চরম মীমাংসার দিনে দেখা যাইবে যে, ঈশ্বর প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাহার নাম ধরিয়া জানেন । জীবনের প্রত্যেক কর্ম্মের এক অদৃশ্য সাক্ষী আছেন । “যিনি সেই সপ্ত সুবর্ণ দীপবৃক্ষের মধ্যে গমনাগমন করেন, তিনি এই কথা কহেন ; আমি জানি তোমার কার্য্য সকল ।” কোন্ কোন্ সুযোগ-সুবিধা উপেক্ষা করা হইয়াছে, তাহার হিসাব আছে ; যাহারা বক্র পথে পরিভ্রমণ করিতেছিল, তাহাদের অন্বেষণ করিবার ও তাহাদিগকে নিরাপদ শান্তির পথে আনয়ন করিবার জন্য উত্তম মেষপালকের কত অক্লান্ত পরিশ্রম করিতে হইয়াছে, তাহা জানা আছে । বিলাস প্রিয়েরা যেন তাহাদের আসন্ন বিপদ দেখিয়া তাহা হইতে উদ্ধার পাইতে পারে, তজজন্য ঈশ্বর তাহদিগকে বারংবার আহ্বান করিয়াছেন এবং তাহাদের পথে তাঁহার বাক্যের জ্যোতি পুনঃ পুনঃ উদ্দীপিত করিয়াছেন । কিন্ত অবশেষে যে পর্য্যন্ত না তাহাদের পরিত্রাণের দ্বার রুদ্ধ হয়, তাবৎ তাহারা ঠাট্টা ও বিদ্রুপ করিতে করিতে প্রশস্ত রাজপথ দিয়া ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হইতে থাকে । ঈশ্বরের পথসমূহ ন্যায়ের ও সাম্যের পথ । যাহারা লঘুরূপে নির্ণীত হইবে, তাহাদের বিরুদ্ধে যখন দণ্ডাজ্ঞা ঘোষিত হইবে, তখন প্রত্যেক মুখ বন্ধ হইবে ।15T 435; CCh 252.1
সমুদয় প্রকৃতির মধ্য দিয়া যে প্রবল পরাক্রান্ত শক্তি কার্য্য করিতেছে এবং যাবতীয় পদার্থকে ধারণ করিয়া রাখিতেছে, তাহা কোন বৈজ্ঞানিক যেমন মনে করে, কেবল তেমন এক সর্ব্বব্যাপী মৌলিক উপাদান কিংবা কার্য্যে প্রণোদনকারী এক শক্তি নহে । ঈশ্বর আত্মা ; তথাপি তিনি এক ব্যক্তি ; কারণ মানব তাঁহারই প্রতিমূর্ত্তিতে নির্ম্মিত হইয়াছিল । CCh 252.2
প্রকৃতিতে ঈশ্বরের যে সকল শিল্প-কর্ম্ম দৃষ্ট হয়, তাহা স্বয়ং ঈশ্বর নহে । প্রকৃতির বিষয়বস্তু সমূহ ঈশ্বরের চরিত্রের অভিব্যক্তি ; এই সকলের দ্বারা আমরা তাঁহার প্রেমের, শক্তির ও গৌরবের পরিচয় পাই ; কিন্ত প্রকৃতিকে ঈশ্বর বলিয়া মান্য করা উচিত নহে । মানবের শিল্প-নৈপুণ্য অতি বিচিত্র ও নয়নের তৃপ্তিকর ; এই সকল আমাদিগকে শিল্পকরের শিল্পনৈপুণ্য সম্বন্ধে কথাঞ্চিত ধারণা জন্মাইয়া দেয় মাত্র, কিন্ত নির্ম্মিত বস্তটী স্বয়ং মানব নহে । কর্ম্মটী নহে, কিন্ত কর্ম্মকর্ত্তাই সমাদরের যোগ্য । এইরূপে, প্রকৃতির ঈশ্বরের চিন্তার অভিব্যক্তি বলিয়া প্রকৃতিকে নহে, কিন্ত প্রকৃতির ঈশ্বরকেই সমাদর করিতে হইবে । CCh 252.3
মানব-সৃষ্টি-কার্য্যে মূর্ত্তিমান ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব প্রকাশিত হইয়াছিল । ঈশ্বর যখন মানবকে নিজের প্রতিমূর্ত্তিতে সৃষ্টি করিয়াছিলেন, তখন মানবের অবয়ব খানি সর্ব্ব বিষয়ে নিখুঁত ছিল, কিন্ত ইহার মধ্যে জীবন ছিল না । তৎপরে এক মুর্ত্ত স্বয়ন্তূ ঈশ্বর সেই আকৃতির মধ্যে প্রাণবায়ু প্রবেশ করাইয়া দিলেন, তাহাতে মানব এক সজীব শ্বাসপ্রশ্বাসকারী বুদ্ধিমান প্রাণী হইল । মানব-যন্ত্রটীর সমুদয় অংশই কার্য্যে রত হইল । হৃৎপিণ্ড ধমনীরাশি, শিরাসমূহ, জিহ্বা, হস্ত, পদ, জ্ঞানেন্দ্রিয়, ও মনের অনুভবশক্তিসমূহ— সকলেই নিজ নিজ কার্য্য আরম্ভ করিল, এবং সকলকেই নিয়মের বশীভূত রাখা হইল । ব্যক্তিরূপী ঈশ্বর, খ্রীষ্টের দ্বারা মনুষ্যকে সৃষ্টি করিয়া জ্ঞান ও শক্তি দ্বারা অলঙ্কৃত করিলেন । CCh 253.1
আমরা যখন গোপনে নির্ম্মিত হইতেছিলাম, তখন আমাদের উপাদানসমূহ তাঁহা হইতে লুকায়িত ছিল না । তাহার চক্ষু আমাদের উপাদানসমূহ দেখিয়াছিল, কিন্ত তখনও উহা অসম্পূর্ণ ছিল ; আমাদের অঙ্গসমূহের বিষয়, তাঁহার পুস্তকে লিখিত ছিল, যখন সে সকলের একটীও ছিল না। CCh 253.2
সমস্ত নিকৃষ্টজীবের উর্দ্ধে, সৃষ্টির সেরা যে মানব, সে-ই ঈশ্বরের চিন্তা প্রকাশ ও তাঁহার গৌরব ব্যক্ত করিবে, ইহাই ছিল ঈশ্বরের পরিকল্পনা । কিন্ত মানবের কর্ত্তব্য নহে যে, সে নিজেকে ঈশ্বরের মত উন্নত করিবে ।28T 263-273 CCh 253.3