কখনও কখনও অবিশ্বাসী বরের পক্ষ সমর্থন করিয়া বলা হয় যে, সে বেশ ধর্ম্মানুকুল এবং তাহার একটি বিষয়ে ত্রুটি থাকিলেও অর্থাৎ সে খ্রীষ্টীয়ান না হইলেও, জীবন-সঙ্গী হইবার জন্য যে সকল গুণ থাকা বাঞ্ছনীয়, ঐ একটা বাদে তাহার সকলই আছে । সারা জীবনের জন্য কোন অবিশ্বাসীর সহিত বিবাহ-মিলনে মিলিত হওয়া কোন কোন বিশ্বাসীর বিচারে যদিও অনুচিত বলিয়া মনে হয়, তথাপি দশটী বিবাহের মধ্যে নয়টীই ঝোঁকের বশে হইয়া থাকে । তাহাতে বেদির সম্মুখে অঙ্গীকারাবদ্ধ হইবার সঙ্গে সঙ্গেই আধ্যাত্মিক অবনতি আরম্ভ হইয়া যায় ; এবং উভয়ে যে পর্য্যন্ত না শয়তানের কৃষ্ণ ধবজাতলে পার্শ্বাপার্শ্বি দণ্ডায়মান হয়, তাবৎ ধর্ম্ম সংক্রান্ত উদ্যোগ হ্রাস পাইতে থাকে এবং একটি দুর্গের পতনের পরে আর একটী দুর্গ পতিত হইতে থাকে । এমন কি বিবাহ উৎসবে জাগতিকতা এতদুরে বৃদ্ধি পায় যে, বিবেক, বিশ্বাস ও সত্য ইহার নিকট পরাভব স্বীকার করে । নূতন পারিবারিক জীবনে প্রার্থণা অবহেলিত হয় । বর ও কন্যা পরস্পরকে মনোনীত করিয়া লইয়া যীশুকে তাহাদের গৃহ হইতে বিদায় করিয়া দেয় । CCh 345.3
নূতন বিবাহ-বন্ধনে অবিশ্বাসী স্বামী প্রথমে হয়তো কোন বাধা প্রদর্শণ নাও করিতে পারে ; কিন্তু পরে যখন বাইবালের সত্য লইয়া আলাপ আলোচনা হইবে, তখনই মনে এই ধারণার উদয় হইবে, ” আমি এক্ষনে যাহা আছি , বিবাহের পূর্বে তাহাই ছিলাম, ইহা জানিয়া তুমি আমাকে বিবাহ করিয়াছিলে ; সুতরাং এক্ষণে আমি তোমা দ্বারা বিরক্ত হইতে ইচ্ছা করি না । তোমার অদ্ভুত মতবাদ লইয়া কোন কথাবার্ত্তা বলা এখন হইতে একেবারে নিষিদ্ধ, ইহা যেন স্মরণে থকে ।” বিশ্বাসী ব্যক্তি তাহার বিশ্বাস সম্বন্ধে যদি কোন অনুরাগ দেখায়, তবে খ্রীস্টীয় অভিজ্ঞতায় যাহার কোন অনুরাগ নাই, তাহার পক্ষে এহা নির্দ্দয়তা বলিয়া মনে হইতে পারে । CCh 346.1
বিশ্বাসী স্বামী বিচারপূর্বক এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে , সে তখন নূতন সম্বন্ধে আবদ্ধ হইয়াছে, তখন মনোনীতা সঙ্গিনীর মতেও তাহার কতকটা মত দেওয়া কর্ত্তব্য । আর এইরুপে সামাজিক ও জাগতিক আমোদপ্রমোদ অনুকূল্য প্রদর্শন করা হয় । এহা করিতে প্রথমে বড়ই ইতস্ততঃ করা হয়, কিন্তু ক্রমে ক্রমে সত্যের প্রতি অনুরাগ হ্রাস পাইতে থাকে এবং বিশ্বাসের পরিবর্ত্তে সন্দেহ ও অবিশ্বাস আসিয়া মনে স্থান পায় । একবার যে ব্যক্তি দৃঢ় ও ধর্ম্মানুরাগী বিশ্বাসী এবং খ্রীষ্টের অনুরক্ত শিষ্য ছিল, এখনকার ন্যায় সে যে কখনও অবিশ্বাসী ও ইতস্ততঃকারী হইবে, তাহা কেহ অনুমানই করিতে পারে নাই । আহা! ঐ অবিবেচনাপূর্ণ বিবাহের ফলে কি কি পরিবর্ত্তনই না সাধিত হইয়াছে ! CCh 346.2
জগতের সহিত মিত্রতা করা বড়ই বিপজ্জনক । শয়তান পুঙ্ক্ষানুপুঙ্ক্ষরুপে অবগত আছে যে, যে মুহূর্তে বহু নরনারীর বিবাহ কার্য্য অনুষ্ঠিত হয়। সেই মুহুর্ত্তেই তাহাদের ধর্ম্মিয় অভিজ্ঞতার ইতিহাস ও প্রয়োজনীয়তা সমাপ্ত হয়। খ্রীষ্টের পক্ষে তাহারা আর কোন কার্যে লাগে না, তাহারা মৃত। খ্রীষ্টের জীবন যাপনের নিমিত্ত তাহারা ক্ষণকাল চেষ্টা করিতে পারে বটে, কিন্তু তাহাদের সকল চেষ্টা নিয়োজিত করা হয়, বিপরীত দিকের এক অবিচলিত প্রভাবের বিরুদ্ধে। তাহাদের বিশ্বাস ও প্রত্যাশা সম্বন্ধে আলোচনা করা একবার তাহাদের নিকট বেশ একটি সুযোগ ও আনন্দের বিষয় ছিল ; কিন্তু যাহাদের সহিত তাহারা তাহাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করিয়াছে , তাহারা এই বিষয়ে কোনই মনোযোগ দান করে না জানিয়া অবশেষে ঐ বিষয়ের উল্লেখ করিতে অনিচ্ছুক হইয়া পড়ে। ফলে বহুমূল্য সত্যের প্রতি বিশ্বাস, হৃদয় হইতে একেবারে দূর হইয়া যায়, এবং শয়তান তার চতুর্দ্দিকে নাস্তিকতার এক জাল বুনে। CCh 347.1
“এক পরামর্শ না হইলে দুই ব্যক্তি কি একসঙ্গে চলে?” পৃথিবীতে তোমাদের দুইজন যাহা কিছু যাত্রা করিবে, সেই বিষয়ে যদি এক চিত্ত হয়, তবে আমার স্বর্গস্থ পিতা কর্ত্তৃক তাহাদের জন্য তাহা করা যাইবে। কিন্তু ঐ দৃশ্য কি অদ্ভুত! তাহারা এত ঘনিষ্ঠ ভাবে পরস্পরের সহিত সংযুক্ত হইলেও তাহাদের একজন ধ্যান প্রার্থণায় নিবিষ্ট থাকে, কিন্তু অন্য জন উদাসীন ও অমনোযোগী ; এক জন যখন অনন্ত জীবনের পথের অন্বেষী, অন্য জন তখন মৃত্যুর প্রশস্ত পথে যাতায়াত করে । CCh 347.2
অপরিবর্ত্তিত লোকদিগকে বিবাহ করার ফলে শত শত লোক খ্রীষ্টের ও স্বর্গকে জলাঞ্জলি দিয়াছে। খ্রীষ্টের প্রেমের ও সহভাগিত্বের মূল্য কি তাহদের নিকটে এতই অল্প হইতে পারে যে, তাহারা হতভাগ্য মর্ত্ত্যমানবের সঙ্গ অধিকতর পছন্দ করিবে? স্বর্গের মূল্য কি এতই অল্প যে, অমূল্য ত্রাণকর্তার জন্য যাহার কোন প্রেম নাই, সেই ব্যক্তির জন্য, তাহারা স্বর্গের সুখাদি বিসর্জ্জন দিতেও কুণ্ঠিত নহে ? CCh 348.1