জাগতিক সম্মানের শিখরে উন্নীত, এবং অনুপ্রেরণা দ্বারা “একজন রাজাদের রাজা” রূপে স্বীকৃত (যিহিষ্কেল ২৬:৭), তসত্ত্বেও, নবূখনিসরের সময়ে তার রাজ্যের গৌরব এবং সমৃদ্ধি লাভের ব্যাপারে যিহোবার অনুগ্রহ প্রত্যাশী ছিলেন। বৃহ প্রতিমা সম্পর্কে তার স্বপ্নের পরেই এরূপ হয়েছিল। দর্শনের এই চিন্তা দ্বারা তার মন গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিল যে, বাবিল সাম্রাজ্য যদিওবা সার্বভৌম রাজ্য তথাপি তার পতন ঘটবে এবং অন্যান্য রাজ্যগুলো দ্বারা শাসিত হবে, যে পর্যন্ত না স্বর্গের ঈশ্বর কর্তৃক স্থাপিত একটি রাজ্য দ্বারা পার্থিব সকল রাজ্যকে পরাভূত করে, যে রাজ্য কখনও বিনষ্ট হবে না। PKBeng 428.1
অবশেষে জাতিগণ সম্পর্কে নবৃখনিসসরের উচ্চ ধারণা তার অভিজ্ঞতার মধ্যে হারিয়ে গেল; তথাপি তার গর্বিত আত্মা দূরা সমস্থলীতে বিশাল জনতার সামনে বিনম্র হলে আরও একবার তিনি উপলব্ধি করলেন যে, ঈশ্বরের রাজ্য “অনন্তকালস্থায়ী রাজ্য ও তাঁহার কর্তৃত্ব পুরুষানুক্রমে স্থায়ী।” জন্মগতভাবে এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পৌত্তলিক এবং পুতুল পূজক লোকদের একজন মস্তকস্বরূপ, তসত্ত্বেও তিনি ন্যায়বিচার এবং ন্যায়ের সহজাত একটি ধারণা তার ছিল, এবং ঈশ্বর তাকে বিদ্রোহীদের শাস্তি প্রদান করতে এবং ঐশ্বরিক উদ্দেশ্য পূর্ণ করার একটি হাতিয়াররূপে ব্যবহার করতে পারতেন। “জাতিগণের মধ্যে... ভীমবিক্রান্ত,” (যিহিষ্কেল ২৮:৭), যা, বহু বছরের ধৈর্য ক্লান্তিকর শ্রমের পরে সোর জয় করতে নবূখনিসরকে দত্ত হয়েছিল; মিসরও তার বিজয়ী সৈন্য বাহিনীর কাছে একটি শিকাররূপে পতিত হয়েছিল; এবং যেমন তিনি বাবিল রাজ্যের কাছে জাতির পরে জাতি যোগ্য করলেন, তিনি যুগের শ্রেষ্ঠতর শাসনকর্তারূপে আরও অধিক খ্যাতি অর্জন করলেন । PKBeng 428.2
এটি অবাক হবার বিষয় নয় যে, কৃতকার্য সম্রাট, এত উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং এত গর্বিত আত্মা নম্রতার পথ হতে দূরে যেতে প্রলোভিত হলেন, যা কেবলমাত্র প্রকৃত মহত্ত্বের প্রতি পরিচালিত করে। তার বিজয়ের সংগ্রামের বিরতির মধ্যে তিনি, তার রাজ্যকে শক্তিশালী এবং মনোরম করার জন্য অনেক চিন্তা করেছেন, যে পর্যন্ত না নগর তার রাজ্যের একটি প্রধান গৌরব, “স্বর্ণময় নগরী” “সমগ্র পৃথিবীর গৌরব” স্বরূপ হল । একজন নির্মাতারূপে তাঁর আবেগ প্রবণতা, এবং বাবিলকে পৃথিবীর একটি আশ্চর্য বিষয় করে তুলবার জন্য তার কৃতকার্যতার সংকেতরূপে তার গর্ব পোষণ করলেন, যে পর্যন্ত না একজন জ্ঞানী শাসকরূপে তার ইতিহাস বিপর্যস্ত হবার বিপদের মধ্যে পতিত হলেন, যাকে ঈশ্বর ঐশ্বরিক উদ্দেশ্য পূর্ণ করার একটি হাতিয়ার করতে পারতেন । PKBeng 429.1
তার বিষম সময় এবং ফাঁদ সম্পর্কে সতর্ক করে দেবার জন্য ঈশ্বর অনুগ্রহ পূর্বক রাজাকে আরও একটি স্বপ্ন দিলেন, যা তার ধ্বংসের জন্য পাতা হয়েছিল। রাত্রিকালিন একটি দর্শনে, নবৃখদনিত্নসর পৃথিবীর মধ্য স্থলে বৃহৎ এক বৃক্ষ দেখলেন, তা উচ্চতায় গগণস্পর্শী হল, এবং সমস্ত পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত দৃশ্যমান হল, তার শাখায় আকাশের পক্ষিগণ বাস করত, এবং তার তলে মাঠের পশুগণ চড়ে বেড়াত। “তাহার সুন্দর সুন্দর পত্র ও বিস্তর ফল ছিল, তাহার মধ্যে সকলের জন্য খাদ্য ছিল; ... এবং সমস্ত প্রাণী তাহা হইতে খাদ্য পাইত।” PKBeng 429.2
রাজা উচ্চ বৃক্ষের ওপর দৃষ্টিপাত করে দেখলেন, “একজন প্রহরী,” এমনি “এক পবিত্র ব্যক্তি, ” যিনি বৃক্ষের কাছে এলেন এবং উচ্চৈঃস্বরে এই কথা বললেন: PKBeng 429.3
“বৃক্ষটি ছেদন কর, ইহার পত্র ঝাড়িয়া ফেল, এবং ইহার ফল ছড়াইয়া দেও; ইহার তল হইতে পশুগণ ও ইহার শাখা হইতে পক্ষিগণ চলিয়া যাউক। কিন্তু ভূমিতে ইহার মূলের কাণ্ডকে লৌহ ও পিতলের শৃঙ্খলে বদ্ধ করিয়া ক্ষেত্রের কোমল তৃণমধ্যে রাখ; আর সে আকাশের শিশিরে ভিজুক, এবং পশুদের সাথে পৃথিবীর তৃণে তাহার অংশ হউক; তাহার হৃদয় মানুষের না থাকিয়া পরিবর্তিত হউক, ও তাহাকে পশুর হৃদয় দত্ত হউক; এবং তাহার উপরে সাত কাল ঘুরুক। এই বার্তা প্রহরীগণের আদেশে ও এই বিষয়টি পবিত্রগণের কথায় দত্ত হইল; অভিপ্রায় এই যেন জীবিত লোকেরা জানিতে পারে যে, মনুষ্যদের রাজ্যে পরাপর কর্তৃত্ব করেন, যাহাকে তাহা দিতে ইচ্ছা করেন তাহাকে তাহা দেন, ও মনুষ্যদের মধ্যে অতি নীচ ব্যক্তিকে তাহার উপরে নিযুক্ত করেন। PKBeng 429.4
স্বপ্ন দ্বারা মহা উদ্বিগ্ন, যে ঘটনা ছিল একটি অশনী সংকেত অথবা অমঙ্গলের ভবিষ্যদ্বাণী, রাজা “মন্ত্রবেত্তা, গণক, কলদীয় জ্যোতিষীদের পুনরোক্তি করিলেন;” কিন্তু যদিওবা স্বপ্নটি ছিল স্পষ্ট, জ্ঞানী লোকদের কেউই এর তাপর্য বলতে পারল না। PKBeng 430.1
আরও একবারের মত এই পৌত্তলিক জাতির মধ্যে এই সত্য বহন করতে হবে যে, কেবলমাত্র যারা ঈশ্বরকে প্রেম করে এবং ভয় করে, তারাই স্বর্গরাজ্যের নিগূঢ় রহস্য বুঝতে পারে। রাজা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তার দাস দানিয়েলকে ডেকে পাঠালেন যিনি তার ন্যায়পরায়ণতা এবং স্থিরতা, দৃঢ়তা এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বীহীন জ্ঞানের জন্য সশ্ৰদ্ধ। PKBeng 430.2
যখন দানিয়েল, রাজার আহ্বানে, রাজার সামনে দণ্ডায়মান হলেন, নবূখনিসর বললেন, “এখন হে বেল্টশসর, তুমি তাপর্য বল, কেননা আমার রাজ্যস্থ কোন বিদ্বান আমাকে তাপর্য বলিতে পারে নাই কিন্তু তুমি বলিতে পার; তোমার অন্তরে পবিত্র দেবগণের আত্মা আছেন।” PKBeng 430.3
দানিয়েলের কাছে স্বপ্নটির তাপর্য জ্ঞাত করা হল, এবং এর বৈশিষ্ট্য তাকে বিহ্বল করল। তিনি “কিয়কাল স্তম্ভিত হইয়া রহিলেন, ভাবনাতে বিহ্বল হইলেন। দানিয়েলের ইতস্ততঃ ভাব এবং দারুণ মনোবেদনা লক্ষ্য করিয়া, রাজা তাহার দাসের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করিলেন।” “হে বেল্টশসর.” তিনি বললেন, “সেই স্বপ্ন ও তাহার তাপর্য তোমাকে বিহ্বল না করুক।” PKBeng 430.4
“হে আমার প্রভু,” দানিয়েল উত্তর করলেন, “এই স্বপ্ন আপনার শত্রুদের প্রতি ঘটুক ও ইহার তাৎপর্য আপনার বিপক্ষ লোকদের প্রতি . ঘটুক।” ভাববাদী উপলব্ধিকরতে পেরেছিলেন যে, ঈশ্বর তার ওপরে এক পবিত্র দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, গর্বিত এবং ঔদ্ধত্য রাজার প্রতি বিচার পতিত হবার উপক্রম তা প্রকাশ করতে দানিয়েলকে এমন ভাষায় অর্থ বলতে হবে যাতে রাজা বুঝতে পারেন; এবং যদিও তিনি এর ভয়ানক গুরুত্বের কারণে বোবা বিস্ময়ের মধ্যে ইতস্ততঃ করছিলেন, তথাপি তাকে সত্য বলতে হবে, তার প্রতি যাই ঘটুক না কেন । PKBeng 430.5
অতএব দানিয়েল তখন সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের আদেশ জ্ঞাত করেছেন। তিনি বললেন, “আপনি যে বৃক্ষটি দেখিয়াছেন, যাহা বৃদ্ধি পাইয়া বলবান হইয়া উঠিল, যাহার উচ্চতা আকাশ পর্যন্ত পৌঁছিল ও যাহা সমস্ত পৃথিবীতে দৃশ্যমান হইল, যাহার পত্র সুন্দর ও ফল বিস্তর ছিল, যাহাতে সকলের জন্য খাদ্য ছিল, যাহার তলে মাঠের পশুগণ বাস করিত, এবং যাহার শাখাতে আকাশের পক্ষিগণ বসতি করিত; হে রাজন, সেই বৃক্ষ আপনি; আপনি বৃদ্ধি পাইয়াছেন, বলবান হইয়া উঠিয়াছেন, আপনার মহিমা বৃদ্ধি পাইয়াছে, আকাশ পর্যন্ত পৌঁছিয়াছে, এবং আপনার কর্তৃত্ব পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত ব্যাপিয়াছে।” PKBeng 431.1
“আর মহারাজ দেখিয়াছেন, একজন প্রহরী এক পবিত্র ব্যক্তি, স্বৰ্গ হইতে নামিয়া আসিয়াছেন, আর বলিয়াছেন, বৃক্ষটি ছেদন কর ও বিনষ্ট কর, কিন্তু ভূমিতে এর মূলের কাণ্ডকে লৌহ ও পিত্তলের শৃঙ্খলে বদ্ধ করিয়া ক্ষেত্রের কোমল তৃণ মধ্যে রাখ; সে আকাশের শিশিরে ভিজুক, মাঠের পশুদের সাথে তাহার অংশ হউক, যে পর্যন্ত না তাহার উপরে সাত কাল ঘুরে । হে রাজন, ইহার তাৎপর্য পরাৎপরেরই নিরূপণ। আপনি মানব সন্তান হইতে দূরীকৃত হইবেন, মাঠের পশুদের সহিত আপনার বসতি হইবে, বলদের ন্যায় আপনাকে তণ ভোজন করিতে দেওয়া যাইবে, আপনি আকাশের শিশিরে ভিজিবেন, এবং আপনার উপরে সাত কাল ঘুরিবে; যে পর্যন্ত না আপনি জানিবেন যে, মনুষ্যদের রাজ্যে পরাৎপর কর্তৃত্ব করেন, ও যাহাকে তাহা দিতে ইচ্ছা করেন, তাহাকে তাহা দেন। আর বৃক্ষমূলের কাণ্ড রাখিবার আজ্ঞা দেওয়া হইয়াছিল; সুতরাং আপনি যখন জানিতে পাইবেন যে, স্বৰ্গই কৰ্তৃত্ব করে, তখন আপনার হস্তে আপনার রাজত্ব স্থির হইবে।” PKBeng 431.2
দানিয়েল বিশ্বস্তভাবে স্বপ্নের অর্থ প্রকাশ করার পরে, তিনি গর্বিত রাজাকে মনপরির্তন করতে এবং ঈশ্বরের প্রতি ফিরতে অনুরোধ করলেন যেন ন্যায্য ও সিদ্ধ কাজের দ্বারা ভয়ঙ্কর বিপদ এড়াতে পারেন। অতএব “হে রাজন,” ভাববাদী অনুরোধ জানালেন, “আপনি আমার পরামর্শ গ্রাহ্য করুন; আপনি ধাৰ্ম্মিকতা দ্বারা আপন পাপ সকল ও দুঃখীদের প্রতি কৃপা প্রদর্শন দ্বারা আপনার সকল পাপ মুছিয়া ফেলুন; হয়ত আপনার শান্তিকাল। বৃদ্ধি পাইবে ।” PKBeng 432.1
কোন এক সময়ে ভাববাদীর সতর্কীকরণের ধারণা নবূখনিসরের ওপরে শক্ত প্রভাব বিস্তার করেছিল; কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহের দ্বারা তার হৃদয় পরিবর্তিত অথবা রূপান্তরিত না হওয়ায় অতি শীঘ্র পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণা হতে বঞ্চিত হলেন। রাজার হৃদয় হতে স্বার্থ চরিতার্থ এবং উচ্চাভিলাসিতা সম্পূর্ণরূপে তার হৃদয় হতে মুছে গিয়েছিল এবং পরবর্তীতে এই গুণ সমূহ পুনরুদ্দীপিত হল। অথচ সদয়তার সাথে তাকে পরামর্শ দিয়েছেন, এবং তার বিগত অভিজ্ঞতার জন্য সতর্কও করেছেন, এবং নবূখনিসর পুনরায় একটী ঈর্ষার আত্মা দ্বারা নিজেকে বশীভূত হতে দিলেন সেই রাজ্যের বিরুদ্ধে, যে রাজ্যকে অনুসরণ করার কথা ছিল। ইতোপূর্বে যতদূর সম্ভব তার নিয়ম-কানুন ছিল ন্যায্য এবং দয়া-সম্পন্ন, যা নিষ্ঠুরতায় রূপ নিয়েছে। তার হৃদয় কঠিন করে, নিজ-গৌরবার্থে ঈশ্বর দত্ত তালন্ত সমূহ ব্যবহার করেছেন, যিনি তার জীবন এবং ক্ষমতা দিয়েছেন। সেই ঈশ্বরের ঊর্ধ্বে নিজেকে স্থাপন করেছেন । PKBeng 432.2
মাসের পর মাস ঈশ্বর বিচার দণ্ড বিলম্বিত করেছেন। কিন্তু ঈশ্বরের এই ধৈর্যের দ্বারা পরিবর্তিত না হয়ে বরং রাজা অহংকার ও গর্বকে প্রশয় দিয়েছেন যে পর্যন্ত তিনি সেই স্বপ্নের তাপর্যের প্রতি বিশ্বাস করে পূর্বের পরিহাস ও ভয়ভীতিতে পূর্ণ হলেন । PKBeng 432.3
সতর্কবাণী ঘোষণার সময় হতে এক বছর পরে, তিনি বাবিলের রাজপ্রাসাদের ওপরে বেড়াচ্ছিলেন, এবং তিনি একজন শাসনকর্তা হিসেবে তার ক্ষমতার গর্ব করে এবং কৃতকার্য নির্মাতা হিসেবে গর্ব করে উচ্চঃস্বরে বললেন, “এ কি সেই মহতী বাবিল নয়, যাহা আমি আপন বলের প্রভাবে ও আপন প্রতাপের মহিমার্থে রাজধানী করিবার জন্য নির্মাণ করিয়াছি?” PKBeng 432.4
গর্ব মিশ্রিত অহংকারের বাক্য তখনও যখন রাজার ঠোঁটে বিরাজ করছিল, ঠিক তখন স্বর্গ থেকে একটা স্বর ঘোষিত হয়েছিল যে, স্বর্গের বিচার সময় উপস্থিত। তার কাণে যিহোবার নির্দ্দেশ বাণী প্রবেশ করেছিল; “হে রাজন নবৃখদনিসর! তোমাকে বলা হইতেছে, তোমার রাজত্ব তোমা হইতে গেল । আর তুমি মানব সমাজ হইতে দূরীকৃত হইবে, মাঠের পশুদের সহিত তোমার বসতি হইবে, বলদের ন্যায় তোমাকে তৃণ ভোজন করান যাইবে ও তোমার উপরে সাত কাল ঘুরিবে; যে পর্যন্ত না তুমি জানিবে যে, মনুষ্যদের রাজ্যে পরাপর কর্তৃত্ব করেন, ও যাহাকে তাহা দিতে ইচ্ছা করেন, তাহাকে তাহা দেন।” PKBeng 433.1
ঈশ্বর তাকে যে বিচার-বুদ্ধি প্রদান করেছিলেন, তা মুহূর্তের মধ্যে তিনি তুলে নিয়েছিলেন; রাজা যে বিচার খাঁটি মনে করেছিলেন, এবং যে বিজ্ঞতার জন্য তিনি গর্ব করেছিলেন, তা দূরীভূত হয়েছিল, এবং এক সময় যিনি প্রধান শাসনকর্তা ছিলেন, তিনি এখন একটী পাগল। তার হয়ে আর কখনও যষ্ঠী দোলাতে সক্ষম ছিল না। সতর্কীকরণের বার্তা সমূহে মনোযোগ দেয়া হল না। অতএব, এখন, সৃষ্টিকর্তা তাকে যে ক্ষমতা দিয়েছিলেন তা হতে বঞ্চিত করে তাকে মানব সমাজ হতে দূরীভূত করলেন। নবূখনিসর, “বলদের ন্যায় তৃণভোজন করিতে লাগিলেন, তাঁহার শরীর আকাশের শিশিরে ভিজিল, ক্রমে তাহার কেশ ঈগল পক্ষীর পালকের ন্যায়, ও তাঁহার নখ পক্ষীর নখের ন্যায় হইয়া উঠিল।” PKBeng 433.2
সাত বছর পর্যন্ত নবূখনিসর তার প্রজাদের কাছে বিষ্ময়ের বিষয় ছিলেন; তিনি সাত বছর পর্যন্ত সমস্ত পৃথিবীর সামনে অবনত হয়েছিলেন। যখন তার বিচার-বুদ্ধি পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল, তখন নম্রভাবে স্বর্গের ঈশ্বরের প্রতি দৃষ্টিপাত করেছিলেন এবং এই সংশোধনের শাসন যে স্বর্গীয় হাতদ্বয়ের, তা উপলব্ধি করেছিলেন। একটি জনসাধারণের ইস্তিহারে তিনি তার দোষ এবং তার পুনরুদ্ধারের জন্য ঈশ্বরের মহা দয়া উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তিনি বললেন, “আর সেই সময়ের শেষে আমি নবূখনিসর স্বর্গের দিকে চক্ষু তুলিলাম, ও আমার বুদ্ধি আমাতে ফিরিয়া আসিল; তাহাতে আমি পরাপরের ধন্যবাদ করিলাম, এবং অনন্তজীবি ঈশ্বরের প্রশংসা ও সমাদর করিলাম; কারণ তাঁহার কর্তৃত্ব অনন্তকালীন কর্তৃত্ব ও তাঁহার রাজ্য পুরুষানুক্রমে স্থায়ী; আর পৃথিবী নিবাসীগণ সকলে অবস্তুব গণ্য; তিনি স্বর্গীয় বাহিনীর এবং পৃথিবীনিবাসীদের মধ্যে আপন ইচ্ছানুসারে কার্য করেন; এবং এমন কেহ নাই যে, তাঁহার হস্ত থামাইয়া দিবে, কিম্বা তাঁহাকে বলিবে, তুমি কি করিতেছ?” PKBeng 433.3
সেই সময়ে আমার বুদ্ধি আমাতে ফিরিয়া আসিল, এবং আমার রাজ্যের গৌরবার্থে আমার প্রতাপ ও তেজ আমাতে ফিরিয়া আসিল; আর আমার মন্ত্রিগণ ও আমার মহল্লোক সকল আমার অন্বেষণ করিল, এবং আমি আপন রাজ্যে পুনঃস্থাপিত হইলাম, ও আমার মহিমা অতিশয় বৃদ্ধি পাইল।” PKBeng 434.1
এক সময়ের অহংকারী ও গর্বিত রাজা, এখন তিনি ঈশ্বরের নম একজন বালকের ন্যায় হলেন; অত্যাচারী, উদ্ধত্য শাসনকর্তার, স্থলে তিনি হলেন একজন জ্ঞানী এবং সহানুভূতিশীল রাজা। যিনি প্রকাশ্যে অস্বীকার ঈশ্বর-নিন্দা করেছিলেন, এখন তিনি সর্বশক্তিমানের ক্ষমতা সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পেরেছেন এবং একাগ্র মনে যিহোবাকে ভয় করার চেষ্টা করেছেন, এবং তাঁর প্রজাদের সুযোগ সুবিধার জন্য চেষ্টা করছেন। রাজাদের রাজা, প্রভুদের প্রভুর ভর্সনার দ্বারা নবৃখদনিসর অবশেষে শিক্ষা করেছিলেন, যা সমস্ত শাসনকর্তাদের শিক্ষা করা উচিত- প্রকৃত মহত্ব প্রকৃত সততার মধ্যে গঠিত। তিনি যিহোবাকে জীবন্ত ঈশ্বর রূপে উপলব্ধি করেছেন, বলেছেন, “এখন আমি নবৃখনিসর সেই স্বর্গরাজ্যের প্রশংসা প্রতিষ্ঠা ও সমাদর করিতেছি : কেননা তাহার সমস্ত ক্রিয়া সত্য, ও তাঁহার পথ সকল ন্যায্য; আর যাহারা স্ব-গর্বে চলে, তিনি তাহাদিগকে খর্ব করিতে পারেন।” PKBeng 434.2
ঈশ্বরের উদ্দেশ্য এই, পৃথিবীর সর্ব বৃহ রাজ্যকেও তাঁর প্রশংসা দেখাতে হবে যা এখানে পূর্ণতা লাভ করল। এই জনসাধারণের ঘোষণার দ্বারা নবূখনিসর ঈশ্বরের দয়া এবং সততা এবং নেতৃত্ব উপলব্ধি করেছেন, এ ছিল তার জীবনের অন্তিম কার্য যা পবিত্র ইতিহাস পুস্তকে লিপিবদ্ধ ছিল। PKBeng 434.3