Go to full page →

পাথুরে জমি COLBen 30

“আর যে পাষাণময় ভূমিতে উপ্ত, এ সেই, যে সেই বাক্য শুনিয়া অমনি আনন্দপূর্বক গ্রহণ করে, কিন্তু তাহার অন্তরে মূল নাই, সে অল্প কালমাত্র স্থির থাকে; পরে সেই বাক্য হেতু ক্লেশ কিম্বা তাড়না ঘটিলে সে অমনি বিঘ্ন পায়।” COLBen 30.1

পাথুরে জমিতে যে বীজ বপন করা হয়েছিল সেগুলো মাটিতে খুব সামান্য পরিমাণেই শিকড় গজাতে পেরেছিল। খুব দ্রুত সেই বীজ অঙ্কুরিত হয়ে উঠেছিল, কিন্তু যেহেতু পাথর ভেদ করে শিকড় খুব বেশি দূর ছড়াতে পারে নি, সে কারণে তা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিতে পারল না এবং অবশেষে তা খুব দ্রুত শুকিয়েও গেল। অনেকেই আছে যারা নিজেকে মিশনারি কাজকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে, তাদের অনেকে পাথুরে জমির মত। পাথুরে জমিতে যেমন মাটির পাতলা স্তরের নিচেই থাকে পাথর, তেমনি তাদের অন্তরের উপরে ভাল চিন্তা ও ইতিবাচক মনোভাবের পাতলা স্তর থাকলেও এর নিচে থাকে স্বভাবগত স্বার্থপরতা। তাদের মধ্যে নিজের প্রতি ভালবাসা তীব্রভাবে কাজ করে। তারা পাপের ভয়ঙ্কর রূপ দেখে নি এবং সেই পাপের অপরাধবোধে তাদের হৃদয় সঙ্কুচিত হয় নি। এই শ্রেণীর লোকেরা খুব সহজে মন পরিবর্তন করে এবং তাদেরকে খুব দৃঢ় বিশ্বাসী বলেই আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়, কিন্তু আসলে তাদের ধর্ম খুবই ঠুনকো। COLBen 30.2

তাদের পতনের কারণ এই নয় যে, তারা তাৎক্ষণিক ভাবে সেই বাক্য গ্রহণ করেছিল, কিংবা তা নিয়ে অনেক আনন্দ করছিল। সাধু মথি যখনই ত্রাণকর্তার আহ্বান লাভ করেছিলেন, ঠিক তখনই তিনি তাঁর জায়গা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন, এবং সব কিছু পরিত্যাগ করে এবং তাঁকে অনুসরণ করলেন। স্বর্গীয় বাণী যখনই আমাদের অন্তরে প্রবেশ করবে, ঈশ্বর চান যেন আমরা ঠিক তখনই তা আনন্দের সাথে গ্রহণ করি। “এক জন পাপী মন ফিরাইলে স¦র্গে আনন্দ হইবে।” লূক ১৫:৭। আর খ্রীষ্টেতে যে বিশ্বাস স্থাপন করে তার অন্তরে আনন্দ অবস্থান করে। কিন্তু এই দৃষ্টান্ত অনুসারে যারা তাৎক্ষণিক ভাবে বাক্য গ্রহণ করে তারা আসলে বিশ্বাসে স্থির থাকতে পারে না। ঈশ্বরের বাক্য পালনের জন্য তাদের জীবনে কী ধরনের পরিবর্তন সাধন করা প্রয়োজন তা তারা উপলব্ধি করতে পারে না। তারা তাদের জীবনের সমস্ত বাজে অভ্যাস ত্যাগ করে প্রভুর কাছে আসতে পারে না এবং তাদের জীবনের নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতে ছেড়ে দিতে পারে না। COLBen 30.3

চারাগাছটির শিকড় মাটির গভীরে গিয়ে পৌঁছাল এবং নিভৃতে সেই চারাটিতে জীবনের সঞ্চার ঘটল। খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের জীবনেও ঠিক এমনটি ঘটে থাকে; আত্মার সাথে খ্রীষ্টের অদৃশ্য সম্মিলনের মধ্য দিয়ে, বিশ্বাস স্থাপনের মধ্য দিয়ে আত্মিক জীবন পরিপুষ্ট হয়ে ওঠে। কিন্তু যে সমস্ত শ্রোতাদের অন্তর পাথুরে জমির মত, তারা খ্রীষ্টের উপর নির্ভর না করে নিজেদের উপরে নির্ভর করে। তারা তাদের নিজেদের ভালো কাজ ও ভালো কথাবার্তার উপরে আস্থা স্থাপন করে। তারা নিজেদের ধার্মিকতার ওপর ভর করে বলীয়ান হতে চায়। তারা প্রভুতে শক্তিশালী হয় না এবং তাঁর কর্তৃত্বের ক্ষমতা অর্জন করতে পারে না। এরা হচ্ছে সেই ধরনের মানুষ যাদের কোন শিকড় নেই, কারণ তারা খ্রীষ্টের সাথে সংযুক্ত হয় না। COLBen 31.1

গ্রীষ্মকালের প্রখর রোদ সুপুষ্ট শস্যদানাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে এবং পরিপক্ব করে তোলে, আবার রোদ শিকড়বিহীন চারাগাছকে ধ্বংস করে দেয়। এ কারণে “যার নিজের মধ্যে কোন শিকড় নেই” সে “সামান্য সময়ের জন্য স্থায়ী হয়।” কিন্তু যখন “বাক্যের কারণে সে নির্যাতন বা পরীক্ষার মুখে পড়ে, তখন সে বিঘ্ন পায় ও দূরে সরে যায়।” অনেকেই পাপ থেকে মুক্তি লাভের বদলে কেবল নির্যাতন থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় হিসেবে সুসমাচার গ্রহণ করে। তারা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সুসমাচারে আনন্দ করে, কারণ তারা ভাবে ধর্ম তাদেরকে জাগতিক সমস্যা ও পরীক্ষা থেকে মুক্ত করবে। তাদের জীবন যখন সাবলীলভাবে চলতে থাকে, তখন তারা আপাতদৃষ্টিতে ধার্মিক খ্রীষ্টান হিসেবে নিজেদেরকে প্রকাশ করে। কিন্তু প্রলোভনের অগ্নিপরীক্ষায় পড়লে পর তারা তাদের বিশ্বাস থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে। খ্রীষ্টের জন্য তারা এতটুকু কষ্টস্বীকার করতে পারে না। ঈশ্বরের বাক্য যখন মানবীয় সত্বার গহীনে লালিত কোন পাপের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করে, কিংবা আত্মসংযম বা আত্মত্যাগ করার কথা বলে, তখন তারা তাতে বিঘ্ন পায়। জীবনে আমূল পরিবর্তন আনার প্রচেষ্টা তাদের কাছে অনেক বেশি ব্যয়বহুল বলে মনে হয়। তারা তাদের বর্তমান দুর্দশা ও পরীক্ষার কথা ভাবে এবং অনন্তকালীন বাস্তবতার কথা ভুলে যায়। যীশুকে ছেড়ে যে সকল শিষ্যেরা চলে গিয়েছিলেন, তাদের মত করে তারাও যেন এ কথা বলতে প্রস্তুত থাকে, “এ কঠিন কথা, কে ইহা শুনিতে পারে?” যোহন ৬:৬০। COLBen 31.2

এমন অনেক মানুষ আছে যারা ঈশ্বরের পরিচর্যা করে বলে দাবী করে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যাদের ঈশ্বর সম্পর্কে আদৌ’কোন বাস্তব জ্ঞান নেই। তাদের নিজেদের মনের আবেগের উপর ভিত্তি করে তারা তাঁর ইচ্ছা পালন করতে চায়, পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে নয়। তাদের কাজের সাথে ঈশ্বরের বিধানের কোন সঙ্গতি থাকে না। তারা খ্রীষ্টকে তাদের মুক্তিদাতা হিসেবে গ্রহণ করার কথা স্বীকার করে, কিন্তু তারা বিশ্বাস করে না যে, তিনি তাদের পাপের উপরে জয় লাভ করার শক্তি দিয়েছেন। জীবন্ত মুক্তিদাতা যীশুর সাথে তাদের ব্যক্তিগত কোন সম্পর্ক নেই এবং তাদের চরিত্র একাধারে তাদের ভণ্ডামি ও তাদের অধার্মিকতা ফুটিয়ে তোলে। COLBen 32.1

সাধারণ ভাবে পবিত্র আত্মার কাজের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা একটি বিষয়, আর তাঁর কাজকে পাপ থেকে মন ফেরানোর আহ্বান হিসেবে বিবেচনা করা আরেকটি বিষয়। অনেকেই ঈশ্বরের কাছ থেকে নিজেদেরকে বিচ্যুত মনে করে, তারা তাদের আমিত্ব ও পাপের বন্ধন অনুভব করে। তারা নিজেদেরকে পরিবর্তিত করার চেষ্টা চালায়; কিন্তু তারা নিজেদেরকে ক্রুশবিদ্ধ করে না। তারা নিজেদেরকে সম্পূর্ণ ভাবে যীশু খ্রীষ্টের হাতে সমর্পণ করে না, তাঁর ইচ্ছা অনুসারে চলার জন্য তাঁর স্বর্গীয় শক্তির অন্বেষণ করে না। তারা স্বর্গীয় সত্তায় নিজেদেরকে ঢেলে সাজাতে চায় না। তারা সার্বিকভাবে তাদের সমস্ত ত্রুটি বিচ্যুতি স্বীকার করে, কিন্তু তারা তাদের বিশেষ বিশেষ পাপগুলো ত্যাগ করে না। সেই পুরাতন স্বার্থপর স্বভাব তাদের একেকটি ভুল কাজের মধ্য দিয়ে আরও শক্তিশালী হতে থাকে। COLBen 32.2

এই সমস্ত আত্মার জন্য একমাত্র আশা হচ্ছে নিজেদের অন্তরে নীকদীমের প্রতি বলা খ্রীষ্টের সেই সত্যের বাণী অনুধাবন করা, “তোমাদের নূতন জন্ম হওয়া আবশ্যক।” “নূতন (বা উপর হইতে) জন্ম না হইলে কেহ ঈশ্বরের রাজ্য দেখিতে পায় না।” যোহন ৩:৭, ৩। COLBen 33.1

প্রকৃত পবিত্রতা হচ্ছে ঈশ্বরের পরিচর্যা কাজের পরিপূর্ণতা। এটিই প্রত্যেক প্রকৃত খ্রীষ্টিয়ানের জীবন ধারণের পূর্বশর্ত। খ্রীষ্ট আমাদের জীবনে শর্তহীন আনুগত্য ও অবিশ্রান্ত পরিচর্যা কাজ দাবি করেন। তিনি আমাদের সমস্ত হৃদয়, মন, আত্মা, ও শক্তি দাবি করেন। কখনো আমাদের আমিত্বকে সন্তুষ্ট করা উচিত নয়। যিনি তার নিজের জন্য জীবন ধারণ করেন, তিনি কখনো খ্রীষ্টিয়ান হতে পারেন না। COLBen 33.2

সমস্ত কাজের কেন্দ্রবিন্দু হতে হবে খ্রীষ্টিয় প্রেম। ভালবাসা হচ্ছে স্বর্গে ও পৃথিবীতে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও শক্তির সবচেয়ে বড় আদর্শ। আর এটি হচ্ছে খ্রীষ্টিয় চরিত্রের মূল ভিত্তি। একমাত্র এই প্রেমই একজন খ্রীষ্টানের ভিত্তি হতে হবে। একমাত্র এই প্রেমই তাকে দৃঢ় চরিত্রের ও দৃঢ় রাখতে পারে। এটিই তাকে সমস্ত পরীক্ষা ও প্রলোভনের হাত থেকে মুক্ত করতে পারে। COLBen 33.3

আত্মোৎসর্গের মধ্য দিয়ে ভালবাসা প্রকাশ পায়। উদ্ধারের পরিকল্পনা এই উৎসর্গের মাঝেই নিহিত ছিল - যে উৎসর্গ এতটা গভীর, এতটা ব্যাপক ও এতটা সুউচ্চ যে, তা পরিমাপ করা যায় না। খ্রীষ্ট আমাদের জন্য নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবে উৎসর্গ করেছিলেন এবং যারা খ্রীষ্টকে গ্রহণ করে তারা তাদের ত্রাণকর্তার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে সব সময় প্রস্তুত থাকবে। অন্য সব কিছুর আগে তাদের মাথায় আসবে প্রভু যীশুর সম্মান ও গৌরবের কথা। COLBen 33.4

যদি আমরা যীশুকে ভালবাসি, তাহলে আমরা তাঁর উদ্দেশে জীবন যাপন করতে ভালবাসব, আমরা তাঁকে আমাদের ধন্যবাদ এর উপহার দেব ও শ্রম দেব। তখন আমাদের সকল কষ্টকর শ্রম হালকা হয়ে যাবে। তাঁর জন্য আমরা দুঃখভোগ করতে ও নিজেদের উৎসর্গ করতে পিছ পা হব না। মানুষের পরিত্রাণ সাধনের জন্য তাঁর সহানুভূতি হবে আমাদের আকাক্সক্ষা। তিনি প্রত্যেকটি আত্মার মুক্তি সাধনের জন্য যে প্রচ- তাড়না অনুভব করতেন তা আমাদেরও অনুভব করতে হবে। COLBen 33.5

এটিই খ্রীষ্টের ধর্ম। এর কোন অংশে বাদ গেলে সেটি প্রতারণা। অন্য কোন সত্যের তত্ত্বকথা বা কোন ধরনের শিষ্যত্ব কোন আত্মাকে পরিত্রাণ দিতে পারে না। আমরা পুরোপুরি ভাবে খ্রীষ্টের না হলে আংশিকভাবে তাঁর হতে পারি না। আমাদের খ্রীষ্টিয় জীবনে যদি কোন ধরনের অপূর্ণতা থাকে তাহলে এর অর্থ হচ্ছে আমরা আমাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছি ও নিজ অভিলাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছি। যদি কারও ভেতরে একই সাথে নিজেকে ও খ্রীষ্টকে সেবা করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে সে পাথুরে জমির মত একজন শ্রোতা এবং যখন তার উপরে পরীক্ষা নেমে আসবে তখন সে বিশ্বাসে স্থির থাকতে পারবে না। COLBen 34.1