Go to full page →

৩৮—ইদোম পরিবেষ্টন করে এই দীর্ঘ যাত্রা কেন PPBeng 296

কাদেশে ইস্রায়েলদের শিবির ইদোমের সীমা হতে অল্প দূরে অবস্থিত ছিল, এবং মোশি ও লোকেরা এই দেশের ভিতরের রাস্তা দিয়ে প্রতিজ্ঞাত দেশে পৌঁছার আকাঙ্খী ছিলেন। তাই তারা ইদোমীয় রাজার নিকট একটি বার্তা প্রেরণ করলেনঃ PPBeng 296.1

“তোমার ভ্রাতা ইস্রায়েল কহিতেছে.... আর দেখ, আমরা তোমার দেশের প্রান্তস্থিত কাদেশ নগরে আছি। আমি বিনয় করি, তুমি আপন দেশের মধ্য দিয়া আমাদিগকে যাইতে দেও; আমরা শস্যক্ষেত্র কি দ্রাক্ষাক্ষেত্র দিয়া যাইব না, কূপের জলও পান করিব না; কেবল রাজপথ দিয়া যাইব; যাবৎ তোমার সীমা উত্তীর্ণ না হই, তাবৎ ডানে কি বামে ফিরিব না।” PPBeng 296.2

এই অত্যন্ত ভদ্রতাসূচক অনুরোধের উত্তরে এক অত্যন্ত ভীতি প্রদর্শনমূলক উত্তর প্রদান করা হল: “তুমি আমার {দেশের} মধ্য দিয়া যাইতে পাইবে না, গেলে আমি খড়গ লইয়া তোমার বিরুদ্ধে বাহির হইব।” PPBeng 296.3

ইস্রায়েলের নেতাগণ বিশেষ প্রতিজ্ঞাপূর্বক আরেকটি অনুরোধ রাজাকে জানালেন, “আমরা রাজপথ দিয়া যাইব; আমি কি আমার পশুগণ, আমরা যদি তোমার জল পান করি, তবে আমি তাহার মূল্য দিব; আর কিছু নয়, কেবল আমাকে পায়ে হাঁটিয়া যাইতে দাও।” PPBeng 296.4

উত্তর হল, “তুমি যাইতে পাইবে না।” ইদোমীয়দের সশস্ত্র বাহিনী বিভিন্ন কঠিন কঠিন প্রবেশ দ্বারে অবস্থান গ্রহণ করল, এবং ইস্রায়েলদের শক্তি প্রয়োগ করতে মানা করা হল। তারা ইদোম দেশ পরিবেষ্টনপূর্বক লম্বা পথেই যাত্রা করবেন । PPBeng 296.5

যদি লোকেরা ঈশ্বরের উপর আস্থা রাখতেন, তবে সদাপ্রভুর বাহিনীর অধিপতি তাদের ইদোমের মধ্য দিয়েই নিয়ে যেতেন। দেশের লোকেরা তাদের বিরুদ্ধাচরণ না করে বরং অনুগ্রহ প্রদর্শন করত। কিন্তু ইস্রায়েলরা ঈশ্বরের আদেশ মতো দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করল না, ফলে একটি সুবর্ণ সুযোগ হারিয়ে গেল । পরিশেষে যখন তারা রাজাকে অনুরোধ জানাতে প্রস্তুত হল, তখন তা প্রত্যাখান করা হল । মিশর ত্যাগ করার মুহূর্ত হতে শয়তান তাদের পথে নানা প্রকার বাধা সৃষ্টি করেছে যেন তারা কনান দেশ অধিকার করতে না পারে । আর তাদের বিশ্বাসের দুর্বলতার মাধ্যমে তারা বার বার তার জন্য দরজা খুলে দিয়েছে । PPBeng 296.6

যখনই ঈশ্বর তার সন্তানদের এগিয়ে যেতে আদেশ করেন তখন শয়তান তাদের প্রলোভিত করে যেন ইতঃস্তত করার মাধ্যমে ও বিলম্ব করার মাধ্যমে তারা ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে। সে চেষ্টা করে বিবাদ, অবিশ্বাস, অভিযোগ ইত্যাদি সৃষ্টি করতে যেন সে তাদের সেই আশীর্বাদ লাভে বঞ্চিত করে যে আশীর্বাদ ঈশ্বর তাদের দিতে চান। ঈশ্বরের দাসগণ হবেন অত্যন্ত সময় সচেতন। তাদের তরফে কোন দেরী হলে শয়তান তাদের পরাজিত করতে সচেষ্ট হয় ৷ PPBeng 297.1

ইদোমীয়রা ছিলেন অব্রাহাম ও ইস্হাকের বংশধর । তার এই সন্তানদের জন্য তিনি তাদের সেয়ীর পর্বত দান করেছিলেন। তাদের ততক্ষণ পর্য্যন্ত কোনরূপ বাধা প্রদান নিষেধ ছিল যতক্ষণ না তারা তাদের পাপের মাধ্যমে তার অনুগ্রহের বাইরে নিয়ে যায়। যিহুদীরা কনানীয়দের সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার কথা ছিল কেননা তারা তাদের পাপের পেয়ালাপূর্ণ করে ফেলেছিল । কিন্তু ইদোমীয়রা তখনও পরীক্ষাধীন ছিল এবং তাদের সহিত দয়া সহকারে ব্যবহার করার কথা ছিল। দন্ডাদেশ দান করার আগে ঈশ্বর তার সহানুভূতি ও প্রেম প্রদর্শন করে থাকেন। PPBeng 297.2

দেশের মধ্য দিয়ে যাত্রা করার অনুমতি প্রদান না করার জন্য ইস্রায়েলরা তাদের উপর বর্তমানে বা ভবিষ্যতে কোনরূপ প্রতিশোধ না নিতে আদেশ করা হয়েছিল। তাদের ইদোম দেশের কোন অংশই দখল করার কথা ছিল না। ঈশ্বর তাদের এক অত্যন্ত ভাল দেশ দেবার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, কিন্তু তাদের এরকম চিন্তা করা নিষেধ ছিল যে তারাই পৃথিবীতে বাস করবে আর অন্য সকলকে তারা ধ্বংস করবে। তারা ইদোমীয়দের প্রতি অবিচার করতে পারত না। তারা তাদের সাথে কারবার করতে পারত, কিন্তু সমস্ত কিছুর মূল্য তাৎক্ষণিক ভাবে পরিশোধ করার কথা ছিল। তারা ঈশ্বরের উপর আস্থা রাখে ও তার আদেশ মানে, তাই তাদের স্মরণ করানো হয়েছিল, “তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু...তোমাকে আশীর্বাদ দান করিয়াছেন; ... তোমার কিছুরই অভাব হয় নাই।” তাদের এমন এক ঈশ্বর ছিলেন যিনি সম্পদশালী। তারা যে নীতির দৃষ্টান্ত হবে, তা হল, “তোমার প্রতিবেশীকে আপনার মত প্রেম করিবে PPBeng 297.3

ঈশ্বরের যেরূপ উদ্দেশ্য ছিল সেরূপ তারা যদি ইদোম দেশের ভিতর দিয়ে যাত্রা করত, তবে তাদের যাত্রা সেই দেশের লোকদের জন্য একটি আশীর্বাদ হত কেননা তারা ঈশ্বরের লোকদের সাথে পরিচিত হতে ও তার আরাধনা সম্বন্ধে জানতে পারত, এবং দেখতে পেত যে লোকেরা তাকে প্রেম ও ভয় করে। যাকোবের ঈশ্বর তাদের কিরূপ উন্নতি দান করে থাকেন। কিন্তু ইস্রায়েলের বিশ্বাসের অভাবের জন্য এসকলই নিষ্ফল হল। আবারও তাদের মরু-প্রান্তর দিয়ে যেতে হবে এবং অলৌকিক জলের প্রস্রবণ হতে পিপাসা মিটাতে হবে, কিন্তু যদি তারা তাকে বিশ্বাস করত তবে এ সবের প্রয়োজন হত না। PPBeng 298.1

হারোণ মোশির হাতে মারা যান PPBeng 298.2

তাই আবারও ইস্রায়েলদের অনুর্বর পতিত ভূমি দিয়ে যাত্রা শুরু করতে হল যা, ইদোমের পাহাড় ও উপত্যকার সবুজ জায়গা দেখার পর, আরো বেশী শুষ্ক মনে হল । এই বিষাদময় মরুভূমির এক পাশে ছিল হোর পর্বত, যার চূড়া হারোণের মৃত্যু ও কবরস্থানে পরিণত হতে যাচ্ছিল। যখন ইস্রায়েলরা পর্বত মালায় পৌছাল, তখন মোশির কাছে স্বর্গের আদেশ আসল PPBeng 298.3

“তুমি হারোণকে ও তাহার পুত্র ইলীয়াসরকে হোর পর্বতের উপরে লইয়া যাও। আর হারোণকে তাহার বস্ত্র ত্যাগ করাইয়া তাহার পুত্র ইলীয়াসরকে তাহা পরিধান করাও; হারোণ সে স্থানে {আপন লোকদের কাছে } সংগৃহীত হইবে, সেখানে মরিবে।” গণনা ২০:২৫, ২৬। PPBeng 298.4

দুই বৃদ্ধ ও যুবকটি অত্যন্ত কষ্টে পাহাড়ের চূড়ায় চড়লেন। মোশি ও হারোণের মস্তক ছিল শুভ্র। তাদের দীর্ঘ ও ঘটনা বহুল জীবন এমন সকল পরীক্ষা ও সম্মান দ্বারা ভূষিত ছিল যা আর কোন মানুষের ভাগ্যে ঘটেনি। অসীম ঈশ্বরের সহিত যোগাযোগের ফলে তাদের সমস্ত ক্ষমতা পূর্ণরূপে বিকশিত হয়েছিল, উন্নীত হয়েছিল ও সম্মান প্রাপ্ত হয়েছিল। তাদের চেহারায় প্রচুর বুদ্ধিমত্তা উদ্দেশের দৃঢ়তা ও মহত্ত্বের আভাষ, এবং গভীর প্রেমের ভাব ফুটে উঠেছিল । PPBeng 298.5

অনেক বসর যাব তারা অসংখ্য বিপদের মোকাবেলা করেছিলেন, কিন্তু এখন তাদের পৃথক হওয়ার সময় উপস্থিত। তারা খুব ধীরে ধীরে এগুলেন, কেননা তাদের প্রতি মুহূর্তের সান্নিধ্য অত্যন্ত মূল্যবান ছিল। পর্বত খুবই খাড়া ছিল ও উপরে উঠা কষ্ট-সাধ্য ছিল; এবং প্রায়ই যখন তারা বিশ্রামের জন্য থামতেন তখন তারা অতীত ও ভবিষ্যতের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন । তাদের সামনে তাদের মরুভূমিতে যাত্রার দৃশ্যাবলী প্রসারিত ছিল । আর নীচের সমভূমিতে ইস্রায়েলদের শিবির ছিল; এই ইস্রায়েলদের জন্য তারা দু'জন তাদের জীবনের অধিকাংশই দান করেছিলেন এবং অনেক আত্ম-ত্যাগও করেছিলেন। ইদোমের পাহাড়ের ওপারে কোথাও রয়েছে প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশের পথ, আর মোশি ও হারোণ আর এই প্রতিজ্ঞাত দেশের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন না। তাদের পিতৃপুরুষদের অধিকার হতে কেন তারা বঞ্চিত হলেন তা যখন তাদের স্মৃতিতে উদয় হল তখন তাদের চেহারায় কিছুটা মালিন্য দেখা গেল । PPBeng 299.1

ইস্রায়েলেদের জন্য হারোণের কাজের সমাপ্তি হল। তিরাশি বসর বয়সে এবং এখন হতে চল্লিশ বসর আগে ইশ্বর তাকে এই বিশেষ উদ্দেশ্যে মোশির সহিত একত্রিত হতে বলেছিলেন। অমালেকীয়দের সহিত যখন যিহূদীরা যুদ্ধ করছিল তখন তিনি এই মহান নেতার হাত উঁচু করে ধরে রেখেছিলেন । স্বৰ্গীয় গৌরব দেখার জন্য সীনয় পর্বতে উঠতে অনুমতি দেয়া হয়েছিল। কোরহ ও তার দলকে ভয়াবহ দন্ডাজ্ঞা দ্বারা ধ্বংসের মাধ্যমে তিনি তাকে ঐ পবিত্র পদে অধিষ্ঠিত রেখেছিলেন। ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করার জন্য যখন তিনি তার দুই ছেলেকে হত্যা করেন তখন তিনি বিদ্রোহ করেন নি অথবা অভিযোগ উঠান নি । PPBeng 299.2

তথাপি তার এই মহ জীবনের ইতিহাস তখন কলুষিত হয়েছে যখন তিনি লোকদের দাবীতে সীনয়ে একটি স্বর্ণের গোবস বানিয়েছিলেন, এবং যখন তিনি মরিয়মের সহিত যুক্ত হয়ে মোশির বিপক্ষে অভিযোগ তুলেছিলেন। আবার কাদেশে যেন পাথর জল দান করে তার জন্য পাথরকে বলার জন্য ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করে মোশি ও তিনি ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করেছিলেন। PPBeng 299.3

হারোণ ইস্রায়েলদের নাম তার বুকে ধারণ করে রেখেছিলেন। তিনি লোকদের ঈশ্বরের আদেশ জ্ঞাত করতেন। তিনি প্রায়শ্চিত্তের দিনে সমস্ত ইস্রাইলেদের জন্য মধ্যস্থতা করার জন্য রক্ত সহকারে মহা-পবিত্র স্থানে প্রবেশ করতেন। আমাদের মহা-যাজকের প্রতিনিধিরূপে ঐ পবিত্র ও গৌরব পদের অধিকারী হওয়ার জন্যই কাদেশে হারোনের পাপকে এত বড় করে দেখা হয়েছিল । PPBeng 299.4

গভীর দুঃখ সহকারে মোশি হারোণের পোষাক খুলে তা তার ছেলে ইলীয়াসকে পরালেন, যে ইলীয়াসের ঈশ্বর দ্বারা তারা উত্তরাধিকারীরূপে নিযুক্ত হল। কাদেশে তার পাপের জন্য হারোণকে ঐ উত্তম দেশ কনানে বলি দান করা হতে বিরত রাখা হল। মোশি লোকদের পরিচালিত করে কনানের প্রান্ত সীমা পর্য্যন্ত নিয়ে যাবেন, কিন্তু ঐখানে প্রবেশ করতে পারবেন না। যদি ঈশ্বরের এই দাসগণ বিনা দ্বিধায় কাদেশে তাদের পরীক্ষাতে জয়লাভ করতে পারতেন, তা হলে তাদের ভবিষ্যত কি সন্দরই না হত। একটি ভ্রান্ত কাজ কখনো সংশোধন করা সম্ভব নয়। মুহূর্তের ভুলের জন্য হয়ত সারা জীবনের কাজের যে অপুরণীয় ক্ষতি হয়ে যায় তা আর কখনও পূরণ করা সম্ভব হয় না । PPBeng 300.1

লোকেরা যখন তাদের বৃহৎ সমাজের দিকে থাকাল, তখন দেখতে পেল যে, সকল পূর্ণ বয়স্ক লোকেরা মিশর ছেড়ে এসেছিল, তারা প্রায় সকলেই মরু- প্রান্তরে মারা পড়েছিলেন। মোশি ও হারোণের যে দন্ডাদেশ জারী করা হয়েছিল তা তাদের মনে পড়ল। কেউ কেউ হোর পর্বতের এই রহস্যপূর্ণ যাত্রার লক্ষ্য জানতেন, আর আত্মগ্লানীর মাধ্যমে তাদের স্মৃতির তিক্ততা আরো বৃদ্ধি পেল । PPBeng 300.2