ইলীশায়ের জীবনের প্রথম বছরগুলাে তিনি গ্রামাঞ্চলের নীরবতায় কাটিয়েছেন এবং সেখানে তিনি ঈশ্বর, প্রকৃতি, এবং ব্যবহারিক কাজের শৃঙ্খলার মাধ্যমে শিক্ষা অর্জন করেছেন। ধর্মদ্রোহিতার সময়ে যারা বালদেবের কাছে তাদের মাথা অবনত করে নি তাদের মধ্যে ছিল তার পরিজনবর্গ। তাদের গৃহে ঈশ্বর সমাদর লাভ করেছিলেন এবং এই গৃহেই প্রাত্যহিক জীবনের আইন ছিল তাদের কর্তব্যের প্রতি বিশ্বস্ততা দেখানাে। EdBen 52.7
একজন ধনী কৃষকের সন্তান, ইলীশায় তার হাতের পাশের কাজটি ফেলে রাখতেন না। তিনি যে একজন নেতা হবেন এই দক্ষতা তার মধ্যে ছিল, অতএব তিনি তার জীবনের সাধারণ কাজের মধ্য দিয়ে প্রশিক্ষণ লাভ করতে থাকলেন। তিনি যাতে বুদ্ধিদীপ্তভাবে লােকদের পরিচালনা করতে পারেন সে জন্য তাকে বাধ্যতা শিক্ষা করতে হবে। অল্প বিষয়ে বিশ্বস্ত হবার মাধ্যমে তিনি বহু বিষয়ের উপর বিশ্বস্ত হতে শিখেছিলেন। EdBen 53.1
ইলীশায় ছিলেন মৃদুশীল ও বিশিষ্ট। তিনি দৈহিক শক্তি এবং দৃঢ়তার অধিকারীও ছিলেন। তিনি ঈশ্বরকে প্রেম করতেন এবং তাঁকে ভয় করতেন। প্রতি দিনের সাধারণ কাজের মধ্যে তিনি উদ্দেশ্য সাধনের শক্তি, চারিত্রিক মহত্ব লাভ করতেন, ঐশ্বরিক অনুগ্রহ ও জ্ঞানে বর্ধিষ্ণু হতেন। বাড়ির কাজে বাবার সঙ্গে সহযােগিতা করতেন, এভাবে তিনি ঈশ্বরের সঙ্গেও সহযােগিতা রক্ষা করার জন্য শিক্ষা লাভ করছিলেন। EdBen 53.2
তিনি যখন তার পিতার চাকরদের সঙ্গে জমি চাষ করছিলেন, তখন তার ডাক এল, তাকে একজন ভাববাদী হতে হবে। ঐশ্বরিক নির্দেশক্রমে এলিয় তার উত্তরাধিকারীর অন্বেষণে বের হলেন এবং তিনি যুবক ইলীশায়ের কাঁধে তার শালখানি রাখলেন। ইলীশায় এর উদ্দেশ্য বুঝতে পারলেন এবং তার আহ্বানে সাড়া দিলেন। তিনি “এলিয়ের পশ্চাদগামী হইলেন ও তাঁহার পরিচর্যা করিতে লাগিলেন।” ১ রাজাবলি ১৯:২১। প্রথমে ইলশিয়াকে বড় রকমের কোন কাজ করতে হত না; তথাপি সাধারণ কাজের মধ্য দিয়েই তিনি শৃঙ্খলার অনুধাবন করতেন। তিনি মিষ্ট কথা দিয়ে তার প্রভু এলিয়কে সুখি রাখতেন। ভাববাদীর ব্যক্তিগত সহচর হিসাবে, তিনি ছােট ছােট বিষয়ে বিশ্বস্ততা প্রমাণ করতেন। এভাবে তার উদ্দেশ্য সাধনের শক্তি লাভের জন্য তিনি ঈশ্বর কর্তৃক নির্ধারিত কাজে তার আত্ম-নিবেদন করতেন। EdBen 53.3
তাকে যখন প্রথম আহ্বান করা হয়েছিল, তখন তার স্থির সংকল্পের পরীক্ষা নেয়া হয়েছিল। তিনি এলিয়ের পশ্চাদগামী হলে ভাববাদী তাকে তার বাড়ি ফিরে যেতে বললেন। তাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে তিনি এই আহ্বানে সাড়া প্রদান করবেন নাকি তা প্রত্যাখ্যান করবেন। কিন্তু ইলীশায় তার সুবর্ণ সুযােগের মূল্য উপলব্ধি করলেন। পার্থিব কোন সুযােগ সুবিধা লাভের জন্য ঈশ্বরের বার্তাবাহক হবার সম্ভাবনাকে প্রত্যাখ্যান করবেন না, অথবা ঈশ্বরের দাসের সাহচর্য লাভের সুযােগকে জলাঞ্জলি দেবেন না। EdBen 53.4
সময় এসেছে, এলিয় লােকান্তরিত হবার জন্য প্রস্তুত, ইলীশায়ও তার উত্তরাধিকারী হবার জন্য প্রস্তুত। পুনরায় তার বিশ্বাস এবং দৃঢ় সংকল্পের পরীক্ষা নেয়া হল। এলিয়ের সেবা কাজে তার সঙ্গে থেকে, অচিরেই যে একটি পরিবর্তন সাধিত হবে, তা তিনি বুঝতে পারলেন, এই জন্য ভাববাদী প্রতিটি স্থানে তাকে বলতেন, তুমি ফিরে যাও। এলিয় ইলীশায়কে বললেন, “বিনয় করি, তুমি এই স্থানে থাক, কেননা সদাপ্রভু আমাকে বৈথেল পর্যন্ত পাঠাইলেন।” কিন্তু ইলীশায় যখন বলদ দিয়ে হাল চাষ করতেন তখন তিনি ব্যর্থ হতে অথবা নিরুৎসাহিত হতে জানেন নি; আর এখন তিনি একটি কাজে হাত দিয়েছেন তার উদ্দেশ্য সাধনে পিছ পা হবেন না। যত বার তার কাছে ফিরে যাবার আহ্বান এসেছে ততবার তিনি এভাবে উত্তর দিয়েছেন, “জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, এবং আপনার জীবিত প্রাণের দিব্য, আমি আপনাকে ছাড়িব না।” ২ রাজাবলি ২:২। EdBen 54.1
“পরে তাহারা দুই জন চলিলেন।...আর যর্দনের ধারে ঐ দুই জন দাঁড়াইলেন। পরে এলিয় আপন শাল ধরিয়া গুটাইয়া লইয়া জলে আঘাত করিলেন, তাহাতে জল এদিকে ওদিকে বিভক্ত হইল, এবং তাহারা দুই জন শুষ্ক ভূমি দিয়া পার হইলেন। পার হইলে পর এলিয় ইলীশায়কে কহিলেন তােমার নিমিত্ত আমি কি করিব? তাহা তােমার নিকট হইতে আমার নীত হইবার পূর্বে যচঞা কর। ইলীশায় কহিলেন, বিনয় করি, আপনার আত্মার দুই অংশ দ্বিগুণ আমাতে বর্তুক। তিনি কহিলেন, কঠিন বর যাচঞা করিলে, যদি তােমার নিকট হইতে নীত হইবার সময়ে আমাকে দেখিতে পাও, তবে। তােমার প্রতি তাহা বর্তিবে; কিন্তু না দেখিলে বর্তিবে না। পরে এইরূপ ঘটিল; তাহারা যাইতে যাইতে কথা কহিতেছেন, ইতােমধ্যে দেখ, অগ্নিময় এক রথ ও অগ্নিময় অশ্বগণ আসিয়া তাহাদিগকে পৃথক করিল, এবং এলিয়। ঘুর্ণবায়ুতে স্বর্গে উঠিয়া গেলেন।” EdBen 54.2
“আর ইলীশায় তাহা দেখিলেন, এবং উচ্চৈঃস্বরে বলিলেন, হে আমার পিতা, হে আমার পিতা, হে ইস্রায়েলের রথ সমূহ ও তাহার অশ্বারােহিগণ। পরে তিনি তাঁহাকে আর দেখিতে পাইলেন না; তখন আপন বস্ত্র ধরিয়া ছিড়িয়া দুইখানা করিলেন। আর তিনি এলিয়ের গাত্র হইতে পতিত শালখানি তুলিয়া লইলেন এবং ফিরিয়া গিয়া যর্দনের ধারে দাঁড়াইলেন। পরে তিনি এলিয়ের গাত্র হইতে পতিত সেই শালখানি লইয়া জলে আঘাত করিয়া কহিলেন, এলিয়ের ঈশ্বর সদাপ্রভু কোথায়? আর তিনিও জলে আঘাত করিলে জল এদিকে ওদিকে বিভক্ত হইল, এবং ইলীশায় পার হইয়া গেলেন। তখন যিরীহাের শিষ্য-ভাববাদিগণ সম্মুখে [থাকায়] তাহা দেখিয়া কহিল, এলিয়ের আত্মা ইলীশায়ে অধিষ্ঠিত হইয়াছে। পরে তাহারা তাহার সঙ্গে দেখা করিয়া তাঁহার সম্মুখে ভূমিতে প্রণিপাত করিল।” ২ রাজাবলি ২:৬-১৫। EdBen 54.3
আর এতে ইলীশায় এলিয়ের স্থলাভিষিক্ত হলেন। আর যিনি ক্ষুদ্র বিষয়ে বিশ্বস্ত ছিলেন, তিনি অনেক বিষয়ের উপরে আপনাকে বিশ্বস্ত প্রমাণ করলেন। EdBen 55.1
ক্ষমতাশালী মানব এলিয়, দানবীয় মন্দশক্তিকে হটিয়ে দেবার জন্য ঈশ্বরের পক্ষে ছিলেন একটি যন্ত্র স্বরূপ। আহাব ও ঈষেবল পৌত্তলিকতার ইন্ধন জুগিয়েছে, যা জাতিকে বিপথগামী করেছে, এলিয় তা দূর করলেন, বালদেবের ভাববাদীদের হত্যা করলেন। সমগ্র ইস্রায়েলের মধ্যে আলােড়ন সৃষ্টি হল এবং বহু সংখ্যক লােক ঈশ্বরের আরাধনায় ফিরে এল। এলিয়ের উত্তরাধিকারী হিসেবে এমন এক ব্যক্তির আবশ্যক হয়েছিল যিনি ইস্রায়েলকে বিপদমুক্ত পথে পরিচালিত করতে পারবেন। এই কাজের জন্য ইলীশায়ের ছােটবেলায় ঈশ্বরের পরিচালনার প্রশিক্ষণ তাকে প্রস্তুত করেছে। EdBen 55.2
সবার জন্য শিক্ষা রয়েছে। ঈশ্বরের কঠোর শিক্ষা ব্যবস্থার পেছনে কি রয়েছে তা কেউই হয়তাে জানত পারবে না, তথাপি সবাই তা নিশ্চিত হতে পারে যে, ক্ষুদ্র বিষয়ে বিশ্বস্ততা মহত্ত্বর বিষয়ে দায়িত্বশীল হওনের উপযুক্ততার প্রমাণ। জীবনের প্রতিটি কাজ চরিত্রের প্রকাশ এবং যে ব্যক্তি ক্ষুদ্র বিষয়ে নিজেকে প্রমাণ সিদ্ধ করে “সে এমন কার্যকারীর তুল্য, যাহার লজ্জা করিবার প্রয়ােজন নাই” (২ তীমথিয় ২:১৫) আর ঈশ্বর তার উপরে দায়িত্ব ন্যাস্ত করবেন এবং তাকে সম্মানিত করবেন। EdBen 55.3