বীজবাপকের পুরো দৃষ্টান্তটিতে ভূমির উপর ভিত্তি করে বীজ বপনের বিভিন্ন ফলাফল খ্রীষ্ট দেখিয়েছেন। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই বীজ-বাপক এবং বীজ এক থেকেছে। এভাবেই তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, ঈশ্বরের বাক্য যদি আমাদের অন্তরে ও জীবনে তার কাজ সম্পাদন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেই দায় আমাদেরই। কিন্তু এই ফলাফল আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়। এ কথা সত্য যে আমরা আমাদের নিজেদেরকে পরিবর্তন করতে পারি না; কিন্তু পছন্দ করার ইচ্ছাশক্তি আমাদের হাতেই রয়েছে। আমরা নিজেদেরকে কী হিসেবে দেখতে চাই তার ভার একান্তভাবে আমাদেরই। পথের পার্শ্ববর্তী অংশ, পাথুরে ভূমি, কাটাগাছে ছাওয়া ভূমির মত সকল শ্রোতাদেরকেই থাকতে হবে, এমন কোন কথা নেই। ঈশ্বরের আত্মা সেই আকর্ষণের মোহ ভেঙ্গে দিতে পারে, যা মানুষকে পার্থিব বিষয়বস্তুর মাঝে গ্রাস করে ফেলে। সেই সাথে ঈশ্বরের আত্মা মানুষের মাঝে অক্ষয় ধনের প্রতি আকাক্সক্ষা জাগিয়ে তোলে। এই আত্মাকে প্রতিরোধ করার মধ্য দিয়ে মানুষ ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি অমনোযোগী হয়ে পড়ে এবং অবহেলা করতে শুরু করে। তারা নিজেরাই তাদের অন্তরের কঠিনতার জন্য দায়ী যার কারণে ভাল বীজ শিকড় গজাতে ব্যর্থ হয় এবং এমন মন্দতা জন্ম নেয় যা উত্তমতার উত্তরণে বাধা সৃষ্টি করে। COLBen 41.1
হৃদয়ের উদ্যান অবশ্যই কর্ষণ করতে হবে। পাপের জন্য গভীর অনুশোচনা করার মধ্য দিয়ে ভূমি কর্ষণ করতে হবে। শয়তানের বিষাক্ত আগাছা শিকড়সুদ্ধ উপড়ে ফেলতে হবে। যে ভূমি কাটাগাছে ছেয়ে গেছে তা একমাত্র কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই আবার পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। কাজেই যীশুর নাম ও শক্তির উপরে নির্ভর করে কঠোর অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়ে কেবল মানব হৃদয়ের স্বভাবগত মন্দ প্রবণতাকে জয় করা সম্ভব। প্রভু আমাদেরকে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্য দিয়ে এই আহ্বান জানাচ্ছেন, “তোমরা আপনাদের পতিত ভূমি চাষ কর, কণ্টকবন মধ্যে বীজ বপন করিও না।” “তোমরা আপনাদের জন্য ধার্মিকতার বীজ বপন কর, দয়া অনুযায়ী শস্য কাট।” যিরমিয় ৪:৩; হোশেয় ১০:১২। তিনি আমাদের জন্য এই কাজ সম্পন্ন করতে চান এবং তিনি চান যেন আমরা এই কাজে তাঁকে সহযোগিতা করি। COLBen 41.2
সুসমাচার গ্রহণের জন্য মানুষের হৃদয়কে প্রস্তুত করে তুলতে বীজবাপকের একটি কাজ করার আছে। বাক্যের পরিচর্যায় আমরা অনেক বেশি বাক্য প্রচার করতে দেখি এবং প্রকৃতপক্ষে অন্তর ছুঁয়ে যায় এমন কাজ খুব কমই দেখি। হারানো আত্মা জয় করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে কঠোর পরিশ্রম করা প্রয়োজন। খ্রীষ্টের মত সহানুভূতি সহকারে আমাদের উচিত মানুষের কাছে ব্যক্তিগতভাবে যাওয়া এবং অনন্ত জীবনের মহান বিষয়গুলোর প্রতি তাদের আগ্রহ জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করা। হতে পারে তাদের অন্তর পীচ ঢালা রাজপথের মত কঠিন হয়ে রয়েছে এবং হয়তোবা তাদের কাছে ত্রাণকর্তাকে উপস্থাপন করা নিষ্ফল প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা দিতে পারে; কিন্তু যেখানে পরিবর্তন সাধনে ও বিশ্বাস জন্মাতে যুক্তি-তর্ক অকার্যকর, সেখানে ব্যক্তিগত পরিচর্যার মধ্য দিয়ে খ্রীষ্টের ভালবাসা প্রকাশিত হলে তা পাথুরে হৃদয়কেও নরম করে তুলতে পারে এবং সেখানে তখন সত্যের বীজ শিকড় গজাতে পারে। COLBen 42.1
এ কারণে বীজ-বাপকদের এমন কাজ করা প্রয়োজন যেন কাটাগাছের নিচে চাপা পড়ে বা ভূমির অগভীরতার কারণে বীজ সঙ্কুচিত হয়ে না থাকে। খ্রীষ্টিয় জীবনের একেবারে শুরুতেই প্রত্যেক বিশ্বাসীর উচিত খ্রীষ্ট ধর্মের মৌলিক নীতি শেখা। একজন বিশ্বাসীর এ কথা জানা প্রয়োজন যে, শুধুমাত্র খ্রীষ্টের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে নিজের পরিত্রাণ লাভ করার মাঝেই তার জীবনের লক্ষ্য সীমাবদ্ধ নয়। বরং এর সাথে তার নিজ জীবন ও চরিত্রকে করে তুলতে হবে খ্রীষ্টের জীবন ও চরিত্রের মত। আমাদের প্রত্যেকের এ কথা জানা প্রয়োজন যে, আমাদেরকে নিজ নিজ ভার বহন করতে হবে এবং সমস্ত স্বভাবগত মন্দতা দূর করতে হবে। আমাদেরকে শিখতে হবে খ্রীষ্টের পক্ষে কাজ করার আশীর্বাদ কেমন, আত্মসংযমে তাঁকে কীভাবে অনুসরণ করতে হয়, এবং উত্তম সৈনিক হিসেবে কী করে কষ্ট সহ্য করতে হয়। তাঁর ভালবাসায় নির্ভর করা এবং তাঁর উপরে নিজেদের ভাল-মন্দের ভার অর্পণ করা আমাদেরকে শিখতে হবে। তাঁর জন্য আত্মা জয় করার আনন্দ আমাদের আস্বাদন করতে হবে। হারিয়ে যাওয়া মানুষদের জন্য ভালবাসা ও আগ্রহ প্রকাশের মধ্য দিয়ে আমরা আত্মস্বার্থ ত্যাগ করতে সক্ষম হব। তখন এই পৃথিবীর সুখ-আনন্দ তার মোহনীয় শক্তি হারিয়ে ফেলবে এবং তা আর মানুষের হৃদয় ভারী করে তুলতে পারবে না। সত্যের লাঙ্গল তার কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হবে। তা শক্ত ও অনুর্বর ভূমি ভেঙ্গে দেবে। এই সত্য কেবল কাটাগাছের অগ্রভাগই কর্তন করবে না, বরং তা কাঁটাগাছের শিকড়সুদ্ধ উপড়ে ফেলবে। COLBen 42.2