আমি দেখিলাম প্রভুর আগমন স্থগিত রাখা আমাদের কর্ত্তব্য নহে। দূত কহিলেনঃ- “পৃথিবীর উপরে যাহা আসিতেছে, তাহার জন্য প্রস্তত হও, প্রস্তত হও। তোমার বিশ্বাস অনুযায়ী তোমার কার্য্য হউক।” আমি দেখিলাম, আমাদের মন ঈশ্বরে নিবন্ধ্রাখিতে হইবে এবং আমাদের জীবনের প্রভাব দ্বারা ঈশ্বরের ও তাঁহার সত্যের পক্ষে কথ বলিতে হইবে। অসতর্ক ও উদাসীন জীবন যাপন করিয়া আমরা প্রভুর সম্মান করিতে পারি না। নৈরাশ্যের মধ্যে থাকিয়া আমরা তাঁহার গৌরব করিতে পারি না। নিজেদের আত্মার মুক্তির ও অপরের পরিত্রাণের জন্য আমাদের ব্যগ্র হইতে হইবে। সমস্ত গুরুত্ব ইহাতে আরোপ করিতে হইবে, এবং অন্য যাহা কিছু আছে, তাহা গৌণ বলিয়া মনে করিতে হইবে। CCh 80.1
আমি স্বর্গের সৌন্দর্য্য দেখিলাম। যীশুর প্রশংসা, সম্মান ও গৌরব কীর্ত্তন করিয়া দুতগণকে আনন্দ গান করিতে শুনিলাম। আর আমি তখন ঈশ্বরের পুত্রের আশ্চর্য্য প্রেমের বিষয় কিঞ্চৎ অনুভব করিতে পারিলাম। স্বর্গে তাঁহার যে সম্মান ও যে গৌরব ছিল, তিনি তাহার সকলই পরিত্যাগ করিলেন। তিনি আমাদের পরিত্রাণের জন্য এত ব্যাকুল ছিলেন যে, মানুষ তাঁহার উপরে যত ঘৃণামিশ্রিত ক্রোধ ও তুচ্ছ-তাচ্ছল্য আরোপ করিতে পারিত, তিনি তাহার প্রত্যেকটীই ধৈর্য্য পূর্ব্বক ও মৃদুভাবে সহ্য করিয়াছিলেন। তিনি আহত, প্রহারিত, ও চূর্ণ হইয়াছিলেন; তিনি কালভেরীর ক্রুশে বিলম্বিত হইয়াছিলেন। আমরা যেন তাঁহার রক্তে ধৌত হইতে এবং তিনি আমাদের জন্য যে বাসস্থান প্রস্তুত করিতেছেন, তাঁহার সহিত সেই স্থানে বাস করিতে পারি, তজজন্য পুনরুল্খিত হইতে, স্বর্গের দীপ্তি ও গৌরব উপভোগ করিতে, দূতগণের সঙ্গিত শ্রবণ করিতে ও তাঁহাদের সহিত মিলিয়া সঙ্গিত গাহিতে পারি, এজন্য তিনি আমদিগকে মৃত্যু হইতে উদ্ধারের নিমিত্ত সর্ব্বাপেক্ষা যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু ভোগ করিয়াছিলেন। CCh 80.2
আমি সমুদয় স্বর্গকেই আমাদের পরিত্রাণের জন্য সমুৎসুক দেখিলাম; এক্ষণে আমরা নিজেরা কি উদাসীন থাকিব? আমরা রক্ষা পাই, অথবা বিনষ্ট হই, ইহাতে কিছু আসিয়া যায় না ভাবিয়া, আমরা কি অমনোযোগী থাকিব? আমাদের জন্য যে বলি উৎসর্গ করা হইয়াছে, আমরা কি তাহা অবজ্ঞা করিব? কেহ কেহ উহা অবজ্ঞা করিয়াছে। প্রদত্ত অনুগ্রহ, তাহারা তুচ্ছ করিয়াছে, এজন্য ঈশ্বরের ক্রোধ তাহাদের উপরে আসিয়া পড়িয়াছে। ঈশ্বরের পবিত্র আত্মাকে সর্ব্বদা দুঃখিত করা যায় না। বেশী দিন পর্য্যন্ত দুঃখিত করিলে, তিনি চলিয়া যাইবেন। মানবের উদ্ধার কল্পে ঈশ্বর যাহা কিছু করিতে পারিতেন, সে সকল করা সত্ত্বেও, তাহারা যদি তাহাদের জীবন দ্বারা দেখায় যে, তাহারা যীশু-দত্ত অনুগ্রহের অবমাননা করিয়াছে, তাহা হইল মৃত্যুই হইবে তাহাদের চরম পরিণতি, আর ইহা হইবে মহার্ঘ। ফলতঃ ইহা হইবে এক ভীষণ মৃত্যু; কারণ, যে মহামূল্য পরিত্রাণ তাহারা অগ্রাহ্য করিয়াছে, তাহাদের নিমিত্ত তাহা ক্রয় করণার্থে ক্রুশের উপরে খ্রীষ্টের যে অকথ্য যন্ত্রণা ভোগ করিতে হইয়াছিল, ইহাদেরও সেই যন্ত্রণা ভোগ করিতে হইবে। আর তাহা হইলে তখন তাহারা বুঝিতে পারিবে যে, তাহারা অনন্ত জীবন ও নিত্যস্থায়ী বাসস্থান হারাইয়াছে। আত্মার পরিত্রাণের জন্য যে মহান্ বলি উৎসর্গ করা হইয়াছে, তদ্দ্বারা আমরা ইহার মহামূল্যতা জানিতে পারি। বহুমূল্য আত্মা একবার বিনষ্ট হইলে, উহা চিরতরে বিনষ্ট হয়। CCh 81.1
আমি একটী দূতকে হস্তে তুলাদণ্ড লইয়া ঈশ্বরের লোকদের বিশেষতঃ যুবক-যুবতিগনের চিন্তারাশি ও বিশেষ মনোযোগ তৌল করিতে দেখিলাম। তৌলদণ্ডের একদিকের পাল্লায় চিন্তাসমূহ ও বিশেষ মনোযোগের ঝোঁক স্বর্গের দিকে এবং অন্যদিকের পাল্লায় চিন্তারাশি ও বিশেষ মনোযোগের ঝোঁক, পৃথিবীর দিকে ছিল। এই তুলাদণ্ডে গল্প-বই-পঠন, পোষাক-পরিচ্ছদের ও বাহ্যাড়ম্বরের চিন্তাসমূহ, আত্মগরিমা ও অহমিকা ইত্যাদি ছিল। আহা ! কি গুরুতর সময় ! ঈশ্বরের দূতগণ দাঁড়ি-পাল্লা লইয়া দাঁড়াইয়া আছেন; যাহারা জগতের পক্ষে মৃত, কিন্তু ঈশ্বরের পক্ষে জীবিত বলিয়া প্রকাশ্যে ব্যক্ত করে, দূতগণ তাঁহার সেই নামধারী সন্তানগণের চিন্তাসমুহ তৌল করিতেছেন। তৌলযন্ত্র হইতে ভারের পর ভার চলিয়া যাওয়া সত্ত্বেও, জগতের চিন্তা, জাঁকজমক ও অহংকারে পূর্ণ পাল্লাটি দ্রুত নীচের দিকে নামিয়া গিয়াছিল, স্বর্গাভিমুখী পাল্লাটি তেমনি চিন্তা ও অনুরাগে পূর্ণ হইয়া দ্রুত উপরের দিকে উঠিয়ছিলত। আহো! এই পাল্লাটি কত হাল্কা ছিল! আমি ইহা যেমন দেখিয়াছিলাম, তেমনি বর্ণনা করিতে পারি, কিন্তু দূতকে দাঁড়ি-পাল্লা লইয়া ঈশ্বরের লোকদের অনুরাগ ও চিন্তারাশি ওজন করিতে দেখিয়া আমার মনে যে গভীর ও সুস্পষ্ট ছাব অঙ্কিত হইয়াছিল, তাহা বর্ণনা করা আমার অসাধ্য। ফলতঃ দূত কহিলেনঃ- এইরূপ লোকেরা কি স্বর্গে প্রবেশ করিতে পারিবে? না, না, কখনই না। অতএব তাহাদিগকে জানাও যে, এক্ষণে তাহারা যে আশা করিতেছে, তাহা বৃথা। তাহারা যদি সত্বরই অনুতাপ করিয়া পরিত্রান লাভ না করে, তবে তাহারা নিশ্চয়ই বিনষ্ট হইবে। CCh 81.2
ধর্ম্মের রূপ রাখিয়া কেহ রক্ষা পাইবে না। সকলেরই এক গভীর ও জীবন্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়া যাইতে হইবে। একমাত্র ইহাই তাহাদিগকে সঙ্কটকালে রক্ষা করিবে। পরে তাহাদের কার্য্য কিরূপ তাহার পরীক্ষা করা হইবে। ইহা যদি স্বর্ণের, ও রৌপ্যের ও বহুমূল্য প্রস্তরের হয়, তবে প্রভুর তাম্বুর অন্তরালে যেমন, তেমনি ইহাদিগকে গুপ্তস্থানে লুকাইয়া রাখা হইবে। কিন্তু তাহদের কার্য্য যদি কাষ্ঠ, খড় ও নাড়ার হয়, তবে কিছুতেই তাহাদিগকে যিহবার প্রচণ্ড ক্রোধ হইতে রক্ষা করিতে পারিবে না। CCh 82.1
আমি অনেককে আপন আপন পরিমাণ-দণ্ডে পরিমিত হইতে এবং অন্যের জীবনের সঙ্গে নিজেদের জীবন তুলনা করিতে দেখিলাম। কিন্তু এরূপ করা কখনই উচিত নহে। খ্রীষ্টই আমাদের দৃষ্টান্ত, অন্য কেহ নহে। নিতিই আমাদের প্রকৃত আদর্শ, তাহাকে অনুকরণে শ্রেষ্ঠ স্থান লাভ করিতে প্রত্যেকেরই চেষ্টা করা কর্ত্তব্য। আমরা হয় খ্রীষ্টের সহকার্য্যকারী, নতুবা শয়তান-শত্রুর সহকার্য্যকারী। আমরা হয় খ্রীষ্টের সহিত সংগ্রহ করি, না হয় ছাড়াইয়া ফেলি। আমরা সর্ব্বান্তঃকরণে খ্রীষ্টিয়ান হইবার, না হয়, আদৌ না হইবার সিদ্ধান্ত করিব। খ্রীষ্ট বলেন, “তুমি হয় শীতল হইলে, নয় তপ্ত হইলে ভাল হইত। এইরূপে তুমি কদুষ্ণ, না তপ্ত, না শীতল, এই জন্য আমি নিজ মুখ হইতে তোমাকে বমন করিতে উদ্যত হইয়াছিল।” প্রকাশিত ৩.:১৫,১৬। CCh 83.1
আমি দেখিলাম, আপনাকে অস্বীকার করা হা ত্যাগস্বীকার করা, আথবা সত্যের জন্য ক্লেশ ভোগ করা বিষয়টা কী, তাহা অনেকেই জানে না। কিন্তু ত্যাগ স্বীকার না করিয়া কেহই স্বর্গে প্রবেশ করিতে পারিবে না। সকলেরই আত্মত্যাগের ও ত্যাগ স্বীকারের আত্মা থাকা প্রয়োজন। কেহ নিজেদিগকে বা তাহাদের দেহগুলিকে ইশ্বরের বেদির উপরে উৎসর্গ করে নাই। তাহারা হঠ্কারী ও উত্তেজনা-প্রবণ, ঈশ্বরের কার্য্যে আনুরক্ত নহে, কিন্তু আত্মা- আনুরক্ত ও লালসা-প্রবণ। অনন্ত জীবনের জন্য যে কোন প্রকার ত্যাগস্বীকার করিতে যাহারা ইচ্ছুক, তাহারা ইহা লাভ করিবে; এবং এইরূপ কষ্টস্বীকার, এইরূপ আত্মত্যাগ ও এইরূপ প্রত্যেক দেবতা ত্যাগ নিষ্ফল হইবে না। কারণ উত্তর উত্তর আনুপমরূপে আমাদের জন্য যে অনন্তকাল স্থায়ী গুরুতর প্রতাপ সাধিত হইবে, তাহা প্রত্যেক কিছুকেই কবলিত করিবে এবং প্রত্যেক জাগতিক আমোদ- প্রমোদকে নিস্প্রভ করিয়া দেবে।11T pp. 123-126 CCh 83.2