“তােমার সময়ের সুস্থিরতা হইবে... প্রজ্ঞার ও জ্ঞানের বাহুল্য হইবে।”
প্রকৃত শিক্ষা বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞান অথবা সাহিত্যানুগ অর্জনকে অবজ্ঞা করে না; কিন্তু তথ্যের চেয়েও এর শক্তিকে বেশি মূল্য দেয়;, উত্তমতা শক্তির ঊর্ধ্বে উন্নতর জ্ঞানোপার্জনের উর্ধ্বে চরিত্রকে মূল্য প্রদান করে। পৃথিবীর ততাে বেশি আদর্শ চরিত্রবান লােকের প্রয়ােজন নেই। সে চায় এমন ব্যক্তিত্ব যে দৃঢ় নীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। EdBen 208.1
“প্ৰজ্ঞাই প্রধান বিষয়, তুমি প্রজ্ঞা উপার্জন কর।” “তজ্ঞানীদের জিহ্বা উত্তমরূপে জ্ঞান ব্যক্ত করে।” হিতােপদেশ ৪:৭, ১৫:২। প্রকৃত শিক্ষা এই জ্ঞান প্রদান করে। এটি কেবল একটি বিষয় নয় কিন্তু আমাদের সর্ব শক্তি এবং অর্জিত জ্ঞানের সর্বোত্তম ব্যবহার শিক্ষা দেয়। এভাবে এটি কর্ম দায়িত্বের সমগ্র বৃত্তকে আমাদের নিজেদের, বিশ্বকে এবং ঈশ্বরকেও পরিব্যাপ্ত করে। EdBen 208.2
মানব জাতির কাছে যে কাজ দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে চরিত্র গঠন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, এবং বর্তমানের মত আগে কখন এ বিষয়ে এত গুরুত্ব সহকারে অধ্যাবসায় করা হয় নি। পূর্ববর্তী বংশধরগণ এমন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মােকাবেলা করার আহ্বান পায় নি; আজকের দিনে যেমন একইভাবে অতীতে যুবক-যুবতিগণ এমন মহা সংকটের সম্মুখীন হয় নি EdBen 208.3
বর্তমানের ন্যায় এ ধরণের সময়ে কোন ধরণের শিক্ষার প্রতি ঝোঁক বা প্রবণতা দেয়া হয়? প্রায়ই কি উদ্দেশ্যের আবেদন জানানাে হয়ে থাকে? আত্ম অনুসন্ধান। যে সব শিক্ষা দেয়া হয় তার অধিকাংশই বিপথগামীতার শিক্ষা। প্রকৃত শিক্ষার মধ্যে স্বীয় উচ্চাকাঙ্ক্ষা ক্ষমতার লােভ, মানবাধিকার এবং অভাবের প্রতি অশ্রদ্ধা, এসব আমাদের জগতের অভিশাপ, একটি বিপরীত প্রভাব খুঁজে পায়। প্রত্যেক মানব সত্ত্বার জন্য ঈশ্বরের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রত্যেককে তার তালন্ত বৃদ্ধির জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে; এবং এ কাজ বিশ্বস্তভাবে সম্পন্ন করতে হবে। গুণাবলি অল্প হােক কি বেশি হােক, একজন ব্যক্তিকে তার প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে হবে। ঈশ্বরের পরিল্পনার মধ্যে স্বার্থপর প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোন স্থান নেই। যারা নিজেরা নিজেদের পরিমাপ করে এবং নিজেদের মধ্যে নিজেদের তুলনা করে, তারা জ্ঞানবান নয়। ২ করিন্থীয় ১০:১২। আমরা যা কিছু করি না কেন তা “ঈশ্বর-দত্ত শক্তি অনুসারেই করতে হবে। ১ পিতর ৪:১১। “প্রাণের সহিত কাৰ্য্য কর, মনুষ্যের কৰ্ম্ম নয়, কিন্তু প্রভুরই কর্ম বলিয়া কর; কেননা তােমরা জান, প্রভু হইতে তােমরা দায়াধিকার রূপ প্রতিদান পাইবে তােমরা প্রভু খ্রীষ্টেরই দাসত্ব করিতেছ।” কলসীয় ৩:২৩, ২৪। এ সব অনুসরণের মাধ্যমে সেবা কাজ এবং অর্জিত শিক্ষা অতিশয় মূল্যবান। কিন্তু বর্তমান কালে দেয়া শিক্ষার মধ্যে কতই না ব্যবধান রয়েছে! শিশুর জীবনের প্রথম বছরগুলাে থেকেই, সমকক্ষ হবার এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার একটি প্রবণতা, স্বার্থপরতাকে উৎসাহিত করে, যা সকল অনর্থের মূল। EdBen 208.4
এভাবে প্রাধান্যের লড়াই সৃষ্ট হয়ে থাকে; এবং “সংগ্রামের” পদ্ধতি। উৎসাহিত করা হয় যা অনেক ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে এবং কার্যকারিতার ক্ষেত্রে অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। অন্যান্য অনেকের মধ্যে, সমকক্ষ হবার চেষ্টা অসততার দিকে পরিচালিত করে; এবং উচ্চাকাঙ্খা এবং অসন্তোষ পােষণের দ্বারা, এটি জীবনকে তিক্ত করে তােলে এবং পৃথিবীকে ঐ সব চঞ্চল, প্রচণ্ড আলােড়নের মনােভাব দ্বারা পূর্ণ করে যা সমাজের কাছে এক অবিরাম ভয়াবহ বিপদস্বরূপ। EdBen 209.1
এ সব পদ্ধতির মধ্যে কেবল বিপদের সম্ভাবনাই থাকে না: এটি অধ্যয়নের বিষয় বস্তুর মধ্যেও পাওয়া যায় EdBen 209.2
জীবনের, প্রবণতাযুক্ত অধিকাংশ বছরগুলাের মধ্যে সেই কাজগুলাে কি যার উপরে যুবক-যুবতিদের মন বা চিন্তাধারা অবস্থান করে? ভাষা ওসাহিত্য অধ্যয়নে যুবক-যুবতিদের কোন প্রস্রবণ হতে পান করতে শিক্ষা দেয়া হয়? পৌত্তলিকতার কূপ হতে; প্রাচীন কালের পৌত্তলিকতার ভ্রষ্টতায় পরিপূর্ণ প্রস্রবণ হতে। তাদের এমন লেখকদের বই পড়তে আদেশ করা হয়, যাদের সম্পর্কে বিনা যুক্তিতে, বলা হয়েছে যে, নৈতিকতা সম্বলিত নীতির প্রতি তাদের কোন শ্রদ্ধা নেই। EdBen 209.3
আর কত অধিকসংখ্যক আধুনিক লেখকদের সম্পর্কেই না একই কথা বলা যেতে পারে! তাদের লেখনীর মধ্যে ভাষার মাধুর্য এবং সৌন্দর্যের অভাব রয়েছে, যা পাঠকদের মধ্যে বিরক্তি সৃষ্টি করে! EdBen 210.1
এ সব ব্যতিরেকে অনেক উপন্যাস লেখকও রয়েছে যারা পাঠকদের আরামের রাজপ্রাসাদের মনােরম এবং আনন্দদায়ক স্বপ্নের প্রলােভন দেখায়। এই লেখকেরা সরাসরি অনৈতিকতার অভিযােগে অভিযুক্ত হন না, তথাপি তাদের কাজ বাস্তবিকই মন্দতায় পরিপূর্ণ। তা হাজার হাজার লােকের সময় এবং শক্তি এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ কেড়ে নিয়েছে, যা জীবনের কঠিন সমস্যার প্রশ্ন তােলে। EdBen 210.2
বিজ্ঞান বিষয়ক অধ্যয়নে সমভাবে বিপদ রয়েছে। শিশুকানন। থেকে স্কুল কলেজ পর্যন্ত প্রত্যেক ক্লাশেই বিবর্তনবাদ সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া হয়। এভাবে বিজ্ঞান ঈশ্বর সম্পর্কিত জ্ঞান শিক্ষা দেয়ার পরিবর্তে মানবদৃষ্টি ভঙ্গি এবং মতবাদ শিক্ষা দেয়া হয়, যা ধর্মীয় অবিশ্বাস বা নাস্তিকদের দিকে পরিচালিত করে। EdBen 210.3
এমন কি বাইবেল শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রেও জগৎকে ঈশ্বরের বাক্যে নিহীত অমূল্য ঐশ্বর্য হতে বঞ্চিত করা হয়। অধ্যয়নের ক্ষেত্রে চিন্তাধারাকে বিচ্ছিন্ন করা, অনুমান করা, এবং পুনর্গঠন করায় “উচ্চপর্যায়ের সমালােচনা” কাজে একটি ঐশ্বরিক প্রকাশ প্রাপ্তির প্রতি বিশ্বাসকে ধ্বংস করে দিচেছ; এটি মানব জীবনকে নিয়ন্ত্রণ, উন্নত, অনুপ্রেরণা দানে ঈশ্বরের ক্ষমতাশীল বাক্যকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। EdBen 210.4
যুবক-যুবতিরা যখন পাপের প্রতি প্রলােভনের বিরােধীতা করতে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়- তখন অর্থের প্রতি আসক্তি, আমােদ-প্রমােদ, আরাম-আয়েশ, রঙ্গরস, বিলাসীতা, অপব্যয় সাধ্যাতিরিক্ত আয়াস, ছলনা, ডাকাতি, এবং পরিশেষে ধ্বংসের সম্মুখীন হয়; তা হলে তারা এ সবের মধ্যে কি শিক্ষা লাভ করবে? EdBen 210.5
আত্মিকবাদ জাহির করে যে মানবজাতি অপতিত উপদেবতা; “প্রতিটি মন নিজের বিচার নিজে করিবে;” যে, “কৃত সমস্ত পাপ, পাপ নহে;” “সমস্ত কিছু ন্যায় সঙ্গত” এবং “ঈশ্বর দোষী সাব্যস্ত করেন না” ইত্যাদি। নীচ মানবজাতির স্থানও স্বর্গে, এবং সেখানে তারা উচ্চতর সম্মান লাভের যােগ্য। এভাবে এটি সমুদয় মানবগােষ্ঠীর কাছে ঘােষণা করে যে, “তুমি যা কিছু কর, তাতে কিছুই যায়-আসে না; তােমার যেমন ইচ্ছা তেমনি ভাবে জীবন যাপন কর, স্বর্গ তােমার বাড়ি।” অগণিত লােক এটি বিশ্বাস করতে প্রলুব্ধ হয় যে, বাসনাই সর্বোচ্চ আইন বা ব্যবস্থা, তা-ই স্বাধীন ব্যবস্থা, এবং মানুষ কেবল তার নিজেরই কাছে জবাবদিহি করে। EdBen 210.6
জীবনের আরম্ভেই যদি এমন শিক্ষা দেয়া হয়, তবে যখন আবেগ অনুভূতি দৃঢ় হবে, এবং যখন আত্ম নিয়ন্ত্রণ এবং পবিত্রতা বােধ অত্যন্ত জরুরী ভাবে অনুভূত হবে, তখন নৈতিক উৎকর্ষের নিরাপত্তা কোথায়? বিশ্ব। একটি দ্বিতীয় সদোমে পরিণত হওয়া কিভাবে ঠেকানাে যাবে? EdBen 211.1
একই সময়ে অরাজকতা সব আইন-কানুন ভাসিয়ে নেবার চেষ্টা করছে, কেবল ঐশ্বরিক নিয়মকানুন নয়, মানব প্রণীত আইন কানুনও পর্যন্ত ভাসিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। সম্পদ এবং ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করণ; বহু অর্থ কড়ি ব্যয় করে স্বল্প পরিমাণ লাভ; দরিদ্রতম শ্রেণীর লােকেরা সম্মিলিত ভাবে তাদের দাবি দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা; অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলার মনােভাব; দাঙ্গা-হাঙ্গামা এবং রক্তপাত; বিশ্বব্যাপী একই শিক্ষা প্রচার করে যা ফরাশী আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। সবাই বিশ্বকে একটি সংগ্রামে জড়িত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যা একইভাবে ফ্রান্সকে আলােড়িত করেছিল। EdBen 211.2
বর্তমান সময়ের যুবক-যুবতিগণ এক ধরণের প্রভাবের মুখােমুখি হবে। এ ধরণের গােলযােগের মােকাবেলা করতে হলে তাদের এ মুহূর্তেই চরিত্রের ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করতে হবে। EdBen 211.3
প্রতিটি যুগে ও প্রতিটি দেশে চরিত্র গঠনে প্রকৃত ভিত্তি এবং আদর্শ একই রয়ে গেছে। ঐশ্বরিক ব্যবস্থা, “তােমার সমস্ত মন দিয়া তােমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে, এবং তােমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে” (লূক ১০:২৭), এই মহান নীতি আমাদের ত্রাণকর্তার চরিত্রে এবং জীবনে প্রকাশিত হয়েছে যা একমাত্র নিরাপদ ভিত্তি এবং নিশ্চিত পরিচালক। EdBen 211.4
“আর তােমার সময়ে সুস্থিরতা হইবে, ত্রাণের, প্রজ্ঞার ও জ্ঞানের বাহুল্য হইবে; সদাপ্রভুর ভয় তাহার ধনকোষ।” যিশাইয় ৩৩:৬। - আর সেই জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা যা কেবল ঈশ্বর দিতে পারেন। EdBen 211.5
আর আজ্ঞাবহ হবার জন্য ইস্রায়েল সন্তানদের প্রতি কথিত বাক্য . যেমন সত্য ছিল, তা এখনাে একইভাবে সত্য: “কেননা জাতি সকলের সমক্ষে তাহাই তােমাদের জ্ঞান ও বুদ্ধি স্বরূপ হইবে।” দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৬ । EdBen 211.6
এ স্থানেই ব্যক্তিগত ন্যায় পরায়ণতা, পরিবারের পবিত্রতা, সমাজের কল্যাণ, এবং জাতির দৃঢ়তার চাবিকাঠি রয়েছে। জীবনের সব সঙ্কট, বিপদের এবং সংগ্রামের মধ্যে এক জন ব্যক্তিকে ঈশ্বরের নিশ্চিত। এবং অখণ্ডনীয় বাণী দাবী করবে, “সদাপ্রভুর বিধি সকল যথার্থ” এবং “এই সকল কর্ম যে করে, সে কখনও বিচলিত হইবে না।” গীতসংহিতা ১৯:br; ১৫:৫। EdBen 212.1