জাতির দৈনিক আত্ম-সমর্পণের প্রতীকরূপে এবং খ্রীষ্টের প্রায়শ্চিত্তের বলির উপর তাদের নিয়ত নির্ভরশীলতার চিহ্নরূপে প্রত্যেক সকাল ও সন্ধ্যায় যজ্ঞবেদির উপর এক বসরের একটি মেষ পোড়ান হত। শুধু একটি “নির্দোষ ও নিষ্কলঙ্ক মেষশাবকই” তাঁর পরিপূর্ণ পবিত্রতার প্রতীক হতে পারত যিনি নিজকে “নির্দোষ ও নিষ্কলঙ্ক মেষশাবকস্বরূপ” বলি দিতে যাচ্ছিলেন। ১ পিতর ১:১৯। পৌল বলেন, “অতএব, হে ভ্রাতৃগণ, ঈশ্বরের নানা করুণার অনুরোধে আমি তোমাদিগকে বিনতি করিতেছি, তোমরা আপন আপন দেহকে জীবিত, পবিত্র...ইহাই তোমাদের চিত্ত-সঙ্গত আরাধনা।” রোমীয় ১২৪১। যারা তাঁকে তাদের সমস্ত হৃদয় দ্বারা প্রেম করে, তারা তাদের অস্তিত্বের সমস্ত ক্ষমতা PPBeng 246.2
তাঁর ইচ্ছার সাথে সংহতিতে এনে তাদের সর্বোত্তম সাহায্য তাঁকে দিতে চাইবে। দৈনিক যাজকত্ব কাজের অন্যান্য সমস্ত কিছুর চেয়ে ধূপদানীতে ধূপ জ্বালানোই যাজককে ঈশ্বরের সম্মুখে প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত হতে সাহায্য করত। অনুগ্রহের আসনের উপরে ঈশ্বরের গৌবরকে পবিত্র স্থান হতে আংশিক দেখা যেত । যখন যাজক ঈশ্বরের সামনে ধূপ ছড়াতেন, তিনি সিন্দুকের দিকে তাকাতেন, এবং যখন ঈশ্বরের গৌবর অনুগ্রহের আসনের উপর নেমে আসতেন এবং মহা-পবিত্র স্থানকে পরিপূর্ণ করতেন, তখন প্রায়ই যাজক সমাগম-তাঁবুর দরজার নিকট সরে আসতে বাধ্য হতেন। যে ভাবে যাজক অনুগ্রহের আসন তিনি দেখতে পেতেন না তার দিকে যাজকের চোখে তাকাতেন, সে ভাবেই ঈশ্বরের লোকেরা তাদের প্রার্থনা তাদের মহাযাজক খ্রীষ্টের প্রতি নির্দ্দেশ করবে, তিনি তাদের পক্ষে স্বর্গের ধর্মধামে অনুরোধ জানাচ্ছেন। সুগন্ধি খ্রীষ্টের মধ্যস্থতার প্রতীক। তার পরিপূর্ণ ধার্মিকতা যা বিশ্বাসে তাঁর লোকদের উপর দেয়া হয়, শুধু তাই পাপীদের প্রার্থনা ঈশ্বরের নিকট গ্রহণযোগ্য করে তুলে। ঈশ্বরের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার জন্য রক্ত ও সুগন্ধি দু'টিই লাগত, এগুলি ছিল প্রতীক যা মহা- প্রায়শ্চিত্তকারীর প্রতি নির্দ্দেশ করত, যার মাধ্যমে অনুতপ্ত আত্মা অনুগ্রহ ও মুক্তি পেতে পারে। PPBeng 246.3
সকাল ও সন্ধ্যায় যখনই যাজকগণ পবিত্র স্থানে প্রবেশ করতেন, প্রাঙ্গনের যজ্ঞবেদির উপরে দৈনন্দিনের বলি প্রস্তুত থাকত। ঐ সময়টি ছিল গভীর আগ্রহের সময়; সমাগম-তাঁবুর সামনের প্রার্থনাকারীরা ঐ সময় তাদের হৃদয়ের অনুসন্ধান ও পাপ স্বীকার করতেন। ধূপের ধোঁয়ার সাথে তাদের দরখাস্ত স্বর্গের দিকে যেত, আর প্রায়শ্চিত্তের বলি যে ত্রাণকর্তার প্রতি ঈঙ্গিত করত, তাদের বিশ্বাস সেই প্রতিজ্ঞাত মুক্তিদাতার হাত ধরে থাকত। পরবর্ত্তী কালে যখন যিহূদীরা বন্দিত্বে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখনও নির্দ্ধারিত সময়ে তাদের মুখ যিরূশালেমের দিকে করে তাদের প্রার্থনা ইস্রায়েলদের ঈশ্বরের নিকট জ্ঞাত করত। এই নিয়ম থেকেই যীশু খ্রীষ্টে বিশ্বাসীরা সকাল ও সন্ধ্যায় প্রার্থনা করে থাকে। যারা তাদের পাপের জন্য সকাল ও সন্ধ্যায় এই ভাবে প্রণিপাত করে ক্ষমা চায় ও ঈশ্বরের আশীর্বাদ কামনা করে ঈশ্বর তাদের উপর খুবই সন্তুষ্ট হন । PPBeng 247.1
দর্শন-রুটি ছিল একটি চিরন্তন দান, দৈনন্দিন বলির একটি অংশ। শুধু খ্রীষ্টের মধ্যস্থতার মাধ্যমে প্রাপ্ত মানুষের দৈহিক ও আত্মার খাদ্যের জন্য ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীলতার স্বীকৃতি হিসাবে ইহা সর্বদাই ঈশ্বরের সামনে থাকত (যাত্রাপুস্তক ২৫:৩০)। ঈশ্বর ইস্রায়েলকে স্বর্গ থেকে রুটি খাইয়েছিলেন, আর এখনও দৈহিক খাবার ও আত্মার আশীর্বাদের জন্য তারা তাঁর উপরই নির্ভরশীল ছিল। মান্না ও দর্শন-রুটি উভয়ই জীবন্ত রুটি খ্রীষ্টের প্রতি ইশারা করত । তিনি নিজেই বলেছেন, “আমিই সেই জীবন খাদ্য। যাহা স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিয়াছে।” যোহন ৬:৪৮-৫১। প্রত্যেক শাব্বাথ দিন রুটি সরিয়ে নিয়ে নুতন রুটি দেয়া হত। PPBeng 247.2
দৈনিক যাজকত্ব কাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল এক এক জন ব্যক্তির পক্ষে যাজকত্ব। অনুতপ্ত পাপী তার বলি সমাগম-তাবুর দরজায় নিয়ে আসত, এবং বলির পশুর মাথায় হাত রেখে সে তার পাপসমূহ স্বীকার করত। আর ইহা প্রতীকস্বরূপ সে তার পাপ ঐ নির্দোষ পশুর উপর স্থানান্তরিত করত। তারপর সে নিজ হাতে পশুটিকে বলি দিত, আর এর রক্ত যাজক পবিত্র স্থানের পর্দার সামনে ছিটিয়ে দিতেন, ঐ পর্দার ওপারে সিন্দুকের ভিতরে ব্যবস্থা যে ব্যবস্থা পাপী ব্যক্তি লঙ্ঘন করেছিল। ঐ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রক্তের সাথে, প্রতীকস্বরূপ, পাপ ধর্মধামে স্থানান্তরিত হত। কোন কোন ক্ষেত্রে রক্ত পবিত্র স্থানে নেয়া হত না (সংযোজনের ৫নং নোট দ্রষ্টব্য)। কিন্তু যাজক ঐ মাংস খেতেন, যেহেতু মোশি নির্দেশ দিয়েছিলেন,” মন্ডলীর অপরাধ বহন করতঃ সদাপ্রভুর সম্মুখে প্রায়শ্চিত্ত করনার্থে তাহা তিনি তোমাদিগকে দিয়াছেন।” লেবীয় ১০:১৭। উভয় অনুষ্ঠানই অনুতপ্ত পাপী হতে পাপ ধর্মধামে স্থানান্তরিত হওয়াকে নির্দ্দেশ করত । PPBeng 247.3
এই ভাবে সারা বৎসর প্রতিদিন এই কাজ চলত। ইস্রায়েলদের পাপ পবিত্র স্থানে স্থানান্তরিত হওয়াতে পবিত্র স্থান অপবিত্র হয়ে যেত । আর ঐ পাপ পরিষ্কার করার জন্য একটি বিশেষ কাজ করা প্রয়োজন হত। ঈশ্বর আদেশ দিয়েছিলেন যে প্রত্যেক পবিত্র স্থানের জন্য একটি করে প্রায়শ্চিত্ত দেয়া হোক, আর যজ্ঞবেদিকে “শুচি করিবে, ও ইস্রায়েল-সন্তানগণের অশৌচ হইতে তাহা পবিত্র করিবে।” লেবীয় ১৬:১৯। PPBeng 248.1
বসরে একবার, মহা প্রায়শ্চিত্তের দিনে, ধর্মধাম পরিষ্কার করবার জন্য মহা-যাজক মহা-পবিত্র স্থানে প্রবেশ করতেন। দু'টি ছাগ-বস সমাগম-তাঁবুর দরজায় এনে তাদের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য গুলিবাট করা হত, “একটি সদাপ্রভুর জন্যে, আর অন্যটি শয়তানের জন্য” । যে ছাগ বসের উপর প্রথম গুলি পড়ত, সেটা লোকদের পাপের প্রায়শ্চিত্তরূপে বলিদান করা হত। এর রক্ত নিয়ে মহা-যাজক মহা-পবিত্র স্থানে প্রবেশ করতেন এবং ঐ রক্ত অনুগ্রহের আসনের উপর ছিটিয়ে দিতেন। “আর ইস্রায়েল-সন্তানদিগের নানাবিধ অপবিত্র ও অধর্ম, অর্থা সর্ববিধ পাপের কারণে সে পবিত্র জায়গার জন্য প্রায়শ্চিত্ত দিবে, এবং যে সমাগম-তাম্বু তাহাদের সহিত, নানাবিধ মন্দের মধ্যে বসতি করে, তাহার জন্য সে সেইরূপ করিবে।” PPBeng 248.2
“পরে হারোণ সেই জীবিত ছাগের মাথায় নিজের দুই হাত রাখিবে, এবং ইস্রয়েল-সন্তানদিগের সমস্ত অপরাধ ও তাহাদের সমস্ত অধর্ম অর্থা তাহাদের সর্ববিধ পাপ তাহার উপরে স্বীকার করিয়া সে সমস্ত ঐ ছাগের মাথায় অর্পণ করিবে; পরে যে প্রস্তুত হইয়াছে এমন লোকের হাত দ্বারা তাহাকে মরুভূমিতে পাঠাইয়া দিবে। আর ঐ ছাগ নিজের উপরে তাহাদের সমস্ত অপরাধ জনশূন্য ভূমিতে বহিয়া লইয়া যাইবে”। যতক্ষণ না ছাগকে ঐ ভাবে নিয়ে যাওয়া হত, ততক্ষণ লোকেরা তাদের পাপের বোঝা হতে মুক্ত হয়েছে বলে গন্য করত না। যখন পাপের প্রায়শ্চিত্ত দেয়ার কাজ চলতে থাকত, তখন প্রত্যেক ব্যক্তি তার আত্মাকে শাস্তি দিতে থাকত । সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ করা হত, এবং ইস্রায়েল জাতির সমস্ত মন্ডলী প্রার্থনা, উপবাস, ও হৃদয়ের অনুসন্ধান করে ঈশ্বরের সামনে সমস্ত দিন গম্ভীর বিনম্রতার মধ্যে কাটাত । PPBeng 248.3