এক্ষণে যে বিষয়ের মীমাংসা করিতে হইবে তাহা এই ঃ- স্ত্রী যখন দেখে যে, তাহার স্বামীর দাবী কেবল জঘন্য কাম-প্রবৃত্তি চরিতার্থ করা ভিন্ন অন্য কিছু নহে, আর তাহার নিজের বিবেক ও বিচার বুদ্ধি দ্বারা সে যখন নিঃসন্দেহে বুঝিতে পারে যে, তাহার স্বামীর অবৈধ দাবিতে সম্মত হইলে পবিত্রতায় ও সসম্মানে ভোগ করিবার এবং ঈশ্বরের উদ্দেশে জীবিতবলিরূপে উৎসর্গ করিবার জন্য ঈশ্বর যে অমূল্য স্বাস্থ্য তাহাকে দান করিয়াছেন, তাহা নষ্ট হইবে, তখন সে কি তাহার দাবী পূরন করিতে নিঃসঙ্কোচে বাধ্য হইবে ? CCh 371.1
স্বাস্থ্য ও জীবন বিপন্ন করিয়া স্বামীর পাশবিক কাম-প্রবৃত্তি চরিতার্থে ইন্ধন যোগান বিশুদ্ধ ও পবিত্র প্রেমের পরিচায়ক নহে । স্ত্রী যদি প্রকৃত প্রেম ও জ্ঞানের অধিকারিণী হয়, তবে সে চিত্তাকর্ষক আধ্যাত্মিক বিষয়ের অবতারনা দ্বারা স্বামীর মন ইন্দ্রিও-চরিতার্থের লালসা হইতে ঘুরাইয়া লইয়া উন্নত আধ্যাত্মিক বিষয়ে স্থাপন করিতে চেষ্টা করে । এমন কি, স্বামীকে অসন্তুষ্ট করিয়া বিনীত ও পরিপূর্নভাবে এই অনুরোধ করা আবশ্যক হইতে পারে না, অত্যধিক ইন্দ্রিয়াসক্ত হইয়া সে তাহার দেহ কলঙ্কিত করিতে পারে না । কোমল ও সদয় ভাবে স্বামীকে তাহার স্মরণে করাইয়া দেওয়া কর্ত্তব্য যে, তাহার সমগ্র সত্তার উপরে ঈশ্বরের দাবি অমান্য করিতে পারে না, কারন ঈশ্বরের মহাদিনে তাহার কৈফিয়ত দিতে হইবে । CCh 371.2
স্ত্রী যদি তাহার প্রীতি বর্দ্ধিত করে এবং পবিত্রতায় ও সসস্মানে তাহার পরিমার্জ্জিত স্ত্রীজনোচিত পদ-মর্য্যাদা রক্ষা করে, তবে সে তাহার সুবিজ্ঞ প্রভাবের দ্বারা স্বামীকে পবিত্র করনার্থে অনেক কিছু করিয়া তাহার উন্নত কার্য্য পরিসমাপ্ত করিতে পারে । এইরূপ করিয়া সে যেমন নিজেকে, তেমনই তাহার স্বামীকে রক্ষা করিতে পারে । এইরূপ করিয়া সে যেমন নিজেকে, তেমনি তাহার স্বামীকে রক্ষা করিতে পারে, আর এইরূপ করিয়া সে যেমন নিজেকে, তেমনি তাহার স্বামীকে রক্ষা করিতে পারে, আর এইরূপে দুই দিকেই মঙ্গল সাধিত হয় । এই ব্যপারটা এত কোমল ও সুন্দর এবং ইহার ব্যবহার এত সুকঠিন যে, ইহা সম্পাদানার্থে যেমন বহু জ্ঞান ও ধৈর্য্যের প্রয়োজন, তেমনি নৈতিক সাহস ও মানসিক বলের প্রয়োজন । আর প্রার্থনা দ্বারাই এই বল ও অনুগ্রহ লাভ করা যায় । অকপট প্রেম হৃদয়ের শাসনকারী মূলনীতি হওয়া আবশ্যক । ঈশ্বরের প্রতি ও স্বামীর প্রতি প্রেম, কার্য্যের একমাত্র সঠিক ভিত্তি হইতে পারে । CCh 371.3
স্বামী দ্বারা চালিত হইবার জন্য স্ত্রী যখন তাহার বিবেক, তাহার পদমর্য্যাদা ও এমন কি তাহার অভিন্নতা বিসর্জ্জন দিয়া এবং সর্ব্ব বিষয়ে অপ্রতিরোধী হইয়া তাহার দেহ ও মন স্বামীর হস্তে সমর্পণ করে, তখন সে তাহার শক্তিশালী প্রভাব খাটাইবার সুযোগ, -যাহা স্বামীকে উন্নত করিবার জন্য তাহার থাকা উচিত, - তাহা সে চিরতরে হারাইয়া ফলে । কামাভিলাষের ফলে জগতে যে ভ্রষ্টতা আসিয়াছে, তাহা হইতে উদ্ধার পাইয়া তাহারা যেন উভয়ে একত্রে ঐশ্বরিক স্বভাবের সহভাগী হইতে পারে, তজ্জন্য স্ত্রী স্বামীর কঠোর স্বভাব কোমল করিতে পারে, এবং আরও আধ্যাত্মিক-মনা হইবার ও কামপ্রত্তি বশে রাখিবার জন্য স্বামী যেন প্রবল ভাবে চেষ্টা করে, তদ্বিষয়ে তাহাকে পরিচালিত করিয়া স্ত্রীর পবিত্রীকৃত প্রভাব স্বামীকে পরিমার্জ্জিত ও বিশুদ্ধ করিয়া তুলিতে পারে । যে হীন ইন্দ্রিয়-লালসা চরিতার্থের জন্য অপরিবর্ত্তিত অন্তঃকরন স্বভাতবঃই লালায়িত, তাহার উর্দ্ধে মনকে উন্নত ও মহৎ বিষয়ে পরিচালিত করিবার নিমিত্ত প্রভাবের শক্তি মহান হইতে পারে । পাশবিক কাম প্রবৃত্তি যখন স্বামীর প্রেমের প্রধান ভিত্তি হয়, তখন স্ত্রী যদি মনে করে যে, স্বামীকে সন্তুষ্ট করিবার নিমিত্ত স্বামীর মতে মত দেওয়া তাহার অবশ্য কর্ত্তব্য, তখন সে ঈশ্বরকে অসুন্তুষ্ট করে ; কারন সে তাহার স্বামীর উপরে পবিত্র প্রভাব বিস্তারে অকৃতকার্য্য হয় । সে যদি মনে করে যে, আপত্তির একটী কথাও না বলিয়া স্বামীর পাশবিক কাম-প্রবৃত্তিতে সম্মতি দান করা তাহার অবশ্য কর্ত্তব্য, তবে সে স্বামীর প্রতি কিংবা ঈশ্বরের প্রতি তাহার কর্ত্তব্য, তবে সে স্বামীর প্রতি কিংবা ঈশ্বরের প্রতি তাহার কর্ত্তব্য কী, তাহান সম্যকরূপে হৃদয়ঙ্গম করিতে পারে না । CCh 372.1