Go to full page →

কাঁটাবনে COLBen 34

“আর যে কাঁটাবনের মধ্যে উপ্ত, এ সেই যে সেই বাক্য শুনে, আর সংসারের চিন্তা ও ধনের মায়া সেই বাক্য চাপিয়া রাখে, তাহাতে সে ফলহীন হয়।” COLBen 34.2

সুসমাচারের বীজ অনেক সময় কাঁটাবন এবং আগাছার জঙ্গলে গিয়ে পতিত হয়; যদি সেখানে মানবীয় হৃদয়ের কোন ধরনের নৈতিক পরিবর্তন সাধিত না হয়, যদি তার পূর্ববর্তী জীবনের সমস্ত পাপ অপরাধ ত্যাগ করা না হয়, যদি শয়তানের সমস্ত প্রতিপত্তি আত্মা থেকে দূরীভূত করা না হয়, তাহলে সেই বীজ থেকে অঙ্কুরিত শীষ চাপা পড়ে যাবে। তখন কাঁটাগাছই হয়ে দাঁড়াবে শস্য এবং তা সত্যিকার শস্যের শীষ শুষ্ক করে দেবে। COLBen 34.3

অনুগ্রহ শুধুমাত্র সেই হৃদয়েতেই অবস্থান করতে পাওে, যা সব সময় সত্যের মূল্যবান বীজ ধারণ করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত হয়ে থাকে। পাপের কাঁটাগাছ যে কোন ভূমিতে বেড়ে উঠতে পারে; এর জন্য চাষাবাদের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু অনুগ্রহকে অবশ্যই অত্যন্ত সাবধানতার সাথে চাষ করতে হবে। আগাছা ও কাঁটাগাছ সব সময় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার জন্য উদ্যত হয়ে আছে এবং সে কারণেই পবিত্র ও শুচি করে তোলার কাজ সব সময় চলমান রাখা প্রয়োজন। অন্তরকে যদি ঈশ্বরের নিয়ন্ত্রণের অধীনে রাখা না হয়, যদি পবিত্র আত্মা অনবরত ভাবে আমাদের চরিত্রকে পরিশুদ্ধ করার ও মহত্তর করার জন্য কাজ করে না চলেন, তাহলে আমাদের পুরানো অভ্যাসগুলো আবারও জীবনে প্রকাশ হয়ে উঠবে। মানুষ সুসমাচার বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে; কিন্তু যতক্ষণ না সে সুসমাচারের দ্বারা পবিত্রীকৃত হচ্ছে, ততক্ষণ তার এই কাজের কোন মূল্য নেই। যদি সে পাপের উপরে বিজয় লাভ না করে, তাহলে পাপ তার উপরে বিজয় লাভ করতে শুরু করবে। যে কাঁটা গাছগুলো শুধু কেটে ফেলা হয়েছে, শিকড় উপড়ে ফেলা হয় নি, সেটা আবার বাড়তে শুরু করবে এবং এক সময় সেটা আত্মাকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলবে। COLBen 34.4

আত্মার জন্য বিপজ্জনক এমন জিনিসগুলোর কথা খ্রীষ্ট খুব স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেছেন। মার্ক এ প্রসঙ্গে যে জিনিসগুলো উল্লেখ করেছেন সেগুলো হচ্ছে - এই জগতের প্রতি মায়া, সম্পদের প্রতি মোহ এবং অন্যান্য বিষয়ের প্রতি লালসা। লূক বিশেষ ভাবে বলেছেন মায়া, সম্পদ, ও জীবনের সুখভোগের কথা। এগুলোই ঈশ্বরের বাক্যকে চেপে ধরে রাখে, যা আত্মিক বীজ অঙ্কুরিত হয়ে ওঠার জন্য বাধা সৃষ্টি করে। আত্মা খ্রীষ্টের কাছ থেকে আর কোন আশীর্বাদ গ্রহণ করতে পারে না এবং অন্তরে এই আত্মিকতা শুকিয়ে মারা যায়। COLBen 35.1

“সংসারের মায়া।” কোন শ্রেণীর মানুষই জাগতিক বিষয়গুলো মায়া থেকে মুক্ত নয়। দরিদ্রদের কাছে দুঃখ কষ্ট, পীড়ন, অভাব ও দারিদ্রের চাপ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি চিন্তার বিষয়, যা তাদের উপরে বোঝা সৃষ্টি করে রাখে। আবার ধনীদের ক্ষেত্রে আসে সম্পদ হারানোর ভয় এবং আরও নানান বিষয়ে দুশ্চিন্তা। খ্রীষ্টের অনেক অনুসারীই সেই শিক্ষা ভুলে যায় যা খ্রীষ্ট স্বয়ং আমাদের শিক্ষা দিয়েছিলেন মাঠের ঘাসফুল সম্পর্কে। তারা খ্রীষ্টের অবিশ্রান্ত দয়ার উপরে আস্থা রাখতে পারে না। খ্রীষ্ট তাদের বোঝা বহন করতে পারেন না, কারণ তারা সেই বোঝা খ্রীষ্টকে দিয়ে দেয় না। এই কারণে জীবনের মায়া তাদেরকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় ত্রাণকর্তার সহায় ও সান্ত¡নার কাছ থেকে, আলাদা করে দেয় তাঁর কাছ থেকে। COLBen 35.2

অনেকেই আছে যারা হয়তো ঈশ্বরের পরিচর্যা কাজে অত্যন্ত নিবেদিত প্রাণ ছিল, কিন্তু তারা ধন সম্পদ অর্জনের জন্য লালায়িত হয়ে উঠেছে। তারা ব্যবসা বাণিজ্যে তাদের সমস্ত শক্তি ও মেধা ঢেলে দিচ্ছে, তারা ক্রমেই আরও বেশি করে তাদের আত্মিক স্বভাবকে অবজ্ঞা করছে। এভাবে তারা নিজেদেরকে ঈশ্বরের কাছ থেকে পৃক করে ফেলছে। আমাদেরকে পবিত্র শাস্ত্রে বলা হয়েছে যেন আমরা কোন ভাবে “যতেœ শিথিল” না হই। রোমীয় ১২:১১। আমাদেরকে যথা সম্ভব কষ্ট করতে হবে যেন যার অভাব রয়েছে তাকে আমরা দান করতে পারি। খ্রীষ্টানদেরকে অবশ্যই পরিশ্রম করতে হবে, তাদেরকে ব্যবসা বাণিজ্যে ও বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হতে হবে, এবং তারা পাপে পতিত না হয়েই এই সকল কাজ করতে পারে। কিন্তু অনেকে তাদের ব্যবসায় এতটাই নিমগড়ব হয়ে পড়ে যে, বাইবেল পড়ার জন্যও তাদের হাতে সময় থাকে না, ঈশ্বরের অন্বেষণ করা ও তাঁর পরিচর্যা করার মত সুযোগ তাদের থাকে না। এক সময় যে আত্মা পবিত্রতা ও স্বর্গের অন্বেষণ করত, তা এখন জাগতিক ধন লাভের মায়ায় পড়ে আত্মিকতা থেকে দূরে সরে গেছে, এবং তা আর ঈশ্বরের আত্মার কথাগুলো শুনতে পারে না। অনন্ত জীবনের সাথে সম্পৃক্ত সমস্ত বস্তুকে সে দূরে সরিয়ে দিয়েছে এবং পার্থিব যশ ও ধনকে সে সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে শুরু করেছে। এ ধরনের মানুষের অন্তরে সুসমাচারের বীজ কখনোই ফল ধারণ করতে পারে না। কারণ জাগতিকতার কাঁটাগাছকে তাদের আত্মার উপরে সুপুষ্ট হতে দিয়েছে। COLBen 35.3

যারা ভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে তাদের অনেকেই এ ধরনের ভুলে ভ্রান্তিতে পতিত হচ্ছে। তারা অন্যদের মঙ্গলের জন্য কাজ করছে; তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পরিমাণে অনেক বেশি ও চাপবহুল, আর তারা অনেক সময় ঈশ্বরের আরাধনার চেয়ে তাদের পরিচর্যা কাজকে অধিক গুরুত্ব দেয়। প্রার্থনা ও ঈশ্বরের বাক্যের অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে তাঁর সাথে সংযোগ সাধনের প্রক্রিয়াকে অবজ্ঞা করা হয়। তারা ভুলে যায় খ্রীষ্ট কী বলেছিলেন, “আমা ভিন্ন তোমরা কিছুই করিতে পার না।” যোহন ১৫:৫। তারা খ্রীষ্টের কাছ থেকে দূরে সরে যায়, তাদের জীবনে খ্রীষ্টের পদচারণা আর থাকে না, তাঁর কোন অনুগ্রহ থাকে না, এবং এ সময় তাদের মধ্যে নিজ মানবীয় স্বভাব প্রকাশিত হয়ে পড়ে। তাদের পরিচর্যা কাজ একমাত্র তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ও সম্মান অর্জনের পন্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। তারা পরিচর্যা কাজের মধ্য দিয়ে তাদের অন্তরের অন্ধকার দিকগুলোর চর্চা শুরু করে। এটিই খ্রীষ্টিয় সুসমাচার প্রচার ও বাক্যের পরিচর্যা কাজে ব্যর্থতার সবচেয়ে বড় রহস্য। এ কারণেই আমরা এত প্রচেষ্টা দিয়েই উপযুক্ত ফল লাভ করতে পারছি না। COLBen 36.1

“ধনের মায়া।” ধন সম্পদের প্রতি মায়ার এক প্রবঞ্চনাকারী শক্তি রয়েছে। যারা অনেক বেশি পার্থিব সম্পদের অধিকারী, তারা ভুলে যায় যে, ঈশ্বরই তাদেরকে এই সম্পদ লাভ করার ক্ষমতা ও সামর্থ্য দিয়েছেন। তারা বলে, “আমারই পরাক্রমে ও বাহুবলে আমি এই সকল ঐশ্বর্য পাইয়াছি।” দ্বি.বি. ৮:১৭। তাদের ধন সম্পদ ঈশ্বরের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা জাগ্রত করার বদলে বরং তাদেরকে নিজেদেরকে উচ্চীকৃত করতে শুরু করে। তারা ঈশ্বরের উপরে তাদের নির্ভরতার অনুভূতি হারিয়ে ফেলে এবং তাদের সহমানবদের প্রতিও তাদের আর কোন দরদ থাকে না। সম্পদকে ঈশ্বরের গৌরব ও মহিমা করা এবং মানবতার উত্তরণ সাধন করার একটি উপকরণ হিসেবে না দেখে, তারা তা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ব্যবহার করে। ধন সম্পদকে ঈশ্বরের জন্য মানব জাতিকে প্রস্তুত করার উপকরণ হিসেবে না দেখে, ধনীরা সেই সম্পদকে তাদের নিজেদের ও শয়তানের আরও সমৃদ্ধি ঘটানোর জন্য ব্যয় করে থাকে। বাক্যের বীজ কাঁটাগাছের আড়ালে চাপা পড়ে যায়। COLBen 37.1

“এই জীবনের সুখভোগ।” যে সুখভোগ কেবল নিজেকে তুষ্ট করার জন্য সেই সুখভোগে রয়েছে বিপদের হাতছানি। যে সমস্ত বাজে অভ্যাস শারীরিক দুর্বলতা সৃষ্টি করে, যা মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে বা আত্মিক চিন্তা শক্তিকে নির্জীব করে তোলে, সেগুলো হচ্ছে “মাংসিক অভিলাষ . . . সেইগুলি আত্মার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।” ১ পিতর ২:১১। COLBen 37.2

“অন্যান্য বিষয়ের প্রতি লালসা।” এই বিষয়গুলোর ভেতরে আসলে কোন পাপ নেই, কিন্তু যখন আমরা এগুলোকে ঈশ্বরের রাজ্যের উপরে স্থান দিই, তখন সেগুলো আমাদের জন্য পাপ হয়ে দেখা দেয়। যা কিছু আমাদের মনকে ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়, যা কিছু আমাদেরকে খ্রীষ্টের প্রতি ভালবাসা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়, সেগুলোই আত্মার শত্রু। COLBen 37.3

যখন আমাদের মন তারুণ্যে ও সজীবতায় ভরপুর থাকে এবং তা উত্তরণের পথে ধাবিত হতে থাকে, তখনই আমাদের নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার ও নিজেকে তুষ্ট করার জন্য সবচেয়ে বড় প্রলোভনগুলো দেখা দেয়। যদি পার্থিব মন্দতা আমাদের জীবনে সাফল্য লাভ করে, তখন আমাদের জীবনে এমন এক অধ্যায় শুরু হয় যা আমাদের চেতনাকে বিনষ্ট কওে, এবং একটি ভাল চরিত্র গঠনে যা কিছু করা প্রয়োজন, তা করতে আমাদেরকে বাধা দেয়। যখন মন্দতার সাথে বৃদ্ধি লাভের জন্য সব দিক থেকে পরিবেশ অনুকূল থাকে, তখন আমাদের প্রভুর বিধির বিপরীতে বৃদ্ধি ঘটতে দেখা যায়। COLBen 37.4

শিশুদের জীবন গঠনের এই সময়ে পিতা মাতার দায়িত্ব অনেক বেশি। তাদের উচিত হবে সে সময় তাদের সন্তানদেরকে সঠিক প্রভাবের অধীনে রেখে কীভাবে চালনা করতে হবে তা শেখা, যে সমস্ত প্রভাব তাদেরকে জীবন সম্পর্কে সঠিক দর্শন শেখাবে, এবং জীবনে সত্যিকার অর্থে সাফল্য অর্জন করতে শেখাবে। এর বদলে অনেক পিতা মাতাই তাদের সন্তানদেরকে কী করে জাগতিকভাবে নিজেকে সমৃদ্ধশালী করে তোলা যায় তাই আগে শেখান। অনেক পিতা মাতাই বড় কোন শহরে বসবাস করতে শুরু করেন এবং তাদের সন্তানদেরকে ফ্যাশন সচেতন সমাজের সাথে পরিচিত করে তোলেন। তারা তাদের সন্তানদেরকে এমন প্রভাবের মধ্যে রাখেন যা তাদেরকে কেবল পার্থিবতায় পূর্ণ হতে এবং দাম্ভিক করে তোলে। এই ধরনের পরিবেশে সন্তানদের মন ও আত্মার বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। জীবনের উচু ও মহত্তর লক্ষ্যগুলো দৃষ্টির বাইরে চলে যায়। ঈশ্বরের সন্তান হওয়ার, তাঁর উত্তরাধিকারী হওয়ার সমস্ত সুযোগ বিকিয়ে দিয়ে তারা পার্থিব সুখভোগ করতে থাকে। COLBen 38.1

অনেক বাবা মা তাদের সন্তানদের সব ধরনের আবদার মিটিয়ে তাদেরকে খুশি করতে চান। তারা তাদের সন্তানদেরকে খেলাধুলায় অংশ নিতে দেন, বিভিন্ন পার্টিতে যেতে দেন, এবং তাদেরকে টাকা পয়সা হাতে দেন, যা দিয়ে তারা অবাধে নিজেদের খেয়াল খুশি মত খরচ করতে পারে। এই সমস্ত যুবকদের আগ্রহ ক্রমেই আরও বেশি করে আনন্দ ও ভোগ বিলাসিতার দিকে ঝুঁকে পড়ে। যত বেশি করে তারা সুখভোগের জন্য নিজেদেরকে বিকিয়ে দেয়, তত বেশি করে তাদের এই অভ্যাস শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তরুণরা আরও বেশি করে ভোগ বিলাসে মত্ত হয়ে পড়ে, এবং এক সময় তারা তাদের জীবনের লক্ষ্য হিসেবে এই ভোগ বিলাসকেই দেখতে শুরু করে। তারা তাদের অলসতা ও আত্ম-সন্তুষ্টির যে অভ্যাস তৈরি করে, এই কারণে তারা কখনোই দৃঢ় বিশ্বাসী খ্রীষ্টিয়ান হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে পারে না। COLBen 38.2

এমন কি মণ্ডলীতেও, যা কি না সত্যের ভিত্তিমূল ও গাঁথুনি হওয়া উচিত ছিল, তা ইদানিং স্বার্থপর ভালবাসা ও সুখভোগের পেছনে ইন্ধন যোগাচ্ছে। যখন কোন ধর্মীয় কাজের উদ্দেশে অর্থ সংগ্রহ করা হয়, তখন অধিকাংশ মণ্ডলী কী ধরনের মাধ্যম বেছে নেয়? তারা বিভিন্ন ধরনের ভোজ, মেলা, এমন কি লটারি এবং এ ধরনের আরও অনেক কিছুর আয়োজন করে। অনেক সময় এগুলোকে স্থান করে দিতে ঈশ্বরের উপাসনার পরিসর সংক্ষিপ্ত করে ফেলা হয় এবং ভোজন, পান, বেচা, কেনা, ও আনন্দ স্ফূর্তির মধ্য দিয়ে ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ ভাবে অবমাননা করা হয়। ঈশ্বরের গৃহের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং তাঁর উপাসনার প্রতি ভক্তি তরুণদের মন থেকে উঠে যেতে থাকে। আত্ম সংযমের প্রতিরোধ শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। স্বার্থপরতা, ক্ষুধা, মানুষকে দেখানোর ইচ্ছা এ সব কিছু ক্রমেই আরও বিকশিত হতে থাকে, এবং আত্মিক ভাবে মানুষ দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে। COLBen 39.1

এই সমস্ত আমোদ প্রমোদ ও ভোগ বিলাসের কেন্দ্র হচ্ছে শহরগুলো। অনেক বাবা মা তাদের সন্তানদের জন্য শহরে এসে বাসা নেন এবং ভাবেন যে, তারা তাদের সন্তানদেরকে অনেক সুযোগ সুবিধার মধ্য দিয়ে বড় করতে পারবেন। কিন্তু আসলে তাদেরকে হতাশ হতে হবে এবং এই মারাত্মক ভুলের জন্য অনুতাপ করতে অনেক দেরী করে ফেলে। আজকের দিনের শহরগুলো খুব দ্রুত সদোম ও ঘমোরার মত হয়ে পড়ছে। আমাদের অলসতাকে অনেক বৃদ্ধি করছে। বিভিন্ন উত্তেজক খেলাধুলা, চলচ্চিত্র দেখা, ঘোড়দৌড়, জুয়া খেলা, মদ্য পান করা, মারামারি করা, এগুলো প্রতি নিয়ত তরুণদের মধ্যে বেড়েই চলেছে। যুবকেরা ভোগ বিলাসিতার গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয়। যারা নিজেদের আনন্দের জন্য ভোগ বিলাসিতাকে আঁকড়ে ধরবে, তারা তাদের দরজা খুলে প্রলোভনের বন্যা ঘরের ভেতরে নিয়ে আসবে। তারা নিজেদেরকে কলুষিত সমাজ ব্যবস্থার একটি অংশ করে তোলে এবং ক্ষণিকের সুখ সঙ্গীদের সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে তারা তাদের জীবনে স্থায়ী অবনতি ঘটায়। তারা এক সুখ থেকে আরেক সুখের পরশে লাফিয়ে চলার চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদেরকে হতাশা ও ব্যর্থতায় নিমজ্জিত হতে হয়। তাদের ধর্মীয় জীবন সম্পূর্ণভাবে নির্জীব হয়ে পড়ে এবং তাদের আত্মিক জীবন হয়ে পড়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন। তাদের আত্মার যত মঙ্গলজনক দিক, বস্তুত আত্মিক জগতের সাথে মানুষের যে সকল সংযোগ থাকে, তার সবগুলোই তাদের জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। COLBen 39.2

এটি সত্য যে, অনেকে তাদের ভুলগুলো বুঝতে পারে ও অনুশোচনা করে। ঈশ্বর যেন তাদের ক্ষমা করেন। কিন্তু তারা তাদের আত্মাকে ইতোমধ্যে আহত করেছে এবং নিজেদেরকে সারা জীবনের বিপদাপন্ন করেছে। তাদের মধ্যে আত্মশুদ্ধির যে সম্ভাবনা ছিল তাকে তারা নষ্ট করে দিয়েছে। তারা এখন আর ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করতে পারে না, কারণ সেটা বড় ধরণের ধ্বংস সাধন করেছে। পবিত্র আত্মার কণ্ঠ শুনে তারা বুঝতে পারে না অথবা এমন কি শয়তানের প্রলোভনও বুঝতে পারে না। বিপদের সময় তারা প্রায়শই প্রলোভনে পতিত হয় এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে সম্পূর্ণ ভাবে দূরে সরে যায়। সুখভোগ ভালবাসার এই জীবন এখন তাদের জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে এক মৃত্যুকূপ। আসন্ন অনন্ত জীবনও এখন তাদের জন্য ধ্বংসে উপনীত হয়েছে। COLBen 40.1

দুশ্চিন্তা, ধন, সুখভোগ, সব কিছুই শয়তান মানুষের আত্মা নিয়ে তার নোংরা খেলা খেলবার জন্য ব্যবহার করে। এ কারণে সতর্ক বাণী দেয়া হয়েছে, “তোমরা জগৎকে প্রেম করিও না, জগতীস্থবিষয় সকলও প্রেম করিও না। কেহ যদি জগৎকে প্রেম করে, তবে পিতার প্রেম তাহার অন্তরে নাই। কেননা জগতে যাহা কিছু আছে, মাংসের অভিলাষ, চক্ষুর অভিলাষ, ও জীবিকার দর্প, এই সকল পিতা হইতে নয়, কিন্তু জগৎ হইতে হইয়াছে।” ১ যোহন ২:১৫, ১৬। যিনি মানুষের হৃদয় উন্মুক্ত বইয়ের মত করে পড়তে পারেন তিনি বলেছেন, “কিন্তু আপনাদের বিষয়ে সাবধান থাকিও, পাছে ভোগপীড়ায় ও মত্ততায় এবং জীবিকার চিন্তায় তোমাদের হৃদয় ভারগ্রস্ত হয়, আর সেই দিন হঠাৎ ফাঁদের ন্যায় তোমাদের উপরে আসিয়া পড়ে।” লূক ২১:৩৪। আর প্রেরিত পৌল পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে লিখেছেন, “যাহারা ধনী হইতে বাসনা করে, তাহারা পরীক্ষাতে ও ফাঁদে এবং নানাবিধ মূঢ় ও হানিকর অভিলাষে পতিত হয়, সেই সকল মনুষ্যদিগকে সংহারে ও বিনাশে মগড়ব করে। কেননা ধনাসক্তি সকল মন্দের একটা মূল; তাহাতে রত হওয়াতে কতক লোক বিশ্বাস হইতে বিপথগামী হইয়াছে, এবং অনেক যাতনারূপ কণ্টকে আপনারা আপনাদিগকে বিদ্ধ করিয়াছে।” ১ তীমথিয় ৬:৯, ১০। COLBen 40.2