যখন লোকেরা তাদের পাপের গভীরতা বুঝতে পারল, তখন ভয় হয়েছিল যে হয়ত প্রত্যেক দোষী ব্যক্তি ধ্বংস প্রাপ্ত হবে। মোশি আরেকবার তাদের জন্য ঈশ্বরের কাছে মিনতি জানাতে প্রতিজ্ঞা করলেন। PPBeng 228.4
তিনি বলেন, “তোমরা মহাপাপ করিলে, এখন আমি সদাপ্রভুর নিকটে উঠিয়া যাইতেছি; যদি সম্ভব হয় তোমাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করিব।” ঈশ্বরের কাছে অনুতাপ করার সময় তিনি বললেন। “হায় হায়, এই লোকেরা মহাপাপ করিয়াছে, আপনাদের জন্য স্বর্ণ দেবতা নির্মাণ করিয়াছে । আহা! এখন যদি ইহাদের পাপ ক্ষমা কর আর যদি না কর, তবে আমি বিনয় করিতেছি, তোমার লিখিত পুস্তক হইতে আমার নাম কাটিয়া ফেল।” PPBeng 228.5
মোশির প্রার্থনার সময় আমাদের মন সেই স্বর্গীয় হিসাবের খাতার প্রতি ধাবিত হয় যেখানে সকল লোকের নাম লেখা হয়েছে, আর তাদের ভাল ও মন্দের সকল হিসাব লেখা রয়েছে। জীবনের পুস্তকে তাদের নাম লিখিত আছে যারা ঈশ্বরের দয়ার কাজে লিপ্ত আছেন। এদের মধ্যে কেউই যদি পাপের মধ্যে সর্বদা লিপ্ত থাকেন তবে তারা পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে নিজের হৃদয়কে শক্ত করে ফেলবে, আর বিচার দিনে তাদের নাম জীবন পুস্তক হতে মুছে ফেলা হবে। PPBeng 228.6
সদাপ্রভু যদি ইস্রায়েলদের অস্বীকার করে ফেলেন, তবে মোশি ইচ্ছা করলেন যেন তাদের সাথে তার নামও মুছে ফেলা হয়; যাদের তিনি এত অনুগ্রহ করে মুক্ত করে আনলেন, এখন তাদের উপর তাঁর বিচারের দন্ড তিনি সহ্য করতে পারছিলেন না। ইস্রায়েলদের পক্ষে মোশির মধ্যস্থতা পাপীর জন্য খ্রীষ্টের মধ্যস্থতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কিন্তু খ্রীষ্টকে সদাপ্রভু যা করতে অনুমতি দিয়েছিলেন, তদ্রূপ পাপীর পাপে বোঝার ভার বইতে মোশিকে ঈশ্বর অনুমতি দিলেন না। তিনি বলেছিলেন, “যে ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছে, তাহারই নাম আমি নিজ পুস্তক হইতে কাটিয়া ফেলিব।” PPBeng 229.1
গভীর বেদনার মধ্যে লোকেরা মৃতদের কবর দিল । তিন হাজার লোক খড়গ দ্বারা নিহত হয়েছিল; শীঘ্রই তাঁবুর মধ্যে এক মারাত্মক রোগ দেখা দিল; আর এখন বাণী আসল যে তাদের যাত্রার সময় আর ঈশ্বর উপস্থিত থাকবেন না; “কিন্তু আমি তোমার মধ্যবর্তী হইয়া যাইব না, কেননা তুমি শত্রুগ্রীব জাতি; পাছে পথের মধ্যে তোমাকে সংহার করি।” আর আদেশ দেয়া হল, “তোমরা এখন আপন আপন গাত্র হইতে আভরণ দূর কর, তাহাতে জানিতে পারিব, তোমাদের বিষয়ে আমার কি করা কর্ত্তব্য”। এই অপমানের মধ্যে অনুতাপ করার পর, “ইস্রায়েল-সন্তানগণ হোরের পর্বত হইতে যাত্রা-পথে নিজ নিজ আভরণ দূর করিল।” PPBeng 229.2
যে তাঁবু সাময়িক আরাধনার জন্য ব্যবহৃত হত, ঈশ্বরের আদেশ পাবার পর তা “শিবির হইতে দূরে” স্থাপন করা হল। এটাতে আরো প্রমাণিত হল যে ঈশ্বর তাদের মধ্য হতে অনুপস্থিত রয়েছেন। এই তিরস্কার খুবই গায়ে লাগল, আর বিবেকাহত জনতার নিকট মনে হল যে এ সকলই আরো কোন ভয়ঙ্কর বিপদের পূর্বাভাস মাত্র । PPBeng 229.3
কিন্তু তাদের একেবারে নিরাশ করে ছেড়ে দেয়া হল না। তাঁবুটি শিবিরের বাইরেই স্থাপন করা হল, আর মোশি এর নাম দিলেন “সমাগম তাম্বু।” যারা সত্যিকার ভাবে অনুতাপ করে সদাপ্রভুর নিকট ফিরতে আগ্রহী ছিল তাদের ঐখানে গিয়ে তাদের পাপের জন্য অনুতাপ করে তার অনুগ্রহ ভিক্ষা করতে নির্দেশ দেয়া হল । যখন তারা নিজ নিজ তাঁবুতে ফিরে গেল তখন মোশি সমাগম তাম্বুতে প্রবেশ করলেন। তার মধ্যস্থতা যে গৃহিত হয়েছে তার চিহ্নস্বরূপ লোকেরা কোন প্রতীকের আশা করছিল। আর যখন মেঘের স্তম্ভ নেমে এসে সমাগম তাম্বুর দ্বারে স্থির হল, তখন লোকেরা আনন্দে কেঁদে ফেলল, এবং “সমস্ত লোক উঠিয়া প্রত্যেকে আপন আপন তাম্বুর দ্বারে থাকিয়া প্রণিপাত করিত।” PPBeng 229.4