Go to full page →

৭ - মহা মানবগণের জীবনী EdBen 46

“ধার্মিকের ফল জীবনবৃক্ষ।” হিতােপদেশ ১১:৩০ পদ

পবিত্র ইতিহাস প্রকৃত শিক্ষার পরিণতির অনেকগুলাে দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে। এটি অনেক লােকের মহান আদর্শ তুলে ধরে যাদের চরিত্র ঐশ্বরিক পরিচালনায় গঠিত ছিল, যাদের জীবন অন্যের জীবনের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ ছিল এবং যারা জগতের কাছে ঈশ্বরের প্রতিনীধিরূপে ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন যােষেফ, দানিয়েল, মােশি, ইলীশায়, এবং পৌল— তারা সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রপরিচালক, জ্ঞানীশ্রেষ্ঠ আইন প্রণেতা, সংস্কারকদের মধ্যে অতীব বিশ্বস্ত ব্যক্তি; ব্যতিক্রম, তাঁর মত কখনাে কোন ব্যক্তি কথা বলেন নি, অতিশয় সুবিখ্যাত, পৃথিবীর অদ্বিতীয় শিক্ষক তিনি। EdBen 46.1

তাদের ছােটবেলা থেকে যােষেফ এবং দানিয়েল গৃহ-ছাড়া হয়ে পৌত্তলিক দেশে বন্দী হয়েছিলেন। বিশেষ করে যােষেফ, যার পরীক্ষাবশত, ভাগ্যের মহা পরিবর্তন ঘটেছিল। তার পিতার বাড়িতে একজন কোমলমতি বালক; ফরৌণের বাড়িতে একজন ক্রীতদাস, তারপর অন্তরঙ্গ বন্ধু ও সঙ্গী, এক জন ধার্মিক, অধ্যয়নের মাধ্যমে শিক্ষিত, পর্যবেক্ষণকারী ও মানুষের সংস্পর্শ লাভ করেছিলেন; ফরৌণের কারাগারে একজন রাষ্ট্রীয় বন্দী, অন্যায়ভাবে দোষী সাব্যস্ত, তিনি ন্যায়বান প্রতিপন্ন হবেন এবং মুক্তিলাভ করবেন, তার কোন আশা নেই; তারপরও মহা সংকটের মুহূর্তে দেশে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য আহ্ত- তিনি কিভাবে তার ন্যায়পরায়ণতা, মাধুর্য এবং সততা রক্ষা করতে পেরেছিলেন? EdBen 46.2

বিপদ এবং দায়সংকট ছাড়া কেউই সাফল্যের চুড়ায় উঠতে পারে না। মহা ঝড় ও তুফান যেমন পাহাড়ের উপরে গাছ উপড়ে ফেললেও উপতক্যার মাঝের ফুলগুলাে অক্ষত অবস্থায় রেখে যায়, যারা পৃথিবীর উচ্চ স্থানে কৃতকার্যতা এবং সম্মানিত স্থানে রয়েছেন, সেই নম্র ব্যক্তিদেরও প্রলােভন তেমনি অক্ষত অবস্থায় রেখে যায়। কিন্তু যােষেফ সমানে দুর্দশা এবং উন্নতি লাভের পরীক্ষা সহ্য করেছেন। যেমন কারাগারে তেমনি ফরৌণের রাজবাড়িতেও সততা এবং সাধুতার প্রমাণ দিয়েছেন। EdBen 46.3

শৈশবে যােষেফকে প্রেম ও ঈশ্বর ভয় শিক্ষা দেয়া হয়েছিল। প্রায়ই তার পিতার তাবুর মধ্যে, সিরিয়ার প্রান্তরে আকাশের অসংখ্য তারার নীচে বসে তার কাছে বৈথেলের রাতের বেলার দর্শন, স্বর্গ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত বিস্তৃত সিড়ি, দূতগণের ওঠা-নামা এবং যিনি স্বর্গে তাঁর সিংহাসন হতে যাকোবের কাছে তাঁকে প্রকাশ করেছিলেন। সেই ঈশ্বর, ইত্যাদি কাহিনী তার কাছে বলা হত। যব্বেক নদীর তীরে সংঘটিত ঘটনাটি তার কাছে বলা হয়েছিল, যাকোব তার অন্তরের পােষা পাপ পরিত্যাগ করলেন, যাকোব বিজয়ী হলেন, ঈশ্বরের রাজপুত্র উপাধি লাভ করলেন- এ সব কাহিনী তার কাছে বলা হয়েছিল EdBen 47.1

একজন মেষপালক, পিতার মেষপাল দেখাশুনা করতেন, সেই যােষেফের নির্মল এবং অনাড়ম্বর জীবন শারীরিক এবং মানসিক শক্তি বিকাশ সাধন করেছে। বাবা যেমন ছেলের কাছে পবিত্র সম্পদ গচ্ছিত রাখেন, তেমনিভাবে প্রকৃতি এবং অধ্যয়নের মাধ্যমে পিতার সঙ্গে আলাপনের মাধ্যমে তার কাছে মহা সত্যমালা প্রকাশিত হত, এভাবে ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমনের মাধ্যমে তিনি মনের শক্তি এবং নীতির দৃঢ়তা লাভ করতেন। EdBen 47.2

তার জীবনের সংকটময় মুহূর্তে, যখন তার শৈশবের বাসভূমি কনান হতে অপেক্ষমান মিশরের দাসত্ব মুখে যাবার সময়ে, শেষবারের মত পাহাড়ের গায়ে তার স্বগােত্রের তাঁবুগুলাের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে দেখলেন; এই সময়ে যােষেফের তার পিতা ঈশ্বরের কথা মনে পড়ল। তার ছােট বেলার শিক্ষার কথা মনে পড়ল এবং তার প্রাণ আনন্দে নেচে উঠল যে, তিনি সত্যে স্থির থাকতে আবদ্ধ—তিনি চিরকাল স্বর্গের রাজার প্রজা হিসেবে বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করবেন। EdBen 47.3

একজন প্রবাসী এবং একজন ক্রীতদাসের তিক্ততার জীবনে পৌত্তলিকদের পূজা, উৎসবের দৃশ্য এবং নীতিবর্জিত ক্রিয়াকলাপের স্বর, সমৃদ্ধি এবং কৃষ্টির সর্ব আকর্ষণ এবং রাজকীয় বাহ্যিক আড়ম্বর— এ সবের মধ্যে যােষেফ ছিলেন অবিচল। তিনি কর্তব্যের প্রতি আজ্ঞাবহতা শিক্ষা করেছিলেন। সব চেয়ে নিচু স্থান থেকে কাজ আরম্ভ করে সর্বোচ্চ পদে, সর্বোচ্চ সেবা কাজের জন্য প্রতিটি শক্তিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। EdBen 47.4

তাকে যখন ফরৌণের রাজ দরবারে ডাকা হল, তখন মিশর ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি। সভ্যতা, শিল্পকাজ, এবং শিক্ষায় তার সমতুল্য কেউ ছিল না । চরম সংকট এবং বিপদের সময়ে যােষেফ রাজকার্য পরিচালনা করেছেন এবং তিনি তা এমনভাবে পরিচালনা করেছেন যে, তা রাজা এবং অন্যান্য লােকের মনে বিশ্বাস যুগিয়েছে। ফরৌণ “তাহাকে আপন বাটীর প্রভু করিলেন, আপনার সমস্ত সম্পত্তির কর্তা করিলেন, যেন তিনি তাঁহার অমাত্যগণকে ইচ্ছানুসারে বন্ধন করেন, ও তাহার প্রাচীনবর্গকে জ্ঞান শিক্ষা প্রদান করেন।” গীতসংহিতা ১০৫:২১, ২২। EdBen 48.1

যােষেফের জীবনের গূঢ় রহস্য আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে । ঐশ্বরিক শক্তি এবং মাধুর্যের বাণীর মধ্যে যাকোব, তার সন্তানগণের উপরে উচ্চারিত আশীর্বাণীর সঙ্গে এই কথা বলেছেন : EdBen 48.2

“যোষেফ ফলবান্ তরু-পল্লব,
জল প্রবাহের পার্শ্বস্থিত ফলবান তরু-পল্লব;
তাহার শাখা সকল প্রাচীর অতিক্রম করে।
ধনুর্ধরেরা তাহাকে কঠোর ক্লেশ দিয়াছিল,
বাণাঘাতে তাহাকে উৎপীড়ন করিয়াছিল,
কিন্তু তাহার ধনুক দৃঢ় থাকিল,
তাহার হস্তের বাহুযুগল বলবান্ রহিল,
যাকোবের এক বীরের হস্ত দ্বারা,
যিনি ইস্রায়েলের পালক ও শৈল, তাঁহার দ্বারা,
তােমার পিতার সেই ঈশ্বরের দ্বারা-
যিনি তােমাকে সাহায্য করিবেন -
সেই সর্বশক্তিমানের দ্বারা—যিনি তােমাকে আশীর্বাদ করিবেন,
উপরিস্থ আকাশ ইহতে নিঃসৃত আশীর্বাদে,
অবধাবিস্তীর্ণ জলধি হইতে নিঃসৃত আশীর্বাদে,
স্তন ও গর্ভ হইতে নিঃসৃত আশীর্বাদে।
আমার পিতৃপুরুষদের আশীর্বাদ অপেক্ষা
তােমার পিতার আশীর্বাদ উক্তৃষ্ট তাহা চিরন্তন গিরিমালার সীমা পর্যন্ত ব্যাপ্ত;
তাহা বৰ্তিবে যােষেফের মস্তকে,
ভ্রাতৃগণ হইতে পৃথককৃতের মস্তকের তালুতে।” EdBen 48.3

আদিপুস্তক ৪৯:২২-২৬

ঈশ্বরের প্রতি বিশস্ত হওয়া, অদৃশ্য ব্যক্তির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন, ইহাই ছিল যােষেফের বলিষ্ঠতা। এতেই তার শক্তি নিহিত। EdBen 49.1

“তাহার হস্ত বলবান করা হইল
যাকোবের সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের হত দ্বারা।” EdBen 49.2