সমূহে “অনিন্দনীয়” ছিলেন (ফিলি ৩:৬); কিন্তু যখন তিনি ব্যবস্থায় গূঢ় আধ্যাত্নিক মর্য্যাদা বুঝিতে পারিলেন, তখন তিনি আপনাকে পাপী বলিয়া গণ্য করি—লেন । বাহ্যিক জীবনে মানুষ যেরূপ ব্যবস্থ্যা প্রয়োগ করিয়া থাকে সেই ব্যবস্থার অক্ষরানুযায়ী বিচার করিয়া দেখিলে তিনি পাপ হইতে বিরত হইয়াছিলেন; কিন্তু যখন তিনি উহার পবিত্র নীতির গভিরতার দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া ঈশ্বর যেরূপ তাঁহাকে দেখিয়াছিলেন ঠিক সেই ভাবে আপনাকে দেখিলেন, তখন তিনি দীনতায় অবনত হইয়া পাপ স্বীকার করিলেন। তিনি বলিয়াছেন, “আর আমি একসময়ে ব্যবস্থা ব্যতিরেকে জীবিত ছিলাম, কিন্তু আজ্ঞা আসিলে পাপ জীবিত হইয়া উঠিল,আর আমি মরিলাম”(রোমীয় ৭:৯)।যখন তিনি ব্যবস্থার আধ্যাত্মিক ভাব বুঝিতে পারিলেন,পাপ তখন উহার বীভৎস স্বরূপ লইয়া প্রকাশিত হইল,এবং তাহার আত্ন-মর্য্যাদা লুপ্ত পাইল।SC 28.3
ঈশ্বর সমুদয় পাপকে এক সমান ভাবে দেখেন না ; মানুষের ন্যায় তিনিও পাপের কম বেশি নির্ণয় করিয়া থাকেন;তবে মানুষের দৃষ্টিতে কোন বিশেষ অপরাধ হয়তো তুচ্ছ বলিয়া মনে হইতে পারে,কিন্তু ঈশ্বরের দৃষ্টিতে কোন অপরাধই তুচ্ছ নহে । মানুষের বিচারে পক্ষপাত দোষ আছে এবং উহা অসম্পূর্ণ ; কিন্ত ঈশ্বর সকল বিষয়কেই যথাযথ ভাবে গ্রহন করিয়া থাকেন। মদ্যপায়ীকে সকলে ঘৃনা করে এবং বলিয়া থাকে যে তাঁহার পাপ তাহাকে স্বর্গ হইতে বঞ্চিত করবে;অথচ লোভ, অহঙ্কার ও স্বার্থপরতা প্রভৃতি পাপের প্রতি প্রায়শঃই ঘৃনার ভাব দেখা যায় না। কিন্তু এই সকল পাপ বিশেষ ভাবে ঈশরের নিকটে অপ্রীতিকর;কারন উহারা তাঁহার চরিত্রের এবং অনভিশপ্ত বিশ্বের প্রান বায়ু,পরার্থপর প্রেমের সম্পূর্ণ বিপরীত । অতি জঘন্য কোন প্রকার পাপের পতিত মানব হয়তো লজ্জা ও দীনতা এবং খ্রীষ্টিয় অনুগ্রহের অভাব বোধ করিতে পারে ; কিন্তু অহঙ্কার কোন প্রকার অভাব বোধ করে না , তাই উহা খ্রীষ্টের এবং তিনি যে অনন্ত আশীর্ব্বাদ দান করিতে আসিয়াছেন সেই আশীর্ব্বাদ-সমুহের প্রতিকুলে হৃদয়-দুয়ার রুদ্ধ করিয়া দেয়।SC 29.1
Paragraph 1 1122 ছিল, সে আপনাকে অতিশয় অসাধু বলিয়া মনে ভাবিত এবং অন্য সকলেও তাহাকে সেই ভাবে দেখিত;কিন্তু সে তাঁহার প্রকৃত অভাব বুঝিতে পারিল এবং তাঁহার লজ্জা ও অপরাধের বোঝা লইয়া ঈশ্বরের করুনা ভিক্ষার জন্য তাঁহার নিকটে আসিয়া উপস্থিত হইল।ঈশ্বরের আত্মা যাহাতে তাঁর দয়ার কায্য করিতে এবং পাপের শক্তি মুক্তি দান করিতে পারেন এবং পাপের শক্তি হইতে তাহাকে মুক্তি দান করিতে পারেন তজ্জন্য সে তাঁহার হৃদয় খুলিয়া দিল।অপর দিকে ধর্ম্মধ্বজী ফরীশীর দম্ভপূর্ণ আত্মম্ভরি প্রার্থনায় ইহাই প্রমানিত হইল যে পবিত্র আত্মার হৃদয় উন্মুক্ত নহে ঈশ্বরের সহিত তাঁহার দূর ব্যবধানের নিমিও, ঐশী পবিত্রতাঁর পূর্ণতার তুলনায় তাঁহার আপন কলুষতা সন্মন্ধে কোনই ধারনা ছিল না। সে কোন অভাব বোধ করে নাই,তবে সে কিছু লাভ করিতেও পারিল না।SC 29.2
তুমি তোমার আপন পাপ স্বভাবের বিষয় বুঝিতে পারিলে আপনাকে সংশোধনের জন্য আর বিলম্ব করিও না ।এরূপ বহু লোক রহিয়াছে যাহারা মনে করে যে খ্রীষ্টের নিকটে আসিবার নিমিও তাহারা উপযুক্ত নয় ।তুমি কি শুধু তোমার নিজের চেষ্টায় ভাল হইতে আশা কর ? “কূশীয় কি আপন হক্,কিণ্বা চিতাবাঘ কি আপন চিত্রবৈচিত্র্য পরিবর্ত্তন করিতে পার ? তাহা হইলে দুস্কর্ম্ম অভ্যাস করিয়াছে যে তোমারা তোমরাও সৎকর্ম্ম করিতে পারিবে” (যির ১৩:২৩),শুধু ঈশ্বর হইতেই আমারা সাহায্য পাইতে পারি ।আমাদের দৃঢ়তর কোন প্ররোচনা ।ইহা হইতেও উত্তম কোন সুযোগ অথবা পবিত্রতর স্বভাবের নিমিও অপেক্ষা করিবার প্রয়োজন নাই ।আমারা নিজেদের চেষ্টায় কিছুই করতে পারি না । আমারা যেরূপ আছি ঠিক সেইরূপ ভাবেই আমাদিগকে খ্রীষ্টের সম্মুখে উপস্থিত হইতে হইবে ।SC 30.1
কিন্তু কেহ যেন আপনাদিগকে এরূপ চিন্তায় প্রতারিত করেনা যে, যাহারা ঈশ্বরের অনুগ্রহ অগ্রাহ্য করিয়াছে, অপার প্রেম ও করুনা পরবশ ঈশ্বর তাহাদিগকে ত্রাণ করিবেন ।একমাত্র ক্রুশের জ্যোতিতেই পাপের কলুষতার পারিমান করা যাইতে পারে ।যাহারা বলে দয়ালু ঈশ্বর কখনও পাপীকে ত্যাগ করিতে পারেন না,তাহারা একবার কালভেরির পানে চাহিয়া দেখুক। মানুষের পরিত্রাণ লাভের অপর কোন উপায় ছিল না বলিয়া, এই মহান বলি ব্যতিত মানবজাতির পাপের অপবিত্র প্রভাব হইতে মুক্ত হইয়া পবিত্রগনের সহিত সহভাগিতার ফিরিয়া পাওয়া এবং আধ্যাত্মিক জীবনের অংশী হওয়া অসম্ভব ছিল বলিয়া,-খীষ্ট আপনার উপরে আজ্ঞালঙ্ঘঙ্কারিদের আপরাধ বহন করিয়া পাপিদিগের পরিবর্ত্তে যন্ত্রনা ভোগ করিয়াছিলেন। ঈশ্বরপুত্রের প্রেম দুঃখভোগ ও মৃত্যপাপের ভীষণতা সমন্ধে সাক্ষ্য দিতেছে এবং ইহাই ঘোষণা করিতেছে যে খ্রীষ্টে আত্নসমর্পন ব্যতীত উহার কবল হইতে মুক্ত হইবার এবং উচ্চতর জীবন লাভ করিবার আর কোনই আশা নাই।SC 30.2
যাহারা অনুতাপ করে নাই তাহারা নামধারী খ্রীষ্টিয়ানদের সন্মন্ধে এইরূপ মন্তব্য প্রকাশ করিয়া আপনাদের দোষ-ক্ষালন করিতে চায়ঃ “তাহারা যেরূপ সচ্চরিএ, আমিও ঠিক সেইরূপ আমা অপেক্ষা তাহারা কোন অংশেই অধিক আত্ন-ত্যাগী ,সংযমী আথবা আচারনে সতর্ক নহে ।আমার ন্যায় তাহারাও আরাম এবং ভোগবিলাস পছন্দ করে । এই প্রকারে তাহারা অপরের অপরাধ দেখাইয়া নিজেদের কর্তব্য অবহেলায় ত্রুটি ঢাকিয়া রাখিতে চায়। কিন্তু অপরের ত্রুটি ও অপরাধে কখনও কেহ নিজেকে রেহাই দিতে পারে না; কারন সদাপ্রভু আমাদের আদর্শের জন্য কোন ভ্রান্ত মানব আদর্শ দেন নাই।ঈশ্বরের নিস্কলঙ্ক পুত্রকেই আমাদের আদর্শ স্বরূপ প্রদত্ত হইয়াছে; তবে যাহারা নামধারী খ্রীষ্টিয়ানদের অন্যায় আচরন সন্মন্ধে আপাওি করিয়া থাকে তাহাদের নিজেদেরই উত্তম ও মহওর আদর্শ প্রদর্শন করা উচিত খ্রীষ্টিয়ানের জীবন সন্মদ্ধে যদি তাহাদের এই উচ্চ ধারনা জন্মিয়া থাকে ,তবে তাহাদের পাপ কি আরও অধিক নহে ? কারন প্রকৃত পথ কি, তাহারা জানে, অথচ নিজেরা সেই অনুসারে কার্য্য করিতে চাহে না। SC 31.1
দীর্ঘসূত্রী হইও না । তোমার পাপ পরিত্যাগ এবং যীশুর সাহায্য অন্তরের পবিত্রতা লাভ কার্য্য ভবিষ্যতের জন্য রাখিয়া দিও না। এই বিষয়ে হাজার হাজার ব্যক্তি এরূপ ভুল করিয়া ফেলিয়াছে যে অনন্ত কালেও সেই ক্ষতি পুরন হইবে না। জীবনের ক্ষনস্থায়িত্ব ও অনিশ্চয়তার সম্বন্ধে আমি এই স্থানে আলোচনা করিব না; কিন্তু ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার সনিবন্ধ অনুরোধ বাক্যে কর্ণপাত করিতে বিলম্ব করিলে এবং পাপে জীবন যাপন করিতে চাহিলে এরূপ এক ভীষণ বিপদ রহিয়াছে , যাহা ধারণাতীত; কারন বিলম্বে এইরূপ ফলই হইয়া থাকে। পাপ যত ক্ষুদ্র বলিয়াই মনে হউক্ না কেন,উহাকে প্রশ্রয় দিলে অনন্ত ক্ষতি ভোগ করিতে হইবে। আমরা যাহা জয় করি না, তাহাই আমাদিগকে জয় করিয়া লইবে এবং আমাদের বিনাশের ব্যবস্থা করিবে।SC 32.1
আদম ও হবা আপনাদের মনকে এইরূপ প্রবোধ দিয়া ভুলাইয়া রাখিয়াছিল যে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়ার মত ক্ষুদ্র একটি অপরাধ করিলে, ঈশ্বর যেরূপ ঘোষণা করিয়াছেন, সেইরূপ ভীষণ পরিনাম কখনও হইতে পারে না। কিন্তু এই ক্ষুদ্র ব্যাপারটিতে ঈশ্বরের অপরিবর্ত্তনীয় পবিত্র ব্যবস্থা লঙ্ঘন কারা হইল এবং তাঁহারই ফলস্বরূপ মানুষ ঈশ্বর হইতে পৃথক্ হইয়া পড়িল , মৃত্যু ও অফুরন্ত দুঃখ-রাশি বন্ধন-মুক্ত জলোচ্ছাসের ন্যায় পৃথিবী উপর আসিয়া পতিত হইল। যুগে যুগে তাই আমাদের পৃথিবী হইতে একটা নিরবিচ্ছিন্ন আর্ত্তনাদধ্বনি উর্দ্ধে উঠিতেছে এবং মানবের আবাদ্ধতার ফলে সমুদয় সৃষ্টি বেদনার তীব্র জ্বলায় আর্ত্তস্বর করিতেছে ঈশ্বরের বিপক্ষে মানুষের এই বিদ্রোহের পরিনাম স্বর্গে অনুভুত হইয়াছে ।স্বর্গীও ব্যবস্থা লঙ্ঘনের প্রায়শ্চিও স্বরূপ যে অপুর্ব্ব বিস্ময়কর বলির প্রয়োজন হইয়াছিল ,কালভেরি তাহারি স্মৃতি ধারন করিয়া রহিয়াছে সুতরাং পাপকে কখনও আমদের তুচ্ছ বিষয়রূপে দেখিবার প্রবৃওি না হয়।SC 32.2
যতবার তুমি ব্যবস্থা লঙ্ঘন করিতেছ, যতবার খ্রীষ্টের করুনা উপেক্ষা বা পরিহার করিয়া আসিতেছ ; ততবার ঐ অপরাধ তোমারই উপরে ঘুরিয়া ফিরিয়া আসিতেছে; উহাতে তোমার হৃদয় কঠিন ।প্রবৃওি ভ্রষ্ট ,বুদ্ধি আড়ষ্ট হইয়া পরিতেছে তারপর ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার করুন আহ্বানে তোমরা আত্ম-সমর্পণ করিবার প্রবৃওি কেবল যে খর্ব্ব হইয়া পরিতেছে তাহা নয় ,আত্ম -সমর্পণ করিবার শক্তি হ্রাস করিয়া দিতেছে ।SC 33.1
অনেকে নিজ নিজ সংক্ষুব্ধ(ব্যথিত ও চঞ্চল) বিবেককে এই- রূপ চিন্তা দ্বারা শান্ত করিয়া রাখিয়াছে যে তাহাদের ইচ্ছা হইলেই তাহারা কুপথ পরিবর্ত্তন করিতে পারিবে—তাহারা করুণায় আহবান অবহেলা করিলেও পুনরায় করুণায় সাড়া লাভ করিবার সুযোগ পাইবে ।তাহারা মনে করে যে অনুগ্রহের আত্মার প্রতি ঐরূপ ব্যবহার এবং শয়তানের পক্ষে তাহাদের প্রভাব বিস্তার করিবার পরেও, ভীষন কোন সঙ্কটের সময়ে তাহারা তাহাদের গতি পরিবর্ত্তন করিতে পারিবে কিন্তু এত সহজে তাহা হইবার নহে ।সমগ্র জীবন ব্যাপী শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার ফলে চরিত্র এরূপভাবে গঠিত হইয়াছে যে, তখ্ন কেহই যিশুর সাদৃশ্য গ্রহন করিতে ইচ্ছা করে না SC 33.2
এমন কি, চরিত্রের একটি মাত্র মন্দ লক্ষন ,হৃদয়ে পরিপুষ্ট একটি মাত্র পাপ বাসনা , সুসমাচারের সমুদয় শক্তি অবশেষে একেবারে ব্যর্থ করিয়া দিবে ।প্রত্যেক পাপাচার ঈশ্বরের প্রতি আত্মার বিরুপ ভাব দৃঢ় করিয়া তুলে। যে ব্যক্তি ধর্ম্মভাব শূন্য ০ দৃষ্টতার পরিচয় দেয় এবং ঐশ্বরিক সত্যের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন থাকে ,সে তাহার, “নিজ কার্য্য অনুযায়ী ফল ভোগ করিতেছে পাপী, ” নিজ পাপ-পাশে বদ্ধ হয়” হিতো ৫:২২,- কু-প্রবৃওি উপেক্ষা করিবার বিরুদ্ধে,পরম জ্ঞানী ব্যক্তির চেতনা বানী অপেক্ষা অধিক গুরুতর চেতনা বাক্য বাইবেলে আর কোথায় নাই ।SC 33.3
খ্রীষ্ট আমাদিগকে পাপ হইতে মুক্ত করিবার জন্য প্রস্তুত আছেন কিন্তু তিনি আমাদের ইচ্ছার উপরে জোর করিতে চাহেন না; যদি বারবার আজ্ঞালঙ্ঘনের ফলে ইচ্ছাশক্তি সম্পূর্ণরূপে কু-প্রবৃওির দিকে ঝু৺কিয়া পরে এবং যদি আমরা মুক্ত হইবার বাসনা না করি ,যদি আমরা তাঁহার করুনা কিছুতেই গ্রহন না করি, ত্বে তিনি আর কি করিতে পারেন ? বারবার তাঁহার প্রেম প্রত্যাখান করিয়া আমরা নিজেদের বিনাশ সাধন করিতেছি । “দেখ এখন সুপ্রসন্নতার সময় ; দেখ এখন পরিত্রানের দিবস” (২ করি ৬:২) “অদ্য যদি তোমরা তাঁহার রব শ্রবণ কর,তবে আপন আপন হৃদয় কঠিন করিও না”(ইব্রীয় ৩:৭,৮) SC 33.4
“মানুষ্য প্রত্যক্ষ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি করে কিন্তু সদাপ্রভু অন্তকরনের প্রতি দৃষ্টি করেন”(১ শমূ ১৬:৭);তিনি মানবের সুখদুঃখ ঘাত প্রতিঘাত পূর্ণ অন্তকরন দেখিয়া ;-যে অন্তকরন বিপথগামী এবং অপবিত্রতা ও প্রতারনার আবাসস্থল তাহাও তিনি দৃষ্টি করেন। তিনি উহার উদ্দেশ্য,মৎলব ও অভিসন্ধি সকলই জানেন।তোমার কলঙ্কিত আত্মা যেরূপ আছে ঠিক সেরূপ ভাবেই উহা লইয়া ঈশ্বরের সম্মুখে উপস্থিত হও ।গীত-সংহিতাকারের ন্যায় সর্ব্বদ্রষ্টার পানে হৃদয়ের সমুদয় কক্ষ উন্মুক্ত করিয়া দিয়া বলিতে থাক, “হে ঈশ্বর, আমাকে অনুসন্ধান কর আমার সকল জ্ঞাত হও; আমার পরীক্ষা, কর আমার চিন্তা সকল জ্ঞাত হও; আর দেখ আমাতে দুষ্টতার পথ পাওয়া যায় কিনা এবং সনাতন পথে আমাকে গমন করাও” (গীত ১৩৯:২৩,২৪)।SC 34.1
অনেকে মস্তিস্কগত ধর্ম্মগ্রহন করিয়া ঈশ্বরপরায়ণ ভাব দেখাইয়া থাকে,অথচ তাহাদের অন্তঃকরন শুচিকৃত নহে। তুমি এইরূপ প্রার্থনা করিও; “হে ঈশ্বর, আমাতে বিশুদ্ধ অন্তকরন সৃষ্টি কর, আমার অন্তরে সুস্থির আত্মাকে নুতুন করিয়া দেও” (গীত ৫১:১০) ।তোমার আপন আত্মার সহিত খাঁটি ব্যবহার কর। তোমার অনিত্য জীবন বিপাদাপন্ন হইলে তুমি যেরূপ ব্যগ্র ও উৎসাহী হও এখন হইতে চেষ্টা কর । ঈশ্বর ও তোমার আপন আত্মার সহিত এই বিষয় অনন্তকালের নিমিও স্থির করিতে হইবে। যদি তোমার আশা শুধু কল্পিত হয় তাহা তোমার বিনাশের কারন হইবে।SC 34.2
প্রার্থনা সহকারে ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন কর ।ঈশ্বরের বাবস্থা ও খ্রীষ্টের জীবন চিএিত করিয়া পবিত্র বাক্যে তোমার সম্মুখে শুচিতার মুলনীতি সমূহ উপস্থিত করিয়াছে ; ” পবিত্রতা বিহীনে কেহই প্রভুর দর্শন পাইবে না “(ইব্রীয় ১২:১৪)। ঈশ্বরের বাক্য পাপ সন্মন্ধে বোধ জন্মাইয়া দেয় এবং স্পষ্টরূপে পরিত্রানের পন্থা প্রকাশ করেন । তোমার আত্মার প্রতি ঈশ্বরের বাক্যের ন্যায় এই পবিত্র শাস্ত্র বাক্যে মনোযোগ প্রদান কর। SC 35.1
পাপের অধিক্য দেখিতে পাইয়া নিজের কি অবস্থায় পৌঁছি-য়াছ তাহা বোধগম্য করিতে পরিলে ,হতাশ হইয়া হাল ছাড়িয়া দিও না। খ্রীষ্ট পাপীদের ত্রাণ করিবার জন্য আসিয়াছিলেন ঈশ্বরের সহিত আমাদের সম্মিলন স্থাপন করিতে হইবে না ,কিন্তু কি অদ্ভুত প্রেম! ঈশ্বর খ্রীষ্টে “আপনার সহিত জগতের সম্মিলন করাইয়া” দিয়াছেন (২ করি ৫:১৯)। তিনি তাঁহর করুন প্রেমের বলে তাঁহার পথ ভ্রান্ত সন্তানগণের অন্তঃকরন সুপথে ফিরাইয়া আনিতেছেন । ঈশ্বর যাহাদিগকে পরিত্রাণ দিতে চাহেন তাঁহাদিগের ত্রুটি ও অপরাধ সমূহ তিনি যেরূপে ধৈর্য্য সহকারে সহ্য করিয়া থাকেন, পৃথিবীর কোন মাতা পিতা তাঁহার সন্তানদিগের প্রতি সেরূপ ধৈর্য্য দেখইতে পারেন না । ব্যবস্থালঙ্ঘনকারী প্রতি পাপীর সহিত আর কেহ তাঁহার ন্যায় কোমলভাবে সাধ্যসাধনা করিতে পারে না। তাঁহার ন্যায় কোমলভাবে সাধ্যসাধনা করিতে পারে না ।তাঁহার ন্যায় কোনও মানব-ওষ্ঠ আর কখনও বিপথগামী বাক্তির জন্য এত অধিক কাতর অনুনয় করিতে পারে নাই ।তাঁহার সমুদয় অঙ্গীকার ও চেতনাবানী শুধু তাঁহার অব্যক্ত প্রেমের প্রকাশ মাত্র।SC 35.2
শয়তান যখন আসিয়া তোমাকে মহা পাপী বলিয়া সম্মধন করে, তখন তুমি তোমার ত্রাণকর্ত্তার দিকে তাকাইও এবং তাঁহার গুনাবলি সম্বন্ধে বলিও । তাহার জ্যোতিঃর দিকে চাহিয়া সাহায্য লাভ করিতে পারিবে । তোমারা পাপ স্বীকার করিয়া শত্রুকে বলিও যে, “খ্রীষ্ট যীশু পাপীদের পরিত্রাণ করিবার জন্য জগতে আসিয়াছেন” (১ তিম ১ :১৫) এবং তুমি তাঁহার অতল প্রেম দ্বারা ত্রানলাভ করিতে পার । দুইজন ঋণীর বিষয়ের যীশু সিমন এক প্রশ্ন করিলেন। একজন তাঁহার মহাজনের কাছে অল্প ধারিত, আর একজন অধিক ধারিত কিন্তু মহাজন উভয়কে ক্ষমা করিলেন এবং খ্রীষ্ট সিমনকে জিজ্ঞাসা করিল,” কোন ঋণী বাক্তি তাঁহার মহাজনকে অধিক ভালবাসিবে ?” শিমোন উত্তর করিল, “যাহার অধিক ঋণ ক্ষমা করিলেন সেই”(লূক ৭:৪৩)। আমারা সকলেই মহাপাপী কিন্তু খ্রীষ্ট আমাদের ক্ষমা লাভের জন্য মরিয়াছেন।তিনি বলি স্বরূপ হইয়া যে সমুদয় গুনের পরিচয় দিয়াছেন পরম পিতার নিকটে আমাদের সপক্ষে বলিবার নিমিও সেই সকল যথেষ্ট হইবে। যাহাদিগকে তিনি অধিক ক্ষমা করেছেন, তাহাদিগকে তিনি অধিক ভালবাসিবেন এবং তাঁহারা তাঁহার মহান প্রেম ও অসীম ত্যাগের নিমিও তাঁহার স্তুতি করিতে তাঁহার সিংহাসনের অতি নিকটে দাড়াইবেন । ঈশ্বরের প্রেম সন্মন্ধে সম্পূর্ণ ধারণা জম্মিলেই আমারা পাপের গুরুত্ব স্পষ্ট হৃদয়ঙ্গম করিতে পারি । স্বর্গ হইতে আমাদের পরিত্রানের উপায় স্বরূপ যে শৃঙ্খল ধারা নামিয়া আসিয়াছে ,যখন আমরা তাহারা দৈঘ্যের প্রতি দৃষ্টিপাত করি, খ্রীষ্ট আমাদের জন্য যে অসীম ত্যাগ করিয়াছেন যখন আমরা সেই ত্যাগের কিছু মাত্রও হৃদয়ঙ্গম করিতে পারি, তখন আমাদের অন্তঃ- করন বেদনায় ও অনুতাপে দ্রবীভুত হইয়া যায় । SC 36.1