Go to full page →

শাব্বাথ ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতার সঠিক প্রতীক PPBeng 236

পৌত্তলিকদের দেবতার উপরে, ঈশ্বরের প্রতি সম্মান ও সেবার দাবীর ভিত্তি হল যে তিনিই স্রষ্টা। ভাববাদী যিরমিয় বলেন, “জীবন্ত ঈশ্বর...তিনি নিজ শক্তিতে পৃথিবী গঠন করিয়াছেন, নিজ জ্ঞানে জগ স্থাপন করিয়াছেন, নিজ বুদ্ধিতে আকাশমন্ডল বিস্তার করিয়াছেন।” “প্রত্যেক মনুষ্য পশুব হইয়াছে, সে জ্ঞানহীন; প্রত্যেক স্বর্ণকার আপন প্রতিমা দ্বারা লজ্জিত হয়। কারণ তাহারা ছাঁচে PPBeng 236.4

ঢালা বস্তু, মিথ্যামাত্র, তাহার মধ্যে শ্বাসবায়ু নাই। সে সকল অসার, মায়ার কর্ম মাত্র; তাহাদের প্রতিফল দানকালে তাহারা বিনষ্ট হইবে।” যিরমিয় ১০:১০- ১২, ১৪, ১৫। ঈশ্বরের সৃষ্টিকারী শক্তির স্মারক হিসাবে, শাব্বাথ স্বর্গ ও পৃথিবীর স্রষ্টারূপে ঈশ্বরের প্রতি ইঙ্গিত করে । এটি তার মহত্ব, জ্ঞান, ও প্রেমের চিরন্তন সাক্ষ্য। যদি চিরকাল শাব্বাথ পালন করা হত, তবে কোন নাস্তিক বা পৌত্তলিক থাকত না । PPBeng 237.1

এদন বাগানে আরম্ভ হওয়ার ফলে, ইহা পৃথিবীর বয়সের সমকালীন। সৃষ্টি হতে শুরু করে আজ পর্য্যন্ত সকল কুলপতিগণ ইহা পালন করেছেন। সীনয় পর্বতে যখন ব্যবস্থা দেয়া হয়, তখন চতুর্থ আজ্ঞার প্রথম শব্দগুলি ছিল, “তুমি বিশ্রামদিন (স্মরণ করিয়া) পবিত্ররূপে পালন করিও” আর এতে বুঝা যায় যে, শাব্বাথকে তখন স্থাপন করা হয়নি। সৃষ্টির সময় এর আরম্ভের প্রতি আমাদের নির্দ্দেশ করা হচ্ছে। এই মহান স্মারককে ধ্বংস করে ফেলা ছিল শয়তানের লক্ষ্য । যদি মানুষকে তাদের স্রষ্টাকে ভুলে যাওয়ার পথে পরিচালিত করা যায়, তবে সে আর মন্দের ক্ষমতাকে প্রতিহত করতে পারবে না, আর শয়তান তখন তার শিকার সহজেই ধরতে পারবে। PPBeng 237.2

ঈশ্বরের বিরুদ্ধে তার শত্রুতা শয়তানকে দশ আজ্ঞার প্রতিটি শিক্ষার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত করেছে। মাতা-পিতার কর্তৃত্বের প্রতি ঘৃণা দ্রুত ঈশ্বরের কর্তৃত্বের প্রতি ঘৃণাতে পর্যবসিত হয়, তাই পঞ্চম আজ্ঞার প্রতি বাধ্যতার গুরুত্ব হ্রাস করতে শয়তান চেষ্টা চালায়। বার্দ্ধক্য হেতু মাতা পিতা যখন নিজের তত্ত্বাবধান করতে অপারগ হয় তখন তাদের পরিত্যাগ করা বা হত্যা করার প্রথা অনেক পৌত্তলিক জাতির মধ্যে প্রচলিত ছিল। মাকে অনেক সময় কোন বিশেষ সম্মান দেয়া হত না আর তার স্বামীর মৃত্যুর পর তাকে তার বড় ছেলের কর্তৃত্বাধীন হতে হত। মোশি মাতা পিতার প্রতি বাধ্যতা প্রদর্শনের আদেশ দিয়েছিলেন; কিন্তু যখন ইস্রায়েল জাতি ঈশ্বর হতে দূরে সরে গেল, অন্যান্য আজ্ঞার সহিত পঞ্চম আজ্ঞাও অবহেলিত হতে লাগল । শয়তান ছিল “আদি হইতেই নরঘাতক” (যোহন ৮:৪৪); আর যখন সে মানব জাতির উপর কর্তৃত্ব লাভ করল, তখন সে তাদের শুধু একে অপরকে ঘৃণা ও হত্যা করায় অনুপ্রাণিত করল, কিন্তু ষষ্ঠ আজ্ঞা অমান্য করা তাদের ধর্মের অঙ্গতে পরিণত করতে উসাহিত করল । PPBeng 237.3

পৌত্তলিক জাতি সমূহ বিশ্বাস করতে আরম্ভ করল যে তাদের দেবতাদের অনুগ্রহ লাভের জন্য তাদের নরবলির প্রয়োজন রয়েছে; আর বিভিন্ন পৌত্তলিক বিশ্বাসের জন্য অত্যন্ত ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতা প্রচলন করা হয়েছিল। এর মধ্যের একটি প্রথা ছিল সন্তানদের আগুনের মধ্যে দিয়ে পার করান। যখন কোন শিশু অক্ষত বেরিয়ে আসত তখন লোকেরা মনে করত যে তাদের দানগুলি গৃহীত হয়েছে। যে অক্ষত বেরিয়ে আসত তার উপর দেবতাদের শুভ দৃষ্টি রয়েছে বলে মনে করা হত, তাকে অনেক কিছু দান করা হত আর পরবর্তীতে তাকে উচ্চ মর্য্যাদা দান করা হত। সে যত অন্যায়ই করুক না কেন তাকে শাস্তি দেয়া হত না। কিন্তু আগুনের মধ্যে দিয়া পার হবার সময় যদি কেউ পুড়ে যেত, তবে তার ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যেত; দেবতাদের ক্রোধ প্রশমিত করার জন্য তখন সেই হতভাগ্য শিশুর জীবন হরণ করা প্রয়োজন হত। মহা-ধর্মদ্রোহীতার সময় ইস্রায়েল জাতির মধ্যেও এই ঘৃণ্য প্রথা অনেকাংশে প্রচলিত ছিল । PPBeng 238.1

ধর্মের নামে সপ্তম আজ্ঞাও লঙ্ঘন করার রীতি প্রচলিত ছিল। লাম্পট্যপূর্ণ ঘৃণ্য উপাসনা পদ্ধতি পৌত্তলিক আরাধনার অঙ্গে পরিণত হয়। দেবতারা নিজেরাই অপবিত্র ছিল ও তাদের উপাসনাকারীরা সর্বপ্রকার নীচু মনোবৃত্তি দ্বারা পরিচালিত হত। ধর্মীয় উসব সমূহের বিশেষত্ব ছিল সার্বজনীন ও উন্মুক্ত লাম্পট্য ও অপিবত্রতা। PPBeng 238.2

বহু বিবাহ প্রথা ছিল সেই সমস্ত পাপের একটি যেগুলির কারণে মহা- প্লাবনের পূর্বের লোকদের উপরে ঈশ্বরের অভিশাপ নেমে এসেছিল । তথাপি মহা-প্লাবনের পরে আবারও তা বহুল প্রসারিত হয়ে পড়ল। শয়তানের সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা ছিল বিবাহকে নষ্ট করা, এর অবশ্য করণীয়কে দুর্বল করা, এবং এর পবিত্রতাকে দুর্বল করা । মানুষের মধ্য হতে ঈশ্বরের দুরত্ব মুছে ফেলে দুঃখ ও মন্দতার দরজা খুলে দেবার এত নিশ্চিত উপায় আর একটিও ছিল না । PPBeng 238.3