অবিশ্বাসীগণের সহিত খ্রীষ্টীয়ানের বিবাহসম্পর্কে ঈশ্বরের বাক্যে যে শিক্ষা রহিয়াছে, খ্রীষ্টীয় জগতে তৎপ্রতি এক আশ্চর্য্য ও ভীতিপ্রদ ঔদাসীন্য দৃষ্ট হয় । যাহারা ঈশ্বরকে প্রেম করে ও ভয় করে বলিয়া মুক্ত কণ্ঠে স্বীকার করে, তাহাদের মধ্যে অনেকে অসীম জ্ঞানী পরমেশ্বরের উপদেশানুযায়ী চলা অপেক্ষা নিজেদের মনের গতি অনুযায়ী চলা উপযুক্ত মনে করে । যে একটী বিষয়ে এই জগতের ও পর-জগতের জন্য উভয় দলের মঙ্গল ও সুখ অপরিহার্য্যরূপে নির্ভর করে, সেই বিষয়টীতেই বিচার, বুদ্ধি ও ঈশ্বরভয় একদিকে ফেলিয়া রাখা হয় ; এবং অন্ধ উত্তেজনা ও একগুঁয়েমীকে নিয়ন্ত্রণভার দত্ত হয় । CCh 343.1
যে সকল নরনারী অন্য বিষয়ে বিজ্ঞ ও ধর্ম্মভীরু তাহারাও উপদেশে চক্ষু মুদ্রিত করিয়া থাকে ; বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়সজন ও ঈশ্বরের দাসগণের অনুরোধ-উপরোধে কর্ণপাত করে না । সতর্কতার কিংবা চেতনার জন্য তাহাদিগকে কিছু বলিলে, তাহারা মনে করে, তাহাদের ব্যাপারে অশিষ্টভাবে হস্তক্ষেপ করা হইতেছে ; আর তাহাদের যে বন্ধু বিশ্বস্তভাবে তাহাদের অবৈধ কার্য্যে বাধা প্রদান করে, তাহাকে তাহারা শত্রু বলিয়া মনে করে । শয়তান যেমন চাহে, এই সমস্ত তেমনি । সে এই আত্মার চতুর্দ্দিকে তাঁহার মন্ত্রজাল বিস্তার করে, তাহাতে ইহা মন্ত্রমুগ্ধ ও হতবুদ্ধি হইয়া পড়ে । বিবেক বা জ্ঞানেন্দ্রিয়, আত্মসংযমের বলগা লালসার গলদেশে স্থাপন করে ; এবং আক্রান্ত ব্যক্তি যে পর্য্যন্ত না দুঃখদুর্দ্দশার ও দাসত্বে্র চরম সীমায় উপনীত হয়, তাবৎ অপবিত্র কামাদি রিপুগণ প্রভুত্ব করিতে থাকে । কল্পনা করিয়া এই চিত্রটী অঙ্কিত করা হয় নাই, কিন্তু ইহা একটী বাস্তব ব্যাপারের আবৃত্তি মাত্র । ঈশ্বর যাহা সুস্পষ্টরূপে নিষেধ করিয়াছেন, সেই মিলনে তিনি অনুমতি দান করেন না । CCh 343.2
প্রাচীন ইস্রায়েল জাতির চতুর্দ্দিকে যে সকল পৌত্তলিক জাতি বাস করিত, তাহাদের সহিত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হইতে সদাপ্রভু ইস্রায়েল সন্তানগণকে নিষেধ করিয়াছিলেন ; তিনি কহিয়াছিলেন, “তাহাদের সহিত বিবাহ সম্বন্ধ করিবে না ; তুমি তাহার পুত্রকে আপনার কন্যা দিবে না, ও আপন পুত্রের জন্য তাহার কন্যা গ্রহণ করিবে না, ।” ভবিষ্যৎ-নেত্রে এইরুপ মিলনের ফলাফল নিরীক্ষণ করিয়া পরম জ্ঞানী পরমেশ্বর ইহার কারণও প্রদর্শন করিয়াছেন ; তিনি কহিয়াছেন, “কেননা সে তোমার সন্তানকে আমার অনুগমন হইতে ফিরাইবে, আর তাহারা অন্য দেবগণের সেবা করিবে, তাই তোমাদের প্রতি সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইবে, এবং তিনি তোমাকে শীঘ্র বিনষ্ট করিবেন ।” “কেননা তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর পবিত্র প্রজা ; ভূতলে যত জাতি আছে, সে সকলের জন্য আপনার নিজস্ব প্রজা করিবার জন্য তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকেই মনোনীত করিয়াছেন ।” CCh 343.3
ঈশ্বর বিহীন লোকদের সহিত খ্রীষ্টীয়ানের বিবাহ-সম্বন্ধ স্থাপন সম্পর্কে নূতন নিয়মেও ঐ একই প্রকার নিষেধাজ্ঞা রহিয়াছে । করিন্থীয়দের প্রতি প্রথম পত্রে প্রেরিত পৌল ঘোষণা করিয়াছেন, “যতদিন স্বামী জীবিত থাকে, তত দিন স্ত্রী আবদ্ধা থাকে, কিন্তু স্বামী নিদ্রাগত হইলে পর সে স্বাধীনা হয়, যাহাকে ইচ্ছা করে, তাঁহার সহিত বিবাহ হইতে পারে, কিন্তু কেবল প্রভুতেই ।” পুনরায়, তাঁহার দ্বিতীয় পত্রে তিনি লিখিয়াছেন, “তোমরা অবিশ্বাসীদের সহিত অসম ভাবে যোঁয়ালিতে বদ্ধ হইও না ; কেননা ধর্ম্মে ও অধর্ম্মে পরস্পর কি সহযোগিতা ? অন্ধকারের সহিত দীপ্তিরই বা কি কী সহভাগিতা ? আর বলীয়ালের (পাপ দেবের) সহিত খ্রীষ্টের কি ঐক্য ? অবিশ্বাসীরই বা কী অংশ ? আর প্রতিমাদের সহিত ঈশ্বরের মন্দিরেরই বা কি সম্পর্ক ? আমরাই ত জীবন্ত ঈশ্বরের মন্দির, যেমন ঈশ্বর বলিয়াছেন ; আমি তাহাদের মধ্যে বসতি করিব ও গমনাগমন করিব ; এবং আমি তাহাদের ঈশ্বর হইব, ও তাহারা আমার প্রজা হইবে । অতএব তোমরা তাহাদের মধ্য হইতে বাহির হইয়া আইস, ও পৃথক্ হও, ইহা প্রভু কহিতেছেন, এবং অশুচি বস্তু স্পর্শ করিও না ; তাহাতে আমিই তোমাদিগকে গ্রহণ করিব, এবং তোমাদের পিতা হইব, ও তোমরা আমার পুত্র কন্যা হইবে,ইহা সর্ব্বশক্তিমান প্রভু কহেন ।” CCh 344.1
নিষিদ্ধভুমিতে পদার্পণ করিতে ঈশ্বরের প্রজাগণের কখনও সাহসী হওয়া কর্ত্তব্য নহে । বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীগণের মধ্যে বিবাহ ঈশ্বর-নিষিদ্ধ । কিন্তু অনেক সময়ে অপরিবর্ত্তিত লোকেরা নিজেদের বাসনা চরিতার্থের নিমিত্ত ঈশ্বর অননুমোদিত বিবাহ কার্য্য সম্পন্ন করিয়া থাকে । আর এই কারণেই এই জগতে বহু নরনারী আশাহীন ও ঈশ্বর বিহীন অবস্থায় কালাতিপাত করিতেছে । তাহাদের সৎ উচ্চাকাঙ্ক্ষা মরিয়া গিয়াছে ; ঘটনারূপ শৃঙ্খলের দ্বারা তাহারা শয়তানের জালে আবদ্ধ হইয়াছে । যাহারা উত্তেজনা ও কামাদি রিপুর বশবর্ত্তী, তাহারা এই জীবনে তিক্ত শষ্য কাটিবে, আর ঐ পথে চলিতে থাকিলে অবশেষে তাহারা প্রাণ হারাইতে পারে । CCh 345.1
যাহারা সত্য-পালনকারী বলিয়া প্রকাশ্যে স্বীকার করে, অথচ অবিশ্বাসীদিগকে বিবাহ করিয়া ঈশ্বরের ইচ্ছা পদতলে দলিত করে, তাহারা ঈশ্বরের অনুগ্রহ হইতে বঞ্চিত হইয়া তিক্ত অনুতাপের কার্য্য করে । অবিশ্বাসীর নৈতিক চরিত্র অতিশয় হইলেও হইতে পারে, কিন্তু সেই বড় কিংবা কন্যা ঈশ্বরের আজ্ঞা সকল পালন করে না, এবং মহামূল্য পরিত্রাণ অবহেলা করে, আর এই উপযুক্ত কারণের জন্যই এইরূপ বিবাহ মিলন সিদ্ধ হয় না । যে যুবককে যীশু বলিয়াছিলেন, “এক বিষয়ে তোমার ত্রুটি আছে,” ঐ অবিশ্বাসীর স্বভাব, তাহারই সভাবের ন্যায় হইতে পারে ; তাহার ঐ একটী বিষয়েরই প্রয়োজন ছিল । CCh 345.2