বিশ্রামবার পালনের মধ্যে মহা আশীর্ব্বাদ সঞ্চিত রহিয়াছে। ঈশ্বর চাহেন, যেন বিশ্রামদিনটী আমাদের নিকট আনন্দের দিন হয়। বিশ্রাম দিনের প্রতিষ্ঠায় আনন্দ জড়িত ছিল। স্ব হস্তের কার্য্য দেখিয়া ঈশ্বর পরিতৃপ্ত হইয়াছিলেন। তিনি যাহা কিছু সৃষ্টি করিয়াছিলেন, তৎসম্বন্ধে বলিয়াছিলেন, “অতি উত্তম।” আদিপুস্তক ১:৩। স্বর্গ ও পৃথিবী আনন্দে পূর্ণ হইয়াছিল। শাস্ত্র বলে- “প্রভাতীয় নক্ষত্রগণ একসঙ্গে আনন্দ করিল, ঈশ্বরের পুত্রগণ সকলে জয়ধ্বনি করিল।” ইয়োব ৩৮:৭। ঈশ্বরের সিদ্ধহ-কার্য্য কলঙ্কিত করিবার জন্য জগতে যদিও পাপ প্রবেশ করিয়াছে, তথাপি এক সর্ব্বশক্তিমান, দয়া ও অনুগ্রহে মহান্ ঈশ্বর, সকল বস্ত সৃষ্টি করিয়াছেন, ইহার সাক্ষিরূপে তিনি তাঁহার পবিত্র বিশ্রামদিন আমাদিগকে দিয়াছেন। বিশ্রামবার পালনের দ্বারা আমাদের স্বর্গীয়-পিতা তাঁহার সম্বন্ধে এক জ্ঞান, মানবের মধ্যে সংরক্ষণ করিতে চাহেন। আমরা যেন তাঁহাকে সত্য ও জীবন্ত ঈশ্বর বলিয়া জানি। এবং তাঁহাকে জনিয়া, আমরা যেন জীবন ও শান্তি লাভ করিতে পারি, এই উদ্দেশেই তিনি আমাদের মন বিশ্রামদিনের দ্বারা তাঁহার দিকে পরিচালিত করিতে চাহেন। CCh 84.1
সদাপ্রভু যখন তাঁহার প্রজা ইস্রায়েলদিগকে মিশর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিয়া তাঁহার ব্যবস্থা দিয়াছিলেন, তখন তিনি তাহাদিগকে এই শিক্ষা দিয়াছিলেন যে, বিশ্রামদিন পালন করিয়া প্রতিমা-পূজকদের হইতে তাহাদের পৃথক্ থাকিতে হইবে। যাহারা ঈশ্বরের আধিপত্য স্বীকার করিয়াছিল, এবং যাহারা তাঁহাকে সৃষ্টিকর্ত্তা ও রাজা বলিয়া গ্রহণ করিতে অস্বীকার করিয়াছিল, এই উভয়ের মধ্যে যে পার্থক্য দৃষ্ট হইয়াছিল, বিশ্রামবারই তাঁহার মূলীভূত কারণ। প্রভু কহেন, “আমার ও ইস্রায়েলসন্তানগণের মধ্যে ইহা চিরস্থায়ী চিহ্ন।” অতএব “ইস্রায়েলসন্তানগণ চিরস্থায়ীনিয়ম বলিয়া পুরুষানুক্রমে বিশ্রাম দিন মান্য করিবার জন্য বিশ্রামদিন পালন করিবে।” যাত্রাপুস্তক ৩১:১৭,১৬। CCh 84.2
পার্থিব কনানে প্রবেশ করিবার জন্য ইস্রায়েল- সন্তানগণ যখন মিসর দেশ হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছিল, তখন বিশ্রামবার যেমন তাহাদের বৈশিষ্ট্যের চিহ্নস্বরূপ ছিল। তেমনি এক্ষণে ঈশ্বর যে সকল লোক জগৎ হইতে বাহির হইয়া আসিয়া স্বর্গীয় বিশ্রামে প্রবেশ করিতে চাহে, বিশ্রামবার তাহাদেরও বৈশিষ্টের চিহ্নস্বরূপ। ঈশ্বর ও তাঁহার লোকদের মধ্যে যে সম্বন্ধ বিরাজিত, বিশ্রামবার তাহার চিহ্নস্বরূপ। লোকেরা যে তাহার ব্যবস্থার সমাদর করে, বিশ্রামবার তাহার চিহ্নস্বরূপ। ইহা, ঈশ্বরে ভক্ত-প্রজা ও অবাধ্য প্রজার মধ্যে যে পার্থক্য আছে, তাহা দেখাইয়া দেয়। CCh 85.1
বিশ্রাম বার সম্বন্ধে খ্রীষ্ট মেঘস্তম্ভ হইতে বলিয়াছেন, “তোমরা অবশ্য আমার বিশ্রামদিন পালন করিবে; কেননা তোমদের পুরুষানুক্রমে আমার ও তোমাদের মধ্যে ইহা এক চিহ্ন রহিল, যেন তোমরা জানিতে পার যে, আমিই তোমাদের পবিত্রকারী সদাপ্রভু।” যাত্রাপুস্তক ৩১:১৩। ঈশ্বর সৃষ্টিকর্ত্তা, ইহার চিহ্নরূপে তিনি জগৎকে যেমন বিশ্রামদিন দিয়াছিলেন, তেমনি তিনি পবিত্রকারী সদাপ্রভু, বিশ্রামবার ইহার চিহ্নস্বরূপ। যে শক্তি সমস্ত বস্তু সৃষ্ট করিয়াছিল, সেই শক্তিই আত্মাকে তাঁহার নিজের সাদৃশ্যে পুনঃ সৃষ্টি করিয়া থাকে। যাহারা বিশ্রামবার পবিত্ররূপে মান্য করে, বিশ্রামবার তাহাদের পবিত্রতার চিহ্নস্বরূপ। ঈশ্বরের সহিত ঐক্য রক্ষা করা এবং তাঁহার স্বভাবের মত স্বভাব বিশিষ্ট হওয়াকেই প্রকৃত প্রবিত্রতা কহে। যে সকল মূলনীতি তাঁহার স্বভাবের অনুরূপ, সেগুলি পালনের দ্বারা এই পবিত্রতা লাভ করা যায়। আর এই জন্য বিশ্রামবার আজ্ঞাবহতারও চিহ্নস্বরূপ। যে কেহ অন্তর হইতে চতুর্থ আজ্ঞা পালন করিবে, সে সমস্ত ব্যবস্থাই পালন করিবে। কারণ সে সমস্ত ব্যবস্থাই পালন করিবে। কারণ যে আজ্ঞাবহতা দ্বারা পবিত্রীকৃত হইয়াছে। CCh 85.2
ইস্রায়েলসন্তানগণের নিকটে যেমন, আমাদের নিকটেও তেমনি “চিরস্থায়ী নিয়ম” রূপে বিশ্রাম বার দত্ত হইয়াছে। যাহারা বিশ্রামদিনকে পবিত্র দিন বলিয়া মান্য করে, ঈশ্বর তাহদিগকে তাঁহার মনোনীত লোক বলিয়া স্বীকার করেন, বিশ্রামদিন ইহারও চিহ্নস্বরূপ। ইহা একটী অঙ্গিকার যে, তাহাদের কাছে তিনি তাঁহার নিয়ম রক্ষা করিবেন। যে কেহ ঈশ্বরের গভর্ণমেন্টের চিহ্ন ধারণ করে, সে নিজেকে ঐশ্বরিক, চিরস্থায়ী নিয়মের অধীনে রাখে। সে বাধ্যতার স্বর্ণ-শৃঙ্খলে নিজেকে আবদ্ধ করে, এই শৃঙ্খলের এক একটী কড়া, এক একটী প্রতিজ্ঞা।16T 349, 350; CCh 86.1