“আর যে কেহ মল্লযুদ্ধ করে, সে সর্ব বিষয়ে ইন্দ্রিয় দমন করে।”
প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীকে সহজ জীবন-যাপন এবং উন্নত চিন্তার মধ্যকার সম্পর্কটি বুঝতে হবে। আমাদের জীবন, মন অথবা শরীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে কিনা তা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। যুবকযুবতিদের প্রত্যেককে, এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে যা তার জীবনকে গঠন করবে; কোন বেদনা বা কষ্ট উপেক্ষা করবে না যেন সে বুঝতে পারে যে, শক্তির প্রভাবে যে আচরণ করছে তা তার চরিত্র এবং ভাগ্য গঠন করবে EdBen 188.1
অমিতাচার একটি শত্রু যার বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। এই ভয়াবহ মন্দতার ত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রত্যেক অনুরাগীকে সংগ্রাম করতে হবে। বিদ্যালয়গুলােতে মিতাচার সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া সঠিক পথের নির্দেশনার একটি আন্দোলন। এ বিষয়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ে এবং প্রতিটি পরিবারে শিক্ষা দিতে হবে। যুবক-যুবতি এবং ছােট ছােট ছেলে-মেয়েদের মদ, তামাক, দেহ চূর্ণ-বিচূর্ণকারী, মনকে মেঘাচ্ছন্নকারী, এবং জীবনের যৌন ক্ষুধা জাগিয়ে তােলা বিষের কুফল কি তা উপলদ্ধি। করতে হবে। এটি পরিষ্কার ভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে যে, যে এ সব ব্যবহার করে সে পূর্ণ ভাবে শারীরিক, মানসিক, এবং নৈতিক শক্তির অধিকারী হতে পারে না। EdBen 188.2
কিন্তু অমিতাচারের শিকড়ে পৌছাতে হলে আমাদের মদ এবং তামাক পানের চেয়েও আরও বেশি গভীরে যেতে হবে। আলস্য, লক্ষ্যহীনতা, এবং কুসঙ্গের সাথে মেলামেশা এর যথাযথ কারণ হতে পারে। প্রায়ই এগুলাে ঘরে, খাবার টেবিলে, পরিবারগুলােতে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে যা তাদেরকে কঠোরভাবে মিতাচারী করে। যা কিছু হজম কাজে বাধা সৃষ্টি করে, অনর্থক মানসিক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে অথবা যে কোন উপায়ে শরীরের বিভিন্ন কাজকে দুর্বল করে ফেলে, মানসিক এবং শারীরিক শক্তি সমূহের ভারসাম্য নষ্ট করে, শরীরের ওপরে মনের নিয়ন্ত্রণকে দুর্বল করে তা-ই এভাবে অমিতাচারের দিকে নিয়ে যায়। অনেক সম্ভাবনাময় যুবকযুবতি অখাদ্য খাবার ফলে অস্বাভাবিক ক্ষুধার শিকার হয়ে পড়ে। EdBen 188.3
চা, কফি, আচার, চাটনি, কাসুন্দি, চকলেট, লজেন্স, বিস্কুট ও কেক, এ সব হজমে বাধা সৃষ্টি করে। মাংসও কিন্তু ক্ষতিকারক খাদ্য। মাংসাহার সাধারণত উত্তেজনা সৃষ্টি করে, এছাড়া এটি রােগাক্রান্ত পশুদের রােগগ্রস্ত অবস্থায় দ্বিগুণ ভাবে আপত্তিকর। এতে শিরা উপশিরাগুলাে উত্তেজিত হয় এবং কামেচ্ছা জেগে ওঠে, এভাবে শক্তির সুষমতার অভাবের দিকে পরিচালিত করে। EdBen 189.1
যারা উত্তেজনাদায়ক খাদ্যে অভ্যস্থ, দেখা গেছে যে, কিছু দিন পরেই তাদের উদর সাধারণ খাদ্যে সন্তুষ্ট হয় না। পেট তখন প্রচুর মসলাযুক্ত, ত্যেজষ্কর এবং উত্তেজনা সৃষ্টিকারী খাদ্যের দাবি জানায়। শিরাউপশিরাগুলাে যখন অকর্মন্য হয়ে পড়ে এবং শরীরের কলকজা দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন ইচ্ছা, অস্বাভাবিক চাহিদা প্রতিরােধ করতে শক্তিহীন হয়ে পড়ে। পেটের সূক্ষ্ম, পাতলা আবরণ জরাগ্রস্ত হয়, যতক্ষণ না খুব উত্তেজনা দায়ক খাদ্য স্বস্তি দিতে ব্যর্থ হয়। এমন একটি পিপাসা সৃষ্ট হয় যা কড়া পানীয় ছাড়া অন্য কিছু মেটাতে পারে না EdBen 189.2
এটি মন্দতার সূচনা করে এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিরােধ গড়ে তােলা আবশ্যক। তরুণ-তরুণীদের শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে আপাতঃদৃষ্টিতে পথ ভ্ৰষ্টকারী ছােট বিষয়গুলাে অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। ছাত্রছাত্রীকে একটি সাধারণ স্বাস্থ্যকর খাদ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে, যা অস্বাভাবিক উত্তেজনা দায়ক খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছাকে দমন করতে পারে। প্রথম থেকেই আত্ম-নিয়ন্ত্রণের অভ্যাসকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। যুবকযুবতিদের এই চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে যে, তাদের দাস নয় কিন্তু প্রভু হতে হবে। ঈশ্বরের রাজ্যের শাসনভার তাদের দেয়া হয়েছে এবং তাদেরই স্বর্গ নিয়ােজিত রাজকার্য পরিচালনা করতে হবে। যখন এমন শিক্ষা সঠিকভাবে দেয়া হয়, তখন এর ফল যুবক-যুবতিদের গণ্ডি ছাড়িয়ে যাবে। প্রভাব বহির্বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়বে এবং ধ্বংসােনুখ হাজার হাজার নর-নারী রক্ষা পাবে। EdBen 189.3