সমাগম- তাঁবুর ভিতরের গৌরবের বর্ণনা কোন ভাষা দ্বারাই সম্ভব নয় । সোনায় মোড়ানো দেয়াল সমূহ সোনার তৈরী ধূপদানী হতে আলো প্রতিফলিত করত; স্বর্ণজ্জ্বোলি টেবিল, সুগন্ধি পোড়ানোর সৌরব; দ্বিতীয় পর্দার ওপারে পবিত্র সিন্দুক, তার উপর পবিত্র শেখায়নাহ্ ঈশ্বরের উপস্থিতির প্রতীক, সমস্ত কিছুই মানুষের পরিত্রাণের কেন্দ্রস্থল স্বর্গে ঈশ্বরের সমাগম-তাঁবুর গৗরবের ক্ষীণ একটি প্রতিফলন ছিল। PPBeng 244.1
এই সমাগম তাঁবু তৈরী করতে প্রায় ছয় মাস সময় লেগেছিল। যখন এটি তৈরী করা সম্পূর্ণ হল, তখন মোশি কারিগরদের সমস্ত কাজ পরীক্ষা করে দেখলেন। “আর দেখ, তাহারা করিয়াছে; সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারেই করিয়াছে; আর মোশি তাহাদিগকে আশীর্বাদ করিলেন।” অগণিত ইস্রায়েলরা ভীড় করে পবিত্র প্রতিষ্ঠানটি দেখতে থাকল। মেঘ-স্তম্ভ ধর্মধামের উপরে এসে উপস্থিত হল, এবং ঈশ্বরের গৌবর আবাস পরিপূর্ণ করিল।” ঈশ্বরের গৌবর প্রকাশিত হল, আর কিছু দিনের জন্য মোশিও ভিতরে প্রবেশ করতে পারলেন না। গভীর আবেগের সহিত লোকেরা তাদের হাতের কাজ গৃহীত হওয়ার চিহ্ন দেখতে পেল। সকলের মধ্যে এক সশ্রদ্ধ সম্ভ্রম জেগে উঠল। তাদের হৃদয়ের খুশী আনন্দাশ্রুতে পরিণত হল। ঈশ্বর তাদের সহিত উপস্থিত থাকতে সম্মত হয়েছেন। PPBeng 244.2
অব্রাহামের সময় পৌরহিত্য বড় জ্যেষ্ঠপুত্র উত্তরাধীকার ছিল। এখন, প্রথম জাতের পরিবর্তে ঈশ্বর লেবীয়দের গোত্রকে ধর্মধামের কাজে বহাল করলেন। কিন্তু শুধু হারোণ ও তার ছেলেরা ঈশ্বরের সামনে উপস্থিত হয়ে দয়ার-কাজ করতে পারবে। গোত্রের বাকী লোকদের দায়িত্ব ছিল সমাগম-তাঁবু ও তার আসবাব-পত্র রক্ষণাবেক্ষণ করা । PPBeng 244.3
পুরোহিতদের জন্য এক বিশেষ পোশাক নির্ধারণ করা হল। সাধারণ পুরোহিতের পোশাক ছিল সাদা, একখন্ডে বুনন করা, যা কোমরের সাথে একটি সাদা কাপড়ের কটি-বন্ধন দ্বারা বেঁধে রাখা হত, যে বন্ধনে নীল, বেগুনী ও লাল বর্ণের সূতার কাজ থাকত। মাত্র একটি কাপড়ে পাগড়ী তার বাহ্যিক পোশাকের পূর্ণতা প্রদান করত । ধর্মধামে প্রবেশের আগে পুরোহিতরা তাদের পায়ের জুতা বাইরের প্রাঙ্গনে খুলে রাখতে হত, আর সমাগম-তাঁবুতে দেখাশোনার কাজ শুরু করার আগে তাদের প্রক্ষালন করতে হত। এ ভাবেই শিক্ষা দেয়া হত যে, যে কেহ ঈশ্বরের সম্মুখে উপস্থিত হবে, সে সব রকম অপবিত্রতা হতে মুক্ত হয়ে তা করবে। PPBeng 244.4
মহা-যাজকের পোশাক ছিল অত্যন্ত দামী কাপড়ের মধ্যে খুব সুন্দর কারু-কার্য্য করা পোশাক। সাধারণ যাজকের মত সাদা পোশাক পরার পর তাকে এক খন্ডে বুনানো একটি নীল রঙের পোশাক পরতে হত। এর প্রান্তে থাকত সোনার ঘন্টাসমূহ, ও নীল, বেগুনী ও রক্ত বর্ণের দাড়িম্ব ফল। একটি এফোদ, বা খাটো পোশাক, একই কাপড়ের কটি-বন্ধ দ্বারা পরা হত। এফোদটি ছিল হাতা-বিহীন, আর এর কাঁধের উপর ছিল দু'টি সোনালী পাথর যাতে ইস্রায়েল জাতির বার বংশের নাম লেখা ছিল। তার PPBeng 245.1
লিজা খাল এফোদের উপরে ছিল একটি বর্গাকৃতি বুকপাটা যা বেগুনী রংয়ের সূতা দ্বারা কাঁধ হতে ঝুলানো থাকত । এক প্রান্তে বিভিন্ন দামী পাথরগুলি ঝুলান ছিল, ঈশ্বরের নগরের বারটি স্তম্ভে যে সকল পাথর ছিল, ঐ পাথরগুলো ছিল সেই জাতীয় পাথর । সদাপ্রভুর নির্দ্দেশ ছিল, “যে সময়ে হারোণ পবিত্র স্থানে প্রবেশ করিবে, তকালে সদাপ্রভুর সম্মুখে নিয়ত স্মরণ করাইবার জন্য সে বিচারার্থক বুকপাটাতে ইস্রায়েলের পুত্রদের নাম আপন হৃদয়ের উপরে বহন করিবে।” যাত্রাপুস্তক ২৮:২৯। এই ভাবে মহা-যাজক, খ্রীষ্ট, পাপীদের পক্ষে নিজ বলির মাধ্যমে প্রায়শ্চিত্ত করিবার সময় তাঁর হৃদয়ে অনুতপ্ত ও বিশ্বাসী পাপীর নাম থাকবে। বুকপাটার ডান ও বাঁ পাশে উরীম ও তুম্মীম নামের দু'টি বড় পাথর ছিল । আর যখন সদাপ্রভুর সম্মুখে কোন প্রশ্ন আনা হত তখন যদি ডান পাশের পাথরের চতুর্দিকে একটি আলোর বলয় তৈরী হত, তখন তা সদাপ্রভুর অনুমতি বুঝাত, আর যদি বাঁ পাশের পাথরের উপর একটি মেঘের ছায়া পড়ত তা হলে সদাপ্রভুর অস্বীকৃতি বুঝা যেত। PPBeng 245.2
পুরোহিতদের পোশাক ও আচরণের সহিত সম্পর্কিত প্রত্যেকটি জিনিষের লক্ষ্য ছিল যে দর্শক যেন বুঝতে পারে যে ঈশ্বর কত পবিত্র এবং যে কেহ ঈশ্বরের সম্মুখে উপস্থিত হবে তাকে অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। PPBeng 245.3