স্বর্গীয় ধর্ম্মাধামে খ্রীষ্টের সেবাকার্য্যের নির্ভুল জ্ঞানই আমাদের বিশ্বাসের ভিত্তি । 1Evangelism 221; CCh 671.1
পর্ব্বতে যেরূপ আদর্শ দেখান হইয়াছিল, তদানুযায়ী মোশি পার্থিব ধর্ম্মধাম নির্ম্মাণ করিয়াছিলনে । ইহা ছিল “এই উপস্থিত সময়ের জন্য দৃষ্টান্ত ; সেই দৃষ্টান্ত অনুসারে.........উপকার ও যজ্ঞ উৎসর্গ করা” হইত ; ইহার পবিত্র স্থান দ্বয় ছিল, “স্বর্গস্থ বিষয়ের দৃষ্টান্ত,” আমাদের মহান্ মহাযাজক খ্রীষ্ট “পবিত্র স্থানের এবং যে তাম্বু মনুষ্য কর্তৃক নয়, কিন্ত প্রভু কর্তৃক স্থপিত হইয়াছে, সেই প্রকৃত তাম্বুর সেবক ।” দর্শনে যোহনকে স্বর্গীয় মন্দিরের দৃশ্য দেখান হইল, তিনি তথায় “সেই সিংহাসনের সম্মুখে অগ্নিময় সপ্ত প্রদীপ জ্বলিতেছে” দেখিলেন । CCh 671.2
ভাবাবাদীকে স্বর্গীয় ধর্ম্মধামের প্রথম প্রকোষ্ঠ দেখান হইল ; তিনি তথায় “অগ্নিময় সপ্ত প্রদীপ” এবং “স্বর্ণময় বেদি” দেখিলেন, ইহাই ছিল পার্থিব ধর্ম্মধামের স্বর্ণময় দীপবৃক্ষের ও ধূপবাদির নিদর্শন স্বরূপ । পুনরায়, “ঈশ্বরের স্বর্গস্থ মন্দিরের দ্বার মুক্ত হইল,” আর তিনি অভ্যন্তরস্থ তিরস্করিণীর মধ্য দিয়া মহা পবিত্র স্থান দর্শন করিলেন । এ স্থানে তিনি, “তাঁহার নিয়ম-সিন্দুক” দেখিতে পাইলেন ; ইহা ছিল ঈশ্বরের ব্যবস্থা রাখিবার জন্য মোশি যে পবিত্র সিন্দুক নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, তাহারই আদর্শ স্বরূপ । CCh 671.3
যোহন বলেন যে, তিনি স্বর্গে ধর্ম্মধাম দেখিয়াছিলেন । ঐ ধর্ম্মধাম- যথায় যীশু আমাদের জন্য সেবা কার্য্য করেন, তাহাই মূল ধর্ম্মধাম । আর এই স্বর্গীয় ধর্ম্মধাম আদর্শেই মোশি পার্থিব ধর্ম্মধাম নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন । CCh 671.4
স্বর্গীয় মন্দির, রাজাদের রাজার বাসস্থান, যথায় “সহস্রের সহস্র তাঁহার পরিচর্য্যা করে ও অযুতের অযুত তাঁহার সম্মুখে দণ্ডায়মান হয়”- সেই মন্দির অনন্তকালস্থায়ী সিংহাসনের গৌরব পূর্ণ হইয়াছিল এবং এই স্থানে সরাফগণ- ইহার উজজ্বল রক্ষক দূতগণ, ভয়ে ও ভক্তিতে তাঁহাদের মুখমণ্ডল আচ্ছাদিত করিয়াছিলেন । ইহার গৌরব ও বিশালতার সহিত কোন পার্থিব অট্টালিকার তুলনাই হয় না । তথাপি যে মহৎ কার্য্য অনুষ্ঠিত হয়, তাহা পার্থিব ধর্ম্মধাম ও ইহার সেবা কার্য্য দারা শিক্ষা দেওয়া আবশ্যক ছিল । CCh 671.5
স্বর্গারোহণের পর আমাদের ত্রাণকর্তা আমাদের মহাযাজকরূপে কার্য্য আরম্ভ করেন । পৌল বলেন, “খ্রীষ্ট হস্তকৃত পবিত্র স্থানে প্রবেশ করেন নাই — এ ত প্রকৃত বিষয়গুলির প্রতিরূপ মাত্র — কিন্ত স্বর্গেই প্রবেশ করিয়াছেন, যেন তিনি এখন আমাদের জন্য ঈশ্বরের সাক্ষাতে প্রকাশমান হন ।” খ্রীষ্টের সেবাকার্য্যের যেমন দুইটী প্রধান বিভাগ হইবার কথা ছিল, স্বর্গীয় ধর্ম্মধামে প্রত্যেক বিভাগের আবার যেমন নির্দ্দিষ্ট সময় এবং নির্দ্দিষ্ট স্থান ছিল, তেমনি নিদর্শন-মূলক সেবাকার্য্যেও দুইটী বিভাগ যথা — দৈনিক ও বাৎসরিক সেবা কার্য্য এবং পবিত্র স্থান ও মহা পবিত্র স্থান ছিল । CCh 672.1
স্বর্গারোহণের পর খ্রীষ্ট যেমন অনুতপ্ত পাপীর জন্য তাঁহার রক্তের দোহাই দিয়া ঈশ্বরের নিকটে বিনতি করণার্থে তাঁহার সম্মুখে উপস্থিত হইয়াছিলেন, তেমনি যাজক, পাপীর জন্য বলির রক্ত, দৈনিক সেবা কার্য্যের সময়ে পবিত্র স্থানে ছিটাইয়া দিতেন । CCh 672.2
অনুতপ্ত পাপীকে ব্যবস্থার দণ্ডাজ্ঞা হইতে মুক্তির জন্য যেমন খ্রীষ্টের রক্তের প্রয়োজন, কিন্ত উহাতে যেমন পাপ বিলুপ্ত হইবার কথা নহে, শেষ প্রায়শ্চিত্তে পর্য্যন্ত ধর্ম্মধামে লিপিবদ্ধ থাকিবার কথা, তেমনি প্রতিরূপে পাপার্থক বলির রক্ত অনুতপ পাপীর পাপ ধর্ম্মধামে স্থানান্তরিত করিয়া দিত, কিন্ত প্রায়শ্চিত্তের দিন পর্য্যন্ত ইহা ধর্ম্মধামেই থাকিয়া যাইত । CCh 672.3
শেষ পুরস্কারে রসেই মহাদিনে “মৃতেরা পুস্তক সমূহে লিখিত প্রমাণে আপন আপন কার্য্যানুসারে বিচারিত” হইবে । তখন খ্রীষ্টের প্রায়শ্চিত্তকারী রক্তের গুণে প্রকৃত অনুতপ্তগণের পাপারাশি স্বর্গীয় পুস্তক হইতে মুছিয়া ফেলা হইবে । এইরূপে পাপের বিবরণ হইতে ধর্ম্মধাম মুক্ত বা পরিস্কৃত করা হইবে । প্রতিরূপে প্রায়শ্চিত্তের দিনের সেবা কার্য্য দারা — পার্থিব ধর্ম্মধাম পরিস্কার করণের দ্বারা, যে পাপের দ্বারা ধর্ম্মধাম অশুচি হইয়াছে, পাপার্থক বলির রক্তের গুণে সেই পাপ অপসারিত করণের দ্বারা প্রদর্শিত হইয়াছে । 2PP 356-358; CCh 672.4
যে সকল কার্য্যের সহিত আমাদের সুপরিচিত থাকা কর্ত্তব্য, আমাদের মন যেন সেই সকল বিষয়ে অনুরক্ত না থাকে, তজজন্য শয়তান আমাদের মন অধিকার করিবার নিমিত্ত অসংখ্য মতলব উদ্ভাবন করিয়া থাকে । যে সকল মহান্ সত্য, প্রায়শ্চিত্তকারী বলিদান ও এক সর্ব্বশক্তিমান মধ্যস্থ দৃষ্টিপথে আনয়ন করে, প্রধান প্রতারক সেই সকল ঘৃণা করে । যীশু ও তাঁহার সত্য হইতে মনকে অন্যদিনে ফিরান তাহারই উপরে নির্ভর করে, ইহা শয়তান বেশ জানে । CCh 673.1
স্বীয় আহত-হস্তদ্বয় ও ক্ষত-বিক্ষত-দেহ দেখাইয়া যীশু পাপীর জন্য পিতা ঈশ্বরের নিকট নিবেদন করিয়া থাকেন ; এবং যাহারা তাঁহার পশ্চাৎ আইসে তাহাদের সকলকে তিনি বলেন, “আমার অনুগ্রহ তোমার পক্ষে যথেষ্ট ।” “আমার যোঁয়ালী আপনাদের উপরে তুলিয়া লও, এবং আমার কাছে শিক্ষা কর, কেননা আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত ; তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাইবে । কারণ আমার যোঁয়ালী সহজ ও আমার ভার লঘু ।” অতএব কেহ যেন মনে না করে যে, তাহার দোষ অমাজর্জনীয় । সকল দোষের উপরে জয়লাভ করিবার জন্য ঈশ্বর বিশ্বাস ও অনুগ্রহ দান করিবেন। CCh 673.2
এক্ষণে আমরা মহা-প্রায়শ্চিত্তের দিনে বসবাস করিতেছি। নিদর্শনমূলক সেবাকার্য্যে মহাযাজক যখন ইস্রায়েলের জন্য প্রায়শ্চিত্ত কার্য্য সাধন করিতেন, তখন পাপের জন্য অনুতাপের দ্বারা এবং সদাপ্রভুর সম্মুখে নতি স্বীকারের দ্বারা সকলেরই আপন আপন প্রাণকে দুঃখ দিতে হইত, নতুবা তাহাদিগকে লোকদের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন হইতে হইত । ঠিক্ ঐ প্রকারে যাহারা চাহিবে যে, তাহাদের নাম জীবন পুস্তকে রাখা হইবে, তাহাদের এক্ষণে পরিত্রাণের দ্বার রুদ্ধ হইবার পূর্ব্বে পাপের জন্য দুঃখিত হইয়া এবং প্রকৃত অনুতাপ করিয়া আপন আপন প্রাণকে দুঃখ দিতে হইবে । পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে ও বিশ্বস্তভাবে হৃদয় অনুসন্ধান করিতে হইবে । খ্রীষ্টীয়ান নামে পরিচিত বহু লোক তুচ্ছ হালকামতিভাবে দেখাইয়া থাকে, কিন্ত তাহাদের ইহা বর্জন করা নিতান্ত আবশ্যক । মন্দ প্রবৃত্তিগুলি যেন প্রভুত্ব করিতে না পারে, তজজন্য যাহারা সেগুলিকে বশে রাখিতে চাহে, তাহাদের সকলেরই মহা-সংগ্রামে রত হইতে হয় । প্রস্তুত হওনের কার্য্য, ব্যক্তিগত কার্য্য । আমরা দলে দলে পরিত্রাণ পাই না । কাহারও পবিত্রতা ও ভক্তির অভাব থাকিলে, অন্যের পবিত্রতা ও ভক্তি দ্বারা তাহার সেই অভাবের প্রতীকার হয় না । যদিও সকল জাতিরই ঈশ্বরের বিচারাসনের সম্মুখে প্রত্যক্ষ হইতে হইবে, তথাপি তিনি প্রত্যেক ব্যক্তির বিচার এরূপ সূক্ষ্মভাবে ও পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে করিবেন যে, মনে হইবে যেন জগতে সে ভিন্ন আর কোন মনুষ্যই নাই । প্রত্যেক ব্যক্তিরই বিচারিত হইতে হইবে, এবং তাহার যেন কলঙ্ক বা সঙ্কোচ বা এই প্রকার কোন কিছু না থাকে, এরূপ হইতে হইবে । CCh 673.3
প্রায়শ্চিত্তকার্য্য সমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে যে সকল দৃশ্য জড়িত সেগুলি অতি গুরুতর ও ভয়াবহ । উহাতে যে সকল বিষয় জড়িত তাহার সকলই অতি প্রয়োজনীয় ও গুরুত্ববিশিষ্ট ; এক্ষণে উর্দ্ধস্থ ধর্ম্মধামে বিচারকার্য্য অনুষ্ঠিত হইতেছে । বহু বৎসর যাবৎ এই কার্য্য চলিয়া আসিতেছে । শীঘ্র,- কেহ জানে না কত শীঘ্র, জীবিতগণের বিচার আরম্ভ হইবে । ঈশ্বরের ভয়াবহ উপস্থিতির সম্মুখে আমাদের জীবনের পুনরালোচনা হইবে । এই সময়ে সকল কিছু বিসজর্জন দিয়া প্রত্যেক ব্যক্তির কর্ত্তব্য, ত্রাণকর্ত্তার এই চেতনাবাণীতে মনোনিবেশ করা — “তোমরা জাগিয়া থাকিও ও প্রার্থনা করিও ’ কেননা সে সময় কবে হইবে, তাহা জান না ।” CCh 674.1
অনুসন্ধান-সূচক বিচার-কার্য্য শেষ হইয়া গেলে, জীবনের ও মরণের জন্য সকলের ভাগ্য চিরতরে স্থির হইয়া যাইবে । মেঘরথে দ্বার প্রভুর আগমনের কিঞ্চিৎ পূর্ব্বে পরীক্ষাকাল শেষ হইয়া পরিত্রাণের দ্বার রুদ্ধ হইয়া যাইবে । ঐ সময়ের প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া খ্রীষ্ট প্রকাশিত গ্রন্থে বলিয়াছেন, “যে ধর্ম্মাচারী সে ইহার পরেও ধর্ম্মাচরণ করুক ; এবং যে কলুষিত, সে ইহার পরেও কলুসিত হউক ; এবং যে ধার্ম্মিক, সে ইহার পরেও ধর্ম্মাচরণ করুক ; এবং যে পবিত্র, সে ইহার পরেও পবিত্রীকৃত হউক । দেখ আমি শীঘ্র আসিতেছি ; এবং আমার দাতব্য পুরস্কার আমার সহবর্ত্তী, যাহার যেমন কার্য্য তাহাকে তেমন ফল দিব ।” CCh 675.1
মরণশীল ধার্ম্মিক ও দুষ্ট-মানবগণ তখনও এই পৃথিবীতে বসবাস করিতে থাকিবে । উর্দ্ধস্থ ধর্ম্মধামে চূড়ান্ত অপরিবর্ত্তনীয় নিষপত্তি ঘোষিত হইয়াছে ইহা টের না পাইয়া লোকেরা বৃক্ষরোপণ, গৃহনির্ম্মান ও ভোজনপান করিতে থাকিবে । CCh 675.2
যে চরম ঘটিকায় প্রত্যেক ব্যক্তির ভাগ্য নির্দ্দিষ্ট হইয়া যাইবে, অপরাধী মানবগণের নিকটে অনুগ্রহের শেষবাণী আর উচ্চারিত হইবে না, সেই চরম মুহূর্তটী মধ্যরারাত্রির চোরের ন্যায় নীরবে ও অলক্ষিত ভাবে আসিয়া উপস্থিত হইবে । 3GC 488-491. CCh 675.3