“ …যীশু খ্রীষ্টের মুখমণ্ডলে ঈশ্বরের মহিমার জ্ঞানের আলো।”
পাপের কারণে মানুষ ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে গেছে। পরিত্রাণ কল্পনা ব্যতিরেকে, ঈশ্বরের নিকট হতে চিরকালের জন্য বিচ্ছিন্ন হওন, অশেষ রাত্রির অন্ধকারই ছিল তার নিয়তি। ত্রাণকর্তার ত্যাগস্বীকারের মাধ্যমে, ঈশ্বরের সঙ্গে পুনরায় যােগাযােগ সম্ভব হয়েছে। আমরা ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সান্নিধ্যে না-ও আসতে পারি; কিন্তু আমরা ত্রাণকর্তা যীশুতে তাঁর মুখমণ্ডলের দিকে দৃষ্টিপাত করতে এবং তাঁর সঙ্গে যোগাযােগ রক্ষা করতে পারি । “যীশু খ্রীষ্টের মুখমণ্ডলে ঈশ্বরের গৌরবের জ্ঞান-দীপ্তি প্রকাশ পায়।” ঈশ্বর “খ্রীষ্টে আপনার সঙ্গে জগতের সম্মিলন করাইয়া দিতেছিলেন।” ২ করিন্থীয় ৪:৬; ৫:১৯। EdBen 25.1
“সেই বাক্য মাংসে মূর্তিমান হইলেন, এবং আমাদের মধ্যে প্রবাস করিলেন, ... তিনি অনুগ্রহে ও সত্যে পূর্ণ।” “তাহার মধ্যে জীবন ছিল, এবং সেই জীবন মনুষ্যগণের জ্যোতি ছিল।” যােহন ১:১৪, ১:৪। খ্রীষ্টের জীবন এবং মৃত্যু, আমাদের মুক্তির মূল্য, তা কেবল আমাদের কাছে জীবনের প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকার নয়, তা কেবল আমাদের কাছে জীবনের পথ খুলে যাবার একমাত্র পথ নয়; ঐ সকল, এদনে বসবাসকারী ব্যক্তিগণের চরিত্র অপেক্ষা, তার চরিত্রের এক প্রসার এবং উচ্চতর প্রত্যাদেশ । EdBen 25.2
আর খ্রীষ্ট যখন মানুষের কাছে স্বর্গ উন্মুক্ত করেন, তখন তিনি যে। জীবন প্রদান করেন, তা স্বর্গের দিকে মানুষের হৃদয় উন্মুক্ত করে দেয়। পাপ কেবল আমাদের ঈশ্বর হতে দূরে রাখে না; কিন্তু মানব অন্তঃকরণের বাসনা এবং তাঁকে জানবার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এই সব মন্দ কাজ নস্যাৎ করাই খ্রীষ্টের উদ্দেশ্য। পাপ, আত্মর কর্মশক্তিকে পঙ্গু করে দিয়েছে, মনকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করেছে, ইচ্ছা শক্তিকে বিকৃত করে দিয়েছে, কিন্তু এই সকল সঞ্জীবিত করার এবং ফিরিয়ে আনবার ক্ষমতা তার রয়েছে । তিনি আমাদের সামনে বিশ্বের ধনভাণ্ডার তুলে ধরেন, এবং তার দ্বারা এই সব ধনরাশি উপলব্ধি ও অধিকার করার ক্ষমতা দেয়া হয়ে থাকে। EdBen 25.3
খ্রীষ্ট সেই “জ্যোতি, যিনি সকল মনুষ্যকে দীপ্তি দেন, তিনি জগতে আসিতেছিলেন।” যােহন ১:৯। যেমন খ্রীষ্টের মাধ্যমে সকল মানুষ জীবন লাভ করেছে, তেমন তার মাধ্যমে প্রত্যেকে ঐশ্বরিক জ্যোতির অল্পবিস্তর রশ্মি লাভ করে থাকে। কেবল উন্নততর জ্ঞানবুদ্ধি নয়, কিন্তু প্রত্যেকের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত বিচার বুদ্ধি, ভালাে কাজ করার বাসনা বিদ্যমান থাকে। কিন্তু এই সকল শক্তির বিরুদ্ধে এক বিরােধী-শক্তি সগ্রাম করে যাচ্ছে। সদসদ্ জ্ঞানদায়ক গাছের ফল খাওয়ার পরিণতি সব মানুষের অভিজ্ঞতার মধ্যে দৃষ্ট হচ্ছে। তার স্বভাবের মধ্যে মন্দ কাজ করার একটি লােক, একটি শক্তি রয়েছে, যা সে প্রতিরােধ করতে অক্ষম। এই শক্তির প্রতিরােধ করতে, এবং আদর্শে পৌঁছাতে হলে তার এক বিশেষ শক্তির আবশ্যক; সেই শক্তি খ্রীষ্ট। ঐ শক্তির সঙ্গে সহযােগিতা করাই মানুষের সর্ব শ্রেষ্ঠ আবশ্যকীয় বিষয়। সামগ্রিক শিক্ষা প্রচেষ্টায় এই সহযােগিতার কি সর্বোচ্চ লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়? EdBen 26.1
প্রকৃত শিক্ষক নিম্নতর মানের কাজে সন্তুষ্ট নন। ছাত্রগণের পক্ষে যে সর্বোচ্চ লক্ষ্যে পৌঁছানাে সম্ভব, তার চেয়ে নিচু মানের লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত করে তিনি সন্তুষ্ট থাকবেন না। তিনি তাদের কেবল প্রায়ােগিক বিদ্যা দান করে, তাদের সুচতুর হিসাবরক্ষক, সুদক্ষ কারিগর, কৃতকার্য ব্যবসায়ীরূপে তৈরি করেই সন্তুষ্ট হবেন না, তাদের সত্যের নীতিমালা, বাধ্যতা, সম্মান, ন্যায়পরায়ণতা, এবং পবিত্রতা এই সকল নীতিমালার প্রতি অনুপ্রাণিত করবেন, যা তাদের একটি দৃঢ় এবং সমাজকে জাগিয়ে তােলার এক সন্দেহাতীত শক্তিশালী দলরূপে গঠন করবে। সর্বোপরি তাদের জন্য তার বাসনা এই, যেন তারা জীবনের নিঃস্বার্থ সেবার মহান শিক্ষা অর্জন। করতে পারে। EdBen 26.2
খ্রীষ্টের সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক, পরিচালকরূপে তার জ্ঞান, শক্তিরূপে তাঁর ক্ষমতা পরিগ্রহণের মাধ্যমে এই নীতিমালা চরিত্র গঠনের জন্য, অন্তঃকরণ এবং জীবনের পক্ষে একটি জীবন্ত শক্তি হয়ে ওঠে। এ সকলেও শিক্ষার্থী জ্ঞানের উৎস খুঁজে পায়। সে আপনার মধ্যে তার উচ্চতার পরমাদর্শ উপলব্ধি করার ক্ষমতার নাগাল পায়। ইহ জগতে সর্বোচ্চ শিক্ষালাভের সুযােগ তারই এবং এই পার্থিব প্রশিক্ষণ লাভের মধ্যে, সে সেই পাঠ্যসূচি শেষ করছে যা তাকে অনন্ত জীবনের পথের সন্ধান দিতে পারবে। EdBen 26.3
গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে যে, শিক্ষা দান কাজ এবং পরিত্রাণ কাজ একই, যেহেতু পরিত্রাণ এবং শিক্ষাদান কাজে “অন্য ভিত্তিমূল কেহ স্থাপন করিতে পারে না, তিনি যীশু খ্ৰীষ্ট।” “কারণ ঈশ্বরের এই হিত সঙ্কল্প হইল, যেন সমস্ত পূর্ণতা তাহাতেই বাস করে।” ১ করিন্থীয় ৩:১১; কলসীয় ১:১৯ EdBen 27.1
পরিবর্তিত অবস্থার মধ্যেও প্রকৃত শিক্ষা এখনও এদনের বিদ্যালয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ি স্রষ্টার পরিকল্পনার অনুরূপ। আদম ও হবা সামনা-সামনি হয়ে ঈশ্বরের নিকট থেকে শিক্ষা লাভ করেছেন; আমরা খ্রীষ্টের মুখমণ্ডলে তাঁর মহিমার জ্ঞানের আলােক দেখে থাকি। EdBen 27.2
শিক্ষার মহান নীতিমালা অপরিবর্তনীয়। “সেই সকল অনন্ত কালের নিমিত্ত স্থিরীকৃত” গীত ১১১:৮; কেননা সে সকল ঈশ্বরের চরিত্রের নীতিমালা। ছাত্র-ছাত্রীগণ যাতে এ নীতিমালা বুঝতে পারে, এবং খ্রীষ্টের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে, যা তাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণের এক শক্তি যােগাবে, সে জন্য শিক্ষককেই সর্ব প্রথম প্রচেষ্টা চালাতে এবং এ বিরামহীন। লক্ষ্য রাখতে হবে। যে শিক্ষাগুরু এই লক্ষ্য স্বীকার করবেন, তিনি প্রকৃত পক্ষেই খ্রীষ্টের সঙ্গে একজন সহ কার্যকারী, ঈশ্বরের সঙ্গেও একজন , সহকর্মী । EdBen 27.3