ঈশ্বর আপনাকে একটী দেহ দিয়াছেন, যেন আপনি ইহা তাঁহার সেবাকার্য্যের ও গৌরবের জন্য সর্ব্বাপেক্ষা উত্তমরূপে রক্ষা করেন। আপনার দেহ আপনার নিজের নয়। কি? “তোমরা কি জান না যে, তোমরা কি জান না যে, তোমাদের দেহ পবিত্র আত্মার মন্দির” “তোমরা কি জান না যে, তোমরা ঈশ্বরের মন্দির এবং ঈশ্বরের আত্মা তোমাদের অন্তরে বাস করেন? যদি কেহ ঈশ্বরের মন্দির নষ্ট করে, তবে ঈশ্বর তাহাকে নষ্ট করিবেন, কেননা ঈশ্বরের মন্দির পবিত্র, আর সেই মন্দির তোমরাই।” 12T 352, 353; CCh 579.1
এই ভ্রষ্টতার যুগে আমাদের বিপক্ষ দিয়াবল কাহাকে গ্রাস করিবে, এই আকাঙক্ষায় গর্জ্জনকারী সিংহের ন্যায় চতুর্দ্দিকে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে বলিয়া আমি উচৈচঃস্বরে চেতনা দিবার আবশ্যকতা উপলব্ধি করিতেছ। মার্ক ১৪ : ৩৮ পদে লিখিত আছে, “তোমরা জাগিয়া থাক ও প্রাথনা কর, যেন পরীক্ষায় না পড়।” অনেকের ধীশক্তি অতিশয় প্রখর হইলেও তাহারা তাহা মন্দভাবে শয়তানের কার্য্যে ব্যবহার করে। যাহারা অন্ধকারের কার্য্যাবলী পরিত্যাগ করিয়া জগৎ হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছে বলিয়া মুখে স্বীকার করে এবং যে লোকদিগকে ঈশ্বর তাঁহার ব্যবস্থার রক্ষক করিয়াছেন, কিন্তু নিষ্ফল বৃক্ষের ন্যায় সর্ব্বশক্তিমানের সন্মুখে তাহাদের বাহ্যতঃবর্দ্ধিষ্ণু শাখাগুলি আড়ন্বরের সহিত দেখায়, তথাপি ঈশ্বেরের গৌরবার্থে কোন ফল ধারন করে না, তাহাদিগকে আমি কী চেতনা দান করিতে পারি? ইহাদের মধ্যে অনেকেই অবিশুদ্ধ চিন্তা, অপবিত্র কল্পনা, অশুচি আকাঙক্ষা এবং হীন কামপ্রবৃত্তি সমূহ পোষণ করিয়া আসিতেছে। এইরূপ বৃক্ষে উৎপন্ন ফল ঈশ্বর ঘৃণা করেন। বিশুদ্ধ ও পবিত্র দূতগণও এইরূপ লোকদিগের আচরণ নিরতিশয় ঘৃণ্য বলিয়া বিবেচনা করেন। আহা! এই সকল নর-নারী যদি চিন্তা করিয়া দেখিত যে ঈশ্বরের ব্যবস্থা লঙ্ঘণের ফল কিরূপ ভয়াবহ! যে কোন কারণেই হউক না কেন, আজ্ঞালঙ্ঘন ঈশ্বরের দৃষ্টিতে অবমানাকর ও মানুষের পক্ষে অভিশাপ স্বরূপ। ইহার ছদ্মবেশ যতই সুন্দর হউক না কেন এবং যাহারই দ্বারা ইহা সাধিত হউক না কেন, আমাদেরও ইহাকে ঐরূপ মনে করিতে হইবে। 25T 146; CCh 579.2
নির্ম্মল অন্তঃকরণ বিশিষ্ট লোকেরা ঈশ্বরের দর্শন পাইবে। প্রত্যেক অবিশুদ্ধ চিন্তা আত্মাকে কলুষিত করে, নৈতিক জ্ঞান নষ্ট করে এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা বিলুপ্ত করিতে যত্নবতী হয়। লোকেরা যেন ঈশ্বরকে দেখিতে না পায়, তজ্জন্য ইহা আধ্যাত্মিক দৃষ্টি নিষ্প্রভ করে। সত্য বটে, ঈশ্বর সদাপ্রভু অনুতপ্ত পাপীকে ক্ষমা করিতে পারেন এবং করিয়া ও থাকেন, কিন্তু ক্ষমা দিলেও আত্মা ক্ষতিগ্রস্ত বা বিকলাঙ্গ হইয়া পড়ে। যে কেহ আধ্যাত্মিক সত্য সম্বন্ধে সুস্পষ্ট জ্ঞান লাভ করিতে চাহে, তাহার বাক্যে ও চিন্তায়, সর্ব্বপ্রকার অপবিত্রতা বর্জ্জন করিতে হইবে। 3DA 302; CCh 580.1
কেহ কেহ পাপময় অমিতাচারের কুফলতা সন্বন্ধে স্বীকার করিবে, তথাপি তাহারা এই বলিয়া ওজর-আপত্তি উত্থপন করিবে যে, তাহারা তাহাদের মনের প্রবল উত্তেজনাকে বা কামাদিরিপুগনকে বশে রাখিতে পারে না। যাহারা খ্রীষ্টের নাম করে, এইরূপ উক্তি তাহাদের পক্ষে ভীষণ মারাত্মক। এই জন্যই ২:১৯ পদে লিখিত আছে, “যে কেহ প্রভুর নাম করে, সে অধার্ম্মিকতা হইতে দূরে থাকুক।” তাহা হইলে মানবের মধ্যে এই দুর্ব্বলতা কেন? ইহার কারণ এই,-- পাশবিক প্রবৃত্তিগুলি যে পর্য্যন্ত না উচ্চতর শক্তির উপরে প্রভুত্ব বিস্তার করে, তাবৎ ইহাদিগকে বাড়িতে দেওয়া হইয়াছে। নর-নারিগণ নীতিহীন হইয়া পড়িয়াছে। তাহারা আধ্যাত্মিকতায় মৃত, তাহারা তাহাদের স্বাভাবিক লালসাগুলিকে বা ক্ষুৎ-পিপাসাকে অতিশয় প্রশ্রয় দিয়া তাহাদের আত্ম-দমনের শক্তি হারাইয়া ফেলিয়াছে বলিয়া মনে হয়। তাহাদের স্বভাবের হীন-প্রবৃত্তিগুলি বলবৎ হইয়া শাসন ভার হস্তে লইয়াছে এবং বৈধ শাসক-শক্তি ভ্রষ্ট কামপ্রবৃত্তিগুলির দাস হইয়া পড়িয়াছে। আত্মা হীনতম দাসত্বে আবদ্ধ হইয়াছে। ইন্দ্রিয়াসক্তি, পবিত্রতার জন্য আকাঙক্ষা নির্ব্বাপিত করিয়া দিয়াছে এবং পারমার্থিক উন্নতি নষ্ট করিয়াছে। 42T 348; CCh 580.2